সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

হিজিবিজি-১

------------------------------------------------------------------------------------অনুরাধা

"আআআনন্দলোকে, মঙ্গলাআআলোকে, বিরাআজোও... সত্যসুন্দরো..."

এটুকু শুনেই সত্য বাবু বাজারের ব্যাগ টা তুলে নিলেন। একটু সকাল সকাল না গেলে ছুটির দিনে মাংস পাওয়া মুশকিল। আজ রাজ্য সরকার ছুটি ঘোষণা করেছে।  পঁচিশে বৈশাখ।গিন্নীর তলব, আজ একটু কচি পাঁঠার ঝোল রাঁধবেন।
এমনিতে সত্যবাবু যে এই দিনটা ভুলে যান, তা নয়। আপিস শেষে মেয়ের গানের প্রোগ্রাম দেখতে যেতেন তখন। আর তার সপ্তাহ খানেক আগে থেকে পকেট টা হালকা হতে শুরু করতো। মেকআপ টেকআপ, নতুন শাড়ী ছাড়া কি স্টেজে ওঠা যায়। ছিঃ! কি বলবে লোকে। ঘোষ বাবু টা চামার একদম। সংস্কৃতির কিছুই বোঝেন না।
এদিকে গানের অনুষ্ঠানে এ গিয়ে তো ত্রাহি মধুসূদন অবস্থা হতো সত্য বাবুর। নেহাৎ নিজের মেয়ে বলে প্রথম সারিতে বসে হাসি হাসি মুখ করে তাকিয়ে থাকতেন।
ফেরার পথে বলতেন, "খুব ভাল হয়েছে মা, আর একটু রেওয়াজ করিস। আরও ভালো হবে। "
রাতে কোনো রেস্তোরাঁয় খেয়ে সক্কলে পরমানন্দে বাড়ি ফিরতেন।
আজ সেরকম কিছু নেই। মেয়েটা বড় হয়েছে। দুপুরে brunch এ বেরোবে। lunch টা যদিও বাড়িতে, late lunch। তারপরের গল্প জানেন না সত্য বাবু। মেয়েটা দুম করে গান ছেড়ে দিলে, সত্য বাবুও হাঁফ ছেড়েছিলেন। হাল ছাড়েননি সত্য গিন্নী। গান নয়তো নাচ। তবে মনে হয়না সেরকম কোনো program আছে।
"উফফ বাবা, রবীন্দ্রনাথ এখন কেউ খায় না just। but I have  some plans, let's see. "
মেয়েকে গতকাল জিজ্ঞাসা করেছিলেন রবীন্দ্রজয়ন্তী তে এবার সে কি করছে। তার উত্তর।

"কাকু, বিকেলে ফানসান আচে। আসবেন কিন্তু, কাকিমা, আর ইয়ে, তুলতুলি কেও বলবেন আসতে।"

" আর কাকু, ইয়ে, আপনাকে দেখতে পাইনি, তাই... ইয়ে...চাঁদাটা, বেসি না কাকু, দুসো টাকাই দেবেন। হেহে। "

এদের আশ মিটিয়ে, পাশ কাটিয়ে, মাংস দেখে শুনে নিয়ে, সত্য বাবু যখন বাড়ি ঢুকলেন, মেয়ে তখন বেরোচ্ছে। মেয়ের মা, ভিডিও কল এ ব্যস্ত।
" আজ একটু মাংস করছি বুবান।
তুই কি খেলি? তোদের তো বোধহয় এসব  রবীন্দ্রজয়ন্তী ট্যন্তি নেই।  জানিস, কাল তোর বাবা তুলি কে জিজ্ঞাসা করছিল, আজকের প্রোগ্রাম নিয়ে, তুলি সোজা বলে দিয়েছে ওসব দাদু টাদু নিয়ে আদিখ্যেতা আজকাল কেউ করে না। তোর বাবা টা এখনও বদলালো না। "
" সরকারি কর্মচারী মা। হা হা হা। anyway শুতে যাব। কাল আর ফোন করছি না, weekend এ কথা হবে। bye মা। "
বুবান বাবার সাথে উইকেন্ডে কথা বলে শুধু।
গিন্নীর এই perfume এর গন্ধটা সত্য বাবুর বেশ ভাল্লাগে। কেমন একটা মন ভালো করে ফুর ফুরে গন্ধ। আদ্দির পাঞ্জাবি টা বহুদিন পর গায়ে দিলেন। নাঃ, পাড়ার ফাংশানে যাওয়া হলো না, এটা ক্লাব এর প্রোগ্রাম। তবে, দুশো টাকা দিয়েছেন যখন, দুমিনিট নিশ্চয় দাঁড়িয়ে দেখবেন।
রাত তখন প্রায় বারোটা। সত্যসুন্দর ঘোষ ব্যালকনি যে এসে দাঁড়ালেন। কানে তার দিদির গলা ভেসে আসছে, " আমি চিনি গো চিনি  তোমারে, ওগো বিদেশিনী..." দিদি কোনোদিন নামকরা গাইয়ের কাছে গান শেখেনি। তবে দিদিই তার কাছে লতা মঙ্গেশকর। হঠাৎ  মনে হলো, গানটা পাশের ঘর থেকে আসছে..তারপর আসতে আসতে.. আরও কাছে চলে আসছে। পিছন ঘুরে দেখলেন, তুলি গাইছে। " তোমায় দেখেছি শারদ প্রাতে, তোমার দেখেছি মাধবী রাতে, তোমায় দেখিছিই."

তুলি বলছিল "জানো বাবা, আমি জানতাম, তোমার মোটেও আমার গান ভাল্লাগে না, আমি জানতাম আমি পিপির মতো ভালো করে গান গাইতেই পারি না। কিন্তু তুমি কখনও আমাকে discourage করনি। কাল রেগে গেলাম ওই জন্যই। sorry বাবা। "
"পাগলী"। এতো অকপট সত্যি বলে মেয়েটা আজকাল।

" আমার কিন্তু এখনও রবীন্দ্র সঙ্গীত ভালো লাগে বাবা। গাইতে ভালো পারিনা যদিও। "
       ঠিক এই সময়েই ওরা শুনতে পেল, উহঃ লা লা উহঃ লা লা, উঃ লা লা রেএএএ, উহঃ লা লা, রে... পাগলা হওয়া, বাদল দিনে।
এই রে! যাঃ। দুমিনিট এর জন্য যাওয়া হয়নি তো। ...

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ভূতে ভয় পেলেও, ‘ সেক্সি ভূত’-এর চরিত্রে অভিনয় করতে ভয় পাননি সায়ন্তনী

টলিউড ডিভা সায়ন্তনী গুহঠাকুরতা ডেবিউ করে ফেললেন দক্ষিণী সিনেমায়। যদিও কিছুদিন আগেই তিনি আটপৌরেকে সে ব্যাপারে জানিয়েছিলেন। কিন্তু সম্প্রতি এই হোলিতে সিনেমাটি রিলিজ করার পর থেকেই তিনি খবরের শিরোনামে। যদিও তার কারণ, তিনি এই প্রথম একটি ভূতের চরিত্রে অভিনয় করেছেন। শুধু তাই নয়, একটি ‘ সেক্সি’ ভূতের চরিত্রে এবং তাঁকে নিয়েই গল্পটা গড়ে উঠেছে।  সিনেমার নাম, ‘ চিকাটি গাডিলু চিঠাকোটুন্ডু’। তেলেগু সিনেমায় কাজ করে বেশ উচ্ছ্বসিত সায়ন্তনী। এখানেই শেষ নয়, তেলেগু ইন্ড্রাস্টির ভূয়সী প্রশংসা করেছেন তিনি। তাঁদের কাজের ধরন তাঁর বেশ পছন্দ হয়েছে । ইতিমধ্যে আরও একটি দক্ষিণী সিনেমার প্রস্তাবও পেয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। গল্পটিতে দেখা যায় দুই যুগল জুটি ছুটি কাটাতে গিয়ে আটকে যায় একটি ভৌতিক বাড়িতে।  সেখানে তারা একটি সেক্সি ভূতের পাল্লায় পরে। তারপর গল্প আস্তে আস্তে অন্যদিকে মোড় নেই।  সায়ন্তনী আটপৌরেকে জানালেন , ‘’ আমাকে অনেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় মেসেজ করে এই সিনেমার ব্যাপারে জানিয়েছেন! তাঁদের আমার চরিত্রটাও ভাল লেগেছে।‘’ ‘’ আপনাকে কেউ যদি রিয়েল লাইকে সেক্সি বলেন, সেটা আপনি কীভাব...

হেমন্তের উষ্ণ পরশ মিশিয়ে তালমায় ফিরল রোমিও জুলিয়েট, ঠোঁটে ঠোঁটে ' ফুল বডি রিলাক্স'

  আদিত্য ঘোষ, কলকাতাঃ বাংলার রোমিও জুলিয়েটরা দর্শককে রাত জাগিয়ে ওয়েব সিরিজের প্রতিটা পর্ব দেখতে বাধ্য করেছে। শুধু তাই নয়, দুই নবাগত অভিনেতা অভিনেত্রী  বাংলা সিরিজের মুখ্য চরিত্র হয়ে উঠেছে। বাংলা বাজারে ভাল সিনেমা বা ওয়েবের কদর আরও একবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখানোর চেষ্টা করেছে পরিচালক অর্পণ গড়াই। ক্যামেরার পিছনে এবং সামনে আরও একবার উজ্জ্বল ভূমিকার অবতীর্ণ হয়েছেন বাংলা সিনেমার  'ডন' অনির্বাণ ভট্টাচার্য। তবুও তালমার রোমিও এবং জুলিয়েট যথাক্রমে দেবদত্ত এবং হিয়া বাঙালি দর্শক মননে মিষ্টি প্রেমের উপাখ্যান হয়ে থেকে যাবে চিরকাল। যেখানে একটা সহজ সরল প্রেমকে স্রেফ টুকে দেওয়া হয়েছে সিনেমার পর্দায়। কোনও বাড়তি অলঙ্করণ নেই। কোনও উপমা-উপঢৌকন নেই। স্রেফ জীবনকে পর্দায় দেখালে যেমন মনে হয় ঠিক সেইরকম।  অভিনেতা দেবদত্ত রাহার হাতেখড়ি থিয়েটারের অভিনয় দিয়ে। তবে এই মুহূর্তে তিনি মঞ্চ থেকে বহুদূরে। তিনি আটপৌরেকে ফোনে জানালেন যে, ' থিয়েটার ছেড়েছি প্রায় তিন বছর, এখন বড় পর্দায় কাজ করার জন্য মুখিয়ে আছি। বেশ কিছু সিরিয়ালের প্রস্তাব পেলেও এই মুহূর্তে সিনেমা বা ওয়েব সিরিজের অভিনয়ের জন্যই ফোকাস করছি।' মফঃস...

রোগ চিনে নেওয়ার বিভিন্ন উপায় বাতলে দিচ্ছেন ডাক্তার সোমনাথ বিশ্বাস

হৃদয়ঘটিত বিভিন্ন রোগের অশনিসংকেত বুঝবেন কী করে-( পর্ব ১) খাই খাই বাঙালির বুকে ব্যথা হবে না, এও কি সম্ভব? যুগে যুগে বাঙালি জাতি নিজেরাই ডাক্তারি করে মোটামুটি বুঝে নিয়েছে বুকে একটু-আধটু ব্যথা মানেই ওটা গ্যাসের সমস্যা। আসলে বাঙালি জাতি এটা মানতেই অস্বীকার করে যে বুকে ব্যথা হৃদয় ঘটিত বিভিন্ন কারণে হতে পারে। সেটা অনেক সময় হার্ট এট্যাক এর লক্ষণও হতে পারে। উঁহু, অযথা ভয় পাওয়ার জন্য নয় এই লেখা নয়। উপরন্তু এই লেখা শুধুমাত্র একটা প্রাণ বাঁচানোর জন্য। তবে ডাক্তার বাবু বিশ্বাস মহাশয় কফি খেতে খেতে কহিলেন, " আধুনিক জীবনে আমি একটা স্মার্ট ওয়াচ ব্যবহার করতে পারলে, বুকে হঠাৎ ব্যথা হলে একটা ইসিজি করিয়েও দেখতে পারি। আমরা যদি বুকে ব্যথা ব্যাপারটা চেপে যায় তাহলে আর কি আধুনিক হলাম, তাহলে চিকিৎসা বিজ্ঞানের এত উন্নতি হয়ে লাভ কোথায়?" কফির কাপে চুমুক দিয়ে ডাক্তার বিশ্বাস আরও জানালেন যে, " আমাদের বুঝতে হবে চিকিৎসা বিজ্ঞান অনেকটা এগিয়েছে, তার সঙ্গে আমাদেরও এগোতে হবে। বুকে ব্যথা মানেই গ্যাস এবং সঙ্গে সঙ্গে একটা গ্যাসের ওষুধ খাওয়া মানেই সমস্যার শেষ এটা ভাবা একদমই বুদ্ধিমানের কাজ হবে না।" একটু...