সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

॥ব্যাকসিট-টা॥ -সৌভিক

তারপর আর কখনো দেখা হয়নি তার সাথে...
সাধারনত আমার ট্যাক্সির পাশের সিটটা বেমালুম খালিই পরে থাকে।"লম্বে এক সাওয়রি পে" হাতে হাত রাখার ফুরসৎ কিমবা অধিকার কোনোটাই নেই অামার।সামনের বসার জায়গায় এখন শুধু মবিল পোড়া গন্ধ পাই।ইঞ্জিনের তাপ ঠিকরে এসে বুকের মাঝখানটা লাগে।আমার একটা হাতে স্টেয়ারিং ঘোরাচ্ছি মানে অন্যহাতটা নিশ্চিত ঠোঁটের নীচে জমে থাকা সারাদিনের ক্লান্তির ঘাম মুছে নিচ্ছে।ব্যস্ত এই শহরে ট্র্যাফিক জ্যামে যাতে না ফেঁসে যাই সেই আশঙ্কায় সিগনালে দাঁড়িয়ে কাঁচ নামিয়ে বার কয়েক দীর্ঘশ্বাস ফেলি।একবার ইলেকট্রনিক মিটারের নামতা পরা দেখি,আর একবার তাকাই পাশের সেই শূন্যতায়...এখনো ওটা বেশ ঝাঁ চকচকেই রয়েছে,তবু বার কয়েক ঝেড়ে মুছে রাখি।এনগেজ তো থাকে ব্যাকসিটটা।ওই সিটটা আজ অবধি কতো জাতের যে রক্ত মাংসের ছাপ বহন করেছে তার হিসেব করিনি।জাত মানে হিন্দু মুসলিম খ্রীষ্টান নয়...ও আমার যাত্রীদের ছোট সফরে মাথা হেলিয়ে চোখ বুঁজে ক্ষণিক মুহূর্তে ভিড় করা হাজারো গোপন আবেগ,চিন্তা,প্রাপ্তি,অপ্রাপ্তি,সুখ,দুঃখ,না বলা কথা,না ছোঁয়া মন,অপেক্ষা সব টুকু বহন করে আনছে দিনের পর দিন।তুলো বেরিয়ে আসা,স্প্রিং ঝোলা একটা ধ্বজা সিট।ওদের অনুভুতি গুলো সিটের ধুলোয় মিশে গেছে।আমি ইচ্ছে করেই ডাস্টার দেই না সেখানে।হয়তো তাদের ব্যক্তিগত প্রতিক্রিয়াগুলো মুছে ফেলতে চাই না বলেই।মুছে ফেলতে আমি কোনদিনই চাইনি কিছু।তবু কেন সেদিন বৃষ্টির রাতে অকারণে তোমায় খুঁজে পেলাম,আর কেনই বা হারিয়ে ফেললাম...আজও বুঝে উঠতে পারিনি।
অামার ট্যাক্সির ব্যাকসিটটাকে সেদিন প্রথম কাঁদতে দেখলাম আর পাশের সিটটাকে যন্ত্রণায় ছটফট করতে।"এ ট্যাক্সি সিধা চালো,রুকনা মত",আমি সামনের আয়নায় গাড়ি আর স্ট্রিটলাইটের টিমটিমে আলোর তোমার মায়া ভরা মুখটা দেখলাম প্রথমবার।কিন্তু তোমার সাথে গাড়িতে যে মানুষটি উঠলো সে আমায় থামতে বারণ করলো কেন সেটা সময়ের সাথে বুঝতে পরলাম বেশ।একের পর এক ট্রাফিক সিগনাল,গলির মোড়,সড়কের পাশে ভিখিরির বাড়ি পার করে যত এগিয়েছে গাড়ির চাকা,ওই মানুষটি তোমার উপর ঝাপিয়ে পড়েছে জন্তুর মতো।আয়নার দিকে যতবার চেয়েছি আমার হাতের মুঠো ততবার শক্ত হয়েছে তোমার আড়ষ্ট শরীর আর কালসিটে পরা চোখ দেখে।আমি বুঝেছি,কোনো বিপদ তোমাকে ছেঁকে ধরেছে,তুমি তীব্র অনিচ্ছায় সে আক্রমণ গায়ে তুলে নিচ্ছ।জানলার ঝাপসা কাঁচে বৃষ্টির প্রতিটা ফোঁটা আছড়ে পরে আমার অন্তর্দ্বন্দ্ব অনেক খানি বাড়িয়ে দিয়েছে।তোমার সাথে ওই আয়নাতে চোখে চোখ পরতেই তুমি জড়তা ভাঙ্গলে,গোপন করতে চাইছ সবটাই।একটা গোটা পৃথিবী ভাগ হয়ে গেছে সিটের এপার ওপারে।তোমার ঘাড়ে দাঁত বসিয়ে রক্ত শুষতে শুষতে সে বলল,"য়ে শালা ট্যাক্সি ড্রাইভার দিখনে সে কুছ নেহি হোগা,এক্সট্রা পাইসা দে দেংগে"।তোমার বুকের বোতাম খুলে সিটে শুইয়ে সে যেন নিজের পাওনা বুঝে নিল গোটা রাস্তায়।তুমি আমার ছেড়া ফাটা ব্যাকসিট কতখানি খিমচে ধরেছিলে যন্ত্রণায় সেটা আমি শূন্য পাশের সিটটা আঁকড়ে বুঝতে পেরেছি।নরখাদকের খিদের শেষ মুখে এসে গাড়ি অ্যাক্সিডেন্ট করিয়ে দিতে পারলে হয়তো তুমি বেঁচে যেতে আর আমিও মুক্তি পেতাম পাপ থেকে।তুমি তো অপরিচিতা,তাও সে রাতে আমি ক্ষত বিক্ষত হয়ে গাড়ি টেনে নিয়ে গেছি দ্রুত।সব কিছুর শেষে তুমি নেমে গেলে হাতে একটা সাদা খাম নিয়ে একটা অন্ধকার গলির কাছে,তোমার মিছি মিছি যৌনতার রেমুনারেশন।নামতে নামতে ঘুরে তাকালে আমার দিকে।যেন বলতে চেয়েছ,আমি এপথে হাটতে চাইনি, যা দেখলে ভুলে যেও।গাড়ির দরজা ঠেলে বেরিয়ে গেলে বৃষ্টির মধ্যে।জলে হেঁটে চলার শব্দ পেলাম,তারপরiই মুহূর্তে অন্ধকারেবিলীন।বাড়ি ফিরে বহু বছর পর পেছনের সিটটা মুছে রাখলাম...রুমালে যেন তোমার মৃত বুকের রক্ত উঠে এলো।
সেদিনের পর ওই রুটে অনেক খুঁজেছি তোমাকে,কিন্তু দেখতে পাইনি আর কখনও।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ভূতে ভয় পেলেও, ‘ সেক্সি ভূত’-এর চরিত্রে অভিনয় করতে ভয় পাননি সায়ন্তনী

টলিউড ডিভা সায়ন্তনী গুহঠাকুরতা ডেবিউ করে ফেললেন দক্ষিণী সিনেমায়। যদিও কিছুদিন আগেই তিনি আটপৌরেকে সে ব্যাপারে জানিয়েছিলেন। কিন্তু সম্প্রতি এই হোলিতে সিনেমাটি রিলিজ করার পর থেকেই তিনি খবরের শিরোনামে। যদিও তার কারণ, তিনি এই প্রথম একটি ভূতের চরিত্রে অভিনয় করেছেন। শুধু তাই নয়, একটি ‘ সেক্সি’ ভূতের চরিত্রে এবং তাঁকে নিয়েই গল্পটা গড়ে উঠেছে।  সিনেমার নাম, ‘ চিকাটি গাডিলু চিঠাকোটুন্ডু’। তেলেগু সিনেমায় কাজ করে বেশ উচ্ছ্বসিত সায়ন্তনী। এখানেই শেষ নয়, তেলেগু ইন্ড্রাস্টির ভূয়সী প্রশংসা করেছেন তিনি। তাঁদের কাজের ধরন তাঁর বেশ পছন্দ হয়েছে । ইতিমধ্যে আরও একটি দক্ষিণী সিনেমার প্রস্তাবও পেয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। গল্পটিতে দেখা যায় দুই যুগল জুটি ছুটি কাটাতে গিয়ে আটকে যায় একটি ভৌতিক বাড়িতে।  সেখানে তারা একটি সেক্সি ভূতের পাল্লায় পরে। তারপর গল্প আস্তে আস্তে অন্যদিকে মোড় নেই।  সায়ন্তনী আটপৌরেকে জানালেন , ‘’ আমাকে অনেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় মেসেজ করে এই সিনেমার ব্যাপারে জানিয়েছেন! তাঁদের আমার চরিত্রটাও ভাল লেগেছে।‘’ ‘’ আপনাকে কেউ যদি রিয়েল লাইকে সেক্সি বলেন, সেটা আপনি কীভাব...

পুজো মিটলে কী করে থাকবেন ফিট, উপায় বাতলে দিলেন বিশিষ্ট পুষ্টিবিদ এবং যাপন সহায়ক ডাক্তার অনন্যা ভৌমিক

  আশ্বিনের শারদপ্রাতে বাঙালির পাতে ভরে উঠেছে হরেক রকমের খাবার। ঠাকুর দেখার সঙ্গে হরেক রকমের খাবার খেতেই হবে। রোল, চাউমিন, মোগলাই, চাইনিজ, বিরিয়ানি, ফুচকা এবং আরও কত কী! সারাবছর যারা শরীরচর্চায় মেতে থাকেন, খুব নিয়ম করে খাবার খান তারাও এই সময়টা একটু বেনিয়ম হয়ে পড়েন। তবে কুচ পরোয়া নেহি, পুজো মিটলেই আবার কী করে নিজের শরীরকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনবেন সেই কথায় আটপৌরেকে জানালেন বিশিষ্ট পুষ্টিবিদ এবং যাপন সহায়ক ডাক্তার অনন্যা ভৌমিক।  ১) পুজো মিটলেই আমাদের ফিরতে হবে আবার স্বাভাবিক জীবনে।  তাই পুজোর হ্যাংওভার কাটিয়ে নিতে ভীষণভাবে দরকার পড়বে প্রচুর পরিমাণ জলের। জল শরীরের বিষক্রিয়া দূর করতে সাহায্য করে। শরীরের প্রয়োজন মতো দিনে অন্তত তিন থেকে চার লিটার জল খেলে শরীর সুস্থ থাকবে। তবে যাদের বেশী জল খাওয়া বারণ আছে তারা অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন। এছাড়া বাকিরা দিনে চার লিটার পর্যন্ত জল পান করলে শরীরের স্বাভাবিক কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রিত থাকবে।  ২) মরশুমি ফল খাওয়ার অভ্যাস করুন। এছাড়াও নিয়মিত শাকসবজি খেতে হবে। ফল এবং শাকসবজিতে প্রচুর পরিমানে ফাইবার এবং আন্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা শরীরকে আবার স...

পনেরো মিনিটেই ফিট থাকার রহস্য, উপায় বাতলে দিলেন যোগগুরু

  আটপৌরের নিজস্ব প্রতিবেদন, নৈহাটিঃ  শরীরকে মন্দিরের আখ্যা দেওয়া হয়। আর সেই শরীরকে সর্বদা ঠিক রাখতে আমরা কত পন্থায় না অবলম্বন করে থাকি। আজকাল ইঁদুর দৌড়ের যুগ, আর এই যুগে সময় পাওয়া একটা বিরাট চ্যালেঞ্জিং বিষয়। সময় বের করে শরীর চর্চা করার মতো সময় আমাদের কতজনের হাতেই বা আছে? মনের সুখে ছুটির দিন হাঁটলেই কি আমাদের শরীর ঠিক থাকবে নাকি সপ্তাহে প্রতিদিন জিমমুখী হতেই হবে ? যেমন আইটি সেক্টরে কর্মরত পার্থ সারথী চক্রবর্তী সোম থেকে শুক্র অবধি দম ফেলার সময় পায় না, অথচ কিছুদিন হল সে ঘাড়ের ব্যথায় কাবু। আবার সদ্য বিয়ে করা কৌশিক ভট্টাচার্য ইদানীং অফিস ফেরত সস্ত্রীক হাঁটতে বেরিয়ে নিজেকে ফিট ভাবছেন অথচ গত তিনমাসে তার দশ কেজি ওজন বৃদ্ধি পেয়েছে। তবুও সে নিরুপায়, অফিস ফেরত ছাড়া তার সময় নেই। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে গেলে শরীর চর্চা আর হবে না। এই সময়ের অভাব অনেকেরই তা বলে কী শরীর সে কথা শুনবে। শরীরে বাসা বাঁধছে জটিল রোগ। দিনের পর দিন ওষুধ খেয়েও সেই রোগ সারছে না। তবে ইচ্ছে থাকলে উপায় আছে, বলছেন বিশিষ্ট যোগ গুরু রাহুল তিওয়ারী। আটপৌরের মুখোমুখি হয়ে তিনি জানালেন যে খুব স্বল্প সময়ে ফিট থাকার জন্য কিছু প...