-তোমার মনে আছে সেই প্রথম দিনটা,যেদিন তুমি প্রথম এলে এই বাড়িতে?
—হুম্ মনে কেন থাকবে না!!!
—তুমি যখন এলে,মেন গেটের সামনেটায় দাঁড়িয়ে ছিলাম আমি।ঢোকার মুখেই বাঁদিকে।ঢুকেই আমার গালটায় আলতো করে হাতটা বুলিয়েছিলে।
—বাবাহ্!!!তোরতো দেখছি হুবহু সবটা মনে আছে...
—তোমাকে ভুলবো বলে তো ভা...
মানে মনে রাখিনি...
—তাই বুঝি?
—হ্যাঁ।সত্যি বললাম।
জানো তোমার সৌন্দর্য কেন এতোটা গভীর?
—কেন বলতো?
—তোমার ঠোঁটের নীচের বাঁদিকে ওই আঁচিল।
হেঁসে উঠলো জয়ী।ওকে নিয়ে ভালো কিছু বললেই এমনটা করে ও।প্রতিবার।আর তাতেই প্রতিবার প্রেমে পড়ে রাতুল।
রাতুল ঘোষ।পেশা বা নেশা নিয়ে কথায় পরে আসছি।রাতুল থাকে শহর কলকাতা থেকে ঘন্টাখানেক দূরে এক মফস্বল অন্চলে।নামটা অপ্রাসঙ্গিক।
পুরনো আমলের দোতলা বাড়ি।বয়স প্রায় দুশো-আড়াইশো।বিশাল বড় দালান।বাঁধানো বড় উঠোন।কড়ি-বড়গার ঘর।এতো বড় বাড়িতে মানুষ বলতে সাতজন।রাতুল,ওর বাবা,মা এবং দিদি।এক জ্যাঠু এবং দুই জ্যাঠিমা।আর রাতুলের দুই তুতো দাদা এবং দিদি বাইরে থাকেন।
এই এতো বড় বাড়িটাতে রাতুলের সবচেয়ে প্রিয় হল দোতলায় দক্ষিণের বড় ঝুল বারান্দা টা।ছোটবেলা থেকেই রাতুলের ওটার প্রতি বেশ টান।বড় হয়ে বারান্দা লাগোয়া ঘরটাতেই রাতুল থাকে।প্রথম প্রেম বা প্রথম সিগারেট-অনেক প্রথমের সাক্ষী ওই দক্ষিণখোলা ঝুল বারান্দা।
বারান্দা থেকে বেশ কিছুটা দূরে বাড়ির বাউন্ডারি পেরিয়ে একটা প্রায় একশো বছর পুরোনো বটগাছ।ওই গাছের দিকে তাকিয়ে সময় কেটে যায়।সারাদিন কতো রকমের পাখি।তাদের ডাক।রাজার হালে রয়েছে গাছটা সাথে প্রচুর ছায়া।
আর বাড়ির পিছন দিকটায় খিড়কি পেরোলেই অনেকটা বড় বাগান আর সাথে বাঁধানো ঘাটের পুকুর।
রাতুলের বয়স এখন ওই বাইশ কি তেইশ।লেখালেখির প্রতি গভীর টান।এখনকার ছেলেদের থেকে বেশ অনেকটা আলাদা।সাহিত্য,লেখালেখি,গান-বাজনা,থিয়েটার-এইসব নিয়েই থাকতে ভালোবাসে।
বলাবাহুল্য এই এতো বড় বাড়িতে এই যে সাতটি মানুষ তাঁদের তিনটি আলাদা আলাদা পরিবার।একসময় শরিকী কারণে বলতে গেলে মুখ দেখাদেখি ছিলনা।তবে এখন সেই অবস্হার বেশ খানিক পরিবর্তন হয়েছে।তবে হ্যাঁ হাঁড়ি আজও আলাদা এবং রাতুল সেটা ওর বোধ হওয়া থেকেই দেখে আসছে।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন