একদিকে বৌঠান আর অন্যদিকে জয়ী! একে অপরের বিপরীত। একদিকে
যখন তীব্র হিংসা তখন অপরদিকে বাঁধ ভাঙা ভালবাসা। একদিকে যখন বসন্তের শান্ত স্নিগ্ধ
আবেগ তখন অন্যদিকে প্রচণ্ড গরমের দাবদাহ। জয়ী, তোমার জম্ন হবে যে এইভাবে, তা কে জানত!
একটা কবির অনেক ক্ষমতা থাকে, সে একটা চরিত্রের জন্ম এবং মৃত্যু দিতে পারে আনায়াসে।
তোমাকে কোনও এক শীতের রাতে আমি জন্ম দিয়েছিলাম। তখন বৌঠান আমার কবিতার মধ্যভাগে। আমার
সবটা জুড়ে তখন শুধু শ্রদ্ধা।
বৌঠান আমাকে আগলে রেখেছিল। রোদ- জল- ঝড়- বৃষ্টিতে আমাকে
ছায়া দিয়েছিল। তুমি আমার ঠিক মায়ের মতো বৌঠান। কিন্তু অন্যদিকে জয়ী আমাকে শুধু কষ্ট
দিয়েছে প্রতিদিন। আমাকে একা ছেড়ে দিয়েছে মরুভূমির মাঝে। বলেছে, “ যা খুটে খা।” ভালবাসতে
ভুলিয়ে দিয়েছে । শহরটা হারিয়ে দিয়ে চলে গেছে অন্য শহরে।
তোমারা দুজনই আমার জীবনটাকে অনেকটা বদলে দিয়েছ। শুধু আমিই
কিছু করতে পারিনি। তোমাদের থেকে অনেককিছু নিয়েছি, কিন্তু কিছুই ফিরিয়ে দিতে পারিনি।
শুধু একরাশ হতাশা ছাড়া।
“ দাড়িটা কেটে আয় , বনমানুষের মতো দেখাচ্ছে ।“
“ কাটব না।“
“ তোর সঙ্গে কথাই বলব না তাহলে।“
আমিও তোমার কথায় কত কিছু করতাম। একলাফে বনমানুষ থেকে মানুষও
হয়ে যেতাম। এখন ভাবলে হাসিও পায়। তখন অনেকটা অপরিণত এবং আনকোরা ছিলাম। কিন্তু জয়ী আমাকে
অনেকটা পরিণত করে দিয়ে গেছে।
“ আজ ফোন করলে না কেন ? ‘’
‘’ সময় পায়নি একদম।“
“ আবার মিথ্যে বলছ।“
“ তাহ্লে তাই। ‘’
বৌঠান জয়ীকে খুব হিংসা করত। একটা মেয়ে আরেকটা মেয়েকে কিছুতেই
সহ্য করতে পারে না। অন্তত এই সম্পর্কের জটিলতায় এরা একে অপরের শত্রু।
আমি যখন একটা পত্রিকার দপ্তরে চাকরি পায়, তখন জয়ী আমার
নিত্যসঙ্গী। ওকে ছাড়া আমার একমুহূর্তও কাটত না।
‘’ আমি চাকরিটা পেলে , কী পাব ? “
“ তুই কী চাস ? “
“ আমাকে ছুঁয়ে দেখবে , আমার গালে এঁকে দেবে একটা বিশাল
আকাশ ? “
“ আচ্ছা! দেব।“
সেদিন হয়ত কেউই ভাবতে পারিনি আমারা দুজন দুজনের কথা রাখব।
কিন্তু নিয়তি বড্ড নিষ্ঠুর। আমিও চাকরিটা পেয়ে যায়, আর তুমিও একটা মরুভূমি এঁকে দিয়েছিলে
আমার গালে। তখন সময়টা হয়ত অন্য ছিল। গল্পগুলোও অন্য ছিল। বৌঠান আর জয়ীও আলাদা ছিল সবার
কাছে!
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন