সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

শচীন কর্তাকে সবচেয়ে বড় আঘাত দিয়েছিলেন ছেলে রাহুল দেব বর্মন ও লতা মঙ্গেশকর!?



দিব্বি গানের সুর দিচ্ছিলেন মানুষটা | মিউজিক রুমে বসে যাঁরা শুনছিলেন তাঁদের সবার কান-মন কানায় কানায় ভরে উঠছিল সুরের ছোঁয়ায় | অনেক দিন পরে ‘মিলি’ ছবির গানে নিজেকে যেন নতুন করে উজাড় করে দিচ্ছিলেন শচীন কর্তা | এমনিতেই শচীন দেব বর্মনের গান মানেই মেঠো সুর | মিঠে সুর | বাবা নবদ্বীপ চন্দ্র ছিলেন শচীন কর্তার গানের গুরু | ত্রিপুরা সম্বন্ধে এমনিতেই প্রবাদ আছে, সেখানকার রাজবাড়িতে রাজা-রানি, কুমার-কুমারী থেকে দাস-দাসী পর্যন্ত সবাই গান জানে | গান গায় | সেই পরিবেশে বড় হওয়া রাজকুমার শচীন কর্তা যে সুরের রসে মজে থাকবেন এবং মজাবেন সেটাই তো স্বাভাবিক |
তাহলে হঠাৎ এই বিশেষ ছবির গান নিয়ে আলোচনা কেন? আসলে তার বছর খানেক আগে ঘটে যাওয়া দু’টি ঘটনা ভীষণ আহত করেছিল শচীন দেব বর্মনকে | তার পরেই এই ছবির গানে কর্তা নিজেকে আবার নতুন করে প্রমাণ করতে বসেছিলেন নিজের কাছে | বরাবর দু’জনকে নিয়ে খুব গর্ব ছিল তাঁর | এক, ছেলে আর ডি বর্মন | দুই, লতা মঙ্গেশকর | ঘটনাচক্রে দু’জনেই তাঁকে প্রচন্ড আঘাত দিয়েছিলেন | সেই আঘাত এতটাই ছিল যে কর্তা ঠিক করেছিলেন, গান থেকে নিজেকে সরিয়ে নেবেন | কিন্তু ত্রিপুরার রাজকুমার ময়দান থেকে হেরে ফিরবেন, এটাও তো হওয়ার নয় | তাই ‘মিলি’ তাঁর হাতের শেষ অস্ত্র |
কিন্তু ময়দান ছাড়ার মতো কী এমন ঘটেছিল শচীন কর্তার সঙ্গে? মুম্বইয়ে শচীন কর্তার খুব প্রিয় মহিলা শিল্পী ছিলেন লতা মঙ্গেশকর | লতার কথা উঠলেই তিনি বলতেন, ‘আমায় হারমোনিয়াম দে | লতাকে এনে দে | আর আধা ঘন্টা সময় দে | আমি সুর করে দিচ্ছি |’ লতাজির ওপর এতটাই ভরসা করতেন যে গীতা দত্ত প্রথম পছন্দ হলেও যাবতীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাতেন লাতাজির উপর | তাঁর মতে, ‘ওই মাইয়া আমায় জাদু করসে | ওরে ছাড়া আঁধার দেহি আমি.’ পরে এই লাতাজি-ই প্রচন্ড অপমান করেছেন শচীন কর্তাকে | কোনো সুরকার কখনও নিজের তৈরি স্বরলিপি কাছছাড়া করেন না | শচীন কর্তা-ও এটাই করতেন | কিন্তু লাতাজি যখন সুরের দুনিয়ার মধ্য গগনে তখন বেয়াড়া আবদার করেছিলেন | তাঁর দাবি, গানের নোটেশন তাঁর হাতে ছেড়ে দিতে হবে | প্রয়োজনে তিনি সুর এদিক-ওদিক করে নেবেন | এই দাবি মানা কোনো সুরকারের পক্ষে সম্ভব? বিশেষ করে শচীন কর্তার মতো রাজবংশীয় ঘরানার মানুষ | যিনি বরাবরের স্বাধীনচেতা |
সুরের স্বরলিপির দখলদারি নিয়ে প্রথম দ্বন্দ্বের শুরু | কর্তা লতাজিকে ভালো করে বোঝানোর চেষ্টা করলেন, এই আবদার মানা সম্ভব না | জিদ্দি লতাজিও অনড় তাঁর চাহিদা থেকে | নিরুপায় কর্তা বাধ্য হয়ে লতাজির বদলে নিলেন তাঁর বোন আশা ভোঁসলেকে | সেই সময় শচীন দেবের মতো অনেকেই লতাজিকে তাদের গান থেকে বাদ দিয়েছিলেন | এই ধাক্কায় মন ভেঙ্গে গিয়েছিল কর্তার |
এর কয়েক মাস পরেই ঘটল দ্বিতীয় ঘটনা. দেব আনন্দ আর শচীন কর্তার জুটি প্রথম থেকেই সুপারহিট | দেব আনন্দ পরিচালনায় আসার পর ‘হরে রাম হরে কৃষ্ণ’ বানাবেন বলে ঠিক করলেন | সুর দেবার জন্য ডাক পড়ল শচীন কর্তা আর পঞ্চমের | চিত্রনাট্য শোনার পর দু’জনে দু’জনের মতো করে সুর শোনালেন | পঞ্চমের গান বেশি পছন্দ হলো দেবের | তিনি শচীন কর্তাকে খুব নরম গলায় জানালেন, ‘এই ছবিতে পঞ্চমের সুর বেশি ভালো মানাবে | তাহলে পঞ্চম সুর দিক |’ হাসিমুখে সম্মতি দিলেন কর্তা | ছেলের উন্নতি দেখলে কোন বাবা না খুশি হয়?
আগ্রহ নিয়ে একদিন রেকর্ডিং রুমে ছেলের সুর-ও শুনতে এলেন | পঞ্চম সেদিন ‘দম মারো দম’ গান তোলাচ্ছিলেন আশাজিকে | দু’লাইন শোনার পরেই রাগে মুখ লাল এস ডি বর্মনের | দু’লাইন শুনেই রাগে মুখ লাল এস ডি বর্মনের | চেঁচিয়ে উঠে পঞ্চমকে বললেন, ‘আমি এই গান তরে শিখাইছি? মাঠের গান ভুলে, বাংলার গান ভুলে, তুই ইংরিজি গানের নকল কইরা সুর করস! আমার সব শিক্ষা বৃথা গেল | তুই আমার কুলাঙ্গার ছেলে |’ রাগে, দুঃখে, ক্ষোভে কর্তা যখন মাথা নিচু করে বেরিয়ে এলেন, সবার দেখে মনে হলো, রাজা যুদ্ধে হেরে বেরিয়ে যাচ্ছেন |    
রেকর্ডিং রুম ছেড়ে বেরিয়ে এসে ক’দিন গুম হয়ে বাড়ি বসে রইলেন | তারপর শুরু করলেন ‘মিলি’ ছবির গান | সুর দিতে দিতেই paralytic attack হলো কর্তার | কোমায় আচ্ছন্ন বাবার মাথার কাছে বসে ‘মিলি’র গানে সুর দিচ্ছেন পঞ্চম | এই সময় কলকাতায় ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগানের খেলা চলছে | কর্তা আজন্ম ইস্টবেঙ্গল-এর সাপোর্টার | দল হারলে নাওয়া-খাওয়া বন্ধ করে বাচ্চাদের মতো হাউমাউ করে কাঁদতেন | কর্তার অসুস্থতার সময় ইস্টবেঙ্গল ৫-০ গোলে হারালো মোহনবাগানকে | পঞ্চম সেই খবর চেচিয়ে কর্তার সামনে বলতেই কোমায় আচ্ছন্ন এস ডি চোখ খুলেছিলেন একবারের জন্য! তারপর সেই যে চোখ বন্ধ করলেন, আর খোলেননি | চলে যাওয়ার দিনটি পর্যন্ত – ৩১ অক্টোবর, ১৯৭৫ |

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ভূতে ভয় পেলেও, ‘ সেক্সি ভূত’-এর চরিত্রে অভিনয় করতে ভয় পাননি সায়ন্তনী

টলিউড ডিভা সায়ন্তনী গুহঠাকুরতা ডেবিউ করে ফেললেন দক্ষিণী সিনেমায়। যদিও কিছুদিন আগেই তিনি আটপৌরেকে সে ব্যাপারে জানিয়েছিলেন। কিন্তু সম্প্রতি এই হোলিতে সিনেমাটি রিলিজ করার পর থেকেই তিনি খবরের শিরোনামে। যদিও তার কারণ, তিনি এই প্রথম একটি ভূতের চরিত্রে অভিনয় করেছেন। শুধু তাই নয়, একটি ‘ সেক্সি’ ভূতের চরিত্রে এবং তাঁকে নিয়েই গল্পটা গড়ে উঠেছে।  সিনেমার নাম, ‘ চিকাটি গাডিলু চিঠাকোটুন্ডু’। তেলেগু সিনেমায় কাজ করে বেশ উচ্ছ্বসিত সায়ন্তনী। এখানেই শেষ নয়, তেলেগু ইন্ড্রাস্টির ভূয়সী প্রশংসা করেছেন তিনি। তাঁদের কাজের ধরন তাঁর বেশ পছন্দ হয়েছে । ইতিমধ্যে আরও একটি দক্ষিণী সিনেমার প্রস্তাবও পেয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। গল্পটিতে দেখা যায় দুই যুগল জুটি ছুটি কাটাতে গিয়ে আটকে যায় একটি ভৌতিক বাড়িতে।  সেখানে তারা একটি সেক্সি ভূতের পাল্লায় পরে। তারপর গল্প আস্তে আস্তে অন্যদিকে মোড় নেই।  সায়ন্তনী আটপৌরেকে জানালেন , ‘’ আমাকে অনেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় মেসেজ করে এই সিনেমার ব্যাপারে জানিয়েছেন! তাঁদের আমার চরিত্রটাও ভাল লেগেছে।‘’ ‘’ আপনাকে কেউ যদি রিয়েল লাইকে সেক্সি বলেন, সেটা আপনি কীভাব...

পুজো মিটলে কী করে থাকবেন ফিট, উপায় বাতলে দিলেন বিশিষ্ট পুষ্টিবিদ এবং যাপন সহায়ক ডাক্তার অনন্যা ভৌমিক

  আশ্বিনের শারদপ্রাতে বাঙালির পাতে ভরে উঠেছে হরেক রকমের খাবার। ঠাকুর দেখার সঙ্গে হরেক রকমের খাবার খেতেই হবে। রোল, চাউমিন, মোগলাই, চাইনিজ, বিরিয়ানি, ফুচকা এবং আরও কত কী! সারাবছর যারা শরীরচর্চায় মেতে থাকেন, খুব নিয়ম করে খাবার খান তারাও এই সময়টা একটু বেনিয়ম হয়ে পড়েন। তবে কুচ পরোয়া নেহি, পুজো মিটলেই আবার কী করে নিজের শরীরকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনবেন সেই কথায় আটপৌরেকে জানালেন বিশিষ্ট পুষ্টিবিদ এবং যাপন সহায়ক ডাক্তার অনন্যা ভৌমিক।  ১) পুজো মিটলেই আমাদের ফিরতে হবে আবার স্বাভাবিক জীবনে।  তাই পুজোর হ্যাংওভার কাটিয়ে নিতে ভীষণভাবে দরকার পড়বে প্রচুর পরিমাণ জলের। জল শরীরের বিষক্রিয়া দূর করতে সাহায্য করে। শরীরের প্রয়োজন মতো দিনে অন্তত তিন থেকে চার লিটার জল খেলে শরীর সুস্থ থাকবে। তবে যাদের বেশী জল খাওয়া বারণ আছে তারা অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন। এছাড়া বাকিরা দিনে চার লিটার পর্যন্ত জল পান করলে শরীরের স্বাভাবিক কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রিত থাকবে।  ২) মরশুমি ফল খাওয়ার অভ্যাস করুন। এছাড়াও নিয়মিত শাকসবজি খেতে হবে। ফল এবং শাকসবজিতে প্রচুর পরিমানে ফাইবার এবং আন্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা শরীরকে আবার স...

পনেরো মিনিটেই ফিট থাকার রহস্য, উপায় বাতলে দিলেন যোগগুরু

  আটপৌরের নিজস্ব প্রতিবেদন, নৈহাটিঃ  শরীরকে মন্দিরের আখ্যা দেওয়া হয়। আর সেই শরীরকে সর্বদা ঠিক রাখতে আমরা কত পন্থায় না অবলম্বন করে থাকি। আজকাল ইঁদুর দৌড়ের যুগ, আর এই যুগে সময় পাওয়া একটা বিরাট চ্যালেঞ্জিং বিষয়। সময় বের করে শরীর চর্চা করার মতো সময় আমাদের কতজনের হাতেই বা আছে? মনের সুখে ছুটির দিন হাঁটলেই কি আমাদের শরীর ঠিক থাকবে নাকি সপ্তাহে প্রতিদিন জিমমুখী হতেই হবে ? যেমন আইটি সেক্টরে কর্মরত পার্থ সারথী চক্রবর্তী সোম থেকে শুক্র অবধি দম ফেলার সময় পায় না, অথচ কিছুদিন হল সে ঘাড়ের ব্যথায় কাবু। আবার সদ্য বিয়ে করা কৌশিক ভট্টাচার্য ইদানীং অফিস ফেরত সস্ত্রীক হাঁটতে বেরিয়ে নিজেকে ফিট ভাবছেন অথচ গত তিনমাসে তার দশ কেজি ওজন বৃদ্ধি পেয়েছে। তবুও সে নিরুপায়, অফিস ফেরত ছাড়া তার সময় নেই। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে গেলে শরীর চর্চা আর হবে না। এই সময়ের অভাব অনেকেরই তা বলে কী শরীর সে কথা শুনবে। শরীরে বাসা বাঁধছে জটিল রোগ। দিনের পর দিন ওষুধ খেয়েও সেই রোগ সারছে না। তবে ইচ্ছে থাকলে উপায় আছে, বলছেন বিশিষ্ট যোগ গুরু রাহুল তিওয়ারী। আটপৌরের মুখোমুখি হয়ে তিনি জানালেন যে খুব স্বল্প সময়ে ফিট থাকার জন্য কিছু প...