সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

যৌবনও এত আবেগতাড়িত ছিল না, কিন্তু কিছু একটা আছে, যেটা আমাকে বারবার টানে।




()

সালটা ২০১২! একটা বিয়ে বাড়িতে গিয়ে প্রথম সেই মেয়েটাকে দেখি আমি তখন স্কুলে স্কুল জীবনের সেটাই শেষ বছর তবে সেই মেয়েটার মধ্যে সেদিন তেমন কিছু বিশেষত্ব খুঁজে পাইনি আর পাওয়ারও সুযোগ পাইনি, কারণ সেই মেয়েটা তখন বিয়ের পিড়িতে সে তখন একটা নতুন জীবন শুরু করতে যাচ্ছে আর আমি একজন নতুন আত্মীয় পাচ্ছি, ব্যস একটুকুই খুশি ছিল, এই বাইরে কিছু নয় তবে সেই মেয়েটার মধ্যে সেদিন তেমন কিছু বিশেষত্ব খুঁজে না পেলেও এইটুকু বুঝেছিলাম, এই মেয়েটা বড্ড বাচাল! হ্যাঁ, একদম উড়নচণ্ডী বিয়ের পিড়িতে বসেও দিব্যি ইয়ার্কি মারছে, হাসছে, ছবির জন্য পোজ দিচ্ছে 

কোনও চিন্তাই তাকে ছুঁতে পারেনি সেদিন, শুধু সেদিন কেন, আজও পারিনি আজও অসময়ে তার মুখটা মনে পরলে, শুধু হাসতেই দেখি আর আমিও হাসি এই ভেবে যে, একদিন যার বিয়েতে গিয়েছিলাম সেই মেয়েটা হঠাৎ কীভাবে আমার খেলাঘরের সঙ্গী হয়ে গেছে হয়ত যা হয়েছে ভালর জন্যই হয়েছে, যা হচ্ছে সেটাও ভালর জন্যই হচ্ছে

()

সালটা ২০১৪ সময়টা ঠিক দুর্গা পুজোর আগে হঠাৎই একটা ঘুরতে যাওয়ার প্ল্যান ঠিক হয় সঙ্গী বলতে সেই মেয়েটা এবং তার বর আসলে আমরা তিনজনই আত্মীয়স্বজন গন্তব্য শান্তিনিকেতন আমি তখন কলেজ ছেড়ে দিয়ে কবিতা লেখায় মন দিয়েছি পাশাপাশি থিয়েটারটা চলছে সঙ্গে ম্যাগাজিনের সম্পাদনার কাজ করছি যদিও সেই আধুনিক মেয়েটা আমার সামনে যতই আমার প্রশংসা করুক না কেন, পিছনে পিছনে এই ব্যাপারটাকে নিয়ে যে সে হাসত সেটা আমি জানি

আসলে সে কোনওদিনই শিল্পীকে বোঝেনি, হয়ত আজও নয় কলেজ ছেড়ে দিয়ে একটা তরুণ যুবক এই সমস্ত আঁতলামি করছে, লেঙ্গি খেয়ে কবিতা লিখছে এইসব তার একেবারেই অপছন্দ ছিল আমার এখন মনে আছে সেই প্রথম আমরা তিনজন একসঙ্গে মদ খেয়েছিলাম সে এক দারুন অভিজ্ঞতা যদিও সেই মেয়েটা আমাকে বারবার সাবধান করেছিল, ‘ বেশি মদ খাস না! বমি করলে কিন্তু আমি পরিষ্কার করব নাকিন্তু আমি সেদিন নেশায় হারিয়ে গিয়েছিলাম, বমিও করেছিলাম এবং সেই মেয়েটাই বমি পরিষ্কার করেছিল! তখনও কিন্তু আমাদের প্রেমটা শুরু হয়নি, তখনও আমরা আত্মীয়স্বজন
()

সালটা ২০১৪ একবারে বছরের শেষের দিকে আমি হঠাৎ সেই আত্মীয়স্বজনের ডাকে মুম্বই গিয়েছিলাম প্রায় দিন দশ-বারোর জন্য তখনও আমি কলেজ ফেরত এক কবি, এক লেঙ্গি খাওয়া প্রেমিক! যদিও তখন নাট্যমঞ্চে বেশ দাপিয়ে বেড়াচ্ছি, তবে সেসবই আমার নাট্যগুরুর দয়ার দান সেই মেয়েটা তখন বেশ পরিণত আগের মতই উজ্জ্বল এবং মিশুকে কোনওদিন তাকে রাগতে দেখিনি এখনও মনে আছে, সেই দিনগুলো কেমন ভাবে কেটে গিয়েছিল

সেই মেয়েটা বারবার চাইত আমাকে পজিটিভ করতে, আমাকে ভাল রাখতে আদর, আপ্যায়নে কোনওদিনই তার কোনও খামতি ছিল না তবে রান্না করার ব্যাপারে সে চিরকালই একটু লেটুস আমিও কোনও কোনও দিন তার সহকারী হিসেবে কাজ করতাম, তবে বিনা পারিশ্রমিকে নয় 

সে আমাকে সারাদিন বিভিন্ন গল্প কথায় ভুলিয়ে রাখত সারা মুম্বই আমার কাঁধে মাথা রেখে ঘুরে বেড়াত প্রতিদিন সকালে খবরের কাগজ খুলে বেশ অধ্যাপকদের মতো খবর শোনাত আবার ব্যাডমিন্টনও খেলত সুযোগ পেলে পাহাড়ি রাস্তা দিয়ে দৌড় দিত রাত নামলে আমরা তিনজন একসঙ্গে বসে মদও খেতাম অনেক গল্প হত কিন্তু তখন সেই মেয়েটার মধ্যে কোনও বিশেষত্ব খুঁজে পাইনি সেই মেয়েটা তখনও শুধু সেই মেয়েই ছিল, এর বেশি কিছু নয়

()

তারপর অনেকটা সময় পেরিয়ে গেছে আমি একটু পরিণত হয়েছি আবার কলেজ জীবন শুরু করেছি সঙ্গে লেখালেখি, সম্পাদনা এবং অভিনয় চলছে সদ্য আটপৌরে শুরু করেছি- একটা ওয়েব প্ল্যাটফর্ম! ততদিনে সেই মেয়েটা মা হয়েছে আরও পরিণত হয়েছে আরও উজ্জ্বল হয়েছে তবে সেই মেয়েটার সঙ্গে আমার একমাত্র পুজোর সময়ই দেখা হত 

এছাড়া সে বিশেষ একটা যোগাযোগ রাখত না হয়ত এটাই তার স্বভাব কিন্তু ধীরে ধীরে সবকিছু পাল্টে গেল ২০১৬ সালে সেই মেয়েটা মা হল তারপর বেশ কিছুদিনের জন্য সে এই প্রাচীন বাড়িতে ছিল, কিন্তু তার সঙ্গে হঠাৎই সেই টানটা উবে গিয়েছিল ঠিক কী কারণে সেটা জানি না তবে সে তখনও হাসিখুশি ছিল তারপর আমিও ব্যস্ত হয়ে পরলাম যোগাযোগ প্রায় ছিলই না, তবে যখনই যোগাযোগ হত, তখনই বড্ড জ্ঞান দিত, ঠিক অধ্যাপকের মতো!
()

এরপর ২০১৭! সময়টা মহালয়া প্রতিবারের মতো এইবারেও সেই মেয়েটা এল কিন্তু আর ফিরল না আর সে আমার আত্মীয় রইল না সেই মেয়েটা জয়ী হয়ে গেল আমার কাছে সারাজীবনের জন্য! সেই মেয়েটা যার কোনও বিশেষত্ব খুঁজে পাইনি সেইদিন,তার কিন্তু প্রচুর বিশেষত্ব খুঁজে পেয়েছিলাম জয়ী হওয়ার পর

তারপরের বাকিটা সবাই জানে, অন্তত যারা আমার লেখা পড়ে, তারা জানেই জয়ী আমার একটা বৃষ্টি রাতের রূপকথা জয়ী কিন্তু কোনও দিনই মোহময়ী ছিল না, যৌবনও এত আবেগতাড়িত ছিল না, কিন্তু কিছু একটা আছে, যেটা আমাকে বারবার টানে জানি না ঠিক কী, তবে জেনে গেলে হয়ত সব শেষ হয়ে যাবে, এই লেখাটাও অর্থহীন হয়ে যাবে 

জয়ী এই লেখাটা পড়তে পড়তে ভাবছে, আমি কতটা পাগল! জয়ী, কোনওদিন সময় পেলে চোখটা বন্ধ করে ভেবো, সেই দুপুরটা যেদিন আমি তোমাকে আমাদের গল্পটা অন্য একটা গল্পের মোড়ক দিয়ে বলেছিলাম, দেখবে সেইদিনই তুমি আমার পাগলামোটা বুঝতে পারবে আমরা তো এই জন্মে এক হতে পারব না জেনেও হাসিমুখে আছি, কিন্তু যদি সামনের জন্মে এক হতে পারি তবে তোমার জন্য একমুঠো পৃথিবী রাখব যেটা ঠিক তোমার মতো উজ্জ্বল হবে তোমার চোখ থেকে ঠোঁট, ঠোঁট থেকে বুক আর বুক থেকে নাভি অবধি আমি লিখব- একটা রূপকথার গল্প আর নাভি থেকে বাকিটা রাখব তোমার জন্য- একটা উজ্জ্বল ক্যানভাস আঁকবে তুমি! জয়ী তুমিই সেই মেয়ে, তুমিই সেই আত্মীয়…… 

মন্তব্যসমূহ

  1. বেশ ভালো লাগল। জয়ী পড়ার উন্মাদনা বৃদ্ধি পেল। পড়ব পুরো জয়ী।

    উত্তরমুছুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ভূতে ভয় পেলেও, ‘ সেক্সি ভূত’-এর চরিত্রে অভিনয় করতে ভয় পাননি সায়ন্তনী

টলিউড ডিভা সায়ন্তনী গুহঠাকুরতা ডেবিউ করে ফেললেন দক্ষিণী সিনেমায়। যদিও কিছুদিন আগেই তিনি আটপৌরেকে সে ব্যাপারে জানিয়েছিলেন। কিন্তু সম্প্রতি এই হোলিতে সিনেমাটি রিলিজ করার পর থেকেই তিনি খবরের শিরোনামে। যদিও তার কারণ, তিনি এই প্রথম একটি ভূতের চরিত্রে অভিনয় করেছেন। শুধু তাই নয়, একটি ‘ সেক্সি’ ভূতের চরিত্রে এবং তাঁকে নিয়েই গল্পটা গড়ে উঠেছে।  সিনেমার নাম, ‘ চিকাটি গাডিলু চিঠাকোটুন্ডু’। তেলেগু সিনেমায় কাজ করে বেশ উচ্ছ্বসিত সায়ন্তনী। এখানেই শেষ নয়, তেলেগু ইন্ড্রাস্টির ভূয়সী প্রশংসা করেছেন তিনি। তাঁদের কাজের ধরন তাঁর বেশ পছন্দ হয়েছে । ইতিমধ্যে আরও একটি দক্ষিণী সিনেমার প্রস্তাবও পেয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। গল্পটিতে দেখা যায় দুই যুগল জুটি ছুটি কাটাতে গিয়ে আটকে যায় একটি ভৌতিক বাড়িতে।  সেখানে তারা একটি সেক্সি ভূতের পাল্লায় পরে। তারপর গল্প আস্তে আস্তে অন্যদিকে মোড় নেই।  সায়ন্তনী আটপৌরেকে জানালেন , ‘’ আমাকে অনেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় মেসেজ করে এই সিনেমার ব্যাপারে জানিয়েছেন! তাঁদের আমার চরিত্রটাও ভাল লেগেছে।‘’ ‘’ আপনাকে কেউ যদি রিয়েল লাইকে সেক্সি বলেন, সেটা আপনি কীভাব...

হেমন্তের উষ্ণ পরশ মিশিয়ে তালমায় ফিরল রোমিও জুলিয়েট, ঠোঁটে ঠোঁটে ' ফুল বডি রিলাক্স'

  আদিত্য ঘোষ, কলকাতাঃ বাংলার রোমিও জুলিয়েটরা দর্শককে রাত জাগিয়ে ওয়েব সিরিজের প্রতিটা পর্ব দেখতে বাধ্য করেছে। শুধু তাই নয়, দুই নবাগত অভিনেতা অভিনেত্রী  বাংলা সিরিজের মুখ্য চরিত্র হয়ে উঠেছে। বাংলা বাজারে ভাল সিনেমা বা ওয়েবের কদর আরও একবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখানোর চেষ্টা করেছে পরিচালক অর্পণ গড়াই। ক্যামেরার পিছনে এবং সামনে আরও একবার উজ্জ্বল ভূমিকার অবতীর্ণ হয়েছেন বাংলা সিনেমার  'ডন' অনির্বাণ ভট্টাচার্য। তবুও তালমার রোমিও এবং জুলিয়েট যথাক্রমে দেবদত্ত এবং হিয়া বাঙালি দর্শক মননে মিষ্টি প্রেমের উপাখ্যান হয়ে থেকে যাবে চিরকাল। যেখানে একটা সহজ সরল প্রেমকে স্রেফ টুকে দেওয়া হয়েছে সিনেমার পর্দায়। কোনও বাড়তি অলঙ্করণ নেই। কোনও উপমা-উপঢৌকন নেই। স্রেফ জীবনকে পর্দায় দেখালে যেমন মনে হয় ঠিক সেইরকম।  অভিনেতা দেবদত্ত রাহার হাতেখড়ি থিয়েটারের অভিনয় দিয়ে। তবে এই মুহূর্তে তিনি মঞ্চ থেকে বহুদূরে। তিনি আটপৌরেকে ফোনে জানালেন যে, ' থিয়েটার ছেড়েছি প্রায় তিন বছর, এখন বড় পর্দায় কাজ করার জন্য মুখিয়ে আছি। বেশ কিছু সিরিয়ালের প্রস্তাব পেলেও এই মুহূর্তে সিনেমা বা ওয়েব সিরিজের অভিনয়ের জন্যই ফোকাস করছি।' মফঃস...

রোগ চিনে নেওয়ার বিভিন্ন উপায় বাতলে দিচ্ছেন ডাক্তার সোমনাথ বিশ্বাস

হৃদয়ঘটিত বিভিন্ন রোগের অশনিসংকেত বুঝবেন কী করে-( পর্ব ১) খাই খাই বাঙালির বুকে ব্যথা হবে না, এও কি সম্ভব? যুগে যুগে বাঙালি জাতি নিজেরাই ডাক্তারি করে মোটামুটি বুঝে নিয়েছে বুকে একটু-আধটু ব্যথা মানেই ওটা গ্যাসের সমস্যা। আসলে বাঙালি জাতি এটা মানতেই অস্বীকার করে যে বুকে ব্যথা হৃদয় ঘটিত বিভিন্ন কারণে হতে পারে। সেটা অনেক সময় হার্ট এট্যাক এর লক্ষণও হতে পারে। উঁহু, অযথা ভয় পাওয়ার জন্য নয় এই লেখা নয়। উপরন্তু এই লেখা শুধুমাত্র একটা প্রাণ বাঁচানোর জন্য। তবে ডাক্তার বাবু বিশ্বাস মহাশয় কফি খেতে খেতে কহিলেন, " আধুনিক জীবনে আমি একটা স্মার্ট ওয়াচ ব্যবহার করতে পারলে, বুকে হঠাৎ ব্যথা হলে একটা ইসিজি করিয়েও দেখতে পারি। আমরা যদি বুকে ব্যথা ব্যাপারটা চেপে যায় তাহলে আর কি আধুনিক হলাম, তাহলে চিকিৎসা বিজ্ঞানের এত উন্নতি হয়ে লাভ কোথায়?" কফির কাপে চুমুক দিয়ে ডাক্তার বিশ্বাস আরও জানালেন যে, " আমাদের বুঝতে হবে চিকিৎসা বিজ্ঞান অনেকটা এগিয়েছে, তার সঙ্গে আমাদেরও এগোতে হবে। বুকে ব্যথা মানেই গ্যাস এবং সঙ্গে সঙ্গে একটা গ্যাসের ওষুধ খাওয়া মানেই সমস্যার শেষ এটা ভাবা একদমই বুদ্ধিমানের কাজ হবে না।" একটু...