বছর দশেক পর (পর্ব- ১ ) – আদিত্য
তোমার
গল্পগুলো যতই পুরনো হচ্ছে, ততই তারা সবীজ এবং দীর্ঘ হচ্ছে। শুধু তুমি কেন ? আমিও তো আছি প্রতিটা পাতায়, প্রতিটা মুহূর্তে, প্রতিটা বিরতিতে। একবুক প্রশ্ন নিয়ে আজও বেঁচে আছে নভেম্বর
বিপ্লব। আজও প্রত্যেকটা সকাল কাটে নিরামিষে। ঠাকুরঘরে বেজে ওঠে লক্ষ্মীর পাঁচালি। হারমনিয়ামে আর কেউ গান বাঁধে না। ছোট্ট মেয়েটার কান্নাও এখন মিলিয়ে গেছে
অন্য কোনও শহরে। বুড়ো-বুড়ির সংসারে এখন শুধুই শান্তি। ঠিক
আগের
মত । একটা পাতা ঝরা মরসুমে আবার একা এবং
নীরব ঘোষবাড়ি। তুমি ছিলে বলেই সারাদিন রোদ থাকত দালানে। কুয়াশা তখন জাপটে ধরেনি শহরকে, ঠিক তখন তুমি এলে। এসে বললে,
“ কেমন আছিস ?“
-
“ভাল, আর তুমি ?”
-
“ভালই । মোটা হয়ে গেছিস !”
-
“ তুমি কি ডায়েট করছ ?”
-
“কেন ? রোগা হয়েছি বলছিস ! “
-
“ না ! একদম না। কুমড়ো-পটাশের মত দেখাচ্ছে , ডায়েটিংটা শুরু কর ।“
-
“যা পালা, বাজে ছেলে “
তুমি
চিরকাল আমার কাছে স্পেশাল ছিলে। ঠিক স্পাইসি ডিসের
মত। বছরের এই সময়টাতেই কিন্তু আমাদের দেখা
হত। সারাবছর আমাদের কথা হয় না, কিন্তু এই সাতটা দিন আমারা খুব একান্ত
হয়ে যেতাম। হয়ত শুরু থেকেই আমাদের সম্পর্কটা আপেক্ষিক
ছিল।
সেদিন
হয়ত বোধন। তুমি এলে ঠিক চেনা ছন্দে। টোল পরা গালে লেগে আছে আত্মীয়তা। আমি তখন মজে আছি আটপৌরেতে। চরম ব্যস্ত আমার শিডিউল। কাউকে পাত্তা দেওয়ার ইচ্ছে নেই। তুমি হয়ত আবারও দিন সাতেকের অতিথি। কিন্ত
কে জানত, তুমি যাওয়ার আগে কাঁদিয়ে দিয়ে যাবে। ভুলিয়ে দিয়ে যাবে সব অভিমান, মুছিয়ে দিয়ে যাবে একটা শীতের
শিহরণ। ভালবাসতে শিখিয়ে যাবে এই ছেঁড়া শহরকে, স্বপ্ন বুনতে ভুলিয়ে দেবে কল্পনাকে। কে জানত তুমি আর অতিথি নয় , প্রেমিকা হয়ে যাবে কোনও নামহীন কবিতার।
তোমাকে
বর্ণনা কারার মত শব্দ হয়ত আমার কাছে নেই। বয়সের ছাপ তোমার কথায়। যৌবন আস্তে আস্তে উধাও হচ্ছে। উধাও হচ্ছে গায়ের
রং। শুধু একই আছে তোমার গায়ের গন্ধটা, যেটা আগেও পেতাম। জয়ী নামটা তো একটা মোড়ক। ওপারে
রয়েছে তোমার আসল পরিচয়। জানতে পারেনি কেউ। তুমি যখন এসে বললে –
-
“ কেউ যদি জানতে পারে, তাহলে খুব বাজে হবে “
-
‘’কেউ জানতে পারবে না “
-
“ তুই তাহ্লে বাইরের দরজা দিয়ে বেরবি”
-
“আচ্ছা! তাই হবে “
-
“ ঠিক বিকেল পাঁচটায়”
-
“ বেরনোর আগে একটা মিস কল দিও “
-
“ঠিক আছে “
জয়ী
আমাদের কলটা সত্যিই মিস হয়ে গেছে। আমারা কেউই কাউকে বুঝতে দিতে চাইনি যে আমারা কতটা
আপন। পারিবারিক পলিটিক্সে আটকে গেছে সময়টা।
তুমি যেখানে দাঁড়িয়ে বলেছিলে সব ভাল হবে, সময়টা সেখানেই থমকে আছে। সেখানেই পরে আছে
আমার উপন্যাসের সূচনাটা। না, আমাদের উপন্যাসের সূচনাটা।।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন