সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

আমরা সবাই সব সম্পর্কের জটিলতা ভুলে এক সুরে গান গাইব। ভুলে যাব বৈধ আর অবৈধ সম্পর্কের কূটনীতি।



বি ভো র

আদিত্য

(১)
“ চলো পালিয়ে যায়।‘’
‘’ পারব না।‘’
‘’ তাহলে ?’’
‘’ জানি না।‘’
‘’ কিন্তু আমি এইভাবে আর পারছি না, প্রতিদিন একটু একটু করে শেষ হয়ে যাচ্ছি।‘’
‘’উফফ, তোর সেই এক কথা।‘’
‘’ তাহলে আর কী বলব?’’
‘’ কিছু বলিস না।‘’
‘’ আচ্ছা, আমি চলে যাচ্ছি।‘’
‘’ বাচ্চাদের মতো করিস না। একটু বুঝতে শেখ।‘’
‘’আর বোঝার কিছু বাকি নেই।‘’
‘’ আবার বাজে বকছিস!’’
‘’ কিচ্ছু বাজে বকিনি, বরং বলো আমাকে আর পোষাচ্ছে না, এবার অন্য কাউকে...’

কথাটা শেষ করার আগেই সোহাগ সজোরে চড় মারল মৃদুলের গালে। সোহাগের চোখ এখনও রাগে ছলছল করছে। সারা শরীরে একটা ভূমিকম্প ছড়িয়ে পরেছে। ফর্সা মেয়েটা হঠাৎই রাগে কেমন লাল হয়ে গেছে। মৃদুল এক মুহূর্ত অপেক্ষা না করে সিঁড়ি দিয়ে নেমে গেলো। সন্ধ্যে নেমে এসেছে। ছাদের একদিকটা পোস্টের আলোয় আলকিত। বাকি অংশটা আলো-আঁধারিতে। এমন শীতের সন্ধ্যে বেলায় পরিবেশটা কেমন গুমোট হয়ে আছে। কেমন গরম করছে।

(২)

এই বাড়িটার চারিদিকেই অনেক ইতিহাস ঘুরে বেড়াচ্ছে। হাওয়াটা আরও জোড়াল হচ্ছে। আলোটা আরও জোড়ে দুলছে। আমরাও আরও উসাদী হয়ে যাচ্ছি। আমি বললাম, ‘’ তুমি যখন এড়িয়েই যেতে চাইছ, তখন এত রাতে ছাদে এলে কেন ?’’
‘’ তুই বললি তাই এসেছি!’’

‘’ তুমি চাইলে নাও আসতে পারতে। ফোনেই জিজ্ঞাসা করতে পারতে। কিন্তু তুমি এসেছ। একাবার বলো আমায় ভালবাস।‘’
‘’ ওটা বলতে পারব না। ওটা অন্য কারুর জন্য রেখেছি।‘’
‘’ জয়ী, তোমার জন্যই আমি আবার সবকিছু ফিরে পেয়েছি। আমার স্বপ্নের চাকরি, আমার ভালবাসার বাড়ি, সবই তোমার জন্য।‘’

‘’ এবার একটু নিজেকে ভালবাস!’’
‘’ জয়ী, কেন এই রকম করছ?’’ জয়ী আমার থেকে একহাত দূরেই দাঁড়িয়ে ছিল। এবার জয়ী আমার হাতটা ধরে বলল, ‘’ আমি চাই তুই ভাল থাক, তাই এইরকম করছি।‘’
‘’ তুমি ছাড়া আমি শূন্য! আমি ফ্যাকাসে।‘’

‘’ পাগল! এইসব কাব্য ছাড়। একটু পজিটিভ থাক। তুই জানিস আমাদের সম্পর্কটা সম্ভব নয়, তাই এটা নিয়ে কষ্ট পাস না। আমি যেখানেই থাকি, তোর ভালই চাইব।‘’

আমি বললাম , ‘’শেষ একটা কথা বলব? ‘’ জয়ী বলল, ‘’ কী ?’’ আমি জয়ীকে এক ঝটকায় জড়িয়ে ধরলাম। ততক্ষণে ঝড়টা তীব্র হয়েছে। আলোটা আরও জোড়ে দুলছে। চারিদিকে তখন একটা নিদারুন বিষণ্ণতা।

 যাওয়ার আগে জয়ী বলল, ‘’ এবার আসি। দুঃখ পাস না। সারাজীবন আমি তোর ভালই চাইব।‘’ জয়ীর চোখ তখন ছলছল করছে। চারিদিক বড্ড অন্ধকার হয়ে এলো। জয়ী হারিয়ে গেল। আমাদের প্রেমটাও কোথায় উবে গেল।
(৩)
মৃদুল একটি সরকারী অফিসের কেরানি। ছোট থেকে অনেক কষ্ট করে আজ এই চাকরিটা পেয়েছে। ছোট বেলায় বাবা মরা ছেলেটার একমাত্র ভরসা ছিল মা। বাবা ছিলেন পেশায় দিনমজুর। একটি বহুতলে কাজ করতে গিয়ে দুর্ঘটনায় তিনি মারা যান। তখন মৃদুলের সাত বছর বয়েস। তারপর থেকে অভাব ছিল তাঁদের নিত্যসঙ্গী। মা হাতের কাজ জানতেন, তাই এদিক-অদিক করে সংসারটা কোনক্রমে চলে যেত। কোনওবেলায় শুধু ভাত, আবার কোনওবেলায় হয়ত আলুসেদ্ধ আর ভাত। আবার এমনও দিন গেছে যেদিন একবেলায় খাওয়া জোটেনি। তবুও মা তাঁর ছেলের লেখাপড়া বন্ধ করে দেননি। তিনি ছেয়েছিলেন মৃদুল যেন স্কুলের গণ্ডি পেরোয়। তাঁর মায়ের ইচ্ছেমতো মৃদুল কিন্তু স্কুল ফাইনাল পাশ করে, যদিও সেকেন্ড ডিভিশনে। তারপর থেকে বিভিন্ন সরকারী দপ্তরের পরীক্ষা দিয়ে আজ সে কেরানির চাকরিটা পেয়েছে।

একদম সাদামাটা ছেলে। কষ্ট করে বড়ো হওয়ার দিনগুলো এখনও তাঁর কাছে জীবন্ত। তাই সখ-আহ্লাদ তাকে স্পর্শ করেনি। মৃদুলের এখন একমাত্র লক্ষ্য তাঁর মা’কে ভাল রাখা। কিন্তু আমরা যা চাই, জীবনটা সবসময় সে ভাবে চলে না। অনেক সময় আমাদের উল্টো স্রোতে চলতে হয়। ভালবাসার জন্য, ভাল থাকার জন্য...
(৪)

ঠাণ্ডা পড়েছে। রাতের বেলায় যদিও এই দিকটা একটু বেশীই ঠাণ্ডা লাগে। এখানে সন্ধ্যের পর যানবাহনও কম চলে। রাস্তার মোড়ে মোড়ে ল্যাম্পপোস্টও নেই। পঞ্চায়েতের আওয়াতায় মধ্যে পরে এই বালিভাড়া জায়গাটা। উন্নয়নের ছোঁয়া এখনও লাগেনি। প্রতিদিনের মতো কৌশিক তামাক বানাতে ব্যস্ত। ওর খোলা ছাদটায় এখন আমাদের প্রতিভা প্রকাশের বিরাট মঞ্চ। ওর বাড়ির ছাদ থেকে একটা বটগাছ দেখা যায়। সেখানে রাত হলেই জোনাকিরা ভিড় করে। আজও তার ব্যতিক্রম হয়নি। একটা অন্ধকার ছাদই এখন আমাদের মস্ত এক আনন্দের জায়গা। কৌশিক তামাক ছেড়ে হঠাৎ গিটারটা নিয়ে টুং টুং করতে লাগল!

‘’ আজ কি তামাক ছাড়াই নেশা হয়ে গেছে ?’’
 কৌশিক বলল, ‘’না রে! একটা গান গাইতে ইচ্ছে করছে?’’
‘’ কোন গান ?’’ 
‘’ চাকরিটা আমি পেয়ে গেছি, বেলা সত্যি......’’
আমিও গলা মেলাতে মেলাতে ভাবলাম, বেকার প্রেমিক তার প্রেমিকার কাছে শুধু মাত্রই খেলনার পাত্র। কৌশিক গানটা শেষ করার পর দেখালাম ওর মধ্যে একটা আনবিল আনন্দ খেলা করে বেড়াচ্ছে। আর হয়ত এটা স্বাভাবিক। নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছে।  একজন আদর্শ প্রেমিকের মতো তার দায়িত্ব পালন করছে। ব্যস, আর কী চাই। মাঝে মাঝে ওর পাশে নিজেকে বড্ড ফ্যাকাশে লাগে।

তবে আমার একটা অন্য গান আজ গাইতে বড্ড ইচ্ছে করছে। কৌশিক আবার গিটার রেখে তামাক বানানোয় মন দিল। খোলা ছাদে আমাদের সঙ্গী বলতে একটা কাঁচি, কয়েকটা পেপার, জল, ডায়রি ,গিটার আর ওই দূরের জোনাকিগুলো। আমি হঠাৎ গুন গুন করে গাইতে লাগলাম, ‘’ আজ হোক না রঙ ফ্যাকাসে, তোমার আমার আকাশে, চাঁদের হাসি যতই হোক না ক্লান্ত...’’  

একদিন আমাদের সবাইকে এইরকম একটা খোলা ছাদে এসে দাঁড়াতে হবে। যেখানে আমরা সবাই সব সম্পর্কের জটিলতা ভুলে এক সুরে গান গাইব। ভুলে যাব বৈধ আর অবৈধ সম্পর্কের কূটনীতি। জয়ী, এই সেই মরসুম। যখন আমাদের প্রেম ঠিক এই রকম একটা খোলা ছাদে এক অন্যের গভীরতা মাপতে ব্যস্ত, একে অন্যকে আরও ভালবাসতে ব্যস্ত। এই সেই কবিতার মাস। এই সেই কথা দেওয়ার জানুয়ারী। জয়ী একটা বছর পেরিয়ে গেল, কিন্তু আমাদের বয়সের ফারাকটা আজও কিন্তু দশ।
মনে পরে জয়ী ?
( পরবর্তী অংশ আগামী সপ্তাহে)


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

"যোগাসনের বিকল্প কিছু নেই" :শিবগঙ্গা টিঙ্কু গঙ্গোপাধ্যায়

  আজকাল সুস্থ থাকার জন্য আমরা বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করে থাকি। ইদানীং কালে খুব কম বয়সে হৃদরোগের কিংবা ডায়াবেটিসের সমস্যা থেকে আরও জটিল প্রাণঘাতী রোগ আমাদের শরীরে বাসা বাঁধছে। প্রতিদিন সময়ের তালে ছুটে চলার তাগিদে আমাদের জীবন ক্রমশ কঠিন হয়ে উঠেছে। আর এই কঠিন সময়ে শরীরচর্চার যে সময়টুকু পাওয়া যায়, আমরা অনেকেই জিমে গিয়ে ভারী ভারী লোহালক্কর তুলে থাকি আবার অনেকেই ভোরবেলা হেঁটে থাকেন। প্রাচীন কাল থেকে যোগঅভ্যাস আর প্রাণায়ামের সুখ্যাতি আছে। অনেকেই অভ্যাস করে থাকেন। অনেকের জীবনে   বদলে দিয়েছে যোগঅভ্যাস। তবে জিম না যোগঅভ্যাস এই নিয়ে তুমুল তর্কবিতর্ক আছে। নাকি শুধুমাত্র হাঁটলেই মিলবে অনেক রোগ থেকে মুক্তি? তর্ক চলবেই। অনেক বিশেষজ্ঞরা অনেক পরামর্শ দিয়েই থাকেন তবে কোভিড পরবর্তী সময়ে যোগঅভ্যাসের একটা বিরাট প্রচলন শুরু হয়েছে। বিশেষত একটা সময় বয়স্করা প্রতিনিয়ত যোগঅভ্যাস করে থাকলেও ইদানীং সববয়সীদের মধ্যে এই প্রচলন দেখা যাচ্ছে। যোগব্যায়াম বিশেষজ্ঞ শিবগঙ্গা টিঙ্কু গঙ্গোপাধ্যায় আটপৌরের মুখোমুখি হয়ে জানালেন যে," যোগব্যায়ামের বিকল্প কিছু নেই। প্রাণায়াম এবং যোগব্যায়াম একজন মানুষকে সম্পূর্নরূপে বদলে দিত...

হেমন্তের উষ্ণ পরশ মিশিয়ে তালমায় ফিরল রোমিও জুলিয়েট, ঠোঁটে ঠোঁটে ' ফুল বডি রিলাক্স'

  আদিত্য ঘোষ, কলকাতাঃ বাংলার রোমিও জুলিয়েটরা দর্শককে রাত জাগিয়ে ওয়েব সিরিজের প্রতিটা পর্ব দেখতে বাধ্য করেছে। শুধু তাই নয়, দুই নবাগত অভিনেতা অভিনেত্রী  বাংলা সিরিজের মুখ্য চরিত্র হয়ে উঠেছে। বাংলা বাজারে ভাল সিনেমা বা ওয়েবের কদর আরও একবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখানোর চেষ্টা করেছে পরিচালক অর্পণ গড়াই। ক্যামেরার পিছনে এবং সামনে আরও একবার উজ্জ্বল ভূমিকার অবতীর্ণ হয়েছেন বাংলা সিনেমার  'ডন' অনির্বাণ ভট্টাচার্য। তবুও তালমার রোমিও এবং জুলিয়েট যথাক্রমে দেবদত্ত এবং হিয়া বাঙালি দর্শক মননে মিষ্টি প্রেমের উপাখ্যান হয়ে থেকে যাবে চিরকাল। যেখানে একটা সহজ সরল প্রেমকে স্রেফ টুকে দেওয়া হয়েছে সিনেমার পর্দায়। কোনও বাড়তি অলঙ্করণ নেই। কোনও উপমা-উপঢৌকন নেই। স্রেফ জীবনকে পর্দায় দেখালে যেমন মনে হয় ঠিক সেইরকম।  অভিনেতা দেবদত্ত রাহার হাতেখড়ি থিয়েটারের অভিনয় দিয়ে। তবে এই মুহূর্তে তিনি মঞ্চ থেকে বহুদূরে। তিনি আটপৌরেকে ফোনে জানালেন যে, ' থিয়েটার ছেড়েছি প্রায় তিন বছর, এখন বড় পর্দায় কাজ করার জন্য মুখিয়ে আছি। বেশ কিছু সিরিয়ালের প্রস্তাব পেলেও এই মুহূর্তে সিনেমা বা ওয়েব সিরিজের অভিনয়ের জন্যই ফোকাস করছি।' মফঃস...

শীতের শহরে পারদ বাড়িয়ে দিলেন সায়ন্তনী, কালো পোশাকে ছড়িয়ে দিলেন মায়া

  শীতের ছুটিতে ছুটি কাটিয়ে ফিরলেন অভিনেত্রী সায়ন্তনী গুহঠাকুরতা। দক্ষিণ গোয়াতে জলকেলি করলেন উষ্ণতার সঙ্গে।  তাঁর কালো পোশাক পরিহিত ছবি মায়া ছড়িয়েছে সমাজমাধ্যম জুড়ে। এই শীতে তাঁর উষ্ণ ছবি শহর কলকাতার পারদ বাড়িয়ে দিয়েছে।  তাঁর এই গোটা ভ্রমণ স্পন্সর করেছিল ফার্ন হোটেল এবং ক্লিয়ারট্রিপ।  তাঁর ঝুলিতে একের পর এক হিট ছবির সারি। 'সমান্তরাল', 'উমা', 'এক যে ছিল রাজা'  কিংবা 'লালবাজার' মতো ওয়েব সিরিজে তাঁর সাহসী অভিনয় দর্শকদের কাছে তাঁর চাওয়া-পাওয়াটা বাড়িয়ে দিয়েছে। শুধু বড় পর্দায় নয়, ছোট পর্দায় 'কিরণমালা', 'জয়ী', 'সাত ভাই চম্পা'-এর মতো কাজ দর্শক আজও মনে রেখেছে। তিনি আগের চেয়ে অনেক পরিণত, অনেক বেশি কাজ নিয়ে বদ্ধপরিকর। অভিনেত্রী সায়ন্তনী গুহঠাকুরতা এখন শুধুমাত্র ভাল কাজের জন্য মুখিয়ে আছেন। মুখিয়ে আছেন বাংলা ইন্ডাস্ট্রিকে সুপারহিট কাজ দিতে। শুধু বাংলা কেন, বাংলা ছাড়াও বাকি ইন্ডাস্ট্রি যেমন হিন্দি কিংবা সাউথ ইন্ডাস্ট্রিতেও ভাল চরিত্রে কাজ করতে  তিনি প্রস্তুত। এছাড়াও তাঁর ঝুলিতে রয়েছে মায়া - এর মতো হিট বাংলা ছবি।  ত্রিভুজ রিলিজ করতে চলেছে আর কিছু...