------------------------------------------------------------------------------------অনুরাধা
"আআআনন্দলোকে, মঙ্গলাআআলোকে, বিরাআজোও... সত্যসুন্দরো..."
এটুকু শুনেই সত্য বাবু বাজারের ব্যাগ টা তুলে নিলেন। একটু সকাল সকাল না গেলে ছুটির দিনে মাংস পাওয়া মুশকিল। আজ রাজ্য সরকার ছুটি ঘোষণা করেছে। পঁচিশে বৈশাখ।গিন্নীর তলব, আজ একটু কচি পাঁঠার ঝোল রাঁধবেন।
এমনিতে সত্যবাবু যে এই দিনটা ভুলে যান, তা নয়। আপিস শেষে মেয়ের গানের প্রোগ্রাম দেখতে যেতেন তখন। আর তার সপ্তাহ খানেক আগে থেকে পকেট টা হালকা হতে শুরু করতো। মেকআপ টেকআপ, নতুন শাড়ী ছাড়া কি স্টেজে ওঠা যায়। ছিঃ! কি বলবে লোকে। ঘোষ বাবু টা চামার একদম। সংস্কৃতির কিছুই বোঝেন না।
এদিকে গানের অনুষ্ঠানে এ গিয়ে তো ত্রাহি মধুসূদন অবস্থা হতো সত্য বাবুর। নেহাৎ নিজের মেয়ে বলে প্রথম সারিতে বসে হাসি হাসি মুখ করে তাকিয়ে থাকতেন।
ফেরার পথে বলতেন, "খুব ভাল হয়েছে মা, আর একটু রেওয়াজ করিস। আরও ভালো হবে। "
রাতে কোনো রেস্তোরাঁয় খেয়ে সক্কলে পরমানন্দে বাড়ি ফিরতেন।
আজ সেরকম কিছু নেই। মেয়েটা বড় হয়েছে। দুপুরে brunch এ বেরোবে। lunch টা যদিও বাড়িতে, late lunch। তারপরের গল্প জানেন না সত্য বাবু। মেয়েটা দুম করে গান ছেড়ে দিলে, সত্য বাবুও হাঁফ ছেড়েছিলেন। হাল ছাড়েননি সত্য গিন্নী। গান নয়তো নাচ। তবে মনে হয়না সেরকম কোনো program আছে।
"উফফ বাবা, রবীন্দ্রনাথ এখন কেউ খায় না just। but I have some plans, let's see. "
মেয়েকে গতকাল জিজ্ঞাসা করেছিলেন রবীন্দ্রজয়ন্তী তে এবার সে কি করছে। তার উত্তর।
"কাকু, বিকেলে ফানসান আচে। আসবেন কিন্তু, কাকিমা, আর ইয়ে, তুলতুলি কেও বলবেন আসতে।"
" আর কাকু, ইয়ে, আপনাকে দেখতে পাইনি, তাই... ইয়ে...চাঁদাটা, বেসি না কাকু, দুসো টাকাই দেবেন। হেহে। "
এদের আশ মিটিয়ে, পাশ কাটিয়ে, মাংস দেখে শুনে নিয়ে, সত্য বাবু যখন বাড়ি ঢুকলেন, মেয়ে তখন বেরোচ্ছে। মেয়ের মা, ভিডিও কল এ ব্যস্ত।
" আজ একটু মাংস করছি বুবান।
তুই কি খেলি? তোদের তো বোধহয় এসব রবীন্দ্রজয়ন্তী ট্যন্তি নেই। জানিস, কাল তোর বাবা তুলি কে জিজ্ঞাসা করছিল, আজকের প্রোগ্রাম নিয়ে, তুলি সোজা বলে দিয়েছে ওসব দাদু টাদু নিয়ে আদিখ্যেতা আজকাল কেউ করে না। তোর বাবা টা এখনও বদলালো না। "
" সরকারি কর্মচারী মা। হা হা হা। anyway শুতে যাব। কাল আর ফোন করছি না, weekend এ কথা হবে। bye মা। "
বুবান বাবার সাথে উইকেন্ডে কথা বলে শুধু।
গিন্নীর এই perfume এর গন্ধটা সত্য বাবুর বেশ ভাল্লাগে। কেমন একটা মন ভালো করে ফুর ফুরে গন্ধ। আদ্দির পাঞ্জাবি টা বহুদিন পর গায়ে দিলেন। নাঃ, পাড়ার ফাংশানে যাওয়া হলো না, এটা ক্লাব এর প্রোগ্রাম। তবে, দুশো টাকা দিয়েছেন যখন, দুমিনিট নিশ্চয় দাঁড়িয়ে দেখবেন।
রাত তখন প্রায় বারোটা। সত্যসুন্দর ঘোষ ব্যালকনি যে এসে দাঁড়ালেন। কানে তার দিদির গলা ভেসে আসছে, " আমি চিনি গো চিনি তোমারে, ওগো বিদেশিনী..." দিদি কোনোদিন নামকরা গাইয়ের কাছে গান শেখেনি। তবে দিদিই তার কাছে লতা মঙ্গেশকর। হঠাৎ মনে হলো, গানটা পাশের ঘর থেকে আসছে..তারপর আসতে আসতে.. আরও কাছে চলে আসছে। পিছন ঘুরে দেখলেন, তুলি গাইছে। " তোমায় দেখেছি শারদ প্রাতে, তোমার দেখেছি মাধবী রাতে, তোমায় দেখিছিই."
তুলি বলছিল "জানো বাবা, আমি জানতাম, তোমার মোটেও আমার গান ভাল্লাগে না, আমি জানতাম আমি পিপির মতো ভালো করে গান গাইতেই পারি না। কিন্তু তুমি কখনও আমাকে discourage করনি। কাল রেগে গেলাম ওই জন্যই। sorry বাবা। "
"পাগলী"। এতো অকপট সত্যি বলে মেয়েটা আজকাল।
" আমার কিন্তু এখনও রবীন্দ্র সঙ্গীত ভালো লাগে বাবা। গাইতে ভালো পারিনা যদিও। "
ঠিক এই সময়েই ওরা শুনতে পেল, উহঃ লা লা উহঃ লা লা, উঃ লা লা রেএএএ, উহঃ লা লা, রে... পাগলা হওয়া, বাদল দিনে।
এই রে! যাঃ। দুমিনিট এর জন্য যাওয়া হয়নি তো। ...
"আআআনন্দলোকে, মঙ্গলাআআলোকে, বিরাআজোও... সত্যসুন্দরো..."
এটুকু শুনেই সত্য বাবু বাজারের ব্যাগ টা তুলে নিলেন। একটু সকাল সকাল না গেলে ছুটির দিনে মাংস পাওয়া মুশকিল। আজ রাজ্য সরকার ছুটি ঘোষণা করেছে। পঁচিশে বৈশাখ।গিন্নীর তলব, আজ একটু কচি পাঁঠার ঝোল রাঁধবেন।
এমনিতে সত্যবাবু যে এই দিনটা ভুলে যান, তা নয়। আপিস শেষে মেয়ের গানের প্রোগ্রাম দেখতে যেতেন তখন। আর তার সপ্তাহ খানেক আগে থেকে পকেট টা হালকা হতে শুরু করতো। মেকআপ টেকআপ, নতুন শাড়ী ছাড়া কি স্টেজে ওঠা যায়। ছিঃ! কি বলবে লোকে। ঘোষ বাবু টা চামার একদম। সংস্কৃতির কিছুই বোঝেন না।
এদিকে গানের অনুষ্ঠানে এ গিয়ে তো ত্রাহি মধুসূদন অবস্থা হতো সত্য বাবুর। নেহাৎ নিজের মেয়ে বলে প্রথম সারিতে বসে হাসি হাসি মুখ করে তাকিয়ে থাকতেন।
ফেরার পথে বলতেন, "খুব ভাল হয়েছে মা, আর একটু রেওয়াজ করিস। আরও ভালো হবে। "
রাতে কোনো রেস্তোরাঁয় খেয়ে সক্কলে পরমানন্দে বাড়ি ফিরতেন।
আজ সেরকম কিছু নেই। মেয়েটা বড় হয়েছে। দুপুরে brunch এ বেরোবে। lunch টা যদিও বাড়িতে, late lunch। তারপরের গল্প জানেন না সত্য বাবু। মেয়েটা দুম করে গান ছেড়ে দিলে, সত্য বাবুও হাঁফ ছেড়েছিলেন। হাল ছাড়েননি সত্য গিন্নী। গান নয়তো নাচ। তবে মনে হয়না সেরকম কোনো program আছে।
"উফফ বাবা, রবীন্দ্রনাথ এখন কেউ খায় না just। but I have some plans, let's see. "
মেয়েকে গতকাল জিজ্ঞাসা করেছিলেন রবীন্দ্রজয়ন্তী তে এবার সে কি করছে। তার উত্তর।
"কাকু, বিকেলে ফানসান আচে। আসবেন কিন্তু, কাকিমা, আর ইয়ে, তুলতুলি কেও বলবেন আসতে।"
" আর কাকু, ইয়ে, আপনাকে দেখতে পাইনি, তাই... ইয়ে...চাঁদাটা, বেসি না কাকু, দুসো টাকাই দেবেন। হেহে। "
এদের আশ মিটিয়ে, পাশ কাটিয়ে, মাংস দেখে শুনে নিয়ে, সত্য বাবু যখন বাড়ি ঢুকলেন, মেয়ে তখন বেরোচ্ছে। মেয়ের মা, ভিডিও কল এ ব্যস্ত।
" আজ একটু মাংস করছি বুবান।
তুই কি খেলি? তোদের তো বোধহয় এসব রবীন্দ্রজয়ন্তী ট্যন্তি নেই। জানিস, কাল তোর বাবা তুলি কে জিজ্ঞাসা করছিল, আজকের প্রোগ্রাম নিয়ে, তুলি সোজা বলে দিয়েছে ওসব দাদু টাদু নিয়ে আদিখ্যেতা আজকাল কেউ করে না। তোর বাবা টা এখনও বদলালো না। "
" সরকারি কর্মচারী মা। হা হা হা। anyway শুতে যাব। কাল আর ফোন করছি না, weekend এ কথা হবে। bye মা। "
বুবান বাবার সাথে উইকেন্ডে কথা বলে শুধু।
গিন্নীর এই perfume এর গন্ধটা সত্য বাবুর বেশ ভাল্লাগে। কেমন একটা মন ভালো করে ফুর ফুরে গন্ধ। আদ্দির পাঞ্জাবি টা বহুদিন পর গায়ে দিলেন। নাঃ, পাড়ার ফাংশানে যাওয়া হলো না, এটা ক্লাব এর প্রোগ্রাম। তবে, দুশো টাকা দিয়েছেন যখন, দুমিনিট নিশ্চয় দাঁড়িয়ে দেখবেন।
রাত তখন প্রায় বারোটা। সত্যসুন্দর ঘোষ ব্যালকনি যে এসে দাঁড়ালেন। কানে তার দিদির গলা ভেসে আসছে, " আমি চিনি গো চিনি তোমারে, ওগো বিদেশিনী..." দিদি কোনোদিন নামকরা গাইয়ের কাছে গান শেখেনি। তবে দিদিই তার কাছে লতা মঙ্গেশকর। হঠাৎ মনে হলো, গানটা পাশের ঘর থেকে আসছে..তারপর আসতে আসতে.. আরও কাছে চলে আসছে। পিছন ঘুরে দেখলেন, তুলি গাইছে। " তোমায় দেখেছি শারদ প্রাতে, তোমার দেখেছি মাধবী রাতে, তোমায় দেখিছিই."
তুলি বলছিল "জানো বাবা, আমি জানতাম, তোমার মোটেও আমার গান ভাল্লাগে না, আমি জানতাম আমি পিপির মতো ভালো করে গান গাইতেই পারি না। কিন্তু তুমি কখনও আমাকে discourage করনি। কাল রেগে গেলাম ওই জন্যই। sorry বাবা। "
"পাগলী"। এতো অকপট সত্যি বলে মেয়েটা আজকাল।
" আমার কিন্তু এখনও রবীন্দ্র সঙ্গীত ভালো লাগে বাবা। গাইতে ভালো পারিনা যদিও। "
ঠিক এই সময়েই ওরা শুনতে পেল, উহঃ লা লা উহঃ লা লা, উঃ লা লা রেএএএ, উহঃ লা লা, রে... পাগলা হওয়া, বাদল দিনে।
এই রে! যাঃ। দুমিনিট এর জন্য যাওয়া হয়নি তো। ...
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন