সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

প্রথম লোকটা বেশ বিরক্ত হয়ে বলল, ‘’ ধুর বাল! আপনি কি কিছু বলবেন নাকি একবারে ওপরে উঠে বললেন? ‘'



‘’ দাদা, দেশলাই হবে নাকি?’’ খালের ধারে বসে থাকা অন্য লোকটি একবারে নিশ্চুপ! প্রথম লোকটির কথা সে হয়ত শুনতেও পেল না কিন্তু অন্য লোকটি মুখে একটা বিড়ি ধরিয়ে বেশ হন্তদন্ত হয়ে দেশলাই খুঁজছে লোকটি আবার বলল, ‘’ ও দাদা, দেশলাই হবে নাকি ?’’কিন্তু কোনও কথায় লোকটির কানে গেল না! এবার সেই প্রথম লোকটি দ্বিতীয় লোকটির কাছে এসে বলল, ‘’ আরে দাদা, যা হওয়ার তা হয়ে গেছে, ওসব নিয়ে ভেবে আর লাভ নেই‘’

বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যে নামবে ব্রিজের নীচে খালটা এমনই ফাঁকাই থাকে, কিন্তু আজ বেশ ভিড় বিশেষত পুলিশ এবং সাংবাদিকদের তবে এই দুজন তার থেকে অনেকটা দূরে একটা নিরিবিলি জায়গায় আছে সামনেই রেললাইন যদিও এই লাইনে ট্রেন খুব একটা আসা যাওয়া করে না সারাদিনে হয়ত পাঁচ জোড়া খালের জল ধীর গতিতে বয়ে চলেছে তবে যতদূর দেখা যায়, খালের সামনেটা বেশ নোংরা! কয়েকটা কুকুর মরা পড়ে রয়েছে বেশ গন্ধও বেরোচ্ছে তবে ঐ দুজন ব্যক্তি সেই সব কিছু থেকে বিচ্ছিন্ন  

প্রথম লোকটি দেশলাই না পেয়ে কিছুটা বিরক্ত হয়েই দ্বিতীয় লোকটির পাশে বসে পড়ে বলল, ‘’ ধুর শালা! কী জন্য বেড়িয়েছিলাম আর কী হয়ে গেলো! বউটার জন্য খুব কষ্ট হচ্ছে জানেন তো। ছেলেটা সবে মাত্র উচ্চ মাধ্যমিক দিয়েছে আর এই সময় এসব হবে কে জানত!’’ দ্বিতীয় লোকটি এখনও নীরব ভাবে জলের দিকে চেয়ে আছে। প্রথম লোকটি একটু থেমে আবার বলল, ‘’ জানেন তো একটা ওষুধের কোম্পানিতে ছিলাম! এই মাসের মাইনেটাও পেয়েছি কিন্তু প্রায় সব টাকা ব্যাঙ্কে পড়ে আছে! বউ এর আগে কোনওদিন আমাকে ছাড়া ব্যাঙ্কে যাইনি। টাকাগুলো তুললে পারবে কিনা, কে জানে! এদিকে এটিম কার্ডটাও আমার কাছে রয়ে গেছে।‘’ কিন্তু তাও দ্বিতীয় লোকটা নিথর!

এইবারে প্রথম লোকটা বেশ বিরক্ত হয়ে বলল, ‘’ ধুর বাল, তখন থেকে আমি একাই কথা বলে যাচ্ছি, আপনি কি কিছু বলবেন নাকি একবারে ওপরে উঠে বললেন? ‘’ এইবার দ্বিতীয় লোকটি ক্ষীণ কণ্ঠস্বরে বলল, ‘’ আমার বউ অন্তঃস্বত্বা! এই সপ্তাহে ডেলিভারি হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু... ‘’ বলতে বলতে লোকটির কথা থেমে গেল চোখ দিয়ে জল পড়তে শুরু করল!

ততক্ষণে খালের ওপরের ব্রিজটা থেকে বেশ সোরগোলের আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে দমকলের শব্দও শোনা যাচ্ছে বেশ কিছু সেনা কর্মীও এসেছে কিন্তু এই দুটো মানুষ সবার নজরের বাইরে
প্রথম লোকটি এবার সংকোচের সঙ্গে জিজ্ঞাসা করল, ‘’ আপনি কী করতেন ?’’ দ্বিতীয় লোকটি এবার কিন্তু উত্তর দিল, ‘’ একটা চায়ের দোকানে কাজ করতাম!’’ ‘’ বাড়িতে কে কে আছে ?’’

‘’ আমি আর আমার বউ!’
‘’ এখন তাহলে কী হবে ?’’
‘’ জানি না! ইচ্ছে করছে এই খালে ডুবে মরে যায়‘’
প্রথম লোকটি হাসতে হাসতে বলল, ‘’ সে আর হবে না! জন্মও একবার, মৃত্যুও একবার’’
দ্বিতীয় লোকটি বেশ জোড়ের সঙ্গে বলল, ‘’ কিন্তু আমার বউ কী দোষ করেছিল? যে আসছে সেইবা কী দোষ করেছিল ?  ঈশ্বর বড় নিষ্ঠুর! বেচারা বউটা এবার কী করবে ? কে ওকে হাসপাতালে নিয়ে যাবে? ধুর আমার কিছু ভাল লাগছে না ’’

‘’ দাদা! একটু শান্ত হয়ে বসুন! আমি গতবছর বাড়ির জন্য ৫ লাখ টাকা লোন নিয়েছিলাম সবেমাত্র এক লাখ টাকা শোধ করেছিলাম বাকিটাকা কে শোধ করবে সেটাই ভাবছি! যদিও কিছু টাকার বিমা আছে কিন্তু ছেলেটার ভবিষ্যৎ ! ‘’
‘’ সব চোর! শালা সব চোরের দল! সরকারী টাকা খেয়ে আত্মসাৎ করবে আর সাধারণ মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিবিনি খেলবে! শালা সব চোর!’’

‘’ ঠিক বলেছেন! টুকে পাশ করে সব ইঞ্জিনিয়ার হয়ে গেছে! সব ঘুষখোর!’’
ব্রিজের ওপর থেকে এবার কুকুরের ডাক শোনা যাচ্ছে! এইদিকেই আসছে বলে মনে হচ্ছে। প্রথম লোকটি দ্বিতীয় লোকটিকে বলল। দ্বিতীয় লোকটি বলল, ‘’ হ্যাঁ! মনে হচ্ছে আমাদের যাওয়ার সময় এসে গেছে।‘’

‘’ কিন্তু আমাদের বডিটা খুঁজে পাবে ? ‘’
‘’হ্যাঁ, পাবে! কুকুর ঠিক গন্ধ শুঁকে বের করে দেবে।‘’
‘’   তাহলে চলুন! যাওয়া যাক’’

‘’হ্যাঁ! চলুন!’’ যেতে যেতে ওরা  সাংবাদিকদের কথোপকথন শুনতে পেল ওরা নিজেদের বলাবলি করছে, ‘’ নবান্ন সূত্রে খবর ব্রিজ ভেঙে মৃত পাঁচ!যার মধ্যে দুজনের মৃত দেহ এখনও খুঁজে পাওয়া যাইনি ! জখম অন্তত ২৫ জন‘’ 


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ভূতে ভয় পেলেও, ‘ সেক্সি ভূত’-এর চরিত্রে অভিনয় করতে ভয় পাননি সায়ন্তনী

টলিউড ডিভা সায়ন্তনী গুহঠাকুরতা ডেবিউ করে ফেললেন দক্ষিণী সিনেমায়। যদিও কিছুদিন আগেই তিনি আটপৌরেকে সে ব্যাপারে জানিয়েছিলেন। কিন্তু সম্প্রতি এই হোলিতে সিনেমাটি রিলিজ করার পর থেকেই তিনি খবরের শিরোনামে। যদিও তার কারণ, তিনি এই প্রথম একটি ভূতের চরিত্রে অভিনয় করেছেন। শুধু তাই নয়, একটি ‘ সেক্সি’ ভূতের চরিত্রে এবং তাঁকে নিয়েই গল্পটা গড়ে উঠেছে।  সিনেমার নাম, ‘ চিকাটি গাডিলু চিঠাকোটুন্ডু’। তেলেগু সিনেমায় কাজ করে বেশ উচ্ছ্বসিত সায়ন্তনী। এখানেই শেষ নয়, তেলেগু ইন্ড্রাস্টির ভূয়সী প্রশংসা করেছেন তিনি। তাঁদের কাজের ধরন তাঁর বেশ পছন্দ হয়েছে । ইতিমধ্যে আরও একটি দক্ষিণী সিনেমার প্রস্তাবও পেয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। গল্পটিতে দেখা যায় দুই যুগল জুটি ছুটি কাটাতে গিয়ে আটকে যায় একটি ভৌতিক বাড়িতে।  সেখানে তারা একটি সেক্সি ভূতের পাল্লায় পরে। তারপর গল্প আস্তে আস্তে অন্যদিকে মোড় নেই।  সায়ন্তনী আটপৌরেকে জানালেন , ‘’ আমাকে অনেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় মেসেজ করে এই সিনেমার ব্যাপারে জানিয়েছেন! তাঁদের আমার চরিত্রটাও ভাল লেগেছে।‘’ ‘’ আপনাকে কেউ যদি রিয়েল লাইকে সেক্সি বলেন, সেটা আপনি কীভাব...

হেমন্তের উষ্ণ পরশ মিশিয়ে তালমায় ফিরল রোমিও জুলিয়েট, ঠোঁটে ঠোঁটে ' ফুল বডি রিলাক্স'

  আদিত্য ঘোষ, কলকাতাঃ বাংলার রোমিও জুলিয়েটরা দর্শককে রাত জাগিয়ে ওয়েব সিরিজের প্রতিটা পর্ব দেখতে বাধ্য করেছে। শুধু তাই নয়, দুই নবাগত অভিনেতা অভিনেত্রী  বাংলা সিরিজের মুখ্য চরিত্র হয়ে উঠেছে। বাংলা বাজারে ভাল সিনেমা বা ওয়েবের কদর আরও একবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখানোর চেষ্টা করেছে পরিচালক অর্পণ গড়াই। ক্যামেরার পিছনে এবং সামনে আরও একবার উজ্জ্বল ভূমিকার অবতীর্ণ হয়েছেন বাংলা সিনেমার  'ডন' অনির্বাণ ভট্টাচার্য। তবুও তালমার রোমিও এবং জুলিয়েট যথাক্রমে দেবদত্ত এবং হিয়া বাঙালি দর্শক মননে মিষ্টি প্রেমের উপাখ্যান হয়ে থেকে যাবে চিরকাল। যেখানে একটা সহজ সরল প্রেমকে স্রেফ টুকে দেওয়া হয়েছে সিনেমার পর্দায়। কোনও বাড়তি অলঙ্করণ নেই। কোনও উপমা-উপঢৌকন নেই। স্রেফ জীবনকে পর্দায় দেখালে যেমন মনে হয় ঠিক সেইরকম।  অভিনেতা দেবদত্ত রাহার হাতেখড়ি থিয়েটারের অভিনয় দিয়ে। তবে এই মুহূর্তে তিনি মঞ্চ থেকে বহুদূরে। তিনি আটপৌরেকে ফোনে জানালেন যে, ' থিয়েটার ছেড়েছি প্রায় তিন বছর, এখন বড় পর্দায় কাজ করার জন্য মুখিয়ে আছি। বেশ কিছু সিরিয়ালের প্রস্তাব পেলেও এই মুহূর্তে সিনেমা বা ওয়েব সিরিজের অভিনয়ের জন্যই ফোকাস করছি।' মফঃস...

রোগ চিনে নেওয়ার বিভিন্ন উপায় বাতলে দিচ্ছেন ডাক্তার সোমনাথ বিশ্বাস

হৃদয়ঘটিত বিভিন্ন রোগের অশনিসংকেত বুঝবেন কী করে-( পর্ব ১) খাই খাই বাঙালির বুকে ব্যথা হবে না, এও কি সম্ভব? যুগে যুগে বাঙালি জাতি নিজেরাই ডাক্তারি করে মোটামুটি বুঝে নিয়েছে বুকে একটু-আধটু ব্যথা মানেই ওটা গ্যাসের সমস্যা। আসলে বাঙালি জাতি এটা মানতেই অস্বীকার করে যে বুকে ব্যথা হৃদয় ঘটিত বিভিন্ন কারণে হতে পারে। সেটা অনেক সময় হার্ট এট্যাক এর লক্ষণও হতে পারে। উঁহু, অযথা ভয় পাওয়ার জন্য নয় এই লেখা নয়। উপরন্তু এই লেখা শুধুমাত্র একটা প্রাণ বাঁচানোর জন্য। তবে ডাক্তার বাবু বিশ্বাস মহাশয় কফি খেতে খেতে কহিলেন, " আধুনিক জীবনে আমি একটা স্মার্ট ওয়াচ ব্যবহার করতে পারলে, বুকে হঠাৎ ব্যথা হলে একটা ইসিজি করিয়েও দেখতে পারি। আমরা যদি বুকে ব্যথা ব্যাপারটা চেপে যায় তাহলে আর কি আধুনিক হলাম, তাহলে চিকিৎসা বিজ্ঞানের এত উন্নতি হয়ে লাভ কোথায়?" কফির কাপে চুমুক দিয়ে ডাক্তার বিশ্বাস আরও জানালেন যে, " আমাদের বুঝতে হবে চিকিৎসা বিজ্ঞান অনেকটা এগিয়েছে, তার সঙ্গে আমাদেরও এগোতে হবে। বুকে ব্যথা মানেই গ্যাস এবং সঙ্গে সঙ্গে একটা গ্যাসের ওষুধ খাওয়া মানেই সমস্যার শেষ এটা ভাবা একদমই বুদ্ধিমানের কাজ হবে না।" একটু...