ইউটিউবে তাঁর সাবস্ক্রাইবার এক লাখ ছাড়িয়েছে! সংবেদনশীল বাঙালিও তাঁর গান শুনে এখন
সুস্থ হয়ে ওঠেন। ব্যাঙ্কেও অনেক সময় অনেকে বলে ওঠেন, ‘’ আপনি কি ডিজে বাপন ?’’ তাঁর জনপ্রিয়তা এখন দেশের সীমানা ছাড়িয়ে
বহুদূরে ছড়িয়ে পড়েছে।
তবে মানুষটার মধ্যে সেই বিষয়ে বিন্দুমাত্র অহংকার নেই। একেবারে ছাপোষা মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলের
মতো তিনি আরও কাজ করে যেতে চান।
আরও আরও গান উপহার দিতে চান। বাংলা গানের জন্য আরও অনেক কিছু করতে
চান।
পরিচয়টা আগে ছিল না! তাই একটু ইতস্তত হয়েই ফোনটা করে ফেললাম। ফোনের ওপারে একটা উদাসীন কণ্ঠস্বর। সেই কণ্ঠস্বর, যেটা বারেবারে বলে, ‘ আমি বাংলার একমাত্র ডিজে, ডিজে বাপন।’ তবে এই কথাটার মধ্যে যে হাস্যরসটা লুকিয়ে আছে, সেটা তাঁর গান শুনলেই বোঝা যায়।
প্রথমেই জিজ্ঞাসা করলাম, ‘’ প্রায় একবছর কয়েক মাসের মধ্যে, এক লাখ সাবস্ক্রাইবার, এতটা কি আশা করেছিলেন ? ‘’ অনিন্দ্য চক্রবর্তী ওরফে ডিজে বাপন
আটপৌরেকে জানালেন, ‘’ না। আশা করেনি। তবে অনেকেই জানেন না যে আমি দীর্ঘ ১১ বছর ধরে ইউটিউবে আমার গান সংক্রান্ত বিভিন্ন
ভিডিও আপলোড করি, যদিও সেগুলো
আমার ব্যান্ড ‘ রোড রোলার’-এর! তবে এই দীর্ঘ অভিজ্ঞতা বেশ কাজে লেগেছে। ‘’
পেশায় ব্যাঙ্ক কর্মচারী অনিন্দ্য চক্রবর্তী এবং ডিজে বাপন আদতে একই ব্যক্তি, কিন্ত তাঁদের মধ্যে অমিল রয়েছে যথেষ্ট! একজন যখন একেবারে কর্পোরেট হয়ে অফিসে
যান, তখন তাকে দেখে মনেই হয় না তিনি বাংলার
ডিজে, ডিজে বাপন! আবার অন্যদিকে যখন ডিজে বাপন একটা পাঞ্জাবি
পরে, বাঁ-হাত দিয়ে বারেবারে চশমা নাড়ান, তখন তাঁর ছাপোষা নিরীহ মুখ দেখে মনেই
হয় না, তিনি একজন ব্যাঙ্ক
কর্মচারী।
তাঁকে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘’ এই বাংলা ম্যাসআপগুলোর প্ল্যান কীভাবে এল ?’’ হাসতে হাসতে তিনি উত্তর দিলেন, ‘’ আমার সাব-কনসাস মাইন্ডের একটা খিদে বলতে পারেন। প্রথমে ফসিলস-এর একটা গানের
সঙ্গে ‘শেপ অফ ইউ’ ম্যাসআপ করি, তারপর সেটা রূপমদাকে পাঠাই। রূপমদা গ্রীন স্যিগনাল দেওয়ার পরেই সেটাকে আপলোড করি। তারপর থেকে বাকিগুলো সবই সেই খিদের টানেই বেরিয়ে এসেছে।‘’
সম্প্রতি তাঁর ‘জলতরঙ্গ’ গানটি বেশ জনপ্রিয় হয়েছে। ঋষি বঙ্কিম চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের একটা কবিতাকে তিনি গানের রূপ দিয়েছেন। সেই প্রসঙ্গে তাঁকে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘’ এই গানের ভিডিওটি যদি কেউ অশ্লীল বলে, তাহলে কী বলবেন ?’’ ডিজে বাপন হাসতে হাসতে জানালেন, ‘’ আসলে শরীরটা কোনওদিন অশ্লীল হতে পারে
না! অশ্লীল হল আমাদের দেখার দৃষ্টি।‘’ শুধু জলতরঙ্গ নয়, সম্প্রতি বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলন নিয়ে তাঁর একটি গানও বেশ
প্রশংসা কুড়িয়েছে!
উত্তর কলকাতার বাসিন্দা অনিন্দ্য চক্রবর্তী নিজেই যেমন গান লেখেন, তেমনি সেগুলো সুরও দেন, শুধু তাই নয় মিক্সিং থেকে এডিটিং সবই
তাঁর নখদর্পণে।
আটপৌরেকে তিনি জানালেন তাঁর ব্যান্ডের অ্যালবামের কথা। ২০১১ সালে প্রথম প্রকাশিত হয় ‘ রাস্তা কারুও একার নয়’ তারপর ২০১৬ সালে ‘থার্ড ক্লাস’। এই ‘থার্ড ক্লাস’ অ্যালবামটি কলকাতার বুকে প্রথম কোনও
পেন ড্রাইভ রিলিজ ব্যান্ড অ্যালবাম।
তাঁর সঙ্গে কথা বলে জানা গেল এক মজাদার কাহিনী। নরওয়ের একজন বাঙালি তাঁকে একদিন জানিয়েছিলেন যে, তাঁর মেয়ে গত দুদিন অসুস্থ ছিল, কিছু খাচ্ছিল না। কিন্তু তাঁর গান শুনে মেয়ে আবার সুস্থ হয়ে গেছে। আগের মতোই খাওয়া-দাওয়া করছে।তাঁকে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘’ কোনওদিন ব্যাঙ্কে কেউ জিজ্ঞাসা করেনি, আপনি ডিজে বাপন কিনা ?’’ তিনি বললেন, ;হ্যাঁ, অনেকেই করে। অনেক বাচ্ছারা আবার হাত নেড়েও ইশারা করে।‘’সবশেষে তাঁকে জিজ্ঞাসা করলাম,‘’যদি কোনওদিন কোনও ড্যান্স বারে আপনাকে
ডিজের দায়িত্ব দেওয়া হয়, তাহলে কোন গানটা শোনাবেন ?’’ ডিজে বাবু জানালেন, ‘ আজ মঙ্গলবার, আজ জঙ্গল কাটার দিন!’’
(সাক্ষাৎকার- আদিত্য
ছবি- ডিজে বাপনের ফেসবুক পেজ এবংঅনিন্দ্য চক্রবর্তীর প্রোফাইল থেকে)
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন