- ভাতের হোটেল - @ANINDITA
অমনি না নাক সিটকানি? খিদে পেলে আবার তার সাত খুন মাফ। তা বলি আগে তো এসব রেস্তোরাঁ ছিল না নামী নামী তখন কি করতেন?
সস্তা মানেই যে "এ বাবা কি নোংরা ম্যাগো কি করে বসব দম আটকাচ্ছে,খাবারও বাজে..."
এরকম টা একটু ব্যতিরেকে নতুন কিছু ভাবুন করুন আর যাই হোক ঠকবেন না। তবে একটা উপদেশ সাথে দেব অ্যাম্বিয়েন্স ভালো পাবেন না ক্রাউডেড প্লেস ও তাই আপনার নেকুপুসু সঙ্গী কে নিয়ে যাবেন না।
এখন আসা যাক এই হোটেল গুলোর উৎপত্তি তে। ১৯৩০-৪০-এর মধ্যে বিশেষত পড়ুয়া যারা হোস্টেলে থাকত বা বাঙাল দের কথা ভেবে রোজগেরে খাওয়ার মতো সস্তাদরে কিছু হোটেল গজিয়ে ওঠে শহরতলি জুড়ে। ১/১৬আনায় তৃপ্তি কর খাদ্য তবে হ্যাঁ কলাপাতা থেকে লেবু, ডাল,ভাত ছিল তখন অপরিসীম।
তবে কিছু শর্তাবলীও ছিল বই কি,যেমন-
১. আপনাকে কোনো মেনুকার্ড দেওয়া হবে না।
২. খান বা না খান ভাত,ডাল আর আলুভাজার বিকল্প হবেনা।
৩. নিজের বরাদ্দ টেবিলে অন্য কেউ বসবে না সবার জন্য আলাদা টেবিল আছে (বলাই বাহুল্য ঠিক যেমন বাফেট খেতে নিয়মাদি থাকে ঠিক তেমন)।
৪. টিপস দিতে পারেন ওটা একপ্রকার ইনভেস্টমেন্ট। ওই যে আপনার মুখ চিনে রাখলো ওয়েটার পরের বার আপনার মাছের পিস টা ওই টিপসের ওপর ডিপেন্ড করেই তারতম্য ঘটবে।
এবার আসা যাক আসল কথায়, বাঙালী মাত্রই খাদ্য রসিক মানুষ তাই কলকাতার নামী রেস্তরাঁ ছেড়েও কমদামী তেও উঁকিঝুঁকি কম নেই। উত্তর থেকে দক্ষিণ বা মধ্যমণিও দৃষ্টিগোচর হয়নি কেউই। চলুন ঘুরে দেখা যাক একবার কয়েকটা।
১. তরুন নিকেতনঃ- রাসবিহারী
দক্ষিণ কলকাতার হোটেল রাজের উলটো দিকে লেকমলের দিকে এক প্রাচীনতম হোটেল। বছর শ'য়েকের পুরোনো হোটেল। দাম কম আপনার ওই দামী রেস্তরাঁর মতো জিএসটি নেই শুধু আছে স্বাদ তবে বলাই বাহুল্য ভীড়ের কোনো সীমা নেই জনা ১৫-২০ বসা গেলেও আপনার স্বাদ বা স্বাধ সবই শান্তি পাবে।
এক ঝলকে দামের নমুনা -
ভাত,ডাল,বেগুন ভাজা এটা ফিক্সড এবার ধরুন আপনি চিংড়ির(২পিস) মালাইকারি নিলেন, আপনার সব সমেত ধরে রাখুন ৭০-৮০টাকা বিল হবে আর বলে রাখি মাছের তেল দিয়ে লাল শাক আহহা জন্মজন্মান্তরেও ভুলব না। এটার জন্য আলাদা ৩৫/- ঘুরে আসতে পারেন একবার যদি চান তো অভিজ্ঞতার জন্য।
২. আদর্শ হিন্দু হোটেলঃ- গড়িয়াহাট
এই নাম টা বোধ হয় প্রতিটা সদ্যজাত শিশুও জানে তাদের বাড়ির ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে এই সব নামের অসংখ্য হোটেল কিন্তু না আসল টি হল ৬০বছরের পুরোনো। আহহা সেকি স্বাদ মনে হবে হাল্কা ঝোলের পল্কা স্বর্গে আছি।
দেখেনি মেনুকার্ড থুরি কি কি আছে -
ভাত,ডাল,আলুভাজা,চচ্চড়ি সব সবজি দিয়ে এটা হল কম্পালসরি পার্ট।
বাকি ধরুন ট্যাঁঙড়া টু কই বা চুনো মাছ ওই কুমড়ো, বেগুন, আলু দিয়ে সেও পাবেন বই কি।
এবার আসা যাক উত্তরে,
৩. স্বাধীনভারত হিন্দু হোটেলঃ- মহাত্মা গান্ধী রোড (জেরক্স গলি)
বছর ৬০-এর পুরোনো এ দোকান শোনা গিয়েছে সুভাষচন্দ্র বসু টু চিত্তরঞ্জন দাশ সবাই এনার ভক্তই বলা যায়। (১৫ই আগস্ট ২০১৭ এর আনন্দবাজার -এর রবিবাসরীয় তে এর উল্লেখ আছে)
প্রধান আকর্ষণ বলতে পারেন -
ঘাঁটা চচ্চড়ি মাছের মাথা দিয়ে বা তপসে ফ্রাই তবে এগুলো ওই আর্লি আওরাসের লোকদের জন্যই বরাদ্দ।
তবে আপনি যদি কলাপাতায় অভ্যস্ত না থাকেন তবে স্টিল প্লেট দেওয়া হবে কিন্তু আলাদা পয়সা তো লাগবেই।
এবার চলুন মধ্যমণি তে -
৪. হোটেল সিদ্ধেশ্বরী আশারামঃ- এসপ্ল্যানেড নেমে রানী রাসমণীর বাড়ির দিকে যে এস.এন.ব্যানার্জি রোড পরে সেখান থেকে মিনিট দশেক।
আপনি দেখে বুঝবেন এখানেও যে ভালো হোটেল আছে খুব ঘিঞ্জি এলাকা দিয়ে ওপরে।
প্রধান আকর্ষণ-
কবিরাজি ঝোল (রুই মাছ দিয়ে পাতলা ঝোল একদম দাবাই হিসেবে যে ঝোলটা খান ঠিক তেমন)। সাথে চাটনি (আনারসের প্লাস্টিক চাটনি) উফফ। তবে এদের ভাপা রুই আর খাসির কোনো তুলনা হবে না। দেখে আসুন তবে চোখ না পেট দিয়ে।
দাঁড়ান দাঁড়ান আর মিটার শ'য়েক তারপর আর একটা।
৬. জগার হোটেলঃ- পুরো নাম হল কিয়ে জগন্নাথ ভোজোনালয়।
উফফ মাগো সেকি ভীড়। দয়া করে কোনো ছুঁইমুই লোক আনবেন ভবিষ্যৎ -এ মুখ দেখাদেখি বন্ধ হলে আমি দায়ী নই।
"ডিনারে যত উপাদেয় খাদ্যদ্রব্যই থাকুক না কেন , সঙ্গী ভালো না হলে তা সুস্বাদু মনে হবে না। ”-জেমস হুইট
ঠিক তেমনি আশাকরি বুঝেছেন সঙ্গী বাছবার আর স্বাদ আস্বাদনের সুসম্পর্ক টা।
অনুপ্রেরণায় ইন্দ্রজিৎ লাহিড়ীর একটি ব্লগ এবং গুগলসার্চ।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন