সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

চারিদিক বড্ড অন্ধকার হয়ে এলো। আমাদের প্রেমটাও কোথায় উবে গেল।


                                                                    আবার যদি- আদিত্য


-‘’ কোনওদিন ভালবেসেছিলে?’’
‘’ তুই এই কথাগুলো বলার জন্য এখানে ডাকলি!’’
‘’ কথা না ঘুরিয়ে, উত্তর দাও।‘’
‘’ অন্য প্রশ্ন কর। উত্তর দেব, কিন্তু এইসব প্রশ্নের কোনও উত্তর নেই।‘’
‘’ কিন্তু কেন?’’
‘’ নেই! কিন্তু কেন নেই জানি না।‘’
‘’ তাহলে সব মিথ্যে ছিল ?’’
“ আমি একবারও তো বলিনি সব মিথ্যে ছিল!’’
‘তাহলে কিছু বলছ না কেন?’’
‘’ কিছু বলার নেই তাই বলছি না!’’

বাইরে তখন সবেমাত্র ঝোড়ো হাওয়া শুরু হয়েছে। আমাদের মধ্যে সেই হাওয়া আরও তীব্র হয়ে উঠছে। আরও উদাসী করে দিচ্ছে আমাদের চারিপাশ। শরীকী বাড়ির এই দুফালি ছাদটা এখন সালিশি সভায় পরিণত হয়েছে।  ছাদের এক কোণে শ্যাওলা জমেছে, কিছু অংশ বেশ জরাজীর্ণ। তারগুলো এঁকেবেঁকে গেছে পাহাড়ি রাস্তার মতো।  ছাদের একপাশে একটা টিমটিমে আলোটা দুলছে। ধুলো উড়ছে আমাদের উপর দিয়ে।  অল্প আলোয় জয়ীর মুখটা কেমন ফ্যাকাশে লাগছে। সবুজ সালোয়ারটায় ওকে আগেও দেখেছি। আজ হয়ত তাড়াহুড়োতে ওড়না আনতে ভুলে গেছে। কাঁধের পাশ দিয়ে কালো ব্রা-এর কিছু অংশ দেখা যাচ্ছে। চুলগুলোও আজ এলোমেলো। মুখটা নীচের দিকে নামানো। হয়ত লজ্জায় কিংবা রাগে।

‘’ তাহলে এখানে এলে কেন?’’
‘’ তুই ডাকলি তাই এলাম!’’
‘’ আমি যা বলব তুমি করবে তাহলে ?’’
‘’ কী শুনি?’’
‘’ একবার বলো যে আমায় কোনওদিন ভালবাসনি’’
‘’ ওটা বলতে পারব না!’’
‘’ তাহলে বলো যে ভালবেসেছিলে।‘’
‘’ আমি এই নিয়ে কিছুই বলতে চাই না!’’
‘’ কিন্তু কেন?’’
‘’ তুই কষ্ট পাবি তাই।‘’

বুকের ভিতরটা হঠাৎ কেমন মোচর দিয়ে উঠল। জয়ী তো কোনওদিনই চাইনি আমি কষ্ট পায়। কিন্তু ভালবাসার কথা বললে আমি কেন কষ্ট পেতে যাব? কেউ কী তাহলে আমাদের ব্যাপারে সব জেনে ফেলেছে? এইসব ভাবতে ভাবতে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘’ আমি আজ সব শুনতে চাই! তুমি বল কী হয়েছে।‘’

‘’ কিছুই হয়নি!’’
‘’ তাহলে এইরকম করছ কেন ?’’
‘’ আমি তো কিছুই করিনি!’’
‘’ তাহলে কিছু বলছ না কেন ?’’
‘’ আমাকে একই কথা নিয়ে বারবার বিরক্ত করিস না।‘’

থমকে গেলাম। যে জয়ী একদিন আমার অপেক্ষায় বসে থাকত, সে আজ বিরক্ত হওয়ার কথা বলছে। আসলে আমাদের অভ্যাসটা পাল্টে যায়। আর পাল্টে ফেলাটাই হয়ত নিয়ম, অনেকটা অনুপমের গানের লাইনের মতো।
‘’ তাহলে তুমি কী চাও ?’’
‘’ তুই ভাল থাক।‘’
‘’ কিন্তু আমি তো তোমাকে ছাড়া ভাল থাকতে পারব না।‘’
‘’ অভ্যাসটা পাল্টে ফেল!’’
‘’ তুমিই তো আমার অভ্যেস। তোমাকে কী করে পাল্টে ফেলব?’’

এই বাড়িটার বয়স প্রায় ১৫০ বছর। চারিদিকেই অনেক ইতিহাস ঘুরে বেড়াচ্ছে। হাওয়াটা আরও জোরালো হচ্ছে। আলোটা আরও জোড়ে দুলছে। আমরাও আরও উসাদী হয়ে যাচ্ছি। আমার বারবার ইচ্ছে করছে জয়ীকে জড়িয়ে ধরতে। চুমু খেতে ইচ্ছে করছে ওর সিক্ত ঠোঁটে, কিন্তু কী একটা আমাকে আটকে রেখেছে। জয়ী একটু থেমে উত্তর দিল, ‘’ মেয়ে কিন্তু ঘুম থেকে উঠে যাবে, এবার আমাকে যেতে হবে। আর কিছু বলার থাকলে বল।‘’ আমি বুঝতে পারলাম জয়ী এইসব কিছু এড়িয়ে যেতে চাইছে। আমি বললাম, ‘’ তুমি যখন এড়িয়েই যেতে চাইছ, তখন এত রাতে ছাদে এলে কেন ?’’

‘’ তুই বললি তাই এসেছি!’’
‘’ তুমি চাইলে নাও আসতে পারতে। ফোনেই জিজ্ঞাসা করতে পারতে। কিন্তু তুমি এসেছ! জয়ী একাবার বলো আমায় ভালবাস।‘’
‘’ ওটা বলতে পারব না। ওটা অন্য কারুর জন্য রেখেছি।‘’
‘’ জয়ী, তোমার জন্যই আমি আবার সবকিছু ফিরে পেয়েছি। আমার স্বপ্নের চাকরি, আমার ভালবাসার বাড়ি, সবই তোমার জন্য।‘’
‘’ এবার একটু নিজেকে ভালবাস!’’
‘’ জয়ী, কেন এই রকম করছ?’’ জয়ী আমার থেকে একহাত দূরেই দাঁড়িয়ে ছিল। এবার জয়ী আমার হাতটা ধরে বলল, ‘’ আমি চাই তুই ভাল থাক, তাই এইরকম করছি।‘’
‘’ তুমি ছাড়া আমি শূন্য! আমি ফ্যাকাসে।‘’

‘’ পাগল! এইসব কাব্য ছাড়। একটু পজিটিভ থাক। তুই জানিস আমাদের সম্পর্কটা সম্ভব নয়, তাই এটা নিয়ে কষ্ট পাস না। আমি যেখানেই থাকি, তোর ভালই চাইব।‘’ আমি তখন ভেতরে ভেতরে অনেকটাই ভেঙে পড়েছি। বললাম জয়ী শেষ একটা কথা বলব? জয়ী বলল, ‘’ কী ?’’ আমি জয়ীকে এক ঝটকায় জড়িয়ে ধরলাম। ততক্ষণে ঝড়টা তীব্র হয়েছে। আলোটা আরও জোড়ে দুলছে। চারিদিকে তখন একটা নিদারুন বিষণ্ণতা। হয়ত বাকি কথাগুলো ওভাবেই বলে ফেললাম। রাত হয়েছে, হাওয়া আরও তীব্র হয়েছে। যাওয়ার আগে জয়ী বলল, ‘’ এবার আসি। দুঃখ পাস না। সারাজীবন আমি তোর ভালই চাইব।‘’ জয়ীর চোখ তখন ছলছল করছে। অল্প আলোতেও জয়ী হঠাৎ উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। জয়ী চলে গেলে। তারপর চারিদিক অন্ধকার। আমি জানি আমার আর জয়ীর ঠিকানাটা চিরকালই এক থাকবে, তবুও জয়ী আমার নয়। চারিদিক বড্ড অন্ধকার হয়ে এলো। জয়ী হারিয়ে গেল। আমাদের প্রেমটাও কোথায় উবে গেল।   
  


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

"যোগাসনের বিকল্প কিছু নেই" :শিবগঙ্গা টিঙ্কু গঙ্গোপাধ্যায়

  আজকাল সুস্থ থাকার জন্য আমরা বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করে থাকি। ইদানীং কালে খুব কম বয়সে হৃদরোগের কিংবা ডায়াবেটিসের সমস্যা থেকে আরও জটিল প্রাণঘাতী রোগ আমাদের শরীরে বাসা বাঁধছে। প্রতিদিন সময়ের তালে ছুটে চলার তাগিদে আমাদের জীবন ক্রমশ কঠিন হয়ে উঠেছে। আর এই কঠিন সময়ে শরীরচর্চার যে সময়টুকু পাওয়া যায়, আমরা অনেকেই জিমে গিয়ে ভারী ভারী লোহালক্কর তুলে থাকি আবার অনেকেই ভোরবেলা হেঁটে থাকেন। প্রাচীন কাল থেকে যোগঅভ্যাস আর প্রাণায়ামের সুখ্যাতি আছে। অনেকেই অভ্যাস করে থাকেন। অনেকের জীবনে   বদলে দিয়েছে যোগঅভ্যাস। তবে জিম না যোগঅভ্যাস এই নিয়ে তুমুল তর্কবিতর্ক আছে। নাকি শুধুমাত্র হাঁটলেই মিলবে অনেক রোগ থেকে মুক্তি? তর্ক চলবেই। অনেক বিশেষজ্ঞরা অনেক পরামর্শ দিয়েই থাকেন তবে কোভিড পরবর্তী সময়ে যোগঅভ্যাসের একটা বিরাট প্রচলন শুরু হয়েছে। বিশেষত একটা সময় বয়স্করা প্রতিনিয়ত যোগঅভ্যাস করে থাকলেও ইদানীং সববয়সীদের মধ্যে এই প্রচলন দেখা যাচ্ছে। যোগব্যায়াম বিশেষজ্ঞ শিবগঙ্গা টিঙ্কু গঙ্গোপাধ্যায় আটপৌরের মুখোমুখি হয়ে জানালেন যে," যোগব্যায়ামের বিকল্প কিছু নেই। প্রাণায়াম এবং যোগব্যায়াম একজন মানুষকে সম্পূর্নরূপে বদলে দিত...

হেমন্তের উষ্ণ পরশ মিশিয়ে তালমায় ফিরল রোমিও জুলিয়েট, ঠোঁটে ঠোঁটে ' ফুল বডি রিলাক্স'

  আদিত্য ঘোষ, কলকাতাঃ বাংলার রোমিও জুলিয়েটরা দর্শককে রাত জাগিয়ে ওয়েব সিরিজের প্রতিটা পর্ব দেখতে বাধ্য করেছে। শুধু তাই নয়, দুই নবাগত অভিনেতা অভিনেত্রী  বাংলা সিরিজের মুখ্য চরিত্র হয়ে উঠেছে। বাংলা বাজারে ভাল সিনেমা বা ওয়েবের কদর আরও একবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখানোর চেষ্টা করেছে পরিচালক অর্পণ গড়াই। ক্যামেরার পিছনে এবং সামনে আরও একবার উজ্জ্বল ভূমিকার অবতীর্ণ হয়েছেন বাংলা সিনেমার  'ডন' অনির্বাণ ভট্টাচার্য। তবুও তালমার রোমিও এবং জুলিয়েট যথাক্রমে দেবদত্ত এবং হিয়া বাঙালি দর্শক মননে মিষ্টি প্রেমের উপাখ্যান হয়ে থেকে যাবে চিরকাল। যেখানে একটা সহজ সরল প্রেমকে স্রেফ টুকে দেওয়া হয়েছে সিনেমার পর্দায়। কোনও বাড়তি অলঙ্করণ নেই। কোনও উপমা-উপঢৌকন নেই। স্রেফ জীবনকে পর্দায় দেখালে যেমন মনে হয় ঠিক সেইরকম।  অভিনেতা দেবদত্ত রাহার হাতেখড়ি থিয়েটারের অভিনয় দিয়ে। তবে এই মুহূর্তে তিনি মঞ্চ থেকে বহুদূরে। তিনি আটপৌরেকে ফোনে জানালেন যে, ' থিয়েটার ছেড়েছি প্রায় তিন বছর, এখন বড় পর্দায় কাজ করার জন্য মুখিয়ে আছি। বেশ কিছু সিরিয়ালের প্রস্তাব পেলেও এই মুহূর্তে সিনেমা বা ওয়েব সিরিজের অভিনয়ের জন্যই ফোকাস করছি।' মফঃস...

শীতের শহরে পারদ বাড়িয়ে দিলেন সায়ন্তনী, কালো পোশাকে ছড়িয়ে দিলেন মায়া

  শীতের ছুটিতে ছুটি কাটিয়ে ফিরলেন অভিনেত্রী সায়ন্তনী গুহঠাকুরতা। দক্ষিণ গোয়াতে জলকেলি করলেন উষ্ণতার সঙ্গে।  তাঁর কালো পোশাক পরিহিত ছবি মায়া ছড়িয়েছে সমাজমাধ্যম জুড়ে। এই শীতে তাঁর উষ্ণ ছবি শহর কলকাতার পারদ বাড়িয়ে দিয়েছে।  তাঁর এই গোটা ভ্রমণ স্পন্সর করেছিল ফার্ন হোটেল এবং ক্লিয়ারট্রিপ।  তাঁর ঝুলিতে একের পর এক হিট ছবির সারি। 'সমান্তরাল', 'উমা', 'এক যে ছিল রাজা'  কিংবা 'লালবাজার' মতো ওয়েব সিরিজে তাঁর সাহসী অভিনয় দর্শকদের কাছে তাঁর চাওয়া-পাওয়াটা বাড়িয়ে দিয়েছে। শুধু বড় পর্দায় নয়, ছোট পর্দায় 'কিরণমালা', 'জয়ী', 'সাত ভাই চম্পা'-এর মতো কাজ দর্শক আজও মনে রেখেছে। তিনি আগের চেয়ে অনেক পরিণত, অনেক বেশি কাজ নিয়ে বদ্ধপরিকর। অভিনেত্রী সায়ন্তনী গুহঠাকুরতা এখন শুধুমাত্র ভাল কাজের জন্য মুখিয়ে আছেন। মুখিয়ে আছেন বাংলা ইন্ডাস্ট্রিকে সুপারহিট কাজ দিতে। শুধু বাংলা কেন, বাংলা ছাড়াও বাকি ইন্ডাস্ট্রি যেমন হিন্দি কিংবা সাউথ ইন্ডাস্ট্রিতেও ভাল চরিত্রে কাজ করতে  তিনি প্রস্তুত। এছাড়াও তাঁর ঝুলিতে রয়েছে মায়া - এর মতো হিট বাংলা ছবি।  ত্রিভুজ রিলিজ করতে চলেছে আর কিছু...