------------------------------------------------------------------------------------------------মোহনা
ঘটনাটা হয়ে যাওয়ার কয়েক মাস পর থেকেই, মিলি আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার আপ্রাণ চেষ্টা করছিলো। বন্ধুদের সাথে হইহুল্লোর, বড়ো বড়ো রেস্তারাঁয় প্রত্যেক ছুটির দিনে খাওয়া- দাওয়া, সবই প্রায় তখন নর্মাল। অন্তত সবার চোখে তো তাই ছিল।
মিলি, কিন্তু তখনও মনের ওই গাঢ় নীল অন্ধকারে ডুবেছিলো। মৈনাকের কথা তখনো যেন মুছে ফেলতে পারেনি, পুরোপুরি।
এক এক সময় ঘৃণা হতো, আবার এক এক সময় ওর ছবি আঁকড়ে ধরে কেঁদে উঠতো মেয়েটা।
কতবার নিজেকে প্রশ্ন করেছে, তাদের অত বছরের সম্পর্কটা বাস্তবে কি সত্যিই একটা অভ্যেস ছিলো? ভালোবাসার এক ফোঁটা ছোঁয়াও ছিলো না?
মাঝে সাতটা বছর কাটিয়ে দিয়েছে মিলি। এখন মৈনাকের স্মৃতিও অনেকটাই ম্লান। তার কথা আর সে ভাবে মনে পরে না মিলির।
হঠাত্ একদিন, শ্রাবণ মাসের বৃষ্টি মুখর রাতে, সবে অফিস থেকে ফিরে ফ্রেস হয়ে টি-ভি চালিয়েছে মিলি, তখনই একটা অচেনা নম্বর থেকে ফোন আস্তে বাদ্যযন্রটা ভোঁ-ভোঁ করে উঠলো।
ধীর গলায়, কানে মোবাইলটা দিয়ে, মিলি বলে উঠলো,
-হাই, হু ইজ্ দিজ্?
ওপারে কেমন নিস্তব্ধ। হঠাত্ কে ভাড়ী, চেনা গলায় বলে উঠলো,
-মৈনাক বলছি। কেমন আছিস?
মিলি চুপ। গলা দিয়ে তার স্বর বেড়োচ্ছে না। মাথাটা কেমন ঝিম ঝিম করে উঠলো। টি-ভির পর্দায় রং-বেরংগি ছবিগুলোর আভা তার মুখের ওই গাঢ় কালো রংটা সরাতে পারলো না।
-হ্যালো? মিলি?
কথাটায় স্তম্ভিত ফিরে পেয়ে ধীর গলায় বলল,
-কি চাই? কেন ফোন করেছিস?
-ভালো আছিস তুই?
-সেটা নিয়ে তোর মাথা ব্যাথা না করলেও হবে। দরকার আছে কোন?
-হ্যাঁ, মানে, বলছিলাম, সহেলী কে মনে আছে তোর?
চোখের সামনে তখনই কলেজের স্মৃতিগুলো মনে পড়ে গেলো মিলির। স্মৃতির পাতা উল্টে মনে করতে চাইল,
- সহেলী, ইউ মিন তোর ওই বাবার বন্ধুর মেয়েটি? যে আমাদের জুনিয়ার ছিলো কলেজে?
-সব ভুলে যাসনি দেখছি! হ্যাঁ ওই।
-বেকার কথা না বলে ম্যাটারটা সরাসরি বল।
-হুঁ
কিছুখন চুপ করে থাকার পর মৈনাকের স্বর গম্-গম্ করে উঠলো মিলির কানে,
-সহেলী আর আমি, মানে আমরা, বিয়ে করছি, পরের মাসের ২০ তারিখে। কলেজের সব বন্ধুদেরই নিমন্ত্রণ পাঠিয়েছি। তুই ও আসিস কিন্তু।
-কন্গ্রাচুলেশান।
এইটুকু বলে, ফোন কেটে, গুম হয়ে বসে রইলো মিলি। স্থির। পলক পড়ছে না। হঠাত্ নাক ফুলিয়ে, চোখ লাল করে, রাগে ছুঁড়ে ফেলে দিলো মোবাইলটা। টুকরো টুকরো হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লো যন্ত্রটা।
তার পরই বাইরে বৃষ্টির আছরে পড়া কণাগুলোর তীব্র আর্তনাদ।
মিলি চিত্কার করে বলে উঠলো,
-ইউ আর এ চিটার মৈনাক।
এ ডেভিল!
বাইরে সেই শ্রাবণ মাসের বেপরোয়া বৃষ্টি, আর ভেতরে একটি মেয়ের তিক্ত কাহিনী।।
আমি বাকরুদ্ধ!!!👏👏👏👏👏
উত্তরমুছুন