শেষ! ঠিক শেষ নয় শুরু! শেষ থেকেই শুরু। সাদা কাপড়ে ঢাকা নিথর দেহ। চোখে তুলসী পাতা। কপালে চন্দন। দু’পায়ের পাতায় আলতার রক্তিমতা। দু’হাত শরীরের দু’পাশে। পা দুটো সামান্য ফাঁক হয়ে টান টান ভাবে বিস্তৃত। মুখটা সামান্য ফাঁক। শেষ নিঃশ্বাস বহির্গমনের সাক্ষী।
অমুক, তমুক নয়; এখন বডি। দেহ বললেও ঠিক মানায় না, বলতে হবে মৃতদেহ। শরীরের নীচে এখন আর ডানলোপিলোর কোমলতা নেই। শুধুই রঙ-জ্বলা পলকা খাটের কর্কশতা।
মৃতদেহ ঘিরে আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশীর ভীড়। সজল চোখের মেলা। টুকরো টুকরো কথার কোলাজ। সবই গত দিনের। কার কার সঙ্গেঁ কি কি কথা হয়েছিল, কি কি করেছিল, তার তালিকা।
এখন ওঁনার ওপর কারো হিংসা নেই, দ্বেষ নেই; নেই কারো কটুক্তি করার ইচ্ছা। ওঁনার নামের পাশে চন্দ্রবিন্দুর স্থান হয়েছে। চন্দ্রবিন্দু মানে ঈশ্বর। আর ঈশ্বর মানেই ভগবান। মানুষ মারা গিয়ে ভগবান হন। যুগ যুগ ধরে এমনই চলে আসছে। চলবেও পৃথিবী ধ্বংস পর্যন্ত।
“জন্মিলেই মরিতে হইবে” – তাই, শেখর সান্যালও মারা গেলেন। মারা গেলেন অনেক যুদ্ধ করে। জীবন যুদ্ধ। এক এক জন মানুষ এরকম ভাগ্য নিয়েই জন্মান। তাঁদের সারা জীবন সংগ্রাম করেই যেতে হয়। ঈশ্বর শেখর সান্যালও সেই গোষ্ঠীভুক্তই ছিলেন।
একাকী জীবন। বিবাহিত জীবনের স্বাদ গ্রহণ হয়ে ওঠেনি। তার প্রধান কারণ হয়ে উঠেছিল বেকারত্ব। জুট মিলটা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তখন শেখর যুবক। ভালোই চলছিল। হাতে পয়সা-কড়িও ভালোই আসত। দাদা বৌদির সংসারে দিন কেটে যাচ্ছিল। ঝক্কি ঝামেলা কমই ছিল।
কিন্তু জীবন একভাবে চলল না। মিল বন্ধ হয়ে গেল। আজ খুলবে, কাল খুলবে করতে করতে মিলের লোহার গেটের তালায় মরিচা ধরল। জীবনটা হঠাৎই সুতো ছেঁড়া ঘুঁড়ির মত লাট্ খেতে লাগল।
চাকরীর বড় আকাল। সেভাবে কোথাও কাজ জুটল না। বেশ কিছুদিন অতিক্রান্ত হবার পর চাকরী করার ইচ্ছাটাও চলে গেল। পড়াশুনার দৌড় বেশী ছিল না, ফলে সেরকম কোন কাজও যোগাড় হল না। হাত খরচ চালানর জন্য সামান্য রোজগার করার চেষ্টায় নিজেকে চক্ষু লজ্জার খাতিরে কাজ করতে বাধ্য করলেও কোথাও বেশিদিন টিঁকে থাকতে পারল না।
দাদার রোজগার ভালোই ছিল। দু’বেলা দু’মুঠো খাওয়ার ব্যবস্থাটা ওখানেই হয়ে গেল। তবে বিয়েটা আর করা হল না। না হওয়াটাই স্বাভাবিক।
এক ঘেয়ে জীবনের বেশীর ভাগটাই টো-টো-কোম্পানী। সেটাও এক এক সময় একঘেয়ে। তখন কিছু কাজের চেষ্টা। কিন্তু কিছুদিন করার পর সেটাও করতে মন চায় না। মনসংযোগের অভাব। বিড়ির নেশা আর শরীর থেকে ছিট্কে বেরিয়ে আসা কাশি সঙ্গের সঙ্গী। নেশা বাড়ে, সঙ্গে কাশিও। জীবনের ওপর একঘেয়েমি থেকে একরকম বিতৃষ্ণা। ‘ধূস্! আর বেশীদিন বেঁচে কি হবে?’
একে একে বন্ধুদের গড়ে ওঠা সংসার, সন্তান-সন্ততী। নিজের আনন্দ বলতে দাদার ছেলে মেয়েরা। চেষ্টা করলে যে ছোটো-খাটো কাজ পাওয়া যায় না তা নয়, কিন্তু কাজের সঙ্গে মনের মিল হয় না। তাই সারাদিন শুধু খাওয়া, বসা, শোয়া, গল্প করা আর ভবঘুরের মত ঘুরে ঘুরে বেড়ান।
বৌদি মায়ের মতন। কম বয়সে শ্বশুড় ঘর করতে এসে দেবরটাকে পাওয়া। ফলে তার দোষ চোখে পড়েনা। দাদার তিরষ্কার বৌদির আাঁচলের বাতাসে উড়ে যায়। দাদাকে শুনতে হয়, ‘ঠাকুরপো, তো চেষ্টা করে, কাজ না পেলে কি করবে? নিজের মায়ের পেটের ভাইটাকে দূরে সরিয়ে দেবার কথা চিন্তা করতে পারবে? আর তা করলে পাপ হবে না?’
দেবর বৌদির বাড়ির কাজ করে দেন। জল তুলে দেওয়া, কেরোসিন তেল আনা। রেশনের দোকানে লাইন দেওয়া। বিদ্যুতের বিল জমা দেওয়া ইত্যাদি, ইত্যাদি। দাদা দেখেন তাঁর কাজ কমছে। ফলে, শ্যামল আর ব্যাপারটা নিয়ে ঘাঁটা-ঘাঁটি করেন না।
ভাইপো ভাইঝির সঙ্গে কাকার খুব ভাব। তাদের খেলার সঙ্গী কাকা। তাদের আবদারের মানুষ কাকা। যেসব জিনিস বাবা বা মায়ের কাছে চাওয়া যায় না বা চাইলেও পাওয়া যায় না, সেসব কাকার কাছে চাইলে কাকা ঠিক ম্যানেজ করে দেন, দাদা বৌদির সঙ্গে কথা বলে। ভাইয়ের কথা দাদা বৌদি দুজনেই খুব একটা ফেলতে পারেন না। কখনও কখনও কিছুটা বৌদির চাপেও রাজী হন নিমরাজী দাদা। শুধু বৌদি দাদার আড়ালে বলেন,“ঠাকুরপো, তোমার জন্যই কিন্তু সৌপ্তিক আর সুপর্ণা আশকারা পাচ্ছে। তোমার দাদা কিন্তু খুব রাগ করে”।
দাদা যে রাগ করেন তা শেখর জানেন। তেমনি এও জানেন বৌদির কথার খেলাপ করতে পারেন না দাদা। এ সংসারে বৌদিই সর্বেসর্বা। আর ঠাকুরপোর আবদারে বৌদিও কখনও না বলতে পারবেন না। সম্পর্কটা যে দেবর বৌদির চৌকাঠ ছাড়িয়ে ভাই আর দিদির অথবা মা আর ছেলের সম্পর্কে পরিণত হয়েছে। সেদিক দিয়ে শেখর বড়ই ভাগ্যবান। এই একটা ব্যাপারেই তাঁর ভাগ্য রেখাটা বড়ই সুস্পষ্ট ও গভীর।
সেই শেখর মারা গেলেন। মারা যাবার বয়স হয়নি, তবুও মারা গেলেন। অবশ্য মারা যাবার সঠিক বয়স কোনটা তার হিসাব কে রাখে? তবে, অনিয়ম, জীবনের ওপর উদাসীনতা, কিছুটা পয়সার অভাবও তাঁর মৃত্যুর কারণ। যদিও শারিরীক অসুস্থতার ব্যাপারটাতো আছেই।
ডাক্তার অনেকদিন ধূমপান করতে মানা করেছিলেন। শেখর শোনেননি। অ্যাজমা গ্রাস করেছিল শরীরটাকে। বুকে কফ থাকত সারা বছর। সঙ্গের সঙ্গী কাশি। এই একটা ব্যাপারেই বৌদির কথাও শুনতেন না তিনি। জীবনের প্রতি অবসাদের জন্যও হতে পারে, আবার ধোঁয়া তাকে গ্রাস করেছিল বলেও হতে পারে। বিড়ির নেশা ছাড়তে পারেননি শেখর।
তারপর জীবনটার ওপর দিয়ে অনেক কিছু ঘটে গেছে। অনেক বছর পেরিয়ে গেছে। ভাইপো ভাইঝিরা বড় হয়েছে। তাদের সন্তানাদি হয়েছে । মা মারা গেছেন। বৌদি মারা গেছেন। মা বৃদ্ধা হয়েছিলেন। তাঁর মৃত্যুটা স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু বৌদির মৃত্যুটা অকস্মাৎ। নাড়া দিয়েছিল শেখরকে। শরীরে হঠাৎ চিনির পরিমাণ কমে যাওয়ায় হৃদ্পিণ্ড বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। উচ্চ মধুমেহ রুগী ছিলেন বৌদি। তার ফলে শরীরের অন্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ গুলোও নিজ নিজ কাজ সুষ্ঠু ভাবে করতে পারছিল না বেশ কিছুদিন ধরেই। তারপর একদিন দুপুরে, হঠাৎই চলে গেলেন, কাউকে কিছু না বলে। সবচেয়ে বড় ধাক্কাটা সেদিনই পেয়েছিলেন শেখর। দাদার তখন চাকরী থেকে অবসর নেওয়া হয়ে গেছে। দাদাও কম বেশী অসুস্থ। চিকিৎসকের চিকিৎসায় ওষুধকে সঙ্গী করে দিন কাটে। বৌদি সংসারটাকে বাঁধের মত সমস্ত ঝামেলা থেকে বাঁচিয়ে রেখেছিলেন। বাঁধ ভেঙ্গে যেতে সব কিরকম এলোমেলো হয়ে গেল। শেখর মানসিক ভাবে অনেকটাই ভেঙ্গে পড়লেন। ভেঙ্গে পড়লেন তাঁর দাদা শ্যামলও।
তারপর গতানুগতিক জীবন ঢেউয়ের মাথায় ভাসা খড় কুটোর মত ভেসে যেতে লাগল। শুধু শেখর বা শ্যামল নন, সংসারটাও। ভাইঝির বিয়ে হয়ে গেছে দূরে। ভাইপোও সংসার করে আলাদা হয়ে গেছে বেশ কিছুদিন আগে। যোগাযোগ থাকলেও কোথায় যেন তার কেটে গেছে।
ভাইপো-বৌ রান্না করে দেয়। ভাইপোর ফ্ল্যাট কাছেই । সারাদিনের কাজের মেয়েটা ঘরের সব কাজ করে দেয়। ওঁরা দুই ভাই মিলে বাড়ীটায় একা একা থাকেন। ভাইপো সৌপ্তিক এই বাড়ীতে বড় হয়েছে কিন্তু ভালো চাকরী পাওয়ার পর ফ্ল্যাট কিনে আলাদা থাকে। শহরের জমজমাট দিকটায়, ষ্টেশনের কাছে। বাবা, কাকাকে নিয়ে যেতে চেয়েছিল। কিন্তু ওঁনারা যেতে চাননি। পুরাতন মানসিকতা বাধ সেধেছিল। এ বাড়ী বাবার ভিটে, বাবা-মা আত্মীয় পরিজন এখানে থেকেছেন। অনেক স্মৃতি। শেখর এখানে বৌদির হাতের স্পর্শ পান। মাতৃসমা বৌদির হাতের ছোঁয়া এখনও এই বাড়ীর ইঁট-কাঠ-সিমেন্টে। ওঁরা থেকে গেছিলেন।
শ্যামল আজ একা হয়ে গেলেন। ভাইয়ের মৃতদেহের সামনে দাঁড়িয়ে কুঁজো হয়ে যাওয়া শরীরটাকে আরও একটু নীচু করে বললেন,“যাঃ! তোকে ছুটি দিলাম। সুখে থাকিস। বৌদির সঙ্গে দেখা হলে বলিস, দাদাকে রেখে এলাম”। টুকরো টুকরো হয়ে যাওয়া হৃদয় অতি দুঃখে বিধ্বস্ত দুই চোখে অশ্রু আনতে পারল না। শুধু গলাটা ধরে এল। কথা জড়িয়ে গেল শেষের দিকে। শূন্য দৃষ্টি খেলা করল ভাই শেখরের নিষ্প্রাণ মুখের ওপর।
গল্পটা এখান থেকে শুরু হবার কথা। একা বাঁচার লড়াইয়ের গল্প। যদিও সে এক অন্য গল্প। জীবনে গল্পের শেষ নেই। কখন কোথা থেকে গল্প শুরু হয়ে যাবে কেউ জানে না। তাই জীবনের গল্প বলতে গেলে কোন কূল খুঁজে পাওয়া যায় না। কোনটা বলব, আর কোনটা বলব না বুঝে ওঠা যায় না।
সৌপ্তিক পরিবার নিয়ে এই বাড়ীতে থাকতে পারে না তারও একটা কারণ আছে। পৈত্রিক ভিটেটার অবস্থা ভগ্নপ্রায়। থাকতে সাহস হয় না। ঘরের সংখ্যা অনেক কম। সেটাও একটা অসুবিধা। ছেলে বড় হচ্ছে। ঘরের দরকার। তার ওপর স্টেশন থেকে অনেকটা ভেতরে। স্বামী-স্ত্রী কাজে বেরিয়ে যায় সকালে। ফিরতে রাত হয় এক এক দিন। এতটা ভেতরে আসতে তখন কোন যানবাহন পাওয়া যায় না। অসুবিধা হয়। সংস্কার করতে গেলে অনেক খরচ। এছাড়া কাকা জ্যেঠাদের সঙ্গে আইনী ব্যাপার জড়িত আছে। কারো সঙ্গে কারো যোগাযোগ নেই। সবাই বাড়ী ছেড়ে গেছেন কিন্তু অধিকার ছাড়েননি। ফলে কেউ একা কিছু করতে পারবেন না এই বাড়ীতে। আইনে বাঁধবে। সৌপ্তিকের ছেলে রকি এই বাড়ীকে ‘নকল বুঁদিগড়’ বলে। বদমাইশ, ডেঁপো ছেলে। এখনকার প্রজন্ম সেন্টিমেন্টের ধার ধারে না। সেন্টিমেন্টকে সেন্টু বলে বিদ্রুপ করে।
এখন শ্মশানযাত্রী পাওয়া যায় না। কাঁধে নিয়ে ‘হরি বল’ বলার দিনও চলে গেছে। শববহনকারী গাড়ীতে আত্মীয়কে একলা তুলে দিয়ে সবাই পেছনে বাইকে, স্কুটিতে শ্মশানাভিমুখে যাত্রা করেন। এটাই এখনকার রীতি। সবাই ব্যস্ত। মৃতদেহ পোড়ানর পুণ্য কাজে কাউকে পাওয়া যায় না। তবে শোকসভা হলে ভীড় বাড়ে। গম্ভীর পরিবেশের সৃষ্টি হয়। সবাই মন ছোঁয়া কথা বলেন। মোবাইল ক্যামেরায় ছবি ওঠে, সোশ্যাল মিডিয়ায় পোষ্ট হয়, স্যাড্ ইমোজী ফুটে ওঠে; যার গোল মুখের এক চোখে জলের ফোঁটা।
শেখরের মৃতদেহ সেভাবেই শ্মশানে যায়। ভাইপো পারলৌকিক কাজ করে । মুখাগ্নির পর একাকী শরীরটা পড়ে থাকে বাঁশের চালির ওপর। শক্ত হয়ে যাওয়া নগ্ন শরীরে একটা মাত্র শ্বেত বস্ত্র। এই সেই শরীর, যাকে বাঁচানোর জন্য ভালো ভালো খাদ্য গ্রহণ, বস্ত্র গ্রহণ, অসুখ থেকে বাঁচাবার জন্য ওষুধ গ্রহণ। এই সেই জীবন্ত মানুষের অহংকারের শরীর। সেই শরীর আজ ধূলণ্ঠিত, নগ্ন – এটাই পরিণতি।
মানুষ মরবে। শব যাত্রীরা চুল্লীতে তুলে দিয়ে চা খাবে। পাঁউরুটি, কেক, ঘুগনী খাবে। যে মারা গেছে সেও খেয়েছিল কখনও শ্মশানযাত্রী হয়ে। সবটাই বাঁচার জন্য। কেউ কারো নয়। এরই নাম জীবন।
জৈষ্ঠের সন্ধ্যা রাতের কোলে। লাইন শ্মশানেও। আগের শব দেহ আগে পুড়বে। মরেও শান্তি নেই। লাইন দিয়ে আসা, লাইন দিয়ে যাওয়া। মাঝের দিনগুলো লাইন দিয়েই এগিয়ে চলা। ব্যাঙ্কে, রেশন দোকানে, স্কুল, কলেজে....। লাইনের মাধ্যমেই সমাজের সুষ্ঠতা বজায় রাখা । ধৈর্য্যের পরীক্ষা দেওয়া।
যথা সময়ে ডাক – “বডি নিয়ে আসুন...” শবদেহ তোলা, ‘বল হরি বল’ বলা আর শেষ শ্রদ্ধা জানিয়ে চন্দন কাঠের টুকরো শরীরের ওপর ছড়িয়ে দিয়ে বদ্ধভূমি থেকে বেরিয়ে আসা। এবার নিজেদের মানুষ অপরের হাতে। কোলাপসিবল গেটের বাইরে উৎসুক পরিজন। দৃষ্টি ভিতরে। ভিতরে তখন দুটি জ্যান্ত মানুষ আর একটা মৃতদেহ। এ যেন দূরে দাঁড়িয়ে ফাঁসি দর্শন।
চুল্লীর সামনের লোহার পাত খুলতেই গনগনে আগুনের আস্ফালন। লেলিহান শিখার আহ্বান। চুল্লীর আগুণের ক্ষুধার্ত জিহ্বা । ঘড়ঘড়্ আওয়াজে শেখরের শরীরের অগ্নিগর্ভে প্রবেশ। অগ্নির আগ্রাসী আলিঙ্গনে মৃতদেহের দপ্ করে জ্বলে ওঠা। ঝপাং করে বন্ধ হয়ে যাওয়া চুল্লীর লোহার দরজার আর একবার নিঃশব্দে বলা কথা – “চিতাতেই সব শেষ”।
শ্মশান পরিবেশ নিস্তব্ধ। বিজলী বাতির স্তম্ভের নীচের চাপ চাপ অন্ধকার। দূরের রেল লাইন দিয়ে পরিচিত শব্দে ট্রেনের যাতায়াত। কুকুরের ডাক, মাতালের গান। নদী থেকে উঠে আসা বাতাসের শব্দ। বৈদ্যুতিক চুল্লীর মেশিনের যান্ত্রিক আওয়াজ। চামড়া পোড়া কটূ গন্ধ। রাতচরা পাখির আর্তনাদ। দূর থেকে কাছে এগিয়ে আসা ‘বল হরি’ শব্দ । আবার কোন মৃতদেহ আসছে।
এক ঘন্টা নয়। তারও কম সময়। আধুনিক প্রযুক্তিতে শেখর পঞ্চভূতে বিলীন। অবশিষ্ট শুধু নাভি কুণ্ডলীর না-পোড়া কালো অংশ। তুলে দিতে হবে পরিজনের হাতে। পদ্ধতী বদলায়, কিন্তু নিয়ম বদলায় না। তাই বাজারে মূল্যহীন কড়ির কদর এখানে দেখা যায়। পোড়া মাটির সরায় নাভির অংশবিশেষ রেখে মাটি চাপা দিয়ে তাতে কড়ি পুঁতে চিরাচরিত নিয়মে নদীতে অস্থি ভাসিয়ে দিয়ে পেছন ফিরে হাঁড়ি ভাঙ্গা। তারপর পেছনে না তাকিয়ে সোজা বাড়ীর পথ – “বল হরি, হরি বল”।
Khub. .. Khub sundar lekha... Hriday chhuye galo
উত্তরমুছুন