সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ম্যাক্স পেরেরার গিটার


-------------------------------------------------------------------------------------------------------------------নীলান্ঞ্জন





সালটা তখন ১৯৯০।কলকাতা শহরের বুকে বাংলা ব্যান্ড বলতে ‘মহিনের ঘোড়াগুলি’ ছাড়া সেরকম আর কোনো নাম লোকে জানেনা। বাঙালী তখনো চায়ে ভেজা মারী বিস্কুট খেতে খেতে রক গান শোনাটা ঠিকঠাক রপ্ত করে উঠতে পারেনি। বিটলস বা জন লেনন তখনো ভাগ বসায়নি রবি ঠাকুর কিংবা রামকুমারের গানে। সেইসময়ের চার বন্ধু অভ্র,বিতান,শৌভিক আর ওদের লিডার তন্ময় মেতে আছে রক মিউজিক নিয়ে। ওরা কেউই কিন্তু এক কলেজে পড়েনি।এক কলেজ ফেস্ট এ গিয়ে ওদের আলাপ আর তারপর থেকেই ওরা বন্ধু হয়ে গেছে,আর আছে রক মিউজিক নিয়ে।
প্রায় ৪ বছর কেটে গেছে,কলেজ লাইফ প্রায় শেষ। বিতান খালি একটা পার্টটাইম জব করছে।বাকিরা কেউই সেরকম কিছু না।ওই দু একটা টিউশন পড়ানো ছাড়া।এই দিয়েই পকেটমানি হয়ে যায়।ওহো এখনো তো আলাপ করানো হয়নি এই গল্পের এই চার পাগলের সাথে।তাহলে গোড়া থেকেই বলি।ওদের এই পাগলামোটা আসলে Metronome নিয়ে।Metronome আসলে ওদের ব্যান্ডের নাম।শৌভিক metronome এর lead singer।এই ব্যান্ডের Bass Guitarist অভ্র বিটলসের অন্ধ ভক্ত।টিমের Lead Guitarist তন্ময়ের আবার গুরুদেব Bryan Adams।তন্ময় Double Hand Solo তেও তুখোড়।আর বিতান বাজায় Drums.Drums ছাড়া ও আর কিছুই বোঝেনা,গানটানের বিশেষ ধারধারেনা।
এবার আসল ঘটনায় আসা যাক।দিনটা ছিল ২২শে সেপ্টেম্বর। সময় তখন সন্ধ্যে ৭টা।তন্ময় এর বাড়ির গ্যারাজে ওরা তখন জ্যামিং করছে ওরা।ওরা ওদের প্র্যাকটিসটাকে বলে জ্যামিং। এটাই নাকি western culture।যাই হোক।খুব মন দিয়ে তন্ময় তখন Summer of 69 বাজাচ্ছে।হঠাৎ তন্ময় এর গিটার এর তারটা গেল ছিঁড়ে।তন্ময় তো ক্ষেপে আগুন।বলল,“একি!এই তো কদিন আগেই কিনলাম গিটারটা।এর মধ্যেই ১২টা বেজে গেল!” বিতান হতাশ ভাবে বলল,“যাহ্‌ শালা!আজকের জ্যামিংটা তো গেল পুরোপুরি”।শৌভিক বলল,“ব্যাস!আর কি!আবার নেক্সট উইক”। অভ্র কোনো কথা বলেনা।সবাই হা করে তন্ময় এর দিকে তাকিয়ে থাকে। তন্ময় এবার ব্যাপারটা বুঝতে পেরে বলে ওঠে, “ওহো!আমার মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে কোনো লাভ নেই!পরের হপ্তার কোনো ব্যাপার নেই!কালই মামার দোকান থেকে অন্য একটা ভালো দেখে গিটার কিনে আনব। কাল থেকেই আবার বসব।বিকেলে সবাই চলে আসবি সময় মত।That’s final.এখন কেটে পড় সব”।যে যার মতো বেরিয়ে গেল।তন্ময় আপনমনে বলল,“ধুত্তেরি!একটা কাজ হয়না ঠিকমত।বিরক্তিকর!নিজের লেখাটা নিয়েই বসা হল না”! এমনসময় দরজায় খটখটানির আওয়াজ।তন্ময় এর মামাতো ভাই অভি বাইরে দারিয়ে।তন্ময় বলল,“কিরে বাইরে দাঁড়িয়ে কেন। ভেতরে আয়”।অভি তখন বলল,“পিসির মুখে শুনলাম নতুন গিটারটা ভোগে পাঠিয়েছিস।তাই দেখতে এলাম যে Mr.Lenon এর রাগ কমলো কিনা”!
-“আবার লেনন বলা শুরু করলি তো!এবার কিন্তু মার খাবি!কি কাজের জন্য এসছিস সেটা বল”।
-“হ্যাঁ।শোন।কাল একবার বাবার দোকানে যাস।কটা নতুন গিটারের স্টক এসেছে।একবার গিয়ে দেখে আস্তে বলল বাবা”।
-“বাহ।এই তো একটা ভাল খবর দিলি।বেশ।কাল সকালেই যাব”।
অভি বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায় এরপর।
পরদিন সকালেই নিজের মামার দোকানে গিয়ে হাজির হয় তন্ময়।
-“মামা।ভালো তো সব।অভি বলেছিল গিটার এর নাকি কিছু নতুন স্টক এসেছে”।মামা তখন স্মিত হেসে বললেন,“হ্যাঁরে। সব ভাল।অভি বলল যে তুই আসবি।নতুন স্টক কিছু এসছে বটে। দ্যাখ কিছু পছন্দ হয় কিনা!পছন্দ হলে নিয়ে যা”।
-“সে এর বলতে!আজ এর না নিয়ে ফিরছি না!”
তন্ময় গিটার গুলো দেখতে থাকে।একটা পুরনো মিনি কাট ওয়ে গিটার ওর চোখে পড়লো।কালো রঙ এর উপরই ছিল গিটারটা বোঝা যায়।ফ্রেডবোর্ড গুলোতে সার্কেল এর বদলে হাড় এর চিহ্ন।আর পেছন দিকটায় একটা কঙ্কাল এর মুখ আঁকা।  জিনিসটা তন্ময় এর বেশ পছন্দই হল।
-“বাহ।জিনিসটা খাসাতো।রক ব্যান্ড এর গিটার হবে তো এরকম কিছু একটা!এটাই আমার চাই।মামা,এই যে এই গিটারটা নেব”।বলে গিটারটা দেখায় ওর মামাকে।মামা তো ভাগ্নের এরকম অদ্ভুত পছন্দ দেখে বেশ অবাক হয়েই বললেন,“সেকিরে!এটা তো second hand!যে দিয়ে গেছে সে বলল এটা নাকি তার আগের মালিকের কাছে ১০ বছরের ও বেশি ছিল।কেউ কেনে নি এটাকে। এটায় তোর পোষাবেনা।আদৌ এর আওয়াজ ঠিকঠাক আছে কিনা কে জানে!Acoustics টার তো ১২টা বেজে গেছে মনে হচ্ছে।তার গুলোর কথা তো বাদ ই দিলাম।এতগুলো ভালোভালো গিটার ছেড়ে তুই এটা নিয়ে পড়লি কেন বলত”!
কিন্তু তন্ময় ও ছাড়ার পাত্র নয়।সে নাছোড়বান্দা।বলল,“না না।খারাপ কি!ঠিক চলবে এতে।তারগুলো পাল্টে টিউন করে নিলেই হবে”।
তন্ময় আর ওর মামার মধ্যে তর্ক চলে।শেষমেশ অভি এসে ব্যাপারটা সামলায়।বলে,“আরে ছাড়োনা বাবা!Mr.Lenon এর চয়েস।ও যেটা ভালো বোঝে সেটাই নিক না”।
শেষমেশ তন্ময় এর মামা কতকটা বাধ্য হয়েই রাজি হলেন। গিটারটার তারগুলো পাল্টানো হলে তন্ময় আর দেরি না করে সোজা বাইক নিয়ে ফিরে এল নিজের বাড়িতে।
সেইদিনই সন্ধ্যেবেলাতে তন্ময়ের গ্যারাজে ওরা আবার জমায়েত হল জ্যামিং আর জন্য।আজ আবার আকাশের মুখ ভার দুপুর থেকেই।অনবরত বৃষ্টি পরে চলেছে।তবুও এই বৃষ্টি ওদের উৎসাহে ভাঁটা ফেলতে পারেনি।হঠাৎ অভ্র গিটারটার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,“আরিব্বাস!এটা কোত্থেকে পেলি রে ভাই।এটাই কিনলি নাকি”?
-“হুমম।আজ সকালেই আনলাম রে ভাই।এখনো টেস্টরান করা হয়নি।মামার দোকানে দেখে দারুন পছন্দ হয়ে গেল।নিয়েই নিলাম”।
-“ভাই,আজ তুই bass টা বাজা।আমি এটা বাজাই।বহুদিন acoustic বাজানো হয়নি আমার”।
-“ঠিক আছে।চল শুরু করি”।
ওরা সবাই এরপর আরও ঘণ্টা দুই প্র্যাকটিস করল।তারপর বৃষ্টি একটু ধরলে ওরা যে যার বাড়ি চলে গেল।সবাই খুব খুশি। বিশেষত অভ্র।এই গিটারটা ওর খুব পছন্দ হয়ছে।তাই গিটারটা ও আজ আর তন্ময়কে ফেরত দেয়নি।নিজের কাছেই রাখল।
সব ভালো হলেও রাতে তন্ময় আর ঘুম আসছিল না।খালি গিটারটার কথা ভাবছিল।মনে মনে আফসোস করছিল নিজে একটুও বাজিয়ে না দেখার জন্য।তবে গিটারটার আওয়াজটা ওর খুব ভালো লেগেছিল।একটু যেন বেশিই ভাল।একটু যেন বেশিই মিষ্টি।
  রাতে এসব ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পরেছে তা বুঝতেও পারেনি।ভোরের দিকে হঠাৎ ঘুম ভাঙল অভির ফোনে।ব্যাপারটা একটু অদ্ভুতই ঠেকল তন্ময় এর কাছে।সাধারণত অভি তো এত সকালে ওঠে না।মামাবাড়িতে কারো শরীর-টরীর খারাপ হল নাকি।কিন্তু ফোন ধরতেই ওপার থেকে অভি কাঁদোকাঁদো গলায় বলে উঠল,“দাদা,তুই এক্ষুনি অভ্রদার বাড়িতে চলে আয়।সর্বনাশ হয়ে গেছে দাদা।সর্বনাশ হয়ে গেছে”।গলায় তার ভয়ের ছাপ স্পষ্ট।গলা রীতিমতো কাঁপছে অভির।তন্ময় ঘুম চোখে বেশি কিছু ভাবতে পারলনা। মাথা কাজ করছে না তার। ঘুমজড়ানো গলায় জিজ্ঞাসা করে,“কি হয়ছে রে?এরকম করছিস কেন”?অভি কোনো উত্তর দেয়না।তন্ময়ই নিজে থেকে বলে,“ঠিক আছে,দাঁড়া।আসছি আমি”।
তড়িঘড়ি তন্ময় বাইক নিয়ে বেরিয়ে পরল।মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই তন্ময় বাইক নিয়ে চলে এল হ্যারিসন রদে।সেখানেই প্রেসিডেন্সি বোর্ডিং এ অভ্র ভাড়া নিয়ে থাকে।গিয়ে দেখল বাইরে ভিড়।একছুটে সে চলে গেল অভ্রর ঘরে।
কিন্তু ঘরে ঢুকে তন্ময় যা দেখল তাতে ভয়ে,বিস্ময়ে সে হতবাক হয়ে গেল।কাঠ হয়ে দাঁড়িয়ে রইল চৌকাঠে পা দিয়ে।সে এক নিষ্ঠুর,পৈশাচিক দৃশ্য।দেখল একটা চেয়ারের উপর গিটারটা কোলে নিয়ে অভ্র বসে আছে।মাথাটা একদিকে এলিয়ে পড়েছে। চোখগুলো খোলা,বিস্ফোরিত।গলাতে কয়েকটা লাল দাগ চাপ হয়ে বসে গেছে।গলার শিরা কেটে টপটপ করে ফোঁটাফোঁটা রক্ত পরছে।রক্ত বেরোচ্ছে অভ্রর নাক,মুখ দিয়ে। রক্তে ভিজে যাচ্ছে সারা শরীর।জিভটা এমনভাবে বেরিয়ে এসেছে যেন দেখে মনে হচ্ছে কেউ ওর গলায় ফাঁসির দড়ি পরিয়েছিল।কিন্তু আশেপাশে কোনো দড়ি বা চেন কিছুই নেই।কি সাংঘাতিক সেই দৃশ্য।একটানা দাঁড়িয়ে দেখা যায়না।তন্ময় প্রায় অজ্ঞান হয়ে পড়ে যাচ্ছিল।শৌভিক আর বিতান কোনোরকমে সামলে নিল ওকে।
অভি পুলিশ ডাকতে গিয়েছিল।একটু বাদেই পুলিশ চলে আসে। বেশ কিছুক্ষণ তল্লাশি চলল।ঘরে একটা ওল্ড মঙ্ক এর বোতল ছাড়া আর কিছুই পাওয়া গেলনা আশেপাশে।অফিসার বললেন,“এই এখনকার ছেলেরাও হয়েছে সব,মদ গাঁজা খেয়ে নিজেদের সাথে নিজেরাই যে কি করে বসে!”
কথাটা শুনেই ওদের মাথাটা গরম হয়ে গেল।শৌভিক তন্ময় আর বিতানকে সামলে নিয়ে রাগ চেপে বলল,“অফিসার,আপনি post mortem report না আসা পর্যন্ত এভাবে কোনো মন্তব্য করতে পারেননা।ও আমাদের বন্ধু।we know him very well.”আসলে ওদের রাগের কিন্তু সত্যিই একটা কারন ছিল।কারন ওরা কেউ ড্রিঙ্ক করেনা।তাই ওদের কাছেও তন্ময় এর ঘরে মদের বোতল পাওয়া যাওয়ার ঘটনাটা সত্যিই আশ্চর্যের।
-“বেশ।তবে তাই হোক।যদিও এটা আমার কাছে সিম্পল নেশার ঘোরে আত্মহত্যা ছাড়া কিছুই নয়।report এলেই ব্যাপারটা পরিষ্কার হয়ে যাবে।”
এরপর সবাই যে যার নিজের বাড়ি চলে এলো।শুধু তন্ময় আরও কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে অভ্রর ঘরে।ওর সাথে অভ্ররই সব চেয়ে বেশি বন্ধুত্ব ছিল।চোখ ভরে আসতে থাকে ওর।অনেক পুরনো কথা মনে পড়তে থাকে।আর বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে পারলনা সে।শুধু আসবার সময় হাতে করে গীটারটা নিয়ে এলো বাড়িতে।
এরপর ৩ দিন কেটে গেল।ওরা কেউই আর গান নিয়ে বসেনি।বলা ভালো ওদের বসবার প্রবৃত্তি হয়নি আর।অভ্র ওদের খুব ভালো বন্ধু ছিল।ওর চলে যাওয়াটা ওরা কেউই মেনে নিতে পারছিল না।হঠাৎ তন্ময় এর মনে পড়ল যে,আরে আজ অভ্রর post mortem report টা বেরোনোর কথা না!সাথে সাথে শৌভিককে ফোন করল।জানতে পারল যে যথারীতি পেটে alcohol পাওয়া যায়নি।কিন্তু মৃত্যু হয়েছে শ্বাসরোধ করে।শ্বাসরোধ করে মৃত্যু!ব্যাপারটা খুব আশ্চর্য লাগলো তন্ময় এর।বদ্ধ ঘরে এভাবে কে গলা টিপে মারল অভ্রকে।ওর তো সেরকম শত্রু বলতে কেউই ছিল না।ঠিক আছে।পুলিশ তো তদন্ত করছে।দেখা যাক কি হয়। তবে একটু যেন স্বস্তিই পেয়েছে তন্ময় নিজের প্রিয় বন্ধুর নামের উপর থেকে মদ্যপ কলঙ্ক মুছে যাওয়ায়।
সেদিন সন্ধ্যেবেলাতে হঠাৎ তন্ময় গীটারটা নিয়ে বসে।হঠাৎ সে বাজাতে গিয়ে খেয়াল করল যে গীটারটার ১নং স্ট্রিঙটা নেই। ছিঁড়ে গেছে সেটাও বোঝা যাচ্ছেনা।স্ট্রিঙটা স্রেফ যেন উধাও হয়ে গেছে।একটু যেন চমকে গেল তন্ময়।কি হল ব্যাপারটা।দোকান থেকে তো সব তারই লাগিয়ে আনলাম,টিউনও করলাম,কিন্তু তারটা গেল কথায়।অভ্রর বাড়িতে কোথাও পড়ে গেল নাকি।কিন্তু এভাবে তো সাধারনত তো তার পড়ে যায়না!এসব অনেক চিন্তাই ওর মনে ঘুরপাক খেতে থাকে।
শেষমেশ একটা সিগারেট ধরিয়ে নিজেকে একটু শান্ত করল। ভাবল,যাকগে বেসটাতো বাজাতেই পারব এটায়।১নং তারটা লাগিয়ে নেব নাহয়।অভ্রটাও তো নেই আর।বেসটাও নাহয় আমিই এখন বাজাই।
খাটের উপর পা ঝুলিয়ে বসে কোলের উপর গীটারটা নিয়ে বাজানো শুরু করল।গিটারের হাতটা তন্ময়ের বরাবরই ভালো। বেসটাও খারাপ বাজায়না।
হঠাৎ এমন একটা ঘটনা শুরু হল যাতে তন্ময় এর প্রায় হাড় হিম হয়ে এল।গীটারটা যেন আর ওর নিয়ন্ত্রণে নেই।ও যাই বাজাক না কেন,বাজছে কেবলমাত্র দুটো কর্ড।A আর E এই দুটো কর্ড পালা করে বেজে চলেছে।ওর গলার চারপাশে যেন কি একটা সুক্ষ্ম ধারালো দড়ির মতো জিনিস আস্তে আস্তে চেপে বসছে।না,দড়ি নয়,একটা তার যেন ওর গলার চারপাশে পেঁচিয়ে দিচ্ছে কেউ।উফ সেকি অসহ্য যন্ত্রণা।তন্ময় এর দম বন্ধ হয়ে আসতে থাকে।আর কানে বাজতে থাকে এক অদ্ভুত গান-
“কিসের প্রজা,কিসের তন্ত্র,
 সবাই যখন রাষ্ট্রযন্ত্র।
খেলছে ওরা তোমার সাথে,
কাটছে পকেট দিনেরাতে।
খাঁচার ভিতর মুরগি হয়ে,
দিনে দিনে যাচ্ছ ক্ষয়ে।
উড়তে ডানা,ভাবতে মানা,
ভাবলে কি হ্য়,সবার জানা।
তোমার পকেট ফুটো,
রাষ্ট্রের মুখে জুতো।।”
-গানটা যেন ওর কানের কাছে আস্তে আস্তে আরো জোরে বাজতে থাকে।কানটা ফেটে যাবে বোধহয় এবার।ও চিৎকার করতে চেয়েও পারছে না।কেউ যেন ওর গলাটা টিপে ধরেছে।আর কিছুক্ষণ এভাবে চললে তন্ময়ের শ্বাসরোধ হয়ে যাবে,মরণযন্ত্রণা যে কি জিনিস,আস্তে আস্তে তন্ময় বুঝতে পারছে।সে কোনোরকমে নিজেকে এই নাগপাশ থেকে মুক্ত করতে চাইছে কিন্তু পারছে না।হঠাৎ বিতান এই সময়ে ঘরে ঢুকে পরে।তারপর যেন ম্যাজিকের মতো সব উধাও।গলার পাশের সেই চাপা ভাব,সেই অদ্ভুত গানটা সব উধাও।গিটারটাও বাজিয়ে দেখল,হ্যাঁ সবই তো ঠিকই আছে।তাহলে এতক্ষণ তার সাথে কি হচ্ছিলো এটা!সব যেন আশ্চর্যরকম ভাবে স্বাভাবিক হয়ে গেছে।বিতান এতক্ষনে প্রশ্ন করে,“কিরে গিটার নিয়ে বসলি আজ।”তন্ময় স্ট্রিং এর ব্যাপারটা বিতানকে কিছু বললনা। বিতানের প্রশ্নের উত্তর সারল শুধু একটা ছোট্ট হুমম বলে।এরপর বিতান অভ্রর post mortem এর ব্যাপারেই কিছু কথা বলে বেরিয়ে যায়।
তন্ময় এবার গভীর চিন্তা শুরু করল ব্যাপারটা নিয়ে।ভুত, আত্মা এসব আজগুবি,সুপারন্যাচারাল ব্যাপার তন্ময় কোনোদিনই মানে না,আজও মানলনা।সে বদ্ধ ঘরে বসে সিগারেট খাচ্ছিল,তাই হয়ত তার সাফোকেশনের জন্য দমটা বন্ধ হয়ে আসছিল।নিজেকে তন্ময় এটাই বোঝালো।কিন্তু ওই অদ্ভুত গানটা? সেটা তাহলে শুনল কি করে!পরে তন্ময় ভাবল ওটা মনের ভুল। তবে একটা ব্যাপার ভেবে একটু হাসল মনে মনে।ভাবলো গানটা অদ্ভুত হলেও সুরটা কিন্তু বেশ ভালই।এর উপর বেস করে তো ও নিজেই একটা গান কম্পোজ করতে পারবে!যাক,ব্যাপারটা একদিকে তাহলে বেশ ভালোই হলো।
যাক গীটারটা নিয়ে আর বসলো না ওইদিন তন্ময়।পরদিন সকালে মামাকে ফোন করে জানলো যে গীটারটা রমেন চৌধুরী নামে এক ভদ্রলোক মামাকে দিয়েছেন।উনি অভির মামার বন্ধু। তন্ময় ওনাকে চেনে।সিকদার বাগানে ওনার দোকান।তন্ময় ওর মামার কাছ থেকে ঠিকানা নিয়ে পরদিন সকাল বেলাতে গিয়ে হাজির হল রমেন চৌধুরীর দোকানে।দোকানের ভেতরে ঢুকে তন্ময় দেখল রমেনবাবুর সাথে এক অ্যাংলো ইন্ডিয়ান লোকের বচসা চলছে।বয়স প্রায় ৬০ বছরের কাছাকাছি।একটু যেন পাগলাটে ধরনের।সাদা চুল,টিকালো নাক।উনি ওনার ইংরেজি মেশানো বাংলায় বলছেন,“I told you that not to sell that guitar.ওটা cursed.তাও আপনি শুনলেন না!আমি গীটারটা ফেরত চাই।I want it back immediately.”
রমেনবাবু বিরক্তি মেশানো গলায় বলছেন শোনা গেল,“ধুর মশাই,বললাম তো বিক্রি হয়ে যাওয়া মাল এভাবে ফেরত আনা যায়না।বিক্রি যদি করবেনই না,তাহলে গীটারটা দিয়েছিলেন কেন মশাই।আমার দোকানে ওসব পুরনো লঝঝড়ে জিনিস রাখার যায়গা কোথায় বলুন দেখি।”
অনেক তর্কাতর্কির পরে ভদ্রলোক বেড়িয়ে গেলেন রাগে গজগজ করতে করতে।তন্ময় তখন জিজ্ঞাসা করল,“রমেন দা
এই লোকটি কে গো?”
-“আর বলিস না।উনি স্যামুয়েল পেরেরা।ভদ্রলোক আমায় একটা গিটার দিয়ে গেছিল ১০ বছর আগে।সেটা আমার গোডাউনে পরেছিল এতদিন।তো সেদিন ওটাকে দেখতে পেয়ে তোর মামার দোকানে পাঠিয়ে দিয়েছিলাম।তো এবার রিসেন্টলি একটি ছেলে ওই গীটারটা হাতে নিয়ে মারা যাওয়ার ঘটনার পর থেকে এই লোকটা রোজ আমার দোকানে এসে গল্প ফাঁদবে আর বলবে গীটারটা নাকি ওনাকে ফেরত এনে দিতে হবে।আচ্ছা তুই বল,এভাবে কক্ষনো বিক্রি হয়ে যাওয়া মাল ফেরত আনা যায়!পুরো তারকাটা একেবারে।”তন্ময় এবার জানায় যে ছেলেটি গীটারটা হাতে নিয়ে মারা গেছে সে ওদেরই বন্ধু,একই সাথে ব্যান্ডে বাজাত।আরও কিছুক্ষণ কথাবার্তা চলার পর তন্ময় সামুয়েল পেরেরার ঠিকানাটা জেনে নিয়ে দোকান থেকে বেরিয়ে পরে।
রমেন বাবুর দোকান থেকে তন্ময় কিছুক্ষণ আগেই ফিরে এসেছে।সামুয়েল পেরেরার বাড়িতে ও যাবে বলে ঠিক করল।মনে মনে একবার ভাবল যে শৌভিক,বিতান এদেরকে জানানোটা কি ঠিক হবে এখন!নাহ থাক।বিতান আবার এসব ভুত-টুতে ভয় পায়।দরকার নেই।আমি একাই ঘুরে দেখে আসিনা আগে ব্যাপারটা। তারপর ওদেরকে বলা যাবে ক্ষন।
এদিকে গীটারটা নিয়ে আর বসা হয়নি।ওই অদ্ভুত গানটা ওর কানে বাজছে।সুরটার মধ্যে কিছু একটা আছে যা ওকে এত টানছে।গানটা ও স্যামুয়েল পেরেরার বাড়ি থেকে ঘুরে এসেই কম্পোজ করবে ঠিক করল।
আর দেরি না করে তন্ময় বাইকটা নিয়ে বেড়িয়ে পড়ল। মোটামুটি ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই পার্ক স্ট্রিট এ এসে পৌঁছাল।এই জায়গাটা বরাবরই অ্যাংলো ইন্ডিয়ানদের বাস।সেক্সপিয়ার সরণি ধরে কিছুটা এগিয়ে এসে বাঁ হাতের গলিটা দিয়ে বেশ কিছুটা ভিতরে ঢুকে এলো তন্ময়।এখানেই স্যামুয়েল পেরেরার বাড়ি।
বাড়ি বললে ভুল বলা হবে।একটা বিশাল বাংলো।একসময় খুব জমজমাট ছিল দেখলেই বোঝা যায়।কিন্তু এখন বাংলোর গায়ে শ্যাওলার ছোপ ধরে গেছে,ছাদ বেয়ে নেমে এসেছে বটগাছের ঝুরি। আর রয়েছে একঝাঁক পায়রা আর চামচিকের দল।বেশ গা ছমছমে একটা ভাব আছে বাড়িটার ভেতরে।বাইরে গেটে কোনো পাহারাদার নেই।অবশ্য তেমন কিছু তন্ময় আশাও করেনি।গেটটা ঠেলে ঢুকল তন্ময়।একটা সরু নুড়িফেলা রাস্তা সোজা চলে গেছে বাড়ির সদর দরজায়।আর চারপাশে প্রচুর বড়বড় ঘাস।তার ভেতর সাপখোপ থাকাটাও বিচিত্র নয়।পরিষ্কার অযত্নের ছাপ গোটা বাড়িটা জুড়ে। তন্ময় সোজা দরজার সামনে চলে এলো।কোনো ডোরবেল নেই। পুরনো বাড়ি তাই ডোরবেল এর বালাই নেই সেরকম।তন্ময় বাড়ির দরজাটা ধরে সজোরে একটা ধাক্কা দিতেই দরজাটা একটা বিশ্রী আওয়াজ করে খুলে গেলো।
একটা পুরুষ কণ্ঠ ভেসে এলো,“কওন হ্যায়?”
-“আমি উত্তর কোলকাতা থেকে আসছি।স্যামুয়েল পেরেরা আছেন?”
এতক্ষণে একজন বছর ত্রিশেক বয়সের জোয়ান লোক নেমে এল।হিন্দুস্থানি।পরনের জামাকাপড় একটু মলিন।তন্ময় বুঝতে পারলো যে এই লোকটি বাড়ির চাকর।
-“সাহাব উপর দুসরে মঞ্জিল মে হ্যায়।আপ আইয়ে মেরে সাথ।”
ছেলেটি দোতলায় একটি ঘরের সামনে নিয়ে গিয়ে দাঁড় করালো।
-“সাহাব,কোই আপসে মিলনে আয়া হ্যায়।”
এতক্ষনে স্যামুয়েল সাহেবের গলা শোনা গেল,“send him”
ভেতরে ঢুকে তন্ময় স্যামুয়েল ভদ্রলোকটি একটি বিশাল টেবিলের ওপারে বসে।পরনে শার্ট আর ট্রাউজার।সেটাও একটু মলিন।চোখে একটা মোটা ফ্রেমের চশমা।স্পষ্ট বোঝাই যাচ্ছে যে ওনার আর্থিক অবস্থা খুব একটা ভালো নয়।
স্যামুয়েল সাহেব চোখ তুলে প্রশ্ন করলেন ভাঙ্গা ভাঙ্গা বাংলায়,“তোমাকে কিভাবে হেল্প করতে পারি?”
তন্ময় মনে মনে ভাবল যে গীটারটা আমার কাছে আছে এটা বলাটা বোধহয় ঠিক হবেনা।লোকটা এমনিতেই আধপাগল বলে শুনেছিলাম।গীটারটা আমার কাছে আছে শুনে যদি আবার ক্ষেপে যায়।তাই তন্ময় বলল,“আমি একজন ডিটেক্টিভ।কয়েকদিন আগেই অভ্র নামে একটি ছেলে গিটার কোলে নিয়ে বসে মারা গেছে।খবর পেলাম যে গীটারটি আপনি বিক্রি করেছেন।তাই আপনাকে একটু জিজ্ঞাসাবাদ করতে আসা গীটারটার সম্বন্ধে যে ওর কোনো ম্যালফাংশান আছে নাকি।”
স্যামুয়েল চমকে উঠে বলে,“oh jesus!My son.যান্ত্রিক কোনো গোলযোগই নেই গীটারটায়।ওটা আঙ্কল ম্যাক্সের আত্মা প্রতিশোধ নিচ্ছে।”রীতিমতো ভয়ার্ত মুখ তখন স্যামুয়েল পেরেরার।
-“মানে!ঠিক বুঝতে পারলাম না।”
স্যামুয়েল বলতে শুরু করেন,“শোনো তবে,গীটারটা আমার আঙ্কল ম্যাক্স এর।উনি ছিলেন সেই সময়কার একজন উঠতি শিল্পী। তখনো কোলকাতাতে ব্যান্ডের কথা লোকে সেরকম শোনেনি। আঙ্কল আর তার বন্ধুরা মিলে একটা ব্যান্ড তৈরি করে তখন। everything was alright till then but suddenly in early 70’s, হঠাৎ নকশাল আন্দোলন শুরু হল।আমার কাকাও জড়িয়ে পরলেন এই আন্দোলনে তার কিছু ইন্ডিয়ান বন্ধুদের সাথে।আঙ্কল ম্যাক্স আর তার ব্যান্ড হঠাৎ গভর্নমেন্টের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করে বসল।তারা এমন কিছু গান লিখতে শুরু করেন যা তৎকালীন গভর্নমেন্টকে নাড়িয়ে দেয়।and he was sentenced to prison many times for this,but he never stopped.One day, suddenly উনি একটা শো এর অফার পেলেন।He was so excited about that concert but it was a death trap for uncle max and his band members indeed.শো চলাকালীন তাদের উপর বম্বিং করা হয়।all died there.আঙ্কল ম্যাক্স গীটারটা কোলে নিয়েই স্টেজে বসে পরেন।তারগুলো ছিটকে বেরিয়ে এসে তার গলায় বিঁধে গেছিল।অসম্ভব যন্ত্রণায় কাতরাতে কাতরাতে উনি বলেছিলেন,“My guitar is my revolver.It will take my revenge.আমার পরিবারের বাইরে এই গীটারটা যে কোলে নিয়ে বসে বাজাবে সেই মরবে। আমি অভিশাপ দিয়ে গেলাম।আমার কথা বিফলে যাবে না।It’s my curse.”সঙ্গেসঙ্গেই মারা যান তিনি।ওই অভ্র ছেলেটির মারা যাওয়াটা কোনো accident নয়। ওটা আঙ্কল ম্যাক্সের প্রতিশোধ।প্লিজ মিস্টার,প্লিজ।গীটারটা আমাকে ফেরত দিয়ে দিন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব।ওটা বাইরে থাকলে আরো মানুষ খুন করবে।” 
এই বলে কথা শেষ করে স্যামুয়েল পাশে রাখা জলের জগটা থেকে ঢকঢক করে প্রায় অর্ধেক জল খেয়ে নিলেন।এরপর উঠে গিয়ে র‍্যাক থেকে একটা ডায়েরি এনে উনি তন্ময় কে দেখালেন, “এই দেখুন।এটা আঙ্কল ম্যাক্সের ডায়েরি।এখানে আপনি আরো ইনফর্মেশন পাবেন।”
-তন্ময় ডায়েরিটা হাতে নিয়ে একটা লেখা দেখে রীতিমতো চমকে গেল।এতো সেই গানটা।যে গানটা সেদিন সে শুনতে পেয়েছিল।সব কর্ডস গুলোও লেখা রয়েছে তার সাথে।দেখল সেই দুটো কর্ডস A আর E রয়েছে গোটা গানটা জুরে।স্যামুয়েল বলেন, “শেষ শোতে এই গানটা গাওয়ার সময় আঙ্কলদের উপর বম্বিং হয়।এটাই ওনার জীবনের শেষ গান।”স্যামুয়েল এর এই কথাটায় তন্ময় হতভম্ব হয়ে যায়।আরও কিছুক্ষণ কথাবার্তা চলার পর তন্ময় ওখান থেকে বেরিয়ে আসে।
বাড়িতে এসে তন্ময় অনেকক্ষণ ধরে ভাবনাচিন্তা করল এই ব্যাপারটা নিয়ে।তাঁর যুক্তিবাদী মন কিছুতেই স্যামুয়েল পেরেরার এই গল্পটায় বিশ্বাস করতে দিলনা।বারবারই ভাবতে লাগল,রমেনদা ঠিকই বলেছে।বুড়োটা তারকাটা আছে।গিটারে আবার ভুত থাকে নাকি।তাও আবার এই বিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়ে।ধুস!যাই হোক না কেন।আজ গীটারটা নিয়ে বসতেই হবে।অভ্রর মৃত্যুর দুঃখটা ভুলতে গেলে গানবাজনাটাই মন দিয়ে করতে হবে।আজ ওই গানটা কম্পোজ করে তারপরই রাত্রে ঘুমাবে বলে তন্ময় ঠিক করল।
রাত ১১টায় ঘর বন্ধ করে তন্ময় বসল গীটারটা নিয়ে। দ্রুতলয়ে বাজাতে থাকল A আর E কর্ড দুটো।গানটাও গাইতে থাকে সাথে।আস্তে আস্তে বাইরে থেকে শোনা যেতে লাগল ওর এই গান।ধীরেধীরে গান থেমে গেল।গীটারটা বাজছে তখনও।বাড়ির সবাই আস্তে আস্তে ঘুমিয়ে পরে এরপর।
পরদিন সকাল এগারোটা।তন্ময় তখনো ভেতরে।ওকে ডেকে ডেকে সাড়া না পেয়ে শৌভিক আর বিতান ধাক্কা মেরে ঘরে ঢুকে যা দেখল তাতে ওদের পিঠ বেয়ে একটা ঠাণ্ডা স্রোত নেমে গেলো। ওরা দেখল অভ্র ঠিক যেভাবে গিটার কোলে নিয়ে বসেছিল,তন্ময়ও ঠিক সেইভাবে বসে আছে।মাথাটা একদিকে এলিয়ে পরেছে।জিভটা বেরিয়ে এসেছে বাইরে।চোখদুটো খোলা,বিস্ফোরিত।নাক,মুখ দিয়ে রক্ত পড়ছে।গলায় সেইরকমই লাল চাপ চাপ দাগ।একেও যেন গলায় কেউ ফাঁস দিয়ে মেরেছে।
এই দৃশ্য দেখে অভি ডুকরে কেঁদে উঠল।বিতান,শৌভিক নির্বাক।যথারীতি পুলিশ এল।তল্লাশি হল,post mortem ও হল। সেই একই কারন,শ্বাসরোধ হয়ে মৃত্যু।কিন্তু পুলিশ এই তদন্তের সুবিধা করতে পারল না।খুনিকে তারা ধরতে পারলো না।খুনের হাতিয়ারটা যে কি তাও তারা জানতে পারলোনা।
এরপর কেটে গেছে মাসদুয়েক।অভ্র আর তন্ময়ের শ্রাদ্ধশান্তি মিটে গেছে।বিতান আর শৌভিকের গানবাজনার উপর মন ভেঙ্গে গেছে।দুজনেই এখন চাকরি করে।শুধু গীটারটা ওরা আবার ফেরত দিয়ে আসে তন্ময়ের মামার দোকানে।এখনো যোগাযোগ আছে বিতান আর শৌভিকের।
শুধু এর মাঝে ওই গীটারটা কিনে নিয়ে যায় আরেকটি ছেলে।তারও তন্ময় এর মতই গীটারটা দেখে খুব পছন্দ হয়।সে খুব কম দামে গীটারটা কিনে নিয়ে আসে।
সবই ঠিক ছিল।সন্ধ্যাবেলাতে ছেলেটা গীটারটা নিয়ে বাজাতে বসতেই অবাক হয়ে যায়।আপন মনেই বলে ওঠে,“একি গীটারের দুটো তার কোথায় গেল?”

--সমাপ্ত--



মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ভূতে ভয় পেলেও, ‘ সেক্সি ভূত’-এর চরিত্রে অভিনয় করতে ভয় পাননি সায়ন্তনী

টলিউড ডিভা সায়ন্তনী গুহঠাকুরতা ডেবিউ করে ফেললেন দক্ষিণী সিনেমায়। যদিও কিছুদিন আগেই তিনি আটপৌরেকে সে ব্যাপারে জানিয়েছিলেন। কিন্তু সম্প্রতি এই হোলিতে সিনেমাটি রিলিজ করার পর থেকেই তিনি খবরের শিরোনামে। যদিও তার কারণ, তিনি এই প্রথম একটি ভূতের চরিত্রে অভিনয় করেছেন। শুধু তাই নয়, একটি ‘ সেক্সি’ ভূতের চরিত্রে এবং তাঁকে নিয়েই গল্পটা গড়ে উঠেছে।  সিনেমার নাম, ‘ চিকাটি গাডিলু চিঠাকোটুন্ডু’। তেলেগু সিনেমায় কাজ করে বেশ উচ্ছ্বসিত সায়ন্তনী। এখানেই শেষ নয়, তেলেগু ইন্ড্রাস্টির ভূয়সী প্রশংসা করেছেন তিনি। তাঁদের কাজের ধরন তাঁর বেশ পছন্দ হয়েছে । ইতিমধ্যে আরও একটি দক্ষিণী সিনেমার প্রস্তাবও পেয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। গল্পটিতে দেখা যায় দুই যুগল জুটি ছুটি কাটাতে গিয়ে আটকে যায় একটি ভৌতিক বাড়িতে।  সেখানে তারা একটি সেক্সি ভূতের পাল্লায় পরে। তারপর গল্প আস্তে আস্তে অন্যদিকে মোড় নেই।  সায়ন্তনী আটপৌরেকে জানালেন , ‘’ আমাকে অনেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় মেসেজ করে এই সিনেমার ব্যাপারে জানিয়েছেন! তাঁদের আমার চরিত্রটাও ভাল লেগেছে।‘’ ‘’ আপনাকে কেউ যদি রিয়েল লাইকে সেক্সি বলেন, সেটা আপনি কীভাব...

পনেরো মিনিটেই ফিট থাকার রহস্য, উপায় বাতলে দিলেন যোগগুরু

  আটপৌরের নিজস্ব প্রতিবেদন, নৈহাটিঃ  শরীরকে মন্দিরের আখ্যা দেওয়া হয়। আর সেই শরীরকে সর্বদা ঠিক রাখতে আমরা কত পন্থায় না অবলম্বন করে থাকি। আজকাল ইঁদুর দৌড়ের যুগ, আর এই যুগে সময় পাওয়া একটা বিরাট চ্যালেঞ্জিং বিষয়। সময় বের করে শরীর চর্চা করার মতো সময় আমাদের কতজনের হাতেই বা আছে? মনের সুখে ছুটির দিন হাঁটলেই কি আমাদের শরীর ঠিক থাকবে নাকি সপ্তাহে প্রতিদিন জিমমুখী হতেই হবে ? যেমন আইটি সেক্টরে কর্মরত পার্থ সারথী চক্রবর্তী সোম থেকে শুক্র অবধি দম ফেলার সময় পায় না, অথচ কিছুদিন হল সে ঘাড়ের ব্যথায় কাবু। আবার সদ্য বিয়ে করা কৌশিক ভট্টাচার্য ইদানীং অফিস ফেরত সস্ত্রীক হাঁটতে বেরিয়ে নিজেকে ফিট ভাবছেন অথচ গত তিনমাসে তার দশ কেজি ওজন বৃদ্ধি পেয়েছে। তবুও সে নিরুপায়, অফিস ফেরত ছাড়া তার সময় নেই। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে গেলে শরীর চর্চা আর হবে না। এই সময়ের অভাব অনেকেরই তা বলে কী শরীর সে কথা শুনবে। শরীরে বাসা বাঁধছে জটিল রোগ। দিনের পর দিন ওষুধ খেয়েও সেই রোগ সারছে না। তবে ইচ্ছে থাকলে উপায় আছে, বলছেন বিশিষ্ট যোগ গুরু রাহুল তিওয়ারী। আটপৌরের মুখোমুখি হয়ে তিনি জানালেন যে খুব স্বল্প সময়ে ফিট থাকার জন্য কিছু প...

হেমন্তের উষ্ণ পরশ মিশিয়ে তালমায় ফিরল রোমিও জুলিয়েট, ঠোঁটে ঠোঁটে ' ফুল বডি রিলাক্স'

  আদিত্য ঘোষ, কলকাতাঃ বাংলার রোমিও জুলিয়েটরা দর্শককে রাত জাগিয়ে ওয়েব সিরিজের প্রতিটা পর্ব দেখতে বাধ্য করেছে। শুধু তাই নয়, দুই নবাগত অভিনেতা অভিনেত্রী  বাংলা সিরিজের মুখ্য চরিত্র হয়ে উঠেছে। বাংলা বাজারে ভাল সিনেমা বা ওয়েবের কদর আরও একবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখানোর চেষ্টা করেছে পরিচালক অর্পণ গড়াই। ক্যামেরার পিছনে এবং সামনে আরও একবার উজ্জ্বল ভূমিকার অবতীর্ণ হয়েছেন বাংলা সিনেমার  'ডন' অনির্বাণ ভট্টাচার্য। তবুও তালমার রোমিও এবং জুলিয়েট যথাক্রমে দেবদত্ত এবং হিয়া বাঙালি দর্শক মননে মিষ্টি প্রেমের উপাখ্যান হয়ে থেকে যাবে চিরকাল। যেখানে একটা সহজ সরল প্রেমকে স্রেফ টুকে দেওয়া হয়েছে সিনেমার পর্দায়। কোনও বাড়তি অলঙ্করণ নেই। কোনও উপমা-উপঢৌকন নেই। স্রেফ জীবনকে পর্দায় দেখালে যেমন মনে হয় ঠিক সেইরকম।  অভিনেতা দেবদত্ত রাহার হাতেখড়ি থিয়েটারের অভিনয় দিয়ে। তবে এই মুহূর্তে তিনি মঞ্চ থেকে বহুদূরে। তিনি আটপৌরেকে ফোনে জানালেন যে, ' থিয়েটার ছেড়েছি প্রায় তিন বছর, এখন বড় পর্দায় কাজ করার জন্য মুখিয়ে আছি। বেশ কিছু সিরিয়ালের প্রস্তাব পেলেও এই মুহূর্তে সিনেমা বা ওয়েব সিরিজের অভিনয়ের জন্যই ফোকাস করছি।' মফঃস...