আদিত্য ঘোষ, কলকাতাঃ বাংলার রোমিও জুলিয়েটরা দর্শককে রাত জাগিয়ে ওয়েব সিরিজের প্রতিটা পর্ব দেখতে বাধ্য করেছে। শুধু তাই নয়, দুই নবাগত অভিনেতা অভিনেত্রী বাংলা সিরিজের মুখ্য চরিত্র হয়ে উঠেছে। বাংলা বাজারে ভাল সিনেমা বা ওয়েবের কদর আরও একবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখানোর চেষ্টা করেছে পরিচালক অর্পণ গড়াই। ক্যামেরার পিছনে এবং সামনে আরও একবার উজ্জ্বল ভূমিকার অবতীর্ণ হয়েছেন বাংলা সিনেমার 'ডন' অনির্বাণ ভট্টাচার্য। তবুও তালমার রোমিও এবং জুলিয়েট যথাক্রমে দেবদত্ত এবং হিয়া বাঙালি দর্শক মননে মিষ্টি প্রেমের উপাখ্যান হয়ে থেকে যাবে চিরকাল। যেখানে একটা সহজ সরল প্রেমকে স্রেফ টুকে দেওয়া হয়েছে সিনেমার পর্দায়। কোনও বাড়তি অলঙ্করণ নেই। কোনও উপমা-উপঢৌকন নেই। স্রেফ জীবনকে পর্দায় দেখালে যেমন মনে হয় ঠিক সেইরকম।
অভিনেতা দেবদত্ত রাহার হাতেখড়ি থিয়েটারের অভিনয় দিয়ে। তবে এই মুহূর্তে তিনি মঞ্চ থেকে বহুদূরে। তিনি আটপৌরেকে ফোনে জানালেন যে, ' থিয়েটার ছেড়েছি প্রায় তিন বছর, এখন বড় পর্দায় কাজ করার জন্য মুখিয়ে আছি। বেশ কিছু সিরিয়ালের প্রস্তাব পেলেও এই মুহূর্তে সিনেমা বা ওয়েব সিরিজের অভিনয়ের জন্যই ফোকাস করছি।' মফঃস্বলের ছেলে দেবদত্তের রানা হয়ে উঠতে বিশেষ একটা অসুবিধে হয়নি। একদম সাবলীল ভাবে পর্দায় রানা মুজমদারকে ফুটিয়ে তুলেছেন দেবদত্ত। পাহাড়ি রাস্তায় বাইক চালিয়ে ছুটে গিয়েছে প্রেমের কাছে আবার ফুটবল মাঠে দাপিয়ে বেড়িয়েছে পায়ের জাদু দিয়ে। প্রেমে আঘাত পেয়ে রেল লাইনে গলা দিতেও সে পিছপা করেনি। দিনের শেষে রানাদা অনেকেরই আশ্রয় হয়ে উঠেছে। প্রসঙ্গত দেবদত্ত এর আগে দুটি হিট বাংলা ওয়েব সিরিজে কাজ করেছে। একটি ইন্দুবালা ভাতের হোটেল এবং অন্যটি বিজয়া। এছাড়াও দেবদত্তের ঝুলিতে রয়েছে বাংলা সিরিয়ালে কাজ করার অভিজ্ঞতা। তাঁর কথায়, ' আমি এই বছরে অন্তত আটটি সিরিয়ালের অফার ফিরিয়েছি।' পাল্টা প্রশ্ন করায় তিনি আরও জানালেন, ' এই মুহূর্তে শুধুমাত্র বড় পর্দায় কাজ করার কথা ভাবছি। এই মুহূর্তে সিরিয়াল করার ইচ্ছে নেই। তবে ভবিষ্যতের কথা ভবিষ্যৎ জানে।' এখানেই শেষ নয়, তিনি আরও জানালেন বাংলা ছাড়াও যে কোনও ভাষায় তাঁর কাজ করার ইচ্ছে আছে। সুযোগ পেলে অবশ্যই কাজ করবেন বলে তিনি জানালেন।
উত্তরবঙ্গের প্রেক্ষাপটে গোটা ওয়েব সিরিজটি সাজানো হয়েছে। গল্পে উঠে এসেছে স্থানীয় রাজনীতি এবং হিংসার টুকরো চিত্র। ফুটে উঠেছে শেক্সপিয়ারের গল্পের রূপ। এই ওয়েব সিরিজ দিয়ে বাংলা সিনেমার জগতে দাগ কেটেছে হিয়া রায় যার গল্পে নাম জাহানারা। আটপৌরের মুখোমুখি হয়ে তিনি জানালেন, ' এটি আমার কাছে খুব বড় কাজ ছিল এবং আমি চেষ্টা করেছি নিজের সবটা দিয়ে কাজটা করার।' একটু থেমে তিনি আরও জানালেন যে, ' আমি বাস্তব জীবনে অনেকটা জানাহারার মতোই, ছোট ছোট কথায় রেগে যায়! শুধু তাই নয় গল্পের নায়িকার সঙ্গে আমার বাস্তব জীবনের অনেকটা মিল আছে তাই চরিত্রের জন্য আগে থেকেই নিজেকে তৈরি করে রেখেছিলাম।' তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হল, ' এই ওয়েব সিরিজের জন্য এমন কিছু স্মৃতি আছে যা সারাজীবন থেকে যাবে?' হিয়া একটু ভেবে জানালেন যে, ' এই সিনেমার জন্য বাইক চালানো শিখেছি। এর আগে আমি বাইক চালাতে পারতাম না।'
মূলত মডেলিং জগতের পরিচিত মুখ হিয়ার ঝুলিতে ওয়েব সিরিজে কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকলে তালমার রোমিও জুলিয়েকেই বিগ ব্রেকিং বলে উল্লেখ করছেন তিনি। তাঁর কথায় , ' আমি নিজের সবটা দিয়ে কাজ করার চেষ্টা করেছি আবার বকাও খেয়েছি। পুরো ইউনিটটা কাজ করতে খুব সাহায্য করেছে। শুধু তাই নয় শুটের আগে বেশ কিছু ওয়ার্কশপ আমাকে তৈরি করতে সাহায্য করেছে।' তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হল, ' অন্তরঙ্গ দৃশ্য করতে কোনও আপত্তি ছিল না?' তিনি উত্তরে জানালেন, ' না। গল্পের প্রয়োজনে করতে আপত্তি নেই। আর দেবদত্তের সঙ্গে আমার বন্ডিংটা বেশ ভাল তাই সুবিধে হয়েছে।'
এই ওয়েব সিরিজ বাংলা ওয়েব সিরিজের জগতে নতুন দিশা দেখিয়েছে। অনির্বাণ আবারও বাংলা সিনেমার ডন হওয়ার তকমা নিজের গায়ে লাগিয়েছে। এছাড়াও সুন্দর করে ফুটে উঠেছে অন্তরঙ্গ দৃশ্য। যেখানে উগ্রতা নেই, ভালবাসা আছে। হইচই প্ল্যাটফর্মের নতুন এই সিরিজে অনির্বাণ, দেবদত্ত, হিয়ার পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে উজান চট্টোপাধ্যায়, শিলাদিত্য চট্টোপাধ্যায়, অনুজয় চট্টোপাধ্যায়, পায়েল দে, জয়দীপ মুখোপাধ্যায়, কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়, দেবদাস ঘোষ, বুদ্ধদেব দাস। চিত্রনাট্য লিখেছেন দুর্বার শর্মা।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন