সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

মানুষ মরবে। শব যাত্রীরা চুল্লীতে তুলে দিয়ে চা খাবে। পাঁউরুটি, কেক, ঘুগনী খাবে।


শেষ! ঠিক শেষ নয় শুরু! শেষ থেকেই শুরু।  সাদা কাপড়ে ঢাকা নিথর দেহ।  চোখে তুলসী পাতা।  কপালে চন্দন।  দুপায়ের পাতায় আলতার রক্তিমতা।  দুহাত শরীরের দুপাশে।  পা দুটো সামান্য ফাঁক হয়ে টান টান ভাবে বিস্তৃত।  মুখটা সামান্য ফাঁক।  শেষ নিঃশ্বাস বহির্গমনের সাক্ষী।
অমুক, তমুক নয়; এখন বডি।  দেহ বললেও ঠিক মানায় না, বলতে হবে মৃতদেহ।  শরীরের নীচে এখন আর ডানলোপিলোর কোমলতা নেই।  শুধুই রঙ-জ্বলা পলকা খাটের কর্কশতা।
মৃতদেহ ঘিরে আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশীর ভীড়।  সজল চোখের মেলা।  টুকরো টুকরো কথার কোলাজ।  সবই গত দিনের।  কার কার সঙ্গেঁ কি কি কথা হয়েছিল, কি কি করেছিল, তার তালিকা। 
এখন ওঁনার ওপর কারো হিংসা নেই, দ্বেষ নেই; নেই কারো কটুক্তি করার ইচ্ছা।   ওঁনার নামের পাশে চন্দ্রবিন্দুর স্থান হয়েছে।  চন্দ্রবিন্দু মানে ঈশ্বর।  আর ঈশ্বর মানেই ভগবান।  মানুষ মারা গিয়ে ভগবান হন।  যুগ যুগ ধরে এমনই চলে আসছে।  চলবেও পৃথিবী ধ্বংস পর্যন্ত। 
জন্মিলেই মরিতে হইবে  তাই, শেখর সান্যালও মারা গেলেন।  মারা গেলেন অনেক যুদ্ধ করে।  জীবন যুদ্ধ।  এক এক জন মানুষ এরকম ভাগ্য নিয়েই জন্মান।  তাঁদের সারা জীবন সংগ্রাম করেই যেতে হয়।  ঈশ্বর শেখর সান্যালও সেই গোষ্ঠীভুক্তই ছিলেন। 
একাকী জীবন।  বিবাহিত জীবনের স্বাদ গ্রহণ হয়ে ওঠেনি।  তার প্রধান কারণ হয়ে উঠেছিল বেকারত্ব।  জুট মিলটা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।  তখন শেখর যুবক।  ভালোই চলছিল।  হাতে পয়সা-কড়িও ভালোই আসত।  দাদা বৌদির সংসারে দিন কেটে যাচ্ছিল।  ঝক্কি ঝামেলা কমই ছিল।
কিন্তু জীবন একভাবে চলল না।  মিল বন্ধ হয়ে গেল।  আজ খুলবে, কাল খুলবে করতে করতে মিলের লোহার গেটের তালায় মরিচা ধরল।  জীবনটা হঠাৎই সুতো ছেঁড়া ঘুঁড়ির মত লাট্‌ খেতে লাগল। 
চাকরীর বড় আকাল।  সেভাবে কোথাও কাজ জুটল না।  বেশ কিছুদিন অতিক্রান্ত হবার পর চাকরী করার ইচ্ছাটাও চলে গেল।  পড়াশুনার দৌড় বেশী ছিল না, ফলে সেরকম কোন কাজও যোগাড় হল না।  হাত খরচ চালানর জন্য সামান্য রোজগার করার চেষ্টায় নিজেকে চক্ষু লজ্জার খাতিরে কাজ করতে বাধ্য করলেও কোথাও বেশিদিন টিঁকে থাকতে পারল না। 
দাদার রোজগার ভালোই ছিল।  দুবেলা দুমুঠো খাওয়ার ব্যবস্থাটা ওখানেই হয়ে গেল।  তবে বিয়েটা আর করা হল না।  না হওয়াটাই স্বাভাবিক।
এক ঘেয়ে জীবনের বেশীর ভাগটাই টো-টো-কোম্পানী।  সেটাও এক এক সময় একঘেয়ে।  তখন কিছু কাজের চেষ্টা।  কিন্তু কিছুদিন করার পর সেটাও করতে মন চায় না।  মনসংযোগের অভাব।  বিড়ির নেশা আর শরীর থেকে ছিট্‌কে বেরিয়ে আসা কাশি সঙ্গের সঙ্গী।  নেশা বাড়ে, সঙ্গে কাশিও।  জীবনের ওপর একঘেয়েমি থেকে একরকম বিতৃষ্ণা।  ধূস্‌! আর বেশীদিন বেঁচে কি হবে?
একে একে বন্ধুদের গড়ে ওঠা সংসার, সন্তান-সন্ততী। নিজের আনন্দ বলতে দাদার ছেলে মেয়েরা।  চেষ্টা করলে যে ছোটো-খাটো কাজ পাওয়া যায় না তা নয়, কিন্তু কাজের সঙ্গে মনের মিল হয় না।  তাই সারাদিন শুধু খাওয়া, বসা, শোয়া, গল্প করা আর ভবঘুরের মত ঘুরে ঘুরে বেড়ান। 
বৌদি মায়ের মতন।  কম বয়সে শ্বশুড় ঘর করতে এসে দেবরটাকে পাওয়া।  ফলে তার দোষ চোখে পড়েনা।  দাদার তিরষ্কার বৌদির আাঁচলের বাতাসে উড়ে যায়।  দাদাকে শুনতে হয়, ঠাকুরপো, তো চেষ্টা করে, কাজ না পেলে কি করবে? নিজের মায়ের পেটের ভাইটাকে দূরে সরিয়ে দেবার কথা চিন্তা করতে পারবে? আর তা করলে পাপ হবে না?
দেবর বৌদির বাড়ির কাজ করে দেন।  জল তুলে দেওয়া, কেরোসিন তেল আনা।  রেশনের দোকানে লাইন দেওয়া। বিদ্যুতের বিল জমা দেওয়া  ইত্যাদি, ইত্যাদি।  দাদা দেখেন তাঁর কাজ কমছে।  ফলে, শ্যামল আর ব্যাপারটা নিয়ে ঘাঁটা-ঘাঁটি করেন না। 
ভাইপো ভাইঝির সঙ্গে কাকার খুব ভাব।  তাদের খেলার সঙ্গী কাকা।  তাদের আবদারের মানুষ কাকা।  যেসব জিনিস বাবা বা মায়ের কাছে চাওয়া যায় না বা চাইলেও পাওয়া যায় না, সেসব কাকার কাছে চাইলে কাকা ঠিক ম্যানেজ করে দেন, দাদা বৌদির সঙ্গে কথা বলে। ভাইয়ের কথা দাদা বৌদি দুজনেই খুব একটা ফেলতে পারেন না। কখনও কখনও কিছুটা বৌদির চাপেও রাজী হন নিমরাজী দাদা।  শুধু বৌদি দাদার আড়ালে বলেন,ঠাকুরপো, তোমার জন্যই কিন্তু সৌপ্তিক আর সুপর্ণা আশকারা পাচ্ছে।  তোমার দাদা কিন্তু খুব রাগ করে
দাদা যে রাগ করেন তা শেখর জানেন।  তেমনি এও জানেন বৌদির কথার খেলাপ করতে পারেন না দাদা।  এ সংসারে বৌদিই সর্বেসর্বা।  আর ঠাকুরপোর আবদারে বৌদিও কখনও না বলতে পারবেন না।  সম্পর্কটা যে দেবর বৌদির চৌকাঠ ছাড়িয়ে ভাই আর দিদির অথবা মা আর ছেলের সম্পর্কে পরিণত হয়েছে।  সেদিক দিয়ে শেখর বড়ই ভাগ্যবান।  এই একটা ব্যাপারেই তাঁর ভাগ্য রেখাটা বড়ই সুস্পষ্ট ও গভীর।
সেই শেখর মারা গেলেন।  মারা যাবার বয়স হয়নি, তবুও মারা গেলেন। অবশ্য মারা যাবার সঠিক বয়স কোনটা তার হিসাব কে রাখে? তবে, অনিয়ম, জীবনের ওপর উদাসীনতা, কিছুটা পয়সার অভাবও তাঁর মৃত্যুর কারণ।  যদিও শারিরীক অসুস্থতার ব্যাপারটাতো আছেই। 
ডাক্তার অনেকদিন ধূমপান করতে মানা করেছিলেন।  শেখর শোনেননি।  অ্যাজমা গ্রাস করেছিল শরীরটাকে।  বুকে কফ থাকত সারা বছর।  সঙ্গের সঙ্গী কাশি।  এই একটা ব্যাপারেই বৌদির কথাও শুনতেন না তিনি। জীবনের প্রতি অবসাদের জন্যও হতে পারে, আবার ধোঁয়া তাকে গ্রাস করেছিল বলেও হতে পারে।  বিড়ির নেশা ছাড়তে পারেননি শেখর।
তারপর জীবনটার ওপর দিয়ে অনেক কিছু ঘটে গেছে।  অনেক বছর পেরিয়ে গেছে। ভাইপো ভাইঝিরা বড় হয়েছে। তাদের সন্তানাদি হয়েছে । মা মারা গেছেন।  বৌদি মারা গেছেন।  মা বৃদ্ধা হয়েছিলেন। তাঁর মৃত্যুটা স্বাভাবিক ছিল।  কিন্তু বৌদির মৃত্যুটা অকস্মাৎ। নাড়া দিয়েছিল শেখরকে।  শরীরে হঠাৎ চিনির পরিমাণ কমে যাওয়ায় হৃদ্‌পিণ্ড বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।  উচ্চ মধুমেহ রুগী ছিলেন বৌদি।  তার ফলে শরীরের অন্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ গুলোও নিজ নিজ কাজ সুষ্ঠু ভাবে করতে পারছিল না বেশ কিছুদিন ধরেই।  তারপর একদিন দুপুরে, হঠাৎই চলে গেলেন, কাউকে কিছু না বলে।  সবচেয়ে বড় ধাক্কাটা সেদিনই পেয়েছিলেন শেখর। দাদার তখন চাকরী থেকে অবসর নেওয়া হয়ে গেছে।  দাদাও কম বেশী অসুস্থ।  চিকিৎসকের চিকিৎসায় ওষুধকে সঙ্গী করে দিন কাটে। বৌদি সংসারটাকে বাঁধের মত সমস্ত ঝামেলা থেকে বাঁচিয়ে রেখেছিলেন।  বাঁধ ভেঙ্গে যেতে সব কিরকম এলোমেলো হয়ে গেল।  শেখর মানসিক ভাবে অনেকটাই ভেঙ্গে পড়লেন। ভেঙ্গে পড়লেন তাঁর দাদা শ্যামলও। 
তারপর গতানুগতিক জীবন ঢেউয়ের মাথায় ভাসা খড় কুটোর মত ভেসে যেতে লাগল।  শুধু শেখর বা শ্যামল নন, সংসারটাও।  ভাইঝির বিয়ে হয়ে গেছে দূরে। ভাইপোও সংসার করে আলাদা হয়ে গেছে বেশ কিছুদিন আগে। যোগাযোগ থাকলেও কোথায় যেন তার কেটে গেছে।
ভাইপো-বৌ রান্না করে দেয়। ভাইপোর ফ্ল্যাট কাছেই ।  সারাদিনের কাজের মেয়েটা ঘরের সব কাজ করে দেয়।  ওঁরা দুই ভাই মিলে বাড়ীটায় একা একা থাকেন।  ভাইপো সৌপ্তিক এই বাড়ীতে বড় হয়েছে কিন্তু  ভালো চাকরী পাওয়ার পর ফ্ল্যাট কিনে আলাদা থাকে।  শহরের জমজমাট দিকটায়, ষ্টেশনের কাছে।  বাবা, কাকাকে নিয়ে যেতে চেয়েছিল।  কিন্তু ওঁনারা যেতে চাননি।  পুরাতন মানসিকতা বাধ সেধেছিল।  এ বাড়ী বাবার ভিটে, বাবা-মা আত্মীয় পরিজন এখানে থেকেছেন।  অনেক স্মৃতি।  শেখর এখানে বৌদির হাতের স্পর্শ পান। মাতৃসমা বৌদির হাতের ছোঁয়া এখনও এই বাড়ীর ইঁট-কাঠ-সিমেন্টে। ওঁরা থেকে গেছিলেন। 
শ্যামল আজ একা হয়ে গেলেন।  ভাইয়ের মৃতদেহের সামনে দাঁড়িয়ে কুঁজো হয়ে যাওয়া শরীরটাকে আরও একটু নীচু করে বললেন,যাঃ! তোকে ছুটি দিলাম।  সুখে থাকিস।  বৌদির সঙ্গে দেখা হলে বলিস, দাদাকে রেখে এলাম। টুকরো টুকরো হয়ে যাওয়া হৃদয় অতি দুঃখে বিধ্বস্ত দুই চোখে অশ্রু আনতে পারল না। শুধু গলাটা ধরে এল।  কথা জড়িয়ে গেল শেষের দিকে।  শূন্য দৃষ্টি খেলা করল ভাই শেখরের নিষ্প্রাণ মুখের ওপর।
গল্পটা এখান থেকে শুরু হবার কথা।  একা বাঁচার লড়াইয়ের গল্প। যদিও সে এক অন্য গল্প। জীবনে গল্পের শেষ নেই। কখন কোথা থেকে গল্প শুরু হয়ে যাবে কেউ জানে না। তাই জীবনের গল্প বলতে গেলে কোন কূল খুঁজে পাওয়া যায় না। কোনটা বলব, আর কোনটা বলব না বুঝে ওঠা যায় না। 
সৌপ্তিক পরিবার নিয়ে এই বাড়ীতে থাকতে পারে না তারও একটা কারণ আছে। পৈত্রিক ভিটেটার অবস্থা ভগ্নপ্রায়।  থাকতে সাহস হয় না।  ঘরের সংখ্যা অনেক কম। সেটাও একটা অসুবিধা।  ছেলে বড় হচ্ছে। ঘরের দরকার।  তার ওপর স্টেশন থেকে অনেকটা ভেতরে।  স্বামী-স্ত্রী কাজে  বেরিয়ে যায় সকালে।  ফিরতে রাত হয় এক এক দিন।  এতটা ভেতরে আসতে তখন কোন যানবাহন পাওয়া যায় না।  অসুবিধা হয়।  সংস্কার করতে গেলে অনেক খরচ। এছাড়া কাকা জ্যেঠাদের সঙ্গে আইনী ব্যাপার জড়িত আছে।  কারো সঙ্গে কারো যোগাযোগ নেই।  সবাই বাড়ী ছেড়ে গেছেন কিন্তু অধিকার ছাড়েননি। ফলে কেউ একা কিছু করতে পারবেন না এই বাড়ীতে। আইনে বাঁধবে। সৌপ্তিকের ছেলে রকি এই বাড়ীকে নকল বুঁদিগড় বলে। বদমাইশ, ডেঁপো ছেলে। এখনকার প্রজন্ম সেন্টিমেন্টের ধার ধারে না। সেন্টিমেন্টকে সেন্টু বলে বিদ্রুপ করে।
এখন শ্মশানযাত্রী পাওয়া যায় না। কাঁধে নিয়ে হরি বল বলার দিনও চলে গেছে।  শববহনকারী গাড়ীতে আত্মীয়কে একলা তুলে দিয়ে সবাই পেছনে বাইকে, স্কুটিতে শ্মশানাভিমুখে যাত্রা করেন। এটাই এখনকার রীতি।  সবাই ব্যস্ত।  মৃতদেহ পোড়ানর পুণ্য কাজে কাউকে পাওয়া যায় না।  তবে শোকসভা হলে ভীড়  বাড়ে।  গম্ভীর পরিবেশের সৃষ্টি হয়।  সবাই মন ছোঁয়া কথা বলেন। মোবাইল ক্যামেরায় ছবি ওঠে, সোশ্যাল মিডিয়ায় পোষ্ট হয়, স্যাড্ ইমোজী ফুটে ওঠে; যার গোল মুখের এক চোখে জলের ফোঁটা।
শেখরের মৃতদেহ সেভাবেই শ্মশানে যায়।  ভাইপো পারলৌকিক কাজ করে ।  মুখাগ্নির পর একাকী শরীরটা পড়ে থাকে বাঁশের চালির ওপর। শক্ত হয়ে যাওয়া নগ্ন শরীরে একটা মাত্র শ্বেত বস্ত্র।  এই সেই শরীর, যাকে বাঁচানোর জন্য ভালো ভালো খাদ্য গ্রহণ, বস্ত্র গ্রহণ, অসুখ থেকে বাঁচাবার জন্য ওষুধ গ্রহণ।  এই সেই জীবন্ত মানুষের অহংকারের শরীর।  সেই শরীর আজ ধূলণ্ঠিত, নগ্ন  এটাই পরিণতি।
মানুষ মরবে। শব যাত্রীরা  চুল্লীতে তুলে দিয়ে চা খাবে।  পাঁউরুটি, কেক, ঘুগনী খাবে।  যে মারা গেছে সেও খেয়েছিল কখনও শ্মশানযাত্রী হয়ে। সবটাই বাঁচার জন্য।  কেউ কারো নয়। এরই নাম জীবন।
জৈষ্ঠের সন্ধ্যা রাতের কোলে।  লাইন শ্মশানেও।  আগের শব দেহ আগে পুড়বে।  মরেও শান্তি নেই।  লাইন দিয়ে আসা, লাইন দিয়ে যাওয়া। মাঝের দিনগুলো লাইন দিয়েই এগিয়ে চলা।  ব্যাঙ্কে, রেশন দোকানে, স্কুল, কলেজে....। লাইনের মাধ্যমেই সমাজের সুষ্ঠতা বজায় রাখা । ধৈর্য্যের পরীক্ষা দেওয়া।
যথা সময়ে ডাক  বডি নিয়ে আসুন...  শবদেহ তোলা, বল হরি বল বলা আর শেষ শ্রদ্ধা জানিয়ে চন্দন কাঠের টুকরো শরীরের ওপর ছড়িয়ে দিয়ে বদ্ধভূমি থেকে বেরিয়ে আসা।  এবার নিজেদের মানুষ অপরের হাতে।  কোলাপসিবল গেটের বাইরে উৎসুক পরিজন।  দৃষ্টি ভিতরে।  ভিতরে তখন দুটি জ্যান্ত মানুষ আর একটা মৃতদেহ।  এ যেন  দূরে দাঁড়িয়ে ফাঁসি দর্শন।
চুল্লীর সামনের লোহার পাত খুলতেই গনগনে আগুনের আস্ফালন।  লেলিহান শিখার আহ্বান। চুল্লীর আগুণের ক্ষুধার্ত জিহ্বা ।  ঘড়ঘড়্ আওয়াজে শেখরের শরীরের অগ্নিগর্ভে প্রবেশ।  অগ্নির আগ্রাসী আলিঙ্গনে মৃতদেহের দপ্‌ করে জ্বলে ওঠা। ঝপাং করে বন্ধ হয়ে যাওয়া চুল্লীর লোহার দরজার আর একবার নিঃশব্দে বলা কথা  চিতাতেই সব শেষ
শ্মশান পরিবেশ নিস্তব্ধ।  বিজলী বাতির স্তম্ভের নীচের চাপ চাপ অন্ধকার।  দূরের রেল লাইন দিয়ে পরিচিত শব্দে ট্রেনের যাতায়াত।  কুকুরের ডাক, মাতালের গান।  নদী থেকে উঠে আসা বাতাসের শব্দ। বৈদ্যুতিক চুল্লীর মেশিনের যান্ত্রিক আওয়াজ।  চামড়া পোড়া কটূ গন্ধ।  রাতচরা পাখির আর্তনাদ।  দূর থেকে কাছে এগিয়ে আসা বল হরি শব্দ । আবার কোন মৃতদেহ আসছে।
এক ঘন্টা নয়।  তারও কম সময়।  আধুনিক প্রযুক্তিতে শেখর পঞ্চভূতে বিলীন।  অবশিষ্ট শুধু নাভি কুণ্ডলীর না-পোড়া কালো অংশ।  তুলে দিতে হবে পরিজনের হাতে।  পদ্ধতী বদলায়, কিন্তু নিয়ম বদলায় না।  তাই বাজারে মূল্যহীন কড়ির কদর এখানে দেখা যায়।  পোড়া মাটির সরায় নাভির অংশবিশেষ রেখে মাটি চাপা দিয়ে তাতে কড়ি পুঁতে চিরাচরিত নিয়মে নদীতে অস্থি ভাসিয়ে দিয়ে পেছন ফিরে হাঁড়ি ভাঙ্গা। তারপর পেছনে না তাকিয়ে সোজা বাড়ীর পথ  বল হরি, হরি বল

মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ভূতে ভয় পেলেও, ‘ সেক্সি ভূত’-এর চরিত্রে অভিনয় করতে ভয় পাননি সায়ন্তনী

টলিউড ডিভা সায়ন্তনী গুহঠাকুরতা ডেবিউ করে ফেললেন দক্ষিণী সিনেমায়। যদিও কিছুদিন আগেই তিনি আটপৌরেকে সে ব্যাপারে জানিয়েছিলেন। কিন্তু সম্প্রতি এই হোলিতে সিনেমাটি রিলিজ করার পর থেকেই তিনি খবরের শিরোনামে। যদিও তার কারণ, তিনি এই প্রথম একটি ভূতের চরিত্রে অভিনয় করেছেন। শুধু তাই নয়, একটি ‘ সেক্সি’ ভূতের চরিত্রে এবং তাঁকে নিয়েই গল্পটা গড়ে উঠেছে।  সিনেমার নাম, ‘ চিকাটি গাডিলু চিঠাকোটুন্ডু’। তেলেগু সিনেমায় কাজ করে বেশ উচ্ছ্বসিত সায়ন্তনী। এখানেই শেষ নয়, তেলেগু ইন্ড্রাস্টির ভূয়সী প্রশংসা করেছেন তিনি। তাঁদের কাজের ধরন তাঁর বেশ পছন্দ হয়েছে । ইতিমধ্যে আরও একটি দক্ষিণী সিনেমার প্রস্তাবও পেয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। গল্পটিতে দেখা যায় দুই যুগল জুটি ছুটি কাটাতে গিয়ে আটকে যায় একটি ভৌতিক বাড়িতে।  সেখানে তারা একটি সেক্সি ভূতের পাল্লায় পরে। তারপর গল্প আস্তে আস্তে অন্যদিকে মোড় নেই।  সায়ন্তনী আটপৌরেকে জানালেন , ‘’ আমাকে অনেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় মেসেজ করে এই সিনেমার ব্যাপারে জানিয়েছেন! তাঁদের আমার চরিত্রটাও ভাল লেগেছে।‘’ ‘’ আপনাকে কেউ যদি রিয়েল লাইকে সেক্সি বলেন, সেটা আপনি কীভাব...

পুজো মিটলে কী করে থাকবেন ফিট, উপায় বাতলে দিলেন বিশিষ্ট পুষ্টিবিদ এবং যাপন সহায়ক ডাক্তার অনন্যা ভৌমিক

  আশ্বিনের শারদপ্রাতে বাঙালির পাতে ভরে উঠেছে হরেক রকমের খাবার। ঠাকুর দেখার সঙ্গে হরেক রকমের খাবার খেতেই হবে। রোল, চাউমিন, মোগলাই, চাইনিজ, বিরিয়ানি, ফুচকা এবং আরও কত কী! সারাবছর যারা শরীরচর্চায় মেতে থাকেন, খুব নিয়ম করে খাবার খান তারাও এই সময়টা একটু বেনিয়ম হয়ে পড়েন। তবে কুচ পরোয়া নেহি, পুজো মিটলেই আবার কী করে নিজের শরীরকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনবেন সেই কথায় আটপৌরেকে জানালেন বিশিষ্ট পুষ্টিবিদ এবং যাপন সহায়ক ডাক্তার অনন্যা ভৌমিক।  ১) পুজো মিটলেই আমাদের ফিরতে হবে আবার স্বাভাবিক জীবনে।  তাই পুজোর হ্যাংওভার কাটিয়ে নিতে ভীষণভাবে দরকার পড়বে প্রচুর পরিমাণ জলের। জল শরীরের বিষক্রিয়া দূর করতে সাহায্য করে। শরীরের প্রয়োজন মতো দিনে অন্তত তিন থেকে চার লিটার জল খেলে শরীর সুস্থ থাকবে। তবে যাদের বেশী জল খাওয়া বারণ আছে তারা অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন। এছাড়া বাকিরা দিনে চার লিটার পর্যন্ত জল পান করলে শরীরের স্বাভাবিক কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রিত থাকবে।  ২) মরশুমি ফল খাওয়ার অভ্যাস করুন। এছাড়াও নিয়মিত শাকসবজি খেতে হবে। ফল এবং শাকসবজিতে প্রচুর পরিমানে ফাইবার এবং আন্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা শরীরকে আবার স...

পনেরো মিনিটেই ফিট থাকার রহস্য, উপায় বাতলে দিলেন যোগগুরু

  আটপৌরের নিজস্ব প্রতিবেদন, নৈহাটিঃ  শরীরকে মন্দিরের আখ্যা দেওয়া হয়। আর সেই শরীরকে সর্বদা ঠিক রাখতে আমরা কত পন্থায় না অবলম্বন করে থাকি। আজকাল ইঁদুর দৌড়ের যুগ, আর এই যুগে সময় পাওয়া একটা বিরাট চ্যালেঞ্জিং বিষয়। সময় বের করে শরীর চর্চা করার মতো সময় আমাদের কতজনের হাতেই বা আছে? মনের সুখে ছুটির দিন হাঁটলেই কি আমাদের শরীর ঠিক থাকবে নাকি সপ্তাহে প্রতিদিন জিমমুখী হতেই হবে ? যেমন আইটি সেক্টরে কর্মরত পার্থ সারথী চক্রবর্তী সোম থেকে শুক্র অবধি দম ফেলার সময় পায় না, অথচ কিছুদিন হল সে ঘাড়ের ব্যথায় কাবু। আবার সদ্য বিয়ে করা কৌশিক ভট্টাচার্য ইদানীং অফিস ফেরত সস্ত্রীক হাঁটতে বেরিয়ে নিজেকে ফিট ভাবছেন অথচ গত তিনমাসে তার দশ কেজি ওজন বৃদ্ধি পেয়েছে। তবুও সে নিরুপায়, অফিস ফেরত ছাড়া তার সময় নেই। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে গেলে শরীর চর্চা আর হবে না। এই সময়ের অভাব অনেকেরই তা বলে কী শরীর সে কথা শুনবে। শরীরে বাসা বাঁধছে জটিল রোগ। দিনের পর দিন ওষুধ খেয়েও সেই রোগ সারছে না। তবে ইচ্ছে থাকলে উপায় আছে, বলছেন বিশিষ্ট যোগ গুরু রাহুল তিওয়ারী। আটপৌরের মুখোমুখি হয়ে তিনি জানালেন যে খুব স্বল্প সময়ে ফিট থাকার জন্য কিছু প...