সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

 আকাশ, বৃষ্টি আর রথযাত্রা

 

রথের লোহার চাকার তলায় পিষ্ট হয়ে যাচ্ছে বৃষ্টির ভালোবাসা  বৃষ্টি দেখছেতার দুচোখের কোল বেয়ে অঝোর ধারায় নেমে আসছে শ্রাবণের বারিধারা  নোনতা জলের স্বাদ ওর ঝাল লাগা পাতলা ঠোঁটে  স্বপ্নালু দুই নয়ন থেকে নিটোল গালের মসৃণতায় পিছলে পড়ে মুক্তোর ন্যায় স্বচ্ছ অশ্রু বিন্দু ফুল পাখি আঁকা নয়নমনোহর সুতীর ফ্রকটার শুষ্কতাকেআর্দ্র করে তুলছেকান্না থামার কোন লক্ষণ না দেখে আকাশের চোখে ফুটে উঠছে হতাশা

আজ রথযাত্রা  সকাল থেকেই আকাশের মুখ ভার, তার সঙ্গে মাঝে মাঝেই ঝিরঝিরে বৃষ্টি আর মেঘের গর্জনেএক অন্য রকম পরিস্থিতির সূচনাভিজে বাতাস আর ভেজা মাটির সোঁদা গন্ধ মাখা মাদকীয় আবহাওয়ায় ভর করে অতিক্রান্ত দুপুরের নিস্তব্ধতাএখন বিকেলঅগুণতি মানুষের ভীড়ে, কোলাহলে, পাঁপড় ভাজার গন্ধে, নাগর দোলার যান্ত্রিক শব্দে, ফুচকা-আলুকাবলি-তেলেভাজার লোভনীয় স্বাদে রথযাত্রা জমজমাট

সারা সকাল, দুপুর ধরে অধীর প্রতীক্ষার শেষে বিকেল হতেই আকাশের হাত ধরে বৃষ্টি বেরিয়ে পড়েছে রথ দেখতে  আনন্দের আতিশয্যে রাস্তায় বেরিয়েই পায়ের গতির সঙ্গে মনের গতির সমতা বজায় রাখতে পারছে না দুজনেমন যেন উড়ে যাচ্ছে হাঁটার গতির সঙ্গে তাল না মিলিয়ে পথের বাঁক থেকে বাঁক পেরিয়ে অতি দ্রুত, ঝড়ের বেগে 

রেল ষ্টেশনকে পেছন ফেলে পাকা রাস্তা ধরে বাঁ-দিক ডান দিক করে কলেজ ছাড়িয়ে দক্ষিণে এগিয়ে পায়ে পায়ে ঢুকে পড়ল ওরা মেলার জন অরণ্যে  পাঁপড় ভাজার লোভনীয় গন্ধে জীবে জল এসে গেল ওদেরদোকানীর কাছ থেকে  পাঁপড় ভাজা কিনে খেতে খেতে বৃষ্টি আর আকাশ গা ভাসাল ভীড়ের স্রোতে কয়েক পা যেতেই ফুচকার টকের গন্ধে মন আনচান করে উঠল দুজনের  ওরা ফুচকার দোকান থেকে বেরিয়ে ঘুগনির দোকানের বেঞ্চিতে গিয়ে বসল    ঝাল-ঝাল গরম ঘুগনি হুস্-হাস্ শব্দে গলাধঃকরণ করে এক মুখ ঝালের স্বাদ নিয়ে নাগর দোলায় চেপে বসল ওরা

বেশ কয়েকবার পাক খাওয়ার পর নাগরদোলা থেকে নেমে আকাশ আর বৃষ্টি খেলনার দোকানে গিয়ে ঢুকল  হরেকরকম খেলনা দর্শন করে উদাস হয়ে গেল ওদের কোমল মন  অনেক বাছাই করে একটা বড়সড় পুঁতুল পছন্দ করল আকাশ  মার কাছ থেকে নিয়ে আসা টাকার অনেকটাই ওরা খাবার খেয়ে আর নাগরদোলায় চেপে খরচা করেই ফেলেছে; বাকি টাকা দিয়ে পুঁতুলটা কিনে পঞ্চম বর্ষীয়া বৃষ্টির হাতে তুলে দিল অষ্টম বর্ষীয়আকাশ

পুঁতুলটাকে বুকে আঁকড়ে ধরল বৃষ্টি  তার নিষ্পাপ কোমল মুখে খুশিরচ্ছটা লাগল  সেদিকে তাকিয়ে আকাশের মনটা আনন্দে নেচে উঠল  বোনকে যে সে খুব ভালোবাসে, বোনও যে দাদা বলতে অজ্ঞান 

খেলনার দোকান থেকে বেরিয়েএসে দুই ভাই বোনে ঠাকুরদালানের দিকে এগোতে লাগলহঠাৎই হুড়মুড় করে জনতার রশির টানে বিরাট রথটা ওদের সামনে এসে পড়ল  মানুষের বিশাল ভীড়ে, েঁচামিচি, হুড়োহুড়ি আর জগন্নাথের জয়ধ্বনির মধ্যে কানে এলো কারো শরীরে আঘাত লাগার ফলে ছিটকে বেরিয়ে আসা আর্তনাদ  মহিলাদের চীৎকার, কম বয়সীদের গালিগালাজ সব মিলে মিশে একাকার হয়ে গেলসেই বিশৃঙ্খল অবস্থার মধ্যে ভারী রথটার গড়িয়ে আসা দেখে কিছু মানুষ দৌড়ে সরে গেল নিজেকে বাঁচাতে, ঠিক তখনি ভীড়ের ধাক্কা সামলাতে না পেরে বৃষ্টির হাতের সদ্য কেনা পুঁতুলটা ছিটকে গেল রথের চাকার সামনে  অগণিত মানুষের পায়ের তলায় পিষ্ট হয়ে গেল প্লাস্টিকের সুন্দর পুঁতুলটা, পরক্ষণেই রথের চাকা গড়িয়ে গেল পুঁতুলটার পেটের ওপর দিয়েরথের চাকায় পিষ্ট হয়ে বিকৃত হয়ে গেল বৃষ্টির আদরের পুঁতুলটা  বৃষ্টি কেঁদে ফেললওর ছোট্ট নরম হৃদয়ের বাঁধ ভেঙ্গে ছিটকে বেরিয়ে আসতে লাগল কান্না

আকাশ বোনকে নানান ভাবে বোঝাতে লাগল, কান্না বন্ধ করার জন্য  কালকে আবার মার কাছ থেকে টাকা এনে মেলায় এসে  পুঁতুল কিনে দেবে এমন আশ্বাসও দিল, কিন্তু তাতেও বৃষ্টির চোখের বৃষ্টি থামার কোন লক্ষণ দেখতে পেল না সে

আস্তে আস্তে ভীড় পাতলা হয়ে গেলমানুষের জটলা ক্রমশঃ সরে যেতে লাগল রথের সঙ্গেস্বাভাবিক হয়ে উঠল মেলার পরিবেশ, তবু বৃষ্টির কান্নার অবসান নাদাদাকে দুহাতে জড়িয়ে ধরে এক দৃষ্টিতে থ্যাতলানো কাদা মাকা পুঁতুলটার বিকৃত শরীরের দিকে তাকিয়ে অঝোরে কেঁদে চললঅপারগ, হতাশাগ্রস্থ আকাশ বোনের মাথায় সান্ত্বনার হাত রাখলতার শূন্য দৃষ্টি হারিয়ে গেল মেলার মানুষের ভীড়েবোনের জন্য তার দুঃখ তে লাগল
----------
 


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

"যোগাসনের বিকল্প কিছু নেই" :শিবগঙ্গা টিঙ্কু গঙ্গোপাধ্যায়

  আজকাল সুস্থ থাকার জন্য আমরা বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করে থাকি। ইদানীং কালে খুব কম বয়সে হৃদরোগের কিংবা ডায়াবেটিসের সমস্যা থেকে আরও জটিল প্রাণঘাতী রোগ আমাদের শরীরে বাসা বাঁধছে। প্রতিদিন সময়ের তালে ছুটে চলার তাগিদে আমাদের জীবন ক্রমশ কঠিন হয়ে উঠেছে। আর এই কঠিন সময়ে শরীরচর্চার যে সময়টুকু পাওয়া যায়, আমরা অনেকেই জিমে গিয়ে ভারী ভারী লোহালক্কর তুলে থাকি আবার অনেকেই ভোরবেলা হেঁটে থাকেন। প্রাচীন কাল থেকে যোগঅভ্যাস আর প্রাণায়ামের সুখ্যাতি আছে। অনেকেই অভ্যাস করে থাকেন। অনেকের জীবনে   বদলে দিয়েছে যোগঅভ্যাস। তবে জিম না যোগঅভ্যাস এই নিয়ে তুমুল তর্কবিতর্ক আছে। নাকি শুধুমাত্র হাঁটলেই মিলবে অনেক রোগ থেকে মুক্তি? তর্ক চলবেই। অনেক বিশেষজ্ঞরা অনেক পরামর্শ দিয়েই থাকেন তবে কোভিড পরবর্তী সময়ে যোগঅভ্যাসের একটা বিরাট প্রচলন শুরু হয়েছে। বিশেষত একটা সময় বয়স্করা প্রতিনিয়ত যোগঅভ্যাস করে থাকলেও ইদানীং সববয়সীদের মধ্যে এই প্রচলন দেখা যাচ্ছে। যোগব্যায়াম বিশেষজ্ঞ শিবগঙ্গা টিঙ্কু গঙ্গোপাধ্যায় আটপৌরের মুখোমুখি হয়ে জানালেন যে," যোগব্যায়ামের বিকল্প কিছু নেই। প্রাণায়াম এবং যোগব্যায়াম একজন মানুষকে সম্পূর্নরূপে বদলে দিত...

হেমন্তের উষ্ণ পরশ মিশিয়ে তালমায় ফিরল রোমিও জুলিয়েট, ঠোঁটে ঠোঁটে ' ফুল বডি রিলাক্স'

  আদিত্য ঘোষ, কলকাতাঃ বাংলার রোমিও জুলিয়েটরা দর্শককে রাত জাগিয়ে ওয়েব সিরিজের প্রতিটা পর্ব দেখতে বাধ্য করেছে। শুধু তাই নয়, দুই নবাগত অভিনেতা অভিনেত্রী  বাংলা সিরিজের মুখ্য চরিত্র হয়ে উঠেছে। বাংলা বাজারে ভাল সিনেমা বা ওয়েবের কদর আরও একবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখানোর চেষ্টা করেছে পরিচালক অর্পণ গড়াই। ক্যামেরার পিছনে এবং সামনে আরও একবার উজ্জ্বল ভূমিকার অবতীর্ণ হয়েছেন বাংলা সিনেমার  'ডন' অনির্বাণ ভট্টাচার্য। তবুও তালমার রোমিও এবং জুলিয়েট যথাক্রমে দেবদত্ত এবং হিয়া বাঙালি দর্শক মননে মিষ্টি প্রেমের উপাখ্যান হয়ে থেকে যাবে চিরকাল। যেখানে একটা সহজ সরল প্রেমকে স্রেফ টুকে দেওয়া হয়েছে সিনেমার পর্দায়। কোনও বাড়তি অলঙ্করণ নেই। কোনও উপমা-উপঢৌকন নেই। স্রেফ জীবনকে পর্দায় দেখালে যেমন মনে হয় ঠিক সেইরকম।  অভিনেতা দেবদত্ত রাহার হাতেখড়ি থিয়েটারের অভিনয় দিয়ে। তবে এই মুহূর্তে তিনি মঞ্চ থেকে বহুদূরে। তিনি আটপৌরেকে ফোনে জানালেন যে, ' থিয়েটার ছেড়েছি প্রায় তিন বছর, এখন বড় পর্দায় কাজ করার জন্য মুখিয়ে আছি। বেশ কিছু সিরিয়ালের প্রস্তাব পেলেও এই মুহূর্তে সিনেমা বা ওয়েব সিরিজের অভিনয়ের জন্যই ফোকাস করছি।' মফঃস...

শীতের শহরে পারদ বাড়িয়ে দিলেন সায়ন্তনী, কালো পোশাকে ছড়িয়ে দিলেন মায়া

  শীতের ছুটিতে ছুটি কাটিয়ে ফিরলেন অভিনেত্রী সায়ন্তনী গুহঠাকুরতা। দক্ষিণ গোয়াতে জলকেলি করলেন উষ্ণতার সঙ্গে।  তাঁর কালো পোশাক পরিহিত ছবি মায়া ছড়িয়েছে সমাজমাধ্যম জুড়ে। এই শীতে তাঁর উষ্ণ ছবি শহর কলকাতার পারদ বাড়িয়ে দিয়েছে।  তাঁর এই গোটা ভ্রমণ স্পন্সর করেছিল ফার্ন হোটেল এবং ক্লিয়ারট্রিপ।  তাঁর ঝুলিতে একের পর এক হিট ছবির সারি। 'সমান্তরাল', 'উমা', 'এক যে ছিল রাজা'  কিংবা 'লালবাজার' মতো ওয়েব সিরিজে তাঁর সাহসী অভিনয় দর্শকদের কাছে তাঁর চাওয়া-পাওয়াটা বাড়িয়ে দিয়েছে। শুধু বড় পর্দায় নয়, ছোট পর্দায় 'কিরণমালা', 'জয়ী', 'সাত ভাই চম্পা'-এর মতো কাজ দর্শক আজও মনে রেখেছে। তিনি আগের চেয়ে অনেক পরিণত, অনেক বেশি কাজ নিয়ে বদ্ধপরিকর। অভিনেত্রী সায়ন্তনী গুহঠাকুরতা এখন শুধুমাত্র ভাল কাজের জন্য মুখিয়ে আছেন। মুখিয়ে আছেন বাংলা ইন্ডাস্ট্রিকে সুপারহিট কাজ দিতে। শুধু বাংলা কেন, বাংলা ছাড়াও বাকি ইন্ডাস্ট্রি যেমন হিন্দি কিংবা সাউথ ইন্ডাস্ট্রিতেও ভাল চরিত্রে কাজ করতে  তিনি প্রস্তুত। এছাড়াও তাঁর ঝুলিতে রয়েছে মায়া - এর মতো হিট বাংলা ছবি।  ত্রিভুজ রিলিজ করতে চলেছে আর কিছু...