লাল-নীল সংসার
ওগো শুনছ,
ছোট্ট ভাড়া বাড়ি আমাদের। বাড়ির সামনে একটা আপনমনে বেড়ে ওঠা হাসনুহানা গাছ। ডালপালার ফাঁক থেকে আলো এসে পড়ে আমাদের ঘরে। একটাই ঘর, ছোট খাট। আমায় আঁকড়ে ধরে ঘুমোও তুমি, আঙুলে আমার আঁচলটা জড়িয়ে। জায়গার অভাব হয়না। মশার বড্ড উপদ্রব। পালা করে রোজ মশারি টাঙানো আর খোলা। দেওয়ালে একটা ক্যালেন্ডার, তাতে সমুদ্রের ছবি। আমার লক্ষীর ঝাঁপিতে অনেক টাকা জমলে যাওয়া হবে একদিন। শাঁখা কিনব সমুদ্রের ধার থেকে, আর একটা সাদা ঝিনুক।
একফালি রান্নাঘর। ভোরবেলা উঠে স্নান করে পুজো করি। জল নিয়ে আসি দূরের কলতলা থেকে। তুমি দেখলেই বকাবকি করবে যে! তারপরেই রান্নাঘরে ঢুকি। আলু-পটল, কোনোদিন বেগুন-কুমড়ো, তাড়াতাড়ি তরকারী চাপিয়ে দিই। সকালের ট্রেন ধরতে হয় তোমায়। অন্নপূর্ণা হয়ে উঠিনা আমি। বেশী তেল-মশলার সামর্থ্য নেই আমাদের। ভাবছি আমার পুরোনো ঝুমকোটা বিক্রি করে দেব। ডিজাইনটা বড্ড সেকেলে। শুধুশুধু বাড়িতে না রেখে, বিক্রির টাকায় নতুন চাল আর দুধ কিনব। সামনেই তোমার জন্মদিন, একটু পায়েস বানাব ভাবছি। মায়ের হাতের স্বাদ এতে পাবে না। তবে ভালোবাসা মিশিয়ে দেব অনেকটা। আজ আবার চাল কমই নিলাম, এত পেট ব্যথা, খেতেই পারব না। বাড়িতে যা ছিল তাতে আজ চলে যাবে। কাল চাল এনো তুমি।
আমার ইচ্ছেয় কখনও বাধা দাওনি তুমি। দুপুরে ঘুমালে জ্বর আসে আমার। তাই ওই সময়টুকু বাচ্চাদের পড়াই। আর শনিবার বিকেলে গান, সন্ধ্যায় আঁকা শেখাই। ভাবছি, পরের মাসে দুটো রঙিন পর্দা কিনব। না, তারচেয়ে বরং একটা নতুন সোয়েটার কিনব তোমার জন্য। কি বলো? এমনিও শহরে শীত পড়ল বলে।
এইটুকু শুনে আবার ভেবে নিও না যে আমি একাই কষ্ট করি। আমি কিন্তু জানি, তোমার গতবারের জন্মদিনে পাওয়া ঘড়ি আর জ্যাকেট বিক্রির টাকার বিনিময়ে এসেছে আমার টুকটুকে লাল শাড়িটা। আমি কিন্তু জানি, তোমার প্রিয় নীল পাঞ্জাবির সোনার বোতাম যাচ্ছে আমার পায়ের একচিলতে নূপুরটা ফিরিয়ে আনতে। আমি কিছু বলিনা তোমায়, যেমন আমায় বলো না তুমি। থাক না একটু "adjustment" আর "sacrifice" এর মত ভারিক্কি শব্দ, আমাদের লাল-নীল অগোছালো সংসারটায়!
- তোমার আমি- সুচন্দ্রা
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন