(পর্ব- ১ )
তোমার
গল্পগুলো যতই পুরনো হচ্ছে, ততই তারা সবীজ এবং দীর্ঘ হচ্ছে। শুধু তুমি কেন ? আমিও তো আছি প্রতিটা পাতায়, প্রতিটা মুহূর্তে, প্রতিটা বিরতিতে। একবুক প্রশ্ন নিয়ে আজও বেঁচে আছে নভেম্বর
বিপ্লব। আজও প্রত্যেকটা সকাল কাটে নিরামিষে। ঠাকুরঘরে বেজে ওঠে লক্ষ্মীর পাঁচালি। হারমনিয়ামে আর কেউ গান বাঁধে না। ছোট্ট মেয়েটার কান্নাও এখন মিলিয়ে গেছে
অন্য কোনও শহরে। বুড়ো-বুড়ির সংসারে এখন শুধুই শান্তি। ঠিক
আগের
মত । একটা পাতা ঝরা মরসুমে আবার একা এবং
নীরব ঘোষবাড়ি। তুমি ছিলে বলেই সারাদিন রোদ থাকত দালানে। কুয়াশা তখন জাপটে ধরেনি শহরকে, ঠিক তখন তুমি এলে। এসে বললে,
“ কেমন আছিস ?“
-
“ভাল, আর তুমি ?”
-
“ভালই । মোটা হয়ে গেছিস !”
-
“ তুমি কি ডায়েট করছ ?”
-
“কেন ? রোগা হয়েছি বলছিস ! “
-
“ না ! একদম না। কুমড়ো-পটাশের মত দেখাচ্ছে , ডায়েটিংটা শুরু কর ।“
-
“যা পালা, বাজে ছেলে “
তুমি
চিরকাল আমার কাছে স্পেশাল ছিলে। ঠিক স্পাইসি ডিসের
মত। বছরের এই সময়টাতেই কিন্তু আমাদের দেখা
হত। সারাবছর আমাদের কথা হয় না, কিন্তু এই সাতটা দিন আমারা খুব একান্ত
হয়ে যেতাম। হয়ত শুরু থেকেই আমাদের সম্পর্কটা আপেক্ষিক
ছিল।
সেদিন
হয়ত বোধন। তুমি এলে ঠিক চেনা ছন্দে। টোল পরা গালে লেগে আছে আত্মীয়তা। আমি তখন মজে আছি আটপৌরেতে। চরম ব্যস্ত আমার শিডিউল। কাউকে পাত্তা দেওয়ার ইচ্ছে নেই। তুমি হয়ত আবারও দিন সাতেকের অতিথি। কিন্ত
কে জানত, তুমি যাওয়ার আগে কাঁদিয়ে দিয়ে যাবে। ভুলিয়ে দিয়ে যাবে সব অভিমান, মুছিয়ে দিয়ে যাবে একটা শীতের
শিহরণ। ভালবাসতে শিখিয়ে যাবে এই ছেঁড়া শহরকে, স্বপ্ন বুনতে ভুলিয়ে দেবে কল্পনাকে। কে জানত তুমি আর অতিথি নয় , প্রেমিকা হয়ে যাবে কোনও নামহীন কবিতার।
তোমাকে
বর্ণনা কারার মত শব্দ হয়ত আমার কাছে নেই। বয়সের ছাপ তোমার
কথায়।
যৌবন
আস্তে আস্তে উধাও হচ্ছে। উধাও হচ্ছে গায়ের রং। শুধু একই আছে তোমার গায়ের গন্ধটা, যেটা আগেও পেতাম। জয়ী নামটা তো একটা মোড়ক। ওপারে রয়েছে তোমার আসল পরিচয়। জানতে পারেনি কেউ। তুমি যখন এসে বললে –
-
“ কেউ যদি জানতে পারে, তাহলে খুব বাজে হবে “
-
‘’কেউ জানতে পারবে না “
-
“ তুই তাহ্লে বাইরের দরজা দিয়ে বেরবি”
-
“আচ্ছা! তাই হবে “
-
“ ঠিক বিকেল পাঁচটায়”
-
“ বেরনোর আগে একটা মিস কল দিও “
-
“ঠিক আছে “
জয়ী
আমাদের কলটা সত্যিই মিস হয়ে গেছে। আমারা কেউই কাউকে
বুঝতে দিতে চাইনি যে আমারা কতটা আপন। পারিবারিক পলিটিক্সে
আটকে
গেছে সময়টা। তুমি যেখানে দাঁড়িয়ে বলেছিলে সব ভাল
হবে, সময়টা সেখানেই থমকে আছে। সেখানেই পরে আছে আমার উপন্যাসের সূচনাটা। না, আমাদের উপন্যাসের সূচনাটা।।
(পর্ব ২)
অনেকটা
জল বয়ে গেছে নদী দিয়ে। পাথরগুলো আরও ক্ষয়ে গেছে। মরছে ধরেছে ব্রেনে। আমি তখন উদাসী এবং একা। কাজ নেই। একটা বাঙালি মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলে হয়ে
ঠিক এই সময়ে যে চাপটা আসে, সেটাই আমায় তখন সূক্ষ করে দিয়েছিল।
আটপৌরেও
দিনে দিনে থমকে যাচ্ছিল। কোন শো নেই। রোজগারের রাস্তাটা প্রায় বন্ধ। শুধু হাতে গোনা কয়েকটা সেলিব্রিটি ইনটারভিউ
ছাড়া। আদতে যতই ব্যস্ততা দেখাই, আমি কিন্তু চূড়ান্ত মনমরা। কিন্তু কাউকেই বুজতেই দিতাম না। এমনকি তোমাকেও না।
প্রায়
এক বছর পর আমাদের দেখা হ্ল। ঠিক যেমনটা হয় প্রতিবছর
পুজোর সময়। তবে এবারে নতুন সংযোজন সৃজা। এই ছোট্ট মেয়েটা আমাদের গল্পের একটা
নতুন অধ্যায়। প্রথম কয়েকটা দিন একটা আত্মীয়তার ঘোরে
কেটে গেছিল। তারপর শুরু হ্ল একটা কঠিন পথ।
একদিন
জিজ্ঞাসা করলাম, “
আজ বিকেলে
বেরোবে নাকি ?
“
-“ হ্যাঁ! কিন্তু কি বলে বেরোব ? “
-‘’
বলবে আমার সঙ্গে যাচ্ছ “
একটু
ইতস্তত হয়ে বললে , -“ মা কি
ভাববে ?
“
-
“ কিছুই ভাববে না “
-
“ আচ্ছা, তুই আগে বেরিয়ে দাঁড়িয়ে থাকিস । আমি পরে বেরিয়ে দেখা করে নেব “
-
“ আচ্ছা, তাই হবে “
সেদিন থেকেই আমাদের লুকিয়ে দেখা করা শুরু। এখন ভাবলে আশ্চর্য লাগে, একই বাড়ির মধ্যে থেকে আমরা লুকিয়ে দেখা
করতাম। প্রথম উদ্দেশ্য ছিল আমরা রোগা হব। তাই হাঁটতে বেরচ্ছি। আসলে ওটা দুজন দুজনকে সান্তনা দিতাম। পরে এই লুকিয়ে দেখা করাটায় আমাদের পেয়ে
বসল। সারাদিনের জমানো কথা গেল মুক্তি পেত
এই বিকেল বেলায়। পরের দিকে যত রাগ, অভিমান সবই নাম পেত এই বিকেগুলোয়।
জানো জয়ী আমাদের একসঙ্গে হাঁটতে দেখে অনেকেই বলেছে, “ তুই কি বিয়ে কিরেছিস ? ওটা তোর বউ ? “
আমি উত্তর দিতাম না। এরিয়ে যেতাম। জানি না, ঠিক কতটা রোগা হয়েছি, তবে মাথার মধ্যে যে মেদগুলো জমেছিল, সেগুলো এখন গলে গেছে।
আমি কোনওদিনই ব্ল্যাক কফি খেতাম না, তাও আবার চিনি ছাড়া। তোমার সঙ্গে যে সন্ধ্যেগুলো কাটিয়েছি, সেগুলো আমার অভ্যাসকে পাল্টে দিয়েছে
জয়ী। তুমি আমাকে বদলে দিয়ে চলে গেছো। এই পারিবারিক পলিটিক্সে তুমি জিতে গেছো।
জানো, তোমার প্রতি যে ভালবাসা ছিল, সেখানে শুধু শ্রদ্ধা ছিল। আমি কোনদিনই তোমার গায়ে আঁচড় লাগতে
দিইনি।
আমারা কথা বলতাম সাহিত্য নিয়ে। কথা বলতাম কবিতা নিয়ে। আস্তে আস্তে আমারা একে অপরের অবসরের
সঙ্গী হয়ে গেছিলাম। একদিন বললে, “ এই তিনমাস কি করব ? “ আমাকে নাটক দলে একটা সুযোগ দিবি ?” আমি বললাম, “ নাটকের দলে সুযোগ দিতে পারব কিনা জানি
না , তবে আটপৌরেতে ভয়েস ওভার দিতে পার “ । তুমি বললে “সেটা কি ?” “ কিছুই না। কোন গল্প কিংবা কবিতাকে রেকর্ড করে
আপলোড করা ।“
তুমি এককথায় রাজি হয়ে গেলে। জানো, আমারা আস্তে আস্তে এক হয়ে যাচ্ছিলাম। আমারা একটা নতুন উপন্যাস শুরু করতে
যাচ্ছিলাম। কিন্তু………………
(পর্ব ৩)/
_” তোমার হাতটা বাড়িয়ে দাও “
-“কেন ? কি করবি ? “
- “দাও না “
- “কেন ? আগে বল কি করবি ? “
-“ ছুঁয়ে দেখব! একটা চুমু খাব তোমার হাতে “
তুমি
হাতটা কিন্তু বাড়িয়ে দিয়েছিলে। আমি ছুঁয়ে দেখেছিলাম
তোমাকে। একটা শিহরণ ছড়িয়ে পড়েছিল সারা শরীর
জুড়ে। তারপর বহুবার তোমায় ছুঁয়ে দেখেছি। কখন দালানে, কখন একলা ঘরে, কখন ঘুম না আসা রাতে। এরপরে আরও গভীর ভাবে ছুঁয়ে দেখেছি। মনে পরে জয়ী সেদিনের কথা। তোমার হাতের রান্না আমার খুব প্রিয়। সেদিন মোগলাই করেছিলে আমার জন্য। সৃজা তখন আমার কোলে। ওকে জড়িয়ে ধরে চুমু খেলে। আমারও খুব লোভ হচ্ছিল। বললাম,” আমি কি পাব না ? “ তুমি সেদিন আমায় খালি হাতে ফেরাওনি। সেদিন আমার প্রচণ্ড আনন্দ হয়েছিল। একটা অসমবয়সী প্রেম যে আনন্দটা দিতে
পারে, সেটা আর কেউ দিতে পারবে না।
এরপরেও
বহুবার আমরা অনুভব করেছি সেই আনন্দটা। একটা ফ্যাকাসে বিকেল
ঠিক যে ভাবে সন্ধ্যেকে কাছে পেলে আনন্দ পায়, ওকে জড়িয়ে ধরে সব ব্যথা ভুলে যায়, ঠিক সেইভাবে।
জয়ী, আমরা জানতাম এই সময়টা আমাদের হারিয়ে
দেবে। আমাদের ভুলিয়ে দেবে একটা বিচ্ছন্ন প্রেমের
গল্প। তুমি চিরকালই বয়সে বড় হওয়ার সুযোগ নিয়েছ। তুমি জানতে কখন কোনটা করা উচিত। আমি এর কিছুই বুঝতে চাইনি । আমি সবসময় তোমাকে কাছে পেতে চেয়েছি। জানো, তুমি অন্য কারুর সঙ্গে কথা বললেই আমার
হিংসা হত। তুমি সময়মত না এলে আমার রাগ হত। রাত্রিবেলায় ফোন না করলে তোমার সঙ্গে
ঝগড়া করার ইচ্ছে হত।
সেদিন
২৫শে ডিসেম্বর,আমি আর সোহম মদ খাচ্ছি। তোমার সঙ্গে কথা বলছি না। আমি রাগ করেছি তোমার ওপর।
হঠাৎ
টেক্সট করে বললে,” কাল
চলে যাচ্ছি ।“ আমার পৃথিবীটা একদিকে হেলে গেল। সব রাগ উবে গেল, আমি তখন অন্য নেশায় আচ্ছন্ন। ফোন করলাম। তারপর আমরা দীর্ঘ একঘণ্টা কথা বলি। তারপর তেমন কিছু একটা মনে নেই। পরে শুনেছিলাম আমি নেশার ঘোরে বমি করেছি। উল্টো-পাল্টা বকেছি। আসলে কোন নেশার ঘোরে এই কাণ্ডটা হয়েছে, সেটা তুমি চলে যাওয়ার পর বুঝেছিলাম। জয়ী , তুমি আমার কাছে একটা নেশার মত। তুমি ছিলে বলেই আমি এখন লেখার রসদ পায়, তুমি ছিলে বলেই একটা অধ্যায় সারাজীবন
থেকে যাবে এই বাড়িতে। জয়ী, কেমন আছ ? কেমন আছে কবিতারা ?
(পর্ব ৪ )
আমি বারবার বলেছি, আমারা খুবই
আপেক্ষিক। আমরা খুবই অল্প। কিন্তু প্রত্যেকটা প্রেম কিছু না কিছু রেখে যায়। কিছু
না কিছু শিখিয়ে দিয়ে যায়। কিছু না কিছু থমকে দিয়ে যায়। জয়ী, আমাদের গল্পে সৃজা
কিন্তু একটা অধ্যায়। জানো, এই ছোট্ট মেয়েটা ছিল বলেই গল্পটা এত রোমাঞ্চকর, এতটা রহস্যের।
আমাদের বাড়িতে শেষ কবে এত আনন্দ এসেছে কে জানে ? কে জানে বাড়িটা এত
মুখর হয়েছে শেষ কবে ? সারাদিন একটা খুশির হাওয়া বয়ে চলত, সারাদিন আমরা ওকে
নিয়ে খুব ব্যস্ত থাকতাম। দাদু, দিদা, পিপি আর কাকাই এর মিষ্টি ডাকটা শুনতে শুনতে আমরা সবাই এক
হয়ে গেছিলাম। সৃজার কাছে কোন দরজায় বন্ধ থাকত না। কোন সিঁড়ি ওর কাছে বাঁধা হয়ে
দাঁড়ায়নি। ওর মত নিষ্পাপ মনটা আমাদের সব কিছু ভুলিয়ে দিয়েছিল। ছাদে গিয়ে প্রতিদিন
ফুল তুলত। ঠাকুরঘরে প্রতিদিন প্রনাম করত। আমার মোবাইলে “ আয় আয় টিয়ে ” না শুনলে ওর হয়ত
ঘুম আসত না। জানো জয়ী, সিঁড়ির একটা ধাপে আমার পাশে বসে ওযে কি আনন্দ পেত, সেটা বলে বোঝাতে
পারব না। মিচকি মিচকি হাসত। মনে হত আমরা যে কতদিনের প্রেমিক- প্রেমিকা।
হয়ত ওর জন্যই
তোমার তিনমাসের গন্তব্য ছিল ঘোষবাড়ি। হয়ত সৃজাই বিভিন্ন অজুহাত ছিল আমাদের
প্রেমের। জানো জয়ী, একমাত্র সৃজাই আমাদের প্রেম করতে দেখেছে। আমি যখন তোমার গাল
টিপতাম কিংবা তোমায় ছুঁয়ে দেখতাম, ও কিন্তু আমাদের
পাশে থাকত। কতবার আমাকে সৃজা নিজে হাতে খায়িয়ে দিয়েছে, কতবার আমাকে
জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়েছে, কে জানে ! ওকে খুব ভালবেসে ফেলেছিলাম জয়ী। হয়ত তোমার জন্যই আমি আবার
ভালবাসতে শিখেছি।
প্রতিদিন অফিস
থেকে তাড়াতাড়ি ফিরতাম শুধু তোমাদের জন্য। জানো জয়ী, আমি বলতাম না, একদিন আমাদের
গল্পটা কেউ লিখবে। জানো, ঐশী লিখছে আমাদের সম্পর্কের কথাটা। একমাত্র ঐশী বুঝতে পরেছে
আমাদের মধ্যে শুধু শ্রদ্ধা ছিল, আর কিছু নই।
জয়ী, আমি তোমাকে জন্ম
দিয়েছি অন্য রূপে। জানি, এর আগে তোমায় নিয়ে কেউ কাব্য করেনি। কেউ তোমার পথ চেয়ে বসে থাকেনি। কিন্তু তাও আমি কোনদিনই
তোমায় বুঝতে দিইনি আমি তোমাকে কতটা ভালোবাসি। জয়ী আমরা তো প্রায় শেষ পর্বে দাঁড়িয়ে, কিছু বলবে না ?
(পর্ব ৫ )
বিবাহিত
কোনও মহিলা প্রেম করলে তাকে পরকীয়ার তকমা
দেওয়া
হয়।
সমাজের
চোখে সে নিম্নমানের হয়ে যায়। জয়ী, আমি কোনও দিনই তোমার গায়ে আঁচর লাগতে
দিইনি। শ্রদ্ধা করেছি চিরকাল। ভালবেসেছি একটা গল্পের মত। বিশ্বাস কর, একটা শারীরিক সম্পর্ক শুধু ক্ষণিকের
সুখ দিতে পারে, এর চেয়ে আর বেশি কিছু নয়। আমাদের সম্পর্কটা এর চেয়েও বেশি ছিল। আমদের কেউই বেঁধে রাখতে পারবে না
সময়ের
বেড়াজালে। আমরা সবকিছুকে ছাপিয়ে গেছি।
মনে
পড়ে, আমি বলেছিলাম সময়টা সেখানেই থমকে থাকবে, যেখানে দাঁড়িয়ে তুমি বলেছিলে, সব ভাল হবে, ঠিক সেখানেই সব থমকে আছে। আজও যখন বাড়ি থেকে বেরোয়, মনে হয় তুমি আছ। এখন দরজায় দাঁড়িয়ে বলছ সব ভাল হবে। আমার পরীক্ষার সময় কিংবা আমার বেকারত্বের
থেকে মুক্তি, সব সময় আমার পাশে ছিলে একটা দেওয়ালের
মত। তোমার কাছে মাথা রেখে আমি শান্তি পেতাম, যে শান্তি আর কেউই দিতে পারবে না।
জানো, এখন আমার ঘুম ভাঙানোর দায়িত্ব নেওয়া
এক লেখিকা, এখন আমাদের গল্প নিয়ে কাটাছেঁড়া করছে। যদিও আমিই দায়িত্ব দিয়েছি। আনকোরা তবে ওর ভবিষ্যৎ বেশ উজ্জ্বল।
বেশ
সাজিয়েছে আমাদের গল্পটাকে। জানো, এক অদ্ভুত কাণ্ড ঘটিয়েছে এই লেখিকা। একটা বই কেনার জন্য প্রায় গোটা কলেজ
স্ট্রীট চত্বর চষে বেরিয়েছে। যদি বইটা খুব প্রয়োজনীয়
হত, তাহলে বলার কিছু ছিল না। কিন্তু এয়ারপোর্টে বই হাতে ছবি তুলবে
বলে, এই কাণ্ড ঘটিয়েছে! ভাবলেও হাসি পায়। জয়ী, ও তোমার চেয়েও আনকোরা।
জানো
জয়ী, আমরা কাউকেই বুঝতে দিইনি আমরা কতটা
অপরিণত ! তুমি বারবার বলতে “ আমি চাই না, তোর দাদার সঙ্গে তোর সম্পর্কটা খারাপ
হোক “ !
জয়ী আমাদের গল্পটাতো কেউই জানতে পারবে
না, হয়ত আমরাও না !
(পর্ব ৬ )
জয়ী, আমি বলতাম না আমাদের মধ্যে একটা ছকবাঁধা
খেলা জন্ম নিয়েছিল। তুমি প্রতিবারই অস্বীকার করেছ । শুধু এড়িয়ে গেছ। আসলে তুমি কোনও দিনই চাওনি আমি তোমার
কাছে আসি। শুধু দূর থেকে ভালবেসে গেছো।
জানো, তোমাকে নিয়ে একটা ভুলে-ভরা পর্ব করতে ইচ্ছে করছে। জয়ী, প্রতিদিন রাতে আমি তো শুধু তোমার জন্যই
জেগে থাকতাম। তোমার ভয়েস মেসেজ না পেলে আমার ঘুম
আসত না। জানো, তোমাকে যখন আটপৌরের দায়িত্ব দিই, তখন প্রচুর ভিউয়ারস কমে যায়। তাও নেশার ঘোরে তখন হয়ত কিছু বলিনি। সহ্য করে নিয়েছিলাম। অনেকসময় তুমি ইচ্ছে করে দরজা বন্ধ করে
রাখতে, যাতে আমাকে না দেখতে পাও। অনেকসময় ফোন ধরতে না। ইচ্ছে করে লুকিয়ে থাকতে আমার থেকে।
যাওয়ার
সময়ও আমাকে কাঁদিয়ে দিয়ে গেছো। কিন্তু এই বুড়ো- বুড়িকেও ছাড়নি। সবাইকে বলে গেলে, শুধু তাঁদেরই ভুলে গেলে। অনেক আশা নিয়ে তাঁরা তোমার অপেক্ষায়
ছিল। কিন্তু তুমি চলে গেছিলে।
জয়ী, তুমি আর তোমার শাশুড়িকে নিয়ে একটা বাংলা
সিরিয়াল হয়ে যায়। জানো, তোমাদের এই মেঘ বৃষ্টির প্রেম দেখলে
আমার গায়ে ফোস্কা পড়ত।
জয়ী,
তুমি আদতে প্রচণ্ড আনকোরা। জানো, আমরা যদি কোনওদিন এক হতে পারতাম, আমাদের যদি
সম্পর্কটা অন্য হত, তাহলে হয়ত তোমাকে এতটা ভালবাসতে পারতাম না। এই সম্পর্কটা অন্য
বলেই এত টান অনুভব করি। আমরা খাতায়- কলমে একটা গল্পের মতো। শুধু আনমনে পাতা উল্টে
যাওয়া।
তোমার
শরীরে এখন সেই যৌবন নেই, যা দেখে আমার বয়সী একটা ছেলে তোমার প্রেমে হাবুডুবু খাবে।
কিন্তু যা আছে, তা হয়ত এর থেকেও বেশি।
তুমি
যখন যার কাছে থাকো, তার কাছেই সেরা হয়ে ওঠো। এটা তোমার সহজাত প্রবৃত্তি। আমি পারি
না। তুমি কতবার বলেছ, সিগারেট খাওয়া ছেড়ে দিতে, কিন্তু আমি পারিনি। জানো, ডুয়ারসে
গিয়ে গাঁজা পর্যন্ত খেয়েছি। তুমি বারণ করেছিলে, কিন্তু শুনিনি। তোমায় ছুঁয়ে কথা
দিয়েছিলাম, কিন্তু সেই কথা রাখতে পারিনি। জয়ী, তুমি কল্পবিজ্ঞানের রুপকথা হয়ে
জন্মাও! আমি তোমায় আবার ভালবাসব। জয়ী, আমার শরীরের প্রতিটা খাঁজে এখন তোমার গন্ধ
লেগে আছে। আসবে ফিরে আবার ? আবার আগের মত ভালবাসতে শিখিয়ে দেবে এক পাগলকে ? আমি
আবার তোমায় জড়িয়ে ধরতে চাই। একটা “জাদু-কি-ঝাপ্পি। ”
(শেষ পর্ব)
শেষের
থেকেই আবার শুরু করব। ঠিক যেখানে দাঁড়িয়ে তুমি সব শেষ করেছিলে, ঠিক সেখানেই। আমি দাঁড়িয়ে ছিলাম তোমার অপেক্ষায়, তুমি জেগে ছিলে প্রতিদিনের মতো, কিন্তু এলে না। বাড়ির সামনে প্রতিদিনের মতো আবর্জনা
পরে, কূটনৈতিক সম্পর্কের তাগিদে হয়ত এখন
বাড়িটা ভাগ হয়নি। মনে পরে জয়ী, তুমি আসার পর কিন্তু এই দুই পরিবার
এক হয়ে যায়। তারপর দেখতে দেখতে ছটা বছর কেটে গেছে। হাসি-কান্নায় আমরা কাটিয়েছি অনেক দশমী! জয়ী, আমরা লতায়-পাতায় আত্মীয়। এটাই আমাদের পরিচয়।
আমি
জানি , এর বাইরে আমাদের মধ্যে কোনও সম্পর্ক
সম্ভব নয়। কিন্তু আমি মেনে নিতে পারি না। আমি মেনে নিতে পারি না, তুমি অন্য কারুর কাছে থাক। এটা হিংসা নয়, এটা একটা ভালোবাসা। নামহীন, প্রেমহীন একটা ফ্যাকাসে গল্পের অন্তঃসার।
তোমাকে
যেদিন প্রথম বলেছিলাম , আমাদের
গল্পটা, সেদিন তোমার গালে টোল পরেছিল, মুখে ছিল অবুজ প্রেমের হাসি। সেই দুপুরটা বড্ড আপন।
তুমি
নিজেই প্রত্যেকটা ব্যাপারকে জটিল করেছো। আমি এর কিছুই বুঝতে চাইনি। আসলে এখানেই
তোমার আর আমার মধ্যে পার্থক্য। দশ বছরের বড় হওয়ার এটাই সুবিধা। তুমি আমার চেয়ে
অনেক এগিয়ে। অনেকটা বৃত্তের মতো।
জানো
জয়ী, এখন দিনগুলো বাজে গেলে মনে হয়, তুমি এই এসে বলবে,” সব ভাল হবে “ , এখন একটা
অবোধ শিশুর মতো তোমার জন্য অপেক্ষা করি। জয়ী, মাঝে মাঝে ভাবতাম, তুমি যদি চলে যাও
তাহলেও তোমার কিছু এসে যায় না। কারণ তোমার একটা সংসার আছে, একটা গল্পের মতো জীবন
আছে। উল্টো দিকে আমার কাছে কিছুই নেই। ভয়
পেতাম, যদিও এখন পায়। না, তোমাকে হারানোর ভয় না। আমাদের সম্পর্কের ভয়। চিরকালই
আমরা সাস্পেক্ট ছিলাম, আছি এবং থাকব।
জয়ী,
তুমি যেখানেই দাঁড়াবে, সময়টা শুধু তোমাকেই খুঁজবে। সবকিছুই পাল্টে যাচ্ছে,
অভ্যাসটাও পাল্টে ফেলেছি। এখন তোমার রোদ
ভেজা শহর অন্য গল্পের খোঁজে হাহুতাশ করছে। মুম্বই আর কলকাতার সম্পর্কটা অনেক
পুরনো। ওটা এর সহজে ভাঙবে না জয়ী।
আর
কিছু লেখার ক্ষমতা নেই! বাকিটা ঐশী লিখবে। সবটা জানে। একটা নতুন ভোরের খোঁজ করছে
ওর লেখা। কাঁচা হাতে অনেক কিছু পাবে, যা আমার মতো সাংবাদিকের লেখায় পাবে না। তোমার
জন্য শুধু রেখে গেলাম অনেক শ্রদ্ধা। আমি আর থাকব কিনা জানি, জানি না আর লিখতে পারব
কিনা, হয়ত বাকিটা ঐশী জানে। শুধু তোমার
নামটা বাদে । কোনওদিন প্রয়োজন পড়লে ওকে
বাকি গল্পটা বলে দিও! তোমার নম্বরও আছে ওর কাছে! ভালো থেকো জয়ী, ভালো থাক আমার
আদরের দাগ আর বৌঠান !
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন