লেখকরা বরাবরই তাঁদের চারপাশের পরিবেশ থেকেই তাঁদের
লেখার সামগ্রী সংগ্রহ করেন কিংবা সংগ্রহ করতে ভালবাসেন। তাঁরা বরাবরই একটু
খামখেয়ালী এবং সমাজের অনেক সূক্ষ্ম বিষয়কে তাঁদের লেখার মাধ্যমে খুব সুন্দর ভাবে
ফুটিয়ে তোলেন। এটাই হয়ত তাঁদেরকে বাকিদের থেকে আলাদা করে তোলে, আরও সহানুভূতিশীল
করে তোলে। লেখিকা দ্বৈতা হাজরা গোস্বামীর সঙ্গে কথা বলেও সেইরকমই মনে হল। বাংলার বাইরে থাকলেও বাংলা ভাষার সঙ্গে কিন্তু তাঁর সম্পর্ক অনেকটা প্রেমের মতো। লেখিকার কথায়, ‘’ লেখাই আমার প্রেমিক!’’ ছোট থেকেই তাঁর লেখার প্রতি বড্ড টান। কবিতা, ছোট গল্প, প্রবন্ধ, প্রায় সব জায়গাতেই তাঁর অবাধ বিচরণ।
তাঁর লেখা শুরুর দিনগুলোর কথা প্রসঙ্গে তিনি জানালেন যে,'' আমার বাবা ( শ্রী বিজন
হাজরা ) খুব উৎসাহ দিতেন লেখার জন্য। উনিই ছোটবেলায় লাইব্রেরির সঙ্গে পরিচয়
করিয়েছিলেন , সাহিত্যমুখী করেছিলেন আমাকে। উনি
এখন আর নেই। কিন্তু ওঁনার শিক্ষায় পথ চলার চেষ্টা করি। ‘’
দ্বৈতার জন্ম মুর্শিদাবাদ জেলার রঘুনাথগঞ্জে। সেই সূত্রে আটপৌরেকে তিনি
জানালেন যে, ‘’ আমি তো একদম মফস্বলে মানুষ হয়েছি, তাই অনেককিছু দেখতে দেখতে বড়
হয়েছি। আমি ছোটবেলায় নৌকা করে স্কুলে যেতাম। শুধু তাই নয় মফস্বলের মানুষেররা
কিন্তু মিলেমিশে থাকে, একে অন্যের খোঁজ রাখে, সেটা কিন্তু শহুরে কালচারে হয় না।
সেটা একেবারেই নিউক্লিয়ার। তাছাড়াও আশেপাশের পরিবেশ, গাছপালা, পাখি এবং আরও
কতকিছু। এইসব আমার লেখার উপকরণ জুগিয়েছে।‘’
সেইসময় থেকে কিন্তু তাঁর লেখার হাতেখড়ি। তারপর কলকাতায় পড়তে আসা। লেডি ব্রেবোর্ণ
কলেজ থেকে সংস্কৃতে স্নাতক হওয়া এবং তারপর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বৈদিক
সাহিত্য নিয়ে পড়াশুনা। পরবর্তী সময়ে ব্যাঙ্গালোরের জৈন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বৈদিক
সাহিত্য এবং রাষ্ট্রসংঘের পরিবেশমূলক নীতি নিয়ে পিএইচডি করেছেন।
শুকতারা, কিশোরভারতী, আনন্দমেলা প্রভৃতি পত্রিকার লেখালেখির পাশাপাশি তিনি
বিভিন্ন ওয়েব ম্যাগাজিন যেমন জয়ঢাক, ম্যাজিক ল্যাম্পেও লিখেছেন। যদিও ম্যাজিক ল্যাম্প নামক ওয়েব ম্যাগাজিনটির সম্পাদক
তিনিই। তাঁর প্রথম গল্পের বই প্রকাশ হয় কলেজে পড়ার সময়, ‘সাত আকাশের ওপারে’। তারপরে ‘কবিতার
পঞ্চপ্রদীপ’ নামক বইটিতে তাঁর লেখা জায়গা পেয়েছে।
তারপর ‘মেঘ বৃষ্টি কথা’, বুকফার্ম
থেকে ‘সেরা ম্যাজিক ল্যাম্প’- এর সংকলন, দেজ পাবলিশিং থেকে ‘জোডিয়াক সাইন’, অরণ্যমন
থেকে ‘ওড- ভূতুরে’।'মেঘের বারান্দা' নামে তাঁর একটু ফেসবুকে পেজও রয়েছে। তাঁর একের পর এক লেখা পাঠকেরা সাদরে গ্রহণ করেছে। শুধু তাই নয়,
তাঁকে অভিবাদনও জানিয়েছে।
লেখিকাকে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘’ ছোট থেকে কি লেখিকা হওয়ার ইচ্ছে ছিল?’’ লেখিকা
হাসতে হাসতে জানালেন, ‘’ ভাল মানুষ হওয়ার ইচ্ছে ছিল! যেটুকু জানি, সেটা বাকিদের
জানানোর ইচ্ছে ছিল, ব্যস এইটুকুই।‘’একটু নিরিবিলি জায়গা লেখিকার পছন্দ। যেখানে এত মানুষ নেই, এত ঝঞ্ঝাট নেই! হয়ত
সেটাই লেখিকার ‘দিকশূন্যপুর’!
( সাক্ষাৎকার- আদিত্য ঘোষ
ছবি- সংগৃহীত)
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন