তখন সবে বিকেল হচ্ছে। শহরটা আস্তে আস্তে উইকেন্ডের ছুটি কাটানোর জন্য ব্যাকুল
হয়ে আছে পশ্চিমে। আমি উবেরের সিটে বসে ভাবছি, এই বুঝি চেনা মুখগুলো সামনে আসবে।
বইয়ের দেশে আবার ভেসে যাব। পাশে বসে এক বন্ধু অনর্গল নেট ঘেঁটে যাচ্ছে । ডিজিটাল
মিডিয়ার যুগে এটাই তো স্বাভাবিক। বাইপাসে তখন ধুলো জমেনি, গাড়ির হর্ন তখন থাবা
বাসায়নি। আমি নিভৃতে অপেক্ষা করছি আরও একটা বইমেলার।
করুণাময়ী! একেবারে শহরের কানের পাশে। সেন্ট্রাল পার্ক এখন বিশ্ব বাংলার প্রতীক
। সারি সারি নিরাপত্তারক্ষী। ভেলপুরি, পাঁপড়ি চাট আর বাসের লাইন একেবারে ঢোকার
মুখে। ভেবেছিলাম, প্রতিবারের মত পুরনো বইয়ের সম্ভার দেখতে পাব। পোস্টার নিয়ে বসা
সেই তরুণ যুবক এবার কই ? কোথায় গেল বইপ্রেমিদের ভিড় ? সেটাও কি ভিড় হয়ে গেছে ?
বিক্ষিপ্ত আঁতেল এবং উচ্চমধ্যবিত্তদের ভিড় ছড়িয়ে- ছিটিয়ে । কফির দোকানে লম্বা
লাইন। ফুড কোর্টে ভিড় করেছে দেশি প্রেমিক-প্রেমিকা। ফ্রান্সের স্টলে ঢোকার জন্য
বিশেষ চেকিং। লিটিল ম্যাগাজিন প্যাভিলিয়নে এখন সেই এজেন্ট ধরার প্রচেষ্টা।
গুটিকয়েক নামী পাবলিশার্সে উপছে পড়ছে ভিড়। যদিও সেটা সাময়িক। কোনও এক নামী কবি
রমণীদের সঙ্গে সেলফিতে মগ্ন। কোথায় গেল সেই রক ম্যাগাজিনের স্টল ? গিটারটা
হারিয়েছে। গানগুলোও এখন নিরুদ্দেশে। মাছি মারছে বইয়ের স্টলগুলো। হাতকাটা ব্লাউজ
পরা নামী স্টলের মহিলা আঙ্করগুলোও কেমন নেতিয়ে পরেছে। বেশকিছু প্রবীণ নাগরিক হতাশ
হয়ে গাছতলায় বসে। সবকিছু কেমন ফ্যাকাসে।
ডিজিটাল মিডিয়া কী এর জন্য দায়ী ? নাকি স্থান পরিবর্তন ? নাকি এই জেনেরেশন ?
উত্তর নেই। হয়ত উত্তর দেবার লোকও নেই। শুধুই তো নিরাপত্তারক্ষীর ভিড়। মফস্বল থেকে
উঠে আসা কিছু পথভোলা মানুষগুলো এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে, চাতক পাখির মত।
আমি ভিড় হয়ে যাব। ভিড় হয়ে যাবে জয়ীও। শুধু পড়ে থাকবে একরাশ হতাশা, প্লাস্টিক,
সিগারেট এবং ভেলপুরি।।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন