মুখোমুখি আমি আর জয়ী- আদিত্য
ভেবেছিলাম, সময়টা পাল্টে যাবে! কিন্তু সময়টা আমাকেই পাল্টে দিয়েছে। আমি আরও জীর্ণ
হয়ে উঠেছি, আরও সময়ের খাঁজে ক্ষতবিক্ষত হয়ে গেছি। আজ থেকে বেশ কয়েক মাস আগে যাকে সৃষ্টি
করেছিলাম, তাকে আজ হঠাৎ ভেঙে ফেলতে ইচ্ছে করছে। সেই একই মানুষ, যার সঙ্গে আমার আলাপ
হয়েছিল আজ থেকে ছয় বছর আগে, তাকে হঠাৎ নতুন করে পাওয়ার মধ্যে যে আনন্দটা আছে হয়ত সেটা
এই সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে বুঝিয়ে বলাটা মুশকিল!
জয়ী, আমার অন্তরঙ্গ বন্ধু। আমার অসম বয়সী প্রেমিকা। আমার খুব কাছের আত্মীয়। হ্যাঁ, জয়ী আমার জীবনের একটা
রহস্য! জয়ী কোনও সাদামাটা প্রেমিকা নয়। তার সঙ্গে আমার প্রেমটাও কোনও নিছকই ঘটে
যাওয়া একটা ঘটনার থেকে অনেক বেশি। জয়ীর সঙ্গে মুখোমুখি পর্বের এটাই হয়ত শেষ পর্ব।
কারণ আমি ভেবে দেখেছি, জয়ীকে যতই লিখব, লেখা ততই বেড়ে যাবে। তাই এবার থামতেই হবে।
যদিও এই ব্যাপারে সবচেয়ে খুশি হবে জয়ী নিজেই। জয়ী বারবারেই চাইত আমি ওকে নিয়ে লেখা
বন্ধ করি। কেন ? যদিও এর সঠিক উত্তর আমার কাছেও নেই, শুধু আমি কেন, কেন জয়ীর কাছেও
নেই!
জয়ীকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, “ কী হওয়ার ইচ্ছে ছিল ?’’ জয়ী হাসতে হাসতে উত্তর
দিল, “ লাইব্রেরিয়ান! তাহলে লাইব্রেরিতে সারাদিন অনেক বই পড়তে পারতাম।’’ তারপরে জয়ীকে প্রশ্ন করলাম, “ এমন কাউকে ভালবেসেছ,
যে তোমার চেয়ে ছোট ?” জয়ীর উত্তর শুনে আমি কিছুটা থমকে গেয়েছিলাম। জয়ী বলল,’’ না, না,
না!’’ হয়ত এটাই জয়ীকে করা আমার শেষ প্রশ্ন। এখানেই হয়ত মুখোমুখি পর্বের শেষ।
এরপরে আমি যা বলব, হয়ত জয়ী সেগুলো শুনে আমায় পাগল বলবে কিন্তু তাতে আমার কিছু এসে যায় না। জয়ী নিজেও জানে আমার আর জয়ীর মধ্যে এমন একটা সম্পর্ক
তৈরি হয়েছিল, যেটা ভুলবার নয়। যেটা অস্বীকার করার কোনও অবকাশ নেই কিন্তু জয়ী আজও মানতে
চাই না আমাদের সম্পর্কের কথা। জয়ী বারবার এড়িয়ে
যায়। বিবাহিত জীবনের পরেও প্রেম আসতে পারে। কিন্তু তাই বলে সেটা অস্বীকার করার কিছু
নেই। এটা স্বাভাবিক। আমরা জানি, আমরা কোনওদিন এক হতে পারব না। আমাদের সম্পর্কের কথা
কাউকে জানতে দেওয়া যাবে না। আমরা চিরকালই গোপনে থাকব কিন্তু তাই বলে এড়িয়ে যাওয়াটা
অর্থহীন। সবকিছু জেনেও অস্বীকার কারাটা ভুল!
আমি জয়ীকে নিয়ে লেখা বন্ধ করে দিলেও তোমার কিছু এসে যাবে না জানি। তোমার উপর রাগ
করে থাকলেও তোমার কিছু এসে যাবে না। কারণ তুমি ভালবাসতে ভুলে গেছো অথবা ইচ্ছাকৃত সব
ভুলতে চাইছ যাতে আমি তোমার থেকে দূরে চলে যায়। আমাদের মধ্যে যে আত্মীয়তার সম্পর্কটা
আছে সেটার বাইরে আমাদের সম্পর্ক আরও বৃহৎ। এটাই সত্যি। তোমার চরম ব্যস্ততার মধ্যে যেদিন
আমার কথা মনে পড়বে, দেখবে সেটাই ভালবাসা, সেটাই সত্যি।
তোমাকে বড্ড ভালবাসি জয়ী, তাই
এইরকম ভাবেই থাকতে চাই। জানি আমার জীবনে প্রেম আসবে কিন্তু তাই বলে তোমাকে আমি কোনওদিনই
অস্বীকার করব না। এড়িয়ে যাব না! জানি না কেন মাঝে মাঝেই তুমি ভাব আমি আমাদের সম্পর্কটা
আরও জটিল করে তুলেছি। আমরা শুধু মাত্র ভাল বন্ধু আর সবার আড়ালে প্রেমিক- প্রেমিকা।
তোমায় আমি শ্রদ্ধা করি জয়ী। তাই কোনওদিনও এড়িয়ে যেও না। আর নয়ত মুখের ওপর সব বলে দিতে পারো আমি নিজেই সরে
যাব তোমার জীবন থেকে।
আর কয়েকটা দিন বাদেই তো তোমাদের বিবাহবার্ষিকী। তোমাদের জন্য আগাম শুভেচ্ছা রইল।
ভাল থাকুক তোমাদের সুখের সংসার। তোমার কাছে আজ সবকিছু আছে জয়ী।
তোমার ঠোঁটের আগায় এখনও লেগে আছে উষ্ণতা, যেটা আমি ছুঁয়ে দেখিনি। তোমার সারা শরীরে
এখনও উদ্দীপনা যাকে আমিও স্পর্শ করার সাহস পায়নি। তোমার টোল পড়া গালে আছে শেষ বসন্তের
প্রলাপ, শুধুমাত্র আমি তাকে স্পর্শ করেছি। জয়ী শেষবারের বলে দাও, কী চাও ? সমস্ত কিছু ভুলে বল জয়ী, কী চাও ?
একটা রোদ ভেজা সকাল নাকি অসংখ্য ঝিনুক কোড়ানো বিকেল ?
জয়ী তোমার উত্তরের আশায় থাকব। তুমি বললে সত্যি মুছে যাব তোমার জীবন থেকে!
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন