জয়ী এবং আমি, আমি এবং জয়ী- আদিত্য
এখন আমাকে প্রায়ই একটা কমন প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়, “ জয়ী কে? কী করে? কোথায়
থাকে, তোর সাথে জয়ীর সম্পর্কটা কী? ” চায়ের দোকান থেকে বাজার কিংবা ট্রেন থেকে লঞ্চ
অথবা ফেসবুক থেকে হোয়াটস অ্যাপ- কোথাও নিষ্কৃতি নেই। জয়ী দিনে দিনে আমাকে আরও পরিচিত করে তুলেছে। আমাকে
একটা অন্যরকম মানুষ করে তুলেছে। যে
মানুষটা সব সময় নেগেটিভ ভাবত, সে হঠাৎ আজ সবকিছু পজিটিভ করে নিয়েছে। আসলে একটা ভালবাসার
জোড় বাকি সব কিছুর থেকে বেশি। তাই ভাবলাম এই ভালবাসার টুকরোগুলো এবার লিখে ফেলি,
যদিও এর আগেও লিখেছি। তবে এইবারের নতুন সংযোজন হল জয়ী। এইবার সরাসরি জয়ীর মুখোমুখি।
আমার মনে জমে থাকা একরাশ প্রশ্নের সরাসরি উত্তর দেবে জয়ী।
বয়সে আমার চেয়ে প্রায় দশ
বছরের বড়! একটা ঝরা বসন্তের মতো আমাদের আলাপ,
একটা বৃষ্টি ভেজা কার্নিশের মতো আমাদের প্রেম। একটা গোয়েন্দা গল্পের মতো আমাদের
দেখা করা। আমরা বরাবরই বড্ড ভীতু এবং আনকোরা। সম্পর্কে আমরা আত্মীয় কিন্তু আমরা
সেইসব সম্পর্ক ছিন্ন করে বহু দূরে মিশে গিয়েছি। আমরা এক এবং অভিন্ন। শুধুমাত্র
কয়েকটা সম্পর্কের তাগিদে এখনও আমরা গোপনে, হয়ত সারাটা জীবন এইভাবেই চুপিসারে কেটে
যাবে। হয়ত এটাই ভবিতব্য!
জয়ী নামটা আসলে ছদ্দনাম। জয়ী নামের পেছনে লুকিয়ে রয়েছে একটা সাদামাটা বাঙালি বধূ!
এক শীতের বিকেলে আমি জয়ীকে আবিষ্কার করি। এখনও মনে আছে, জীবনের একটা বড় সাক্ষাৎকার দিতে যাব ঠিক তার পরের
দিন। একটা নামী সংবাদমাধ্যমের চাকরি! আমার ছোটবেলার স্বপ্ন। কিন্তু বড্ড ভয় হচ্ছিল। ঠিক তার আগের দিন বিকেলবেলায়
আমরা প্রতিদিনের মতোই হাঁটতে বেরিয়েছি। আমার ভয় দেখে, হঠাৎ জয়ী হাতটা ধরে বলল,” কিচ্ছু
হবে না, দেখবি তুই ঠিক জিতবি!’’ ক্ষণিকের জন্য থমকে গিয়েছিলাম, তারপর বলেছিলাম,” আমি
যদি চাকরিটা পেয়ে যায়, তাহলে তোমাকে জয়ী নামে ডাকব!’’ সেদিন জয়ী আর কিছু বলেনি, শুধু
বলেছিল “ঠিক আছে”।
তারপর বাকিটা ইতিহাস হয়ে গেছে। আমি চাকরিটা পেয়েও যায়। তারপর থেকেই সেই
মেয়েটা, হঠাৎ জয়ী হয়ে ওঠে। কিন্তু কোনওদিন জিজ্ঞাসা করা হইনি, নামটা পছন্দ কিনা!
তাই মুখোমুখি পর্বের শুরুতেই জানতে চাইলাম, “ জয়ী নামটা পছন্দ ?’’ জয়ী সরাসরি বলল,
“হ্যাঁ! নামটার মধ্যে জিতে যাওয়ার একটা ব্যাপার আছে। জয়ী হওয়ার ইচ্ছে আছে।” আমার
হঠাৎ মনে পড়ল, সেই দিনটার কথা। জয়ীও তো আমাকে জিতিয়ে দিয়ে গেছিল।
পরবর্তী প্রশ্ন করলাম, “ তোমার কাছে ভালবাসার অর্থ কী ?” জয়ী বলল, “ সবটাই বিশ্বাস-এর ওপর দাঁড়িয়ে আছে। ”হঠাৎ থমকে গেলাম। জয়ী কোন বিশ্বাসের কথা বলছে। আমিও একবার জয়ীকে ছুঁয়ে মিথ্যে বলেছি।
জয়ী কি এই কথাটা আমার উদ্দেশ্যে বলল ? বুজলাম না!
“ তোমার কাছে ছুটির দিন কেমন ? ” জিজ্ঞাসা করলাম আমি। জয়ী বলল, “ এই দিনটা
অন্যদের মতো করে বাঁচা! পরিবারের সঙ্গে থাকা আর ঘুরতে যাওয়া!’’ আমরাও তো অন্যদের জন্যই বেঁচে আছি, অন্য কোনওভাবে। অন্য ভালবাসায়। এই গরমেও
একটা অন্য বসন্তের মতো জয়ী। ঠিক আগের মতই এলোমেলো। ঠিক আগের মতই মিশুকে। জয়ী কাল
তো ছুটির দিন, কী করছ ?
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন