বাইরে তখন বৃষ্টি পড়ছে। ফোনের
ওপারে একটা পরিচিত কণ্ঠস্বর। আগের মতোই হাসির ঝলক। আগের মতোই মিশুকে ব্যবহার।
অভিনেত্রী এনা সাহা ঠিক আগের মতোই আছেন। তাই ফোনটা পেয়েই চিনতে পেরেছেন।
প্রথমেই
জিজ্ঞাসা করলাম, ‘’ ফ্রী আছেন তো? ’’ চরম ব্যস্ত অভিনেত্রী হাসতে হাসতে জানালেন, “
হ্যাঁ, বলুন। ফ্রী আছি!’’ সম্প্রতি একটি বিজ্ঞাপনের ছবিতে তাঁকে দেখা গিয়েছে, তাই
তাঁকে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘’ ইদানীং কি বিজ্ঞাপনের ছবি বেশি করা হচ্ছে ?’’ এনা সাহা উত্তর দিলেন, ‘’ না, তেমন কিছু নয়!
সবটাই কাজ আর বিজ্ঞাপনের ছবি করতে আমার বেশ ভালই লাগে। সারাদিন ধরে একটা চল্লিশ
সেকেন্ডের দৃশ্য শুটিং হয় এছাড়াও বিভিন্ন প্রোডাক্ট এবং আরও কতকিছু, তাই বেশ ভালই
লাগে। এছাড়াও বেশ কয়েকটা সিনেমার কাজও করলাম। ‘ভূত চতুর্দশী’-এর
এখন কিছুদিন শুটিং বাকি আছে।’’
অভিনেত্রীকে জিজ্ঞাসা করলাম, “
আপনি অভিনয়ের পাশাপাশি মডেলিংটাও সমান ভাবে চালিয়ে যাচ্ছেন, এই জন্য আপনার কাজের
কোনও অসুবিধে হয় না ?’’ অভিনেত্রী আটপৌরেকে জানালেন , ‘’ আমি মডেলিং করি ঠিকই
কিন্তু আমি র্যাম্পে হাঁটি না! বলতে পারেন ফটোশুট করি। বিশেষত প্রোডাক্ট ফটোশুট
করি। আর অভিনয়টা করি বলেই এই কাজগুলো করি।‘’
অভিনেত্রী এনা সাহা অনেক ছোট বয়স
থেকেই অভিনয় করছেন। শুধু বাংলা নয়, বাংলার বাইরেও প্রচুর ছবিতে কাজ করেছেন। তাই অভিনেত্রীকে জিজ্ঞাসা
করলাম, ‘’ আপনি তো বাংলার বাইরে অনেক জায়গায় কাজ করেছেন। বাংলা ইন্ড্রাস্টির সঙ্গে
বাইরের ইন্ড্রাস্টির কোনও পার্থক্য আছে কি ?
অভিনেত্রী জানালেন, ‘’ বাইরের ইন্ড্রাস্টিগুলো বাংলার চেয়ে অনেক অরগানাইসড।
কিন্তু বাইরের ইন্ড্রাস্টিগুলোতে কাজ করতে গেলে ভাষায় খুব সমস্যা হয়, বিশেষত
মালায়ালম, তেলেগু। সেখানে খুব ছোট ছোট শট নেওয়া হয়। সেইদিক থেকে বলতে গেলে বাংলায়
কিন্তু এই সমস্যাটা নেই।‘’
এনা সাহাকে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘’ আপনি তো এতদিন ইন্ড্রাস্টিতে
আছেন, কোনওদিন আপনাকে কমপ্রমাইস করতে হয়েছে ?’’ অভিনেত্রী একটু হেসে বললেন, ‘’ কোনও
কিছুকে মানিয়ে নেওয়ায় আমার কাছে কমপ্রমাইস । ধরুন, কোনও চরিত্র আপনার ঠিক পছন্দ
নয়, তবুও করতে হবে। সেটা কিন্তু কমপ্রমাইস!’’
অভিনেত্রীকে জিজ্ঞাসা করলাম, “
ছুটির দিন কীভাবে কাটান?’’ অভিনেত্রী জানালেন, ‘’ বিশেষত ছুটি পাই না! আর যদিও পায়
তাহলে ড্যান্স ক্লাসে যায়, জিমে যায়, ভাই-বোনদের সঙ্গে সময় কাটাই, বন্ধুদের সঙ্গে
দেখা করি আর যদি ইচ্ছে হয়, তাহলে পালিয়ে যায়!’’
অভিনেত্রীকে একটু থামিয়ে জিজ্ঞাসা
করলাম, ‘’ পালিয়ে যান মানে ?’’ এনা সাহা জানালেন, ‘’ মানে আমি খুব
পাহাড় ভালবাসি। তাই সময় পেলেই পালিয়ে যায়। এমনকি গন্তব্যে পৌঁছে বাড়িতে জানাই।
একসময় মা খুব বকাবকি করত, এখন আর করে না, বুঝে গেছে মেয়েকে বলে আর লাভ নেই।‘’
এখানেই শেষ নয়, আরও বললেন, ‘’ অনেক সময় ভাই-বোনদের নিয়েও পালিয়ে যায়! কোনওরকম
প্ল্যানিং ছাড়া। এয়ারপোর্টে গিয়ে টিকিট কেটে সোজা গন্তব্যে।‘’
অভিনেত্রীকে একটু থামিয়ে বললাম, ‘’ কোথায় যাওয়া হয় ? ‘’ এনা
সাহা জানালেন, ‘’ নর্থ বেঙ্গলটাই বেশি যায়! নর্থ বেঙ্গলের অনেক রাস্তায় আমার প্রায়
মুখস্থ। তবে হিমাচলও আমার বেশ প্রিয় জায়গা।‘’
শুধু ঘুরতে নয়, অভিনেত্রী খেতেও বেশ ভালবাসেন। যদিও বিশেষ
কোনও খাবারের প্রতি তাঁর তেমন কোনও ভালবাসা নেই, কিন্তু রসগোল্লা অভিনেত্রীর খুব
প্রিয়। অভিনেত্রীকে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘’ এক প্লেট বিরিয়ানি নাকি এক হাঁড়ি রসগোল্লা
?’’ অভিনেত্রী বললেন, “ অবশ্যই রসগোল্লা! এক প্লেট বিরিয়ানি নাও খেতে পারি, তবে
কমপক্ষে পঞ্চাশটা রসগোল্লা নিশ্চয় খেয়ে নেব!’’
এনা সাহার ভক্তর সংখ্যা নেহাতই কম নয়! সেই ভক্তদের নিয়েও
মজার ঘটনাও রয়েছে। অভিনেত্রীকে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘’ আপনার তো অনেক ফ্যান, কেউ কোনওদিন প্রপোজ করেনি?’’
এনা সাহা জানালেন, ‘’হ্যাঁ! প্রচুর। আসলে আমার অন্য একটা নম্বর আছে, যেটা মা
ব্যবহার করেন। সেই নম্বরে প্রচুর ফোন আসে, অনেকে প্রপোজও করে!’’ ফোনের অন্য
প্রান্ত থেকে তখন শুধু হাসির শব্দ ভেসে এলো।
(সাক্ষাৎকার- আদিত্য
ছবি- এনা সাহার থেকে সংগৃহীত )
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন