অভিনেত্রী ঐন্দ্রিলা সেনের সঙ্গে এর আগে আলাপ হওয়ার
সুযোগ হয়নি। শুধুমাত্র মেগা সিরিয়ালের পর্দায় তাঁর বলিষ্ঠ অভিনয় দেখেছি। সেইটুকুই
সম্বল করে ফোন করে ফেললাম। ফোনের ওপার থেকে একটা মিষ্টি কণ্ঠস্বর ভেসে এলো। মনে হল
এই তো সেই পরিচিত ‘মহুল’ কিংবা ‘ দুষ্টু’, যার অভিনয়ের দৃঢ়তা ভেদ করে গেছে আপামর
দর্শকের হৃদয়। শুধুমাত্র প্রাইম টাইমের নয়, তাঁর অভিনীত ‘ ফাগুন বউ’-এর রিপিট
টেলিকাস্টও অনেকে দেখেন। আবার তো অনেকে পৌঁছে গেছেন সেই গল্পের একেবারে অতলে।
অভিনেত্রী হাসতে হাসতে জানালেন সেই মজাদার অভিজ্ঞতার কথা! তিনি বললেন, ‘’ অনেকে তো
আমাকে গালাগাল দিয়ে বলে, কেন তুমি বিক্রমদার মতো স্বামীকে স্বীকার করছ না? তোমার
কিন্তু ভাল হবে না, ওকে স্বীকার করে নাও এবং আরও কত কী!’’
একসময় ‘ সাত পাকে বাঁধা’ মেগা সিরিয়ালের জনপ্রিয়
তারকা ঐন্দ্রিলা সেন প্রায় চার বছর বিরতিতে ছিলেন। তবে এমনি এমনি নয়। অভিনেত্রী
জানালেন, ‘’ আমি চেয়েছিলাম, একটা মেগা সিরিয়ালের পরই নতুন কোনও কাজ না করতে। একটু
সময় নিতে চেয়েছিলাম কিন্তু যখন ফিরব ভাবি ঠিক তখনই আমার বাবা মারা যান। তাই তখন আর
ফেরা হয়নি। সব মিলিয়ে প্রায় চার বছর পর ছোট পর্দায় ফিরেছি।‘’
অভিনেত্রীকে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘’ ফাগুন বউ- এর
জনপ্রিয়তা এখন বেশ তুঙ্গে, এতটা কি আশা করেছিলে ?’’ ঐন্দ্রিলা বললেন, ‘’ আমি খুব সিলেকটিভ কাজ করতে
ভালবাসি। তাই যেটা মনে হয় আমার জন্য নয়, সেটা করি না এবং যেটা করি
সেখানে আমি আমার একশ শতাংশ দিয়ে করি। ‘ ফাগুন বউ’ – শুরু হওয়ার আগে আর একটা অফার
এসেছিল, কিন্ত আমার মনে হয়েছিল সেটা আমার জন্য নয়, তাই ছেড়ে দিয়েছিলাম। এখন ভাবি
ছেড়ে দিয়ে ভালই করেছিলাম।‘’
আমি আবার জিজ্ঞাসা করলাম, ‘’বিক্রমের বিপরীতে কাজ করতে
কি বেশি ভালবাস? ‘’ অভিনেত্রী জানালেন, ‘’ একদম। আমরা প্রায় আট বছরের বন্ধু এবং
এছাড়াও এর আগে আমরা একসঙ্গে কাজ করেছি, তাই সুবিধা তো হয়ই। অনেক সিন আমরা একসঙ্গে
ইমপ্রভাইজ করি। একটা বন্ডিং আছে ওর সঙ্গে। যদিও কারুরই বিপরীতে কাজ করতে আমার
অসুবিধা নেই, কারণ অভিনয় করারটাই আমার কাজ।‘’
প্রায় পনেরো বছর ধরে তিনি ইন্ড্রাস্ট্রিতে আছেন। যখন
তিনি প্রথম অভিনয়ে আসেন, তখন তাঁর বয়স সাত কিংবা আট বছর। ছোট থেকেই তিনি নাচের
সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ড্যান্স ড্রামাও করেছেন। অভিনেত্রী জানালেন, ‘’ পরিচালক
অনিন্দ্য সরকারের হাত ধরেই অভিনয় জগতে পা
দিয়েছিয়ালাম। তারপর আস্তে আস্তে আরও এগিয়ে যায়। আরও অফার আসে, তবে সবসময় আমি
সিলেকটিভ কাজ করেছি।‘’
ঐন্দ্রিলাকে থামিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘’ অনেক
সংবেদনশীল বাঙালী এখনও বাংলা সিরিয়ালের প্রতি নাক সিটকায়, এই নিয়ে আপনি কী
বলবেন?’’ অভিনেত্রী জানালেন, ‘’ আমার মনে হয় তাঁদের সংখ্যাটা খুবই কম। কারণ আমি
যখন কোনও ইভেন্ট কিংবা অন্য কোনও শো-তে যায়, তখন দর্শকদের যে উচ্ছ্বাসটা দেখি সেটা
দেখে একেবারেই এটা মনে হয় না। তখন আমাকে কেউ ‘ মহুল’ কিংবা ‘দুষ্টু’ বলে ডাকে না। একবারে নিজের নাম ধরেই ডাকে। সেটাই আমার কাছে সবচেয়ে বড় পাওয়া।
‘’ আবার জিজ্ঞাসা করলাম, ‘’ সম্প্রতি দেখছিলাম সোশ্যাল মিডিয়ায় আপনাকে একজন আগুন
বউ বলেছেন!’’ অভিনেত্রী হাসতে হাসতে বললেন, ‘’ আমিও দেখেছি, তবে এগুলো আমি খুব
এনজয় করি!’’
অভিনেত্রী শুধুমাত্র মেগা সিরিয়ালের পর্দায় আটকে নেয়,
বহু বিজ্ঞাপনের ছবিতে তাঁকে দেখা যাচ্ছে। এই বিষয়ে অভিনেত্রীকে জিজ্ঞাসা করাতে
তিনি বললেন, ‘’ বিজ্ঞাপনের ছবি করলে যেমন একাধারে জনপ্রিয়তা বাড়ে ঠিক তেমনি
অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতাও পাওয়া যায়।‘’
শুধু কাজের ব্যাপারেই নয়, অভিনেত্রী কিন্তু খাওয়ার
ব্যাপারেও বেশ সিলেকটিভ। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ‘’ এক প্লেট বিরিয়ানি নাকি এক হাঁড়ি
রসগোল্লা, কোনটা পছন্দ করবে?’’ তিনি হাসতে হাসতে বললেন, ‘’ এক হাঁড়ি রসগোল্লা খেতে
পারব না, তবে বিরিয়ানি পারব!’’
চূড়ান্ত ব্যস্ত অভিনেত্রী ছুটি পেলেই প্রিয় মানুষদের
সঙ্গে সময় কাটাতে ভালবাসেন। শুধু তাই নয় নতুন নতুন গাড়ির টেস্ট ড্রাইভ দিতেও তিনি
দক্ষ। সম্প্রতি একটি বিএমডাবলু কিনেছেন তিনি। আর ঘুরতে যাওয়ার কথা জিজ্ঞাসা করলে
তিনি জানালেন, ‘’ পাহাড় আমার প্রিয়। বেশ অনেকগুলো পাহাড় হবে, আঁকাবাঁকা,
উঁচু-নিচু! ঠিক বলে বোঝাতে পারব না।‘’
( সাক্ষাৎকার- আদিত্য
ছবি- ঐন্দ্রিলা সেনের থেকে সংগৃহীত)
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন