ছোটবেলায় মামাবাড়ি একটা অনন্ত আনন্দর নাম ছিল। সেখানে দাদু ছিলেন, দি'ভাই ছিল। আর ছিল একটা অদ্ভুত আতঙ্ক।
রাতের দিকে দুষ্টুমি করলে, না খেলে, না ঘুমোলে , বাইরের বাগানের দিকে দেখিয়ে বলা হতো, "ওই দেখ, চোখ-জ্বলা মা"। দেখতে পেতাম, ঘুটঘুটে অন্ধকারে মিটমিটে চোখ জ্বলছে। কাছে আসছে, দূরে যাচ্ছে। গায়ে কাঁটা দিত, ছমছম করে উঠতো গা। চোখ বন্ধ করে ফেলতাম। রাতের দিকে দায়ে না পড়লে জানলার দিকেই যেতাম না মামাবাড়ি গেলে, এমন আতঙ্ক।
বয়স বাড়লো। আবিষ্কার করে ফেললাম, ওগুলো আসলে জোনাকি। ততদিনে মফস্বলের মামাবাড়ির পাড়ার অন্ধকারও কমেছে। দাদু, দি'ভাই এর মত, অসহ্য আতঙ্ক টাও ছেড়ে গেল। আমি জোনাকি পেলাম।
বড় হওয়ার পর ভাবতাম, মানুষের মধ্যে থাকা একটা অনন্ত আনন্দের ব্যাপার। ছোটবেলার মামাবাড়ির মতো। কিন্তু, বহুবার ধাক্কা, আঘাত, অপমান, বঞ্চনা ইত্যাদি ইত্যাদি আতঙ্ক দিয়েছে এমন ক'রে, আজকাল জানলার কাছে যেতে বড্ড ভয় করে। দেখি, একা থাকার অন্ধকারে কয়েকটা পুরোনো-নতুন শোক জ্বলছে-নিভছে। কাছে আসছে। দূরে যাচ্ছে। আবার ফিরে আসছে।
অনেক তো হলো। দমবন্ধ হয়ে এলো অনেকবার।আশা করি, একদিন এই আতঙ্কেরও সময় ফুরোবে ছেলেবেলার হিসেব মতো। সকলের মতো ছেড়ে যাবে এও।আমি জোনাকি পাবো, আবার..
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন