সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

জয়ী, ফিরে যাও বছর দশেক আগে



জয়ী, ফিরে যাও বছর দশেক আগে- আদিত্য 

সময়টা ১৯৯৫, ৩০ মে। একটা ভগ্নপ্রায় বাড়ি! একটা শ্যাওলা ধরা দালান। তিনটে পরিবার বিছিন্ন এবং ঝগড়ুটে। সমস্ত শরিকি বাড়ির এটাই চিরাচরিত রীতি।  প্রত্যেকটা দিন এক একটা নতুন ঘটনার সূত্রপাত।  নতুন ঝগড়ার টপিক এবং আরও কত কী! ঠিক এমন সময়, যখন সবে মাত্র আমি পৃথিবীর আলো দেখেছি তখন শহরের অপর এক প্রান্তে একটা মেয়ে অবিরাম খেলা করে বেড়াচ্ছে। তখন তার বয়স সবে মাত্র দশ।  কে জানত,  আরও বেশ কিছু বছর পর আমাদের দেখা হবে, আমরা খুব ভাল বন্ধু হব। একে অন্যের প্রেমে সাড়া দেব। সবটাই কেমন কাকতালীয়! তারপর বাকিটা সবার মতই এক।  বয়সের গণ্ডি পেরিয়ে আমরা তখন অনেকটা পরিণত হয়েছি।  যদিও তখনও আমদের দেখা হয়নি।

তারপর কাট টু ২০১২।  জুন মাসের শেষের দিকের কোনও এক সময়। আমি ঠিক তার পরের বছর উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দেব। আমাদের এই বাড়িতে তখন হঠাৎ একসঙ্গে অনেকগুলো ঘটনা ঘটে। একটা বিয়ে এবং শ্রাদ্ধের নিমন্ত্রণ আমাদের সবাইকে হঠাৎ এক করে দিয়েছিল। ওই সেদিন থেকেই কান্না-হাসির মধ্যেও আমরা এক হয়ে উঠেছিলাম। আর এই এক হওয়ার পেছনে ছিল একটা মেয়ের আগমন, জয়ী!

একজন অচেনা-অজানা অতিথির মতোই জয়ী আমাদের বাড়ির একটা রহস্য হয়ে উঠেছিল। বারেবারে প্রশ্ন দানা বাঁধত মনে। জয়ী কেমন ? কী করে ? কোথায় থাকত ? কাদের সঙ্গে থাকত ? আগে প্রেম করত ?  এইসব প্রশ্নগুলর উপর ভর করেই সেই আত্মীয়-এর সঙ্গে বেশ জমে উঠেছিল। প্রথম প্রথম বেশ আদুরে এবং আপন। তারপরে বুঝলাম সে অনেকটা আধুনিক এবং অভিভাবক। এই করেই বেশ কয়েকটা বছর কেটে গিয়েছিল! বেশ ভাল লাগত জয়ীর সঙ্গে সময় কাটাতে। তবে তখন আমাদের মধ্যে কোনও প্রেমের সম্পর্ক ছিল না, ছিল শুধু আত্মীয়তা।

যদিও অনেক কথা লিখতে গিয়েও বারবার থেমে গেছি! কারণ আমাদের সম্পর্কটা এতটাই গোপন যে, কিছু কথা বাইরে আসলেই হয়ত দুই পরিবারের মধ্যে তৃতীয় বিশ্ব যুদ্ধ বেঁধে যাবে! জয়ীকে সারাজীবনের জন্য হয়ত হারাতে পারি। তাই বারবার থমকে গেছি। খুব ভেবে লিখেছি আমাদের সম্পর্কের ইতিকথা!

সালটা ২০১৪! আমি হঠাৎ কলেজ ছেড়ে দিয়েছিলাম। যদিও দুর্ভাগ্যবশত আমি চিরকালই ভাল ছাত্রের তকমা পেয়েছি। ভাল প্রতিষ্ঠানে পড়ার সুযোগ পেয়েছি। ভাল শিক্ষকের সঙ্গ পেয়েছি। কিন্তু মাঝ পথে পড়াশুনা ছাড়ার একটাই কারণ ছিল- প্রেম। সেই সময় এমন একটা প্রেম আসে, যেটা আমাকে ভেঙে দিয়েছিল। আমি ক্ষত-বিক্ষত হয়েছিলাম। সেই ক্ষতের দাগ পূরণ করেছিল জয়ী! সেই সময় আমি বেশ কিছু দিনের জন্য জয়ীর শহরে গিয়েছিলাম। তখন জয়ী আমার অভিভাবক হয়ে আমার পাশে ছিল। তখন কিন্তু আমাদের মধ্যে প্রেম আসেনি। তখন আমরা আত্মীয়।

জয়ীর কাছ থেকে ফিরে এসে আমি কিন্তু আবার সব শুরু করি! আবার অন্য একটা কলেজে ভর্তি হয়। আবার লেখালেখি কাজে মন দিই। নাটক শুরু করি। ম্যাগাজিন সম্পাদনার দায়িত্ব নিই। সব কেমন আবার আগের মতই স্বাভাবিক হয়ে যায়। যদিও এর কিছুই জয়ী টের পায়নি। তখন আমাদের নামমাত্র যোগাযোগ হত। তখনও আমরা আত্মীয়। সালটা তখন ২০১৫!  

তারপর কাট টু ২০১৮। সময়টা দুর্গা পুজো ঠিক আগে। প্রতিবারের মতো এইবারেও জয়ী এসেছে। প্রতিবছর এই সময়টাই ও আসে আবার পুজো শেষ হতেই ও চলে যায়। তবে এখন সে মা হয়েছে। সঙ্গে বছর দুয়ের একটা ফুটফুটে মেয়ে। শুধু তাই নয়, জয়ী এবার অনেক দিনের অতিথি। প্রায় মাস তিনেকের! তারপর বাকিটা এখন ইতিহাস হয়ে গেছে। আমরা আত্মীয়তার সম্পর্ক ভেঙে প্রেমিক-প্রেমিকা হয়ে উঠেছি। একে অন্যকে স্পর্শ করে দেখেছি। আমর জীবনের স্বপ্নের চাকরিটা পেয়েছি জয়ীকে পাশে নিয়েই।

কিন্তু এই লেখাটা সেইসব নিয়ে নয়। জয়ী এখন অনেকটা পাল্টে গেছে। বারেবারে আমাকে এড়িয়ে যেতে চাই। এখন অজুহাত ভর্তি ঠোঁটের গোড়ায়। মাঝে মাঝে জয়ীকে বড্ড অবিশ্বাস করে ফেলি। ভাবি জয়ী শুধুমাত্র আমাকে প্রয়োজনে ব্যবহার করেছে। আসলে একটা ভাল স্বামী আর পরিবার থাকলে মেয়েরা এই বয়সে আর কিছু চাই না। হয়ত তাই আমি এখন ব্রাত্য। আমি এখন বাজে এবং বেকার। জয়ী, আমি আমার স্বপ্নের চাকিরটা ছেড়ে দিয়েছি। হয়ত শুনলে তোমার কষ্ট হবে, কিন্তু এটাই সত্যি।

জয়ী, তুমি এড়িয়ে গেলে কী আমাদের মধ্যে সম্পর্কটা শেষ হয়ে যাবে ? হবে না জয়ী! তুমি ঠিক কী ভাবছ সেটা জানি না। আমি জানি না, তুমি কেন এড়িয়ে যাচ্ছ। তুমি যদি চাও সম্পর্ক শেষ করে দিতে, তাহলেও রাজি আছি। তবে স্পষ্ট করে বলে দাও। আমি চলে যাব। আর ভাল লাগছে না! বড্ড একা লাগে এখন।

এই বয়সে এমন ফ্রাসট্রেশনে আক্রান্ত ছেলের কপালে প্রেমিকা জোটা মুশকিল। মেয়েরা এত  ফ্রাসট্রেশন খাওয়া ছেলে পছন্দ করে না জানি। কিন্তু তুমি তো আলাদা জয়ী। তাই বারেবারে তোমার কাছে ফিরে আসি। তবে তুমি যদি চাও, আমি চলে যাব। তবে আমাদের সম্পর্কটা অস্বীকার করো না কখন। জয়ী পারলে ফিরে যেও বছর দশেক পরে। দেখবে একটা ভগ্নপ্রায় বাড়ি। শ্যাওলা ধরা মন আর একটা পাগল কবি, সেইদিনও তোমার অপেক্ষায় ছিল। এই বাড়িটা কখনও ভাগ হবে না। হতে পারে না। দেখ, এখনও বৃষ্টি হচ্ছে। ঠিক আগের মতো। জয়ী, পালিয়ে যাও বছর দশেক পরে, দেখবে তখনও আমি আছি- কবিতায় এবং তোমার জীর্ণ দেওয়ালে। তোমার ঠোঁটে, গালে এবং সারা শরীরে!
  



মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ভূতে ভয় পেলেও, ‘ সেক্সি ভূত’-এর চরিত্রে অভিনয় করতে ভয় পাননি সায়ন্তনী

টলিউড ডিভা সায়ন্তনী গুহঠাকুরতা ডেবিউ করে ফেললেন দক্ষিণী সিনেমায়। যদিও কিছুদিন আগেই তিনি আটপৌরেকে সে ব্যাপারে জানিয়েছিলেন। কিন্তু সম্প্রতি এই হোলিতে সিনেমাটি রিলিজ করার পর থেকেই তিনি খবরের শিরোনামে। যদিও তার কারণ, তিনি এই প্রথম একটি ভূতের চরিত্রে অভিনয় করেছেন। শুধু তাই নয়, একটি ‘ সেক্সি’ ভূতের চরিত্রে এবং তাঁকে নিয়েই গল্পটা গড়ে উঠেছে।  সিনেমার নাম, ‘ চিকাটি গাডিলু চিঠাকোটুন্ডু’। তেলেগু সিনেমায় কাজ করে বেশ উচ্ছ্বসিত সায়ন্তনী। এখানেই শেষ নয়, তেলেগু ইন্ড্রাস্টির ভূয়সী প্রশংসা করেছেন তিনি। তাঁদের কাজের ধরন তাঁর বেশ পছন্দ হয়েছে । ইতিমধ্যে আরও একটি দক্ষিণী সিনেমার প্রস্তাবও পেয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। গল্পটিতে দেখা যায় দুই যুগল জুটি ছুটি কাটাতে গিয়ে আটকে যায় একটি ভৌতিক বাড়িতে।  সেখানে তারা একটি সেক্সি ভূতের পাল্লায় পরে। তারপর গল্প আস্তে আস্তে অন্যদিকে মোড় নেই।  সায়ন্তনী আটপৌরেকে জানালেন , ‘’ আমাকে অনেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় মেসেজ করে এই সিনেমার ব্যাপারে জানিয়েছেন! তাঁদের আমার চরিত্রটাও ভাল লেগেছে।‘’ ‘’ আপনাকে কেউ যদি রিয়েল লাইকে সেক্সি বলেন, সেটা আপনি কীভাব...

হেমন্তের উষ্ণ পরশ মিশিয়ে তালমায় ফিরল রোমিও জুলিয়েট, ঠোঁটে ঠোঁটে ' ফুল বডি রিলাক্স'

  আদিত্য ঘোষ, কলকাতাঃ বাংলার রোমিও জুলিয়েটরা দর্শককে রাত জাগিয়ে ওয়েব সিরিজের প্রতিটা পর্ব দেখতে বাধ্য করেছে। শুধু তাই নয়, দুই নবাগত অভিনেতা অভিনেত্রী  বাংলা সিরিজের মুখ্য চরিত্র হয়ে উঠেছে। বাংলা বাজারে ভাল সিনেমা বা ওয়েবের কদর আরও একবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখানোর চেষ্টা করেছে পরিচালক অর্পণ গড়াই। ক্যামেরার পিছনে এবং সামনে আরও একবার উজ্জ্বল ভূমিকার অবতীর্ণ হয়েছেন বাংলা সিনেমার  'ডন' অনির্বাণ ভট্টাচার্য। তবুও তালমার রোমিও এবং জুলিয়েট যথাক্রমে দেবদত্ত এবং হিয়া বাঙালি দর্শক মননে মিষ্টি প্রেমের উপাখ্যান হয়ে থেকে যাবে চিরকাল। যেখানে একটা সহজ সরল প্রেমকে স্রেফ টুকে দেওয়া হয়েছে সিনেমার পর্দায়। কোনও বাড়তি অলঙ্করণ নেই। কোনও উপমা-উপঢৌকন নেই। স্রেফ জীবনকে পর্দায় দেখালে যেমন মনে হয় ঠিক সেইরকম।  অভিনেতা দেবদত্ত রাহার হাতেখড়ি থিয়েটারের অভিনয় দিয়ে। তবে এই মুহূর্তে তিনি মঞ্চ থেকে বহুদূরে। তিনি আটপৌরেকে ফোনে জানালেন যে, ' থিয়েটার ছেড়েছি প্রায় তিন বছর, এখন বড় পর্দায় কাজ করার জন্য মুখিয়ে আছি। বেশ কিছু সিরিয়ালের প্রস্তাব পেলেও এই মুহূর্তে সিনেমা বা ওয়েব সিরিজের অভিনয়ের জন্যই ফোকাস করছি।' মফঃস...

রোগ চিনে নেওয়ার বিভিন্ন উপায় বাতলে দিচ্ছেন ডাক্তার সোমনাথ বিশ্বাস

হৃদয়ঘটিত বিভিন্ন রোগের অশনিসংকেত বুঝবেন কী করে-( পর্ব ১) খাই খাই বাঙালির বুকে ব্যথা হবে না, এও কি সম্ভব? যুগে যুগে বাঙালি জাতি নিজেরাই ডাক্তারি করে মোটামুটি বুঝে নিয়েছে বুকে একটু-আধটু ব্যথা মানেই ওটা গ্যাসের সমস্যা। আসলে বাঙালি জাতি এটা মানতেই অস্বীকার করে যে বুকে ব্যথা হৃদয় ঘটিত বিভিন্ন কারণে হতে পারে। সেটা অনেক সময় হার্ট এট্যাক এর লক্ষণও হতে পারে। উঁহু, অযথা ভয় পাওয়ার জন্য নয় এই লেখা নয়। উপরন্তু এই লেখা শুধুমাত্র একটা প্রাণ বাঁচানোর জন্য। তবে ডাক্তার বাবু বিশ্বাস মহাশয় কফি খেতে খেতে কহিলেন, " আধুনিক জীবনে আমি একটা স্মার্ট ওয়াচ ব্যবহার করতে পারলে, বুকে হঠাৎ ব্যথা হলে একটা ইসিজি করিয়েও দেখতে পারি। আমরা যদি বুকে ব্যথা ব্যাপারটা চেপে যায় তাহলে আর কি আধুনিক হলাম, তাহলে চিকিৎসা বিজ্ঞানের এত উন্নতি হয়ে লাভ কোথায়?" কফির কাপে চুমুক দিয়ে ডাক্তার বিশ্বাস আরও জানালেন যে, " আমাদের বুঝতে হবে চিকিৎসা বিজ্ঞান অনেকটা এগিয়েছে, তার সঙ্গে আমাদেরও এগোতে হবে। বুকে ব্যথা মানেই গ্যাস এবং সঙ্গে সঙ্গে একটা গ্যাসের ওষুধ খাওয়া মানেই সমস্যার শেষ এটা ভাবা একদমই বুদ্ধিমানের কাজ হবে না।" একটু...