সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

পরিষেবা

-   পার্থ ঘোষ –
 ---------------------------------------------------------



জীবনটাকে একভাবে টেনে নিয়ে যেতে যেতে কিরকম যেন ক্লান্ত হয়ে পড়ছে মৃত্তিকা।  অনেক বছর হল। একাকী, সমস্থ দায়-দায়িত্ব বহন করতে গিয়ে ঘাড়টা যেন কেমন বেদনার আভাস দেয়। বুঝতে পারে না যে সেই বেদনা বেড়ে যাওয়া বয়সের, না জীবন সংগ্রামের।
সংগ্রাম করছে বটে সে সারা জীবন ধরে।  একটানা, একঘেয়ে, এক নাগাড়ে।  নয় নয় করে কুড়ি বছর। শুধু কুড়ি বছরই বা কেন, বলতে গেলে সেই ছোটোবেলা থেকেই সে যুদ্ধ করে যাচ্ছে তার মেয়েলী জীবনটার প্রত্যেকটি ঘাত-প্রতিঘাতের সঙ্গে।
ব্যস্ত ষ্টেশনের উঁচু রেলব্রীজের ওপর ট্রেনের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে দূর আকাশে উড়ন্ত শিকারী পাখিগুলোর দিকে তাকিয়ে তার মনটা উদাস হয়ে পড়ছে। নীচে প্লাটফরমে অসংখ্য মানুষের কালো মাথা গিজ্‌গিজ্‌ করছে। ট্রেন পরিষেবা সাময়িক বন্ধ।  অফিস ফেরৎ মানুষের ভীড়ে প্লাটফরম গুলোয় জনস্রোতের জোয়ার।
মৃত্তিকার মনে আশঙ্ক্ষা – কিভাবে বাড়ী ফিরবে! এই ভীড় ঠেলে তার পক্ষে ট্রেনে ওঠা অসম্ভব।  শরীরে আর আগের মতন জোর পায় না। মনে জোরের ও ঘাটতি দেখা দিচ্ছে।  ভীড় দেখলে বুক ধড়্‌ফড়্‌ করে, টেনশন বাড়ে, হাত-পায়ে কম্পন হয়।
মানুষের ভীড় থেকে চোখ তুলে মাথার ওপরের খোলা আকাশের দিকে তাকায় সে। চোখ দুটোয় একটু শান্তি হয়।  চোখ জুড়াল বলতে যা বোঝায় সেরকমই।  দূরে পশ্চিম দিগন্তে হাওড়া ব্রীজ, দ্বিতীয় হুগলী সেতু-কে ছবির মতন চোখে পড়ে। আকাশ ছোঁয়া ফ্ল্যাট বাড়ী, মোবাইল টাওয়ার, সব কিছুকে কিরকম ছায়াছবির দৃশ্যের মত মনে হয়।  যেমন নিজের জীবনটাকে তথ্যচিত্র বলে মনে হয় তার, ঠিক তেমনই।
জন্মের পর যখন জ্ঞান হয়েছে তখন থেকেই দেখেছে অন্যদের মত তার একটা নয়, দুটো মা। অবাক হয়েছে। ভেবেছে দুটো মা তো তার বন্ধুদের কারো নেই; তবে কি তার আনন্দ হওয়া উচিৎ? কিন্তু, কেন কে জানে সে আনন্দ পায়নি। তার নিজের মা তাকে সঙ্গে করে জীবন সংগ্রাম করত দেশের বাড়ীতে। বাবা মাঝে মাঝে আসত। সেভাবে বাবার আদর সে কোনোভাবেই পায়নি। বুঝেছিল তার বাবার আর একটা স্ত্রী আছে।
বাবা চাকরি করত উড়িষ্যায়। সেখানেই থাকত নতুন মায়ের সঙ্গে।  সেই নতুন মা আসলে তার মায়েরই ছোটো বোন; বাবার শালী, তার ছোটো মাসী।
মা-র সঙ্গে বাবার বিয়ে হয়েছিল বাবার সম্মতিতেই।  কিন্তু, সে জন্মাবার পর মা-র শরীর ভেঙ্গে পড়তে শুরু করায় ডাক্তার মা-কে সম্পূর্ন বিশ্রামে থাকতে পরামর্শ দেন। মা-র রক্তে না-কি দোষ ধরা পড়ে। তখন বোঝেনি মৃত্তিকা, পরে বুঝেছে তার মা থ্যালাসেমিয়া রোগের বাহক । 
বাবা তার মায়ের ভালোবাসাকে দূরে সরিয়ে মাকে একপ্রকার অপমান করেই মাসীকে বিয়ে করেযদিও এতে মায়ের আপত্তি ছিল না কোনদিনই। মা মেনে নিয়েছিল তার ভাগ্যকে।  তাই বাবা তার চাকরী ক্ষেত্রে তার শালীকে বৌয়ের সম্মান দিয়ে নিয়ে গিয়েছিল।  স্বামী-স্ত্রী হয়ে কোয়ার্টারে থাকত এবং মৃত্তিকার দুটি ভাই ও বোন হয়েছিল দ্বিতীয় মায়ের গর্ভে
মৃত্তিকা কিন্তু তবুও বাবাকে ঘৃণা করতে পারত না।  বাবা বাড়ী এলে, তার নিজের মা-র কাছে এলে তার খুব ভালো লাগত।  মাসী অর্থাৎ তার দ্বিতীয় মা-ও কখনও কখনও আসত বাবার সঙ্গে।  মা তখন তাকে আদর করত, শাড়ী গহনা দিত। তখন মা-কে দেখলে মনেই হত না যে তার বোন আসলে তার সতীন। কিন্তু যত বড় হয়েছে মৃত্তিকা অনুভব করেছে মা-র বুকের ভেতরের দাউ দাউ করে জ্বলতে থাকা চিতার আগুনকে।  তবু দেখেছে তার মা-র আশ্চর্য রকমের নির্লিপ্ততা।
এভাবেই কেটেছে যৌবন। মৃত্তিকা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে। ভাল ঘর, বড় সংসার । এক বাড়ী আত্মীয়-পরিজন নিয়ে একান্নবর্ত্তি জমিদার পরিবারের বউ হয়ে বুঝেছে তার জীবনসঙ্গী মানুষটা একটু অন্যরকম।  সে জমিদারীর ওপর নির্ভরশীল না হয়ে চাকরী করতে ভালোবাসে। তাই কোলকাতার অফিসে চাকরী করতে গিয়ে প্রত্যন্ত গ্রামের বাড়ীতে থাকার সময় খুব কমই ছিল তার জীবন চক্রেসপ্তাহে আড়াইদিন তার গ্রামের বাড়ীতে পদার্পন, আবার সপ্তাহের শুরুতে রওয়ানা চাকরী ক্ষেত্রের উদ্দেশ্যে। এসবও মৃত্তিকার গা সওয়া হয়ে গিয়েছিল। সে বুঝেছিল এসবই তার পোড়া কপালেরই পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়া ভাগ্যের পরিহাস।
 কিন্তু যে টুকু সুখ তার জীবনে ছিল সধবা নারী হিসেবে, একদিন হঠাৎই তাও ছিনিয়ে নিল তার ভাগ্য বিধাতা। বিধবা হতে হল তাকে। স্বামী মারা গেল এক সপ্তাহের কালাজ্বরে।  তখন মৃত্তিকার কোলে বছর দুয়েকের এক কন্যা সন্তান। বিধবা মায়ের একমাত্র সম্বল।
যৌথ পরিবারের বিধবা বৌয়ের যে সুখ পাওয়া প্রাপ্য তাই তার জন্য তুলে রাখা ছিল।  সেই প্রাপ্য নিয়েই তার জীবন সংগ্রাম শুরু হয়েছিল নতুন করে একরত্তি মেয়ে ইতিকে নিয়ে।
ইতিকে বড় করে তোলার জন্য তার কঠোর পরিশ্রম ক্রমশঃ স্বামী বিরহের দিনগুলোকে ভুলিয়ে দিতে লাগল। নতুন জীবনে নতুন ভাবে শুধু ইতির দিকে তাকিয়ে তার সংগ্রামী জীবন এগিয়ে চলল লক্ষ্যহীন ভবিষ্যতের দিকে। লক্ষ্য — মেয়ে বড় হলে যদি তার সংগ্রামের শেষ হয়। দুঃখের রাত কাটে সুখ সকালের আলোয়।
ইতি বড় হতে থাকে মায়ের ভালোবাসায় আর পরিবারের সকলের স্নেহছায়ায়। সরকারী চাকুরে মৃত স্বামীর পেনশন আর জমান টাকার সুদে মা-মেয়ের জীবন অতিবাহিত হতে থাকে।  অবশ্য এছাড়াও জমিদারির ভাগের বখরাও মৃত্তিকাকে সাহায্য করে মেয়ে ইতিকে লালন-পালন করতে।
ইতি স্কুল পেরিয়ে কলেজের গণ্ডীতে আবদ্ধ হয় যথাসময়েসেইসময়ই মৃত্তিকার সরকারী চাকরীর চিঠি এলস্বামী মারা যাওয়ার আঠারো বছর পর কমপেন্‌শেশন গ্রাউণ্ডে চাকরী পেল মৃত্তিকা। শুরু হল তার জীবনের আর এক সংগ্রাম।
বাড়ী, গ্রাম, পাড়ার লক্ষণরেখা পেরিয়ে যে মানুষ কোনদিন বাইরে পা বাড়ায়নি তাকে কোলকাতায় যাবার জন্য প্রস্তুত হতে হল খুব শিঘ্রই শরীর ও মনের দ্বৈত্ব সহযোগিতায়। মেয়েকে বড় করার জন্য পয়সার দরকার। এককালে জমিদারীর অবস্থা তখন পড়তির দিকে। তাছাড়া  চাকরীটা সরকারি চাকরী হওয়ার কারণেই সে তা গ্রহন করল শত অসুবিধা সত্ত্বেও। 
ঠিক হল প্রতিদিন যাতায়াত নয়।  কোলকাতায় এক আত্মীয়র বাড়ী থেকে সপ্তাহে পাঁচদিন অফিস করবে সে। শুক্রবার অফিস ফেরৎ রওনা দেবে বাড়ীর দিকে। আবার সোমবার সকালে ফিরবে অফিসের পথে, যেমন তার স্বামী অজয় করত চাকরী জীবনে।  যদিও অজয় আত্মীয়র বাড়ী থাকত না, বাড়ি ভাড়া নিয়েছিল অফিসের কাছে। কিন্তু মৃত্তিকা মহিলা, তার পক্ষে সেভাবে থাকা সম্ভব নয়। তারওপর একা মহিলাকে কেউ বাড়ি ভাড়া দেবেও না।
কিন্তু ইতি? সে সারা  সপ্তাহ কিভাবে একা থাকবে মাকে ছাড়া। এতখানি জীবনে সে যে মাকে ছেড়ে কোনদিন থাকেনি। উপায় বার করতেই হবে। তাছাড়া উঠতি বয়সের মেয়ে। চারিদিকের পরিবেশও ভালো নয়। কে কিভাবে তার খেয়াল রাখবে, যত্ন করবে। যদিও এখন তাদের লাইনে ট্রেনের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। তার স্বামী যখন চাকরী করত তখন যে অসুবিধাটা ছিল এখন তা নেই। ডিজেল ইঞ্জিনের বদলে ইলেকট্রিকের ট্রেন চলে। সিঙ্গল রেল লাইন ডবল হয়েছে, তবুও! শেষ পর্যন্ত তাই স্থির হল কোলকাতায় থেকে নয়, মৃত্তিকা প্রতিদিনই যাতায়াত করবে বাড়ি থেকেই সব কষ্টকে মেনে নিয়েই।  যুবতী মেয়েটাকে সে কিছুতেই একা রাখতে পারবে না। তাতে, সে নিজেও টেনশন মুক্ত হতে পারবে না।
মৃত্তিকার শ্বশুড়বাড়ীর লোকেরা যদিও এই চাকরী করার ব্যাপারটা মেনে নিতে পারছিল না, তবু মৃত্তিকার জেদের কাছে তাদের মানতেই হল।  কিছুটা নিমরাজী হয়েও তারা রাজী হতে বাধ্য হল।  মৃত্তিকা বাড়ীর বাইরে পা রাখল।
চেনা পরিবেশের বাইরে বেরিয়েই মৃত্তিকা বুঝতে পারল বাইরের পরিবেশ কতটা কঠোর।  পদে পদে ধাক্কা খেতে লাগল সে। শারিরীক মানসিক দিক দিয়ে বিধ্বস্ত হতে লাগল। নিত্যযাত্রী হয়ে প্রতিদিন লড়াই করতে গিয়ে হাফিয়ে উঠতে থাকল সে। মন মানে তো শরীর মানে না। মেয়েলী অসুবিধাগুলো বারেবারেই তাকে আঘাত করতে থাকেছোটো দরিয়া থেকে বড় দরিয়ায় পড়ে অনভিজ্ঞ মাঝি যেভাবে অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে মৃত্তিকাও সেরকমই তালজ্ঞান হীন হয়ে পড়তে লাগল।
বাড়ীর পরিবেশ আর অফিসের পরিবেশের মধ্যে যে বিস্তর ফারাক, তা প্রতিনিয়ত মনে করিয়ে দিতে থাকল তার চারপাশের জগৎ।  দেরী করলে অফিসের উপস্থিতিতে খোঁচা, আর এক দিকে যানবাহনের জটিলতায় বাড়ী ফিরতে রাত হলে বাড়ীর মানুষগুলোর তিক্ত কথার সূচাল তীর তাকে সর্বসময় ক্ষতবিক্ষত ও রক্তাক্ত করতে লাগল।
মৃত্তিকা মনে জোর আনল। যতই কষ্ট হোক সে চাকরী  ছাড়বে না। তার স্বামীর চাকরীতে তার অবশ্যই অধিকার আছে।  জীবনে তো কিছুই পেল না সে, যেটুকু সুখ কুড়িয়ে-গাছিয়ে জমা করা যায় জীবনের ফুটো ঝুঁড়িতে, এই রকম মনোভাব আর-কি।
দেখতে দেখতে মৃত্তিকার সব সহ্য হয়ে যেতে লাগল। সে মানিয়ে নিতে শুরু করল তার নতুন জীবনের সঙ্গে। অফিস থেকে লোন নিয়ে মেয়ের বিয়েও দিল ঘটা করে।  মনে মনে বলল – ‘এবার নিশ্চিন্ত। শুধু অফিস, বাড়ী আর অখণ্ড অবসর’।  যদিও স্বল্প দিনের চাকরীতে একটু বেশীই ধারের বোঝা ঘাড়ে নিতে হল, তবু  মেয়েটাকে ভালো ঘরে পাত্রস্থ করতে পারল বলে অশান্ত মনটাও শান্ত হল বেশ খানিকটা।
কিন্তু মৃত্তিকার যে কপালই পোড়া। ছোটোবেলা থেকেই যে সে পোড়াকপালী। সুখ সয়না তার কপালে। তাই তাকে আবার জড়িয়ে পড়তে হল সংসারের যাঁতাকলে।
মেয়ের শ্বশুড়বাড়ীতে অশান্তি শুরু হল বছর না ঘুরতেই। শ্বাশুড়ী দজ্জাল। নাতনী বিমুখ। কন্যা সন্তান তার সহ্য হয় না। মৃত্তিকার মেয়ে ইতি যমজ কন্যা  জন্ম দেবার পর থেকেই শ্বাশুড়ীর পুত্রবধূর ওপর রাগ জন্মাতে থাকল।  নানান রকম ছুতো-নাতায় তিনি বউয়ের দোষ দেখতে শুরু করলেন। তিনি যে এমন মেয়ের সঙ্গে ছেলের বিয়ে দিয়ে ভুল করেছেন সে কথাও জনে জনে বলে বেড়াতে লাগলেন।
নাতির মুখ না দেখতে পাওয়ার চাপা ক্রোধ একটা সময় এমন পরিস্থিতিতে এসে দাঁড়াল যে ইতির গায়ে হাত তুলতেও তিনি দ্বিধা করলেন না। বাবলু ছেলে হিসেবে যতটা মানানসই, স্বামী হিসেবে একেবারেই উল্টো।  মা-র মুখের ওপর কথা বলার মত বা মা-র ন্যায়-অন্যায় কে বিবেচনা করার মত শক্তি তার কোনদিনই নেই। ফলে বৌয়ের ওপর মার অত্যাচার সে সইতে লাগল মুখ বুঁজে।  উল্টে স্ত্রীকে বোঝাতে লাগল মা-র কথার সত্যাসত্য কতটাই বাস্তব।
ফলে যা হবার হল; প্রথম প্রথম সব অত্যাচার মুখ বুঁজে সহ্য করলেও একদিন ইতি-র সহ্যের বাঁধ ভাঙ্গল। দুঃখের জলস্রোত বন্যার আকারে তার মা মৃত্তিকার কাছে এসে আছড়ে পড়ল।
বধূ নির্যাতনের ব্যাপারটা পাড়ার লোকেদের স্পর্শ করে থানা পর্যন্ত গড়াল।  যদিও আদালত পর্যন্ত গড়াবার আগেই একটা মৌখিক আলোচনার মাধ্যমে চুক্তিবদ্ধ হল।  মৃত্তিকা ঘোষণা করল – ‘এরপর আমার মেয়ের কোনোরকম অসম্মান হলে আমি প্রয়োজনীয় আইনী ব্যবস্থা নিতে পিছ্‌পা হব না। দরকারে বিবাহ বিচ্ছেদ পর্যন্ত সাগ্রহে মেনে নিতে বাধ্য হব’
কাজ কিছুটা হল।  শ্বাশুড়ী ভয় পেলেন।  থানা পুলিশের জালে হাবুডুব খাওয়ার কথা চিন্তা করে আর জেলের চারদেওয়ালের মধ্যে থেকে বাতের ব্যাথায় কাবু হবার কথা মনে করে তিনি তাঁর পুরাতন মনোভাবকে বিসর্জন দিলেন সংসার সমুদ্রে। মনকে বোঝালেন – ‘আমি নিজেও তো একজন মেয়ে। নাতনী মেনে নিলে ক্ষতি কি? বরং সুস্থভাবে জীবন অতিবাহিত করা যাবে। ভাগ্যে যদি থাকে তবে পরের বারে নাতির মুখ দেখা হলে হবে, একান্ত যদি না হয়, তবে নাতনীই থাক। আপাততঃ তো পুলিশের হাত থেকে বাঁচা যাক্’
মৃত্তিকা একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল অনেকদিন পর।  তবে তার সন্ত্রস্ত মন সব সময়ই ভয়ে জ্বর্জরিত হয় কখন কি ঘটে ভেবে। কারণ সে তো তার ভাগ্যকে সবচেয়ে বেশী চেনে।
আজকের ব্যাপারটাই যেমন। আর একটু আগে অফিস থেকে বেরোতে পারলেই ট্রেনটা পেয়ে যেত। কিন্তু, তা আর হল না। ট্রেনটা চলে যাবার পরই রেল পরিষেবা বন্ধ হয়ে গেল সিগন্যালিং প্রবলেমের জন্য।  এটাও ভাগ্য। তবে এটার সঙ্গে একা সে নয় অনেকেই জড়িত। এই ভেবে একটু আনন্দ হল তার এত দুঃখের মধ্যেও, যে আজ অন্তত তার ভাগ্যের সঙ্গে এতগুলো মানুষে ভাগ্য মিলে গেছে; তার মত ওরাও সময়ে বাড়ী ফিরতে পারবে না। 
আধঘণ্টা হয়ে গেল রেল পরিষেবা বিঘ্নিত।  দিনের আলো কমে আসছে ক্রমশঃ মোবাইলটা এই নিয়ে পাঁচবার কেঁদে উঠেছে। বাড়ী থেকে সবাই খবর নিচ্ছে। মেয়েও  ফোন  করেছিল একবার। টিভিতে খবর দেখে সে চিন্তায় পড়ে গেছে।
ট্রেন চলাচল শুরু হলেও অনেকটা পথ পাড়ি দিতে হবে।  তাও আবার ট্রেনে উঠতে পারলে তবেই। মেয়ে হয়ে জন্মেছে, পথে অনেক অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়।  দাঁতে দাঁত চেপে সে সব অসুবিধা সহ্য করা ছাড়া আর কোন উপায় নেই।
ষ্টেশনের আলো গুলো একে একে জ্বলে উঠেছে। দূরের লাল সিগন্যালের আলো গুলো রক্তচক্ষু শানাচ্ছে।  যেন বলছে আর এগিও না, এগোলেই বিপদ। লাল রঙ, রক্তের রঙ।  এই লাল রঙ নিয়েই তো মেয়েরা যুবতী, মেয়েরা সধবা, মেয়েরা আকাঙ্খিতা। সেই লাল আলোর শাসনেই আজ স্তব্ধ জনতার জনরব।
মৃত্তিকা ফোনটা হাতের মুঠোয় নিয়ে বাড়ীর নম্বর ডায়াল করল। ওপাশের ‘হ্যালো’ শুনে বলল –‘আজ কখন বাড়ী ফিরব বুঝতে পারছি না। গাড়ী এখনও বন্ধ’ ফোনের ওপাশের কণ্ঠস্বর বলল – ‘যদি সারারাত না চলে তবে কোথায় থাকবে? বাড়ীর একটা মানসম্মান আছে তো?’
মৃত্তিকা রাগত স্বরে বলল – ‘কি খাব, কোথায় থাকব, প্রশ্ন না করে মানসম্মানের কথাটাই মাথায় ঢুকল! দেখি, কি ব্যবস্থা করতে পারি । তোমাদের জানাবার দরকার তাই জানালাম।  সবাই যে ভাবে থাকবে আমিও সে ভাবেই থাকব। তোমরা তোমাদের মানসম্মান নিয়েই থাক।  তবে হ্যাঁ, যদি নিজের মানসম্মান খুইয়ে ফেলি, তবে নয়ত আর বাড়ীমুখো  হব না কোনদিন, তোমাদের চিন্তার কিছু নেই, রাখছি’।
ফোন রেখে দিয়ে প্লাটফরমের দিকে তাকাল সে। প্রচুর মানুষের ভীড়ে সে নিজেও একজন পথহারা।  মনস্থির করল সে – আজ আর বাড়ী যাওয়া নয়। এত কষ্ট সইবেনা। একবার ভাবল আত্মীয়র বাড়ী যায়; পরক্ষণেই ভাবল – কোনমতেই যাবে না, তার পরিবারের মানুষগুলো বড়ই কুটিল । তাই সে ফোন ধরে ডায়াল করল তার  অবিবাহিতা মহিলা কলিগকে। অফিসের কাছেই তার বাড়ী।
রিং হলো। সে ফোন ধরল। মৃত্তিকা বলল – ‘আজকের রাতটা আশ্রয় পাব তোমার বাড়ীতে? ট্রেন বন্ধ, শরীর পারমিট করছে না’
ফোনের ওধারের সম্মতি সূচক বার্তা মৃত্তিকার পরিশ্রান্ত চোখে-মুখে খুশির ছটা জাগাল। সে বলল – ‘ঠিক আছে আমি আসছি। তুমি আমায় বাঁচালে। খুব উপকার হল আমার’ আজই প্রথম তার নিজেকে অচেনা লাগল।
------



মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ভূতে ভয় পেলেও, ‘ সেক্সি ভূত’-এর চরিত্রে অভিনয় করতে ভয় পাননি সায়ন্তনী

টলিউড ডিভা সায়ন্তনী গুহঠাকুরতা ডেবিউ করে ফেললেন দক্ষিণী সিনেমায়। যদিও কিছুদিন আগেই তিনি আটপৌরেকে সে ব্যাপারে জানিয়েছিলেন। কিন্তু সম্প্রতি এই হোলিতে সিনেমাটি রিলিজ করার পর থেকেই তিনি খবরের শিরোনামে। যদিও তার কারণ, তিনি এই প্রথম একটি ভূতের চরিত্রে অভিনয় করেছেন। শুধু তাই নয়, একটি ‘ সেক্সি’ ভূতের চরিত্রে এবং তাঁকে নিয়েই গল্পটা গড়ে উঠেছে।  সিনেমার নাম, ‘ চিকাটি গাডিলু চিঠাকোটুন্ডু’। তেলেগু সিনেমায় কাজ করে বেশ উচ্ছ্বসিত সায়ন্তনী। এখানেই শেষ নয়, তেলেগু ইন্ড্রাস্টির ভূয়সী প্রশংসা করেছেন তিনি। তাঁদের কাজের ধরন তাঁর বেশ পছন্দ হয়েছে । ইতিমধ্যে আরও একটি দক্ষিণী সিনেমার প্রস্তাবও পেয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। গল্পটিতে দেখা যায় দুই যুগল জুটি ছুটি কাটাতে গিয়ে আটকে যায় একটি ভৌতিক বাড়িতে।  সেখানে তারা একটি সেক্সি ভূতের পাল্লায় পরে। তারপর গল্প আস্তে আস্তে অন্যদিকে মোড় নেই।  সায়ন্তনী আটপৌরেকে জানালেন , ‘’ আমাকে অনেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় মেসেজ করে এই সিনেমার ব্যাপারে জানিয়েছেন! তাঁদের আমার চরিত্রটাও ভাল লেগেছে।‘’ ‘’ আপনাকে কেউ যদি রিয়েল লাইকে সেক্সি বলেন, সেটা আপনি কীভাব...

পনেরো মিনিটেই ফিট থাকার রহস্য, উপায় বাতলে দিলেন যোগগুরু

  আটপৌরের নিজস্ব প্রতিবেদন, নৈহাটিঃ  শরীরকে মন্দিরের আখ্যা দেওয়া হয়। আর সেই শরীরকে সর্বদা ঠিক রাখতে আমরা কত পন্থায় না অবলম্বন করে থাকি। আজকাল ইঁদুর দৌড়ের যুগ, আর এই যুগে সময় পাওয়া একটা বিরাট চ্যালেঞ্জিং বিষয়। সময় বের করে শরীর চর্চা করার মতো সময় আমাদের কতজনের হাতেই বা আছে? মনের সুখে ছুটির দিন হাঁটলেই কি আমাদের শরীর ঠিক থাকবে নাকি সপ্তাহে প্রতিদিন জিমমুখী হতেই হবে ? যেমন আইটি সেক্টরে কর্মরত পার্থ সারথী চক্রবর্তী সোম থেকে শুক্র অবধি দম ফেলার সময় পায় না, অথচ কিছুদিন হল সে ঘাড়ের ব্যথায় কাবু। আবার সদ্য বিয়ে করা কৌশিক ভট্টাচার্য ইদানীং অফিস ফেরত সস্ত্রীক হাঁটতে বেরিয়ে নিজেকে ফিট ভাবছেন অথচ গত তিনমাসে তার দশ কেজি ওজন বৃদ্ধি পেয়েছে। তবুও সে নিরুপায়, অফিস ফেরত ছাড়া তার সময় নেই। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে গেলে শরীর চর্চা আর হবে না। এই সময়ের অভাব অনেকেরই তা বলে কী শরীর সে কথা শুনবে। শরীরে বাসা বাঁধছে জটিল রোগ। দিনের পর দিন ওষুধ খেয়েও সেই রোগ সারছে না। তবে ইচ্ছে থাকলে উপায় আছে, বলছেন বিশিষ্ট যোগ গুরু রাহুল তিওয়ারী। আটপৌরের মুখোমুখি হয়ে তিনি জানালেন যে খুব স্বল্প সময়ে ফিট থাকার জন্য কিছু প...

হেমন্তের উষ্ণ পরশ মিশিয়ে তালমায় ফিরল রোমিও জুলিয়েট, ঠোঁটে ঠোঁটে ' ফুল বডি রিলাক্স'

  আদিত্য ঘোষ, কলকাতাঃ বাংলার রোমিও জুলিয়েটরা দর্শককে রাত জাগিয়ে ওয়েব সিরিজের প্রতিটা পর্ব দেখতে বাধ্য করেছে। শুধু তাই নয়, দুই নবাগত অভিনেতা অভিনেত্রী  বাংলা সিরিজের মুখ্য চরিত্র হয়ে উঠেছে। বাংলা বাজারে ভাল সিনেমা বা ওয়েবের কদর আরও একবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখানোর চেষ্টা করেছে পরিচালক অর্পণ গড়াই। ক্যামেরার পিছনে এবং সামনে আরও একবার উজ্জ্বল ভূমিকার অবতীর্ণ হয়েছেন বাংলা সিনেমার  'ডন' অনির্বাণ ভট্টাচার্য। তবুও তালমার রোমিও এবং জুলিয়েট যথাক্রমে দেবদত্ত এবং হিয়া বাঙালি দর্শক মননে মিষ্টি প্রেমের উপাখ্যান হয়ে থেকে যাবে চিরকাল। যেখানে একটা সহজ সরল প্রেমকে স্রেফ টুকে দেওয়া হয়েছে সিনেমার পর্দায়। কোনও বাড়তি অলঙ্করণ নেই। কোনও উপমা-উপঢৌকন নেই। স্রেফ জীবনকে পর্দায় দেখালে যেমন মনে হয় ঠিক সেইরকম।  অভিনেতা দেবদত্ত রাহার হাতেখড়ি থিয়েটারের অভিনয় দিয়ে। তবে এই মুহূর্তে তিনি মঞ্চ থেকে বহুদূরে। তিনি আটপৌরেকে ফোনে জানালেন যে, ' থিয়েটার ছেড়েছি প্রায় তিন বছর, এখন বড় পর্দায় কাজ করার জন্য মুখিয়ে আছি। বেশ কিছু সিরিয়ালের প্রস্তাব পেলেও এই মুহূর্তে সিনেমা বা ওয়েব সিরিজের অভিনয়ের জন্যই ফোকাস করছি।' মফঃস...