যিনি রাঁধেন, তিনি চুলও বাঁধেন! হ্যাঁ, বাঙালী নারীরা চিরকালই মাল্টি-টাস্কার।
তিনি যেমন হেঁসেল সামলে বাড়ির সমস্ত কাজ নির্দ্বিধায় করে দিতে পারেন, ঠিক তেমনি বাঙালীর
চিরাচরিত রুচিবোধের বাইরে গিয়ে র্যাম্পেও ঝড় তুলতে পারেন। মাথায় পরতে পারেন
শ্রেষ্ঠত্বের শিরোপা। তিনি পেতে পারেন ‘মিসেস ইন্ডিয়া উইনিভারস আর্থ’ এর খেতাব।
অপ্সার গুহঠাকুরতা আবারও
প্রমাণ করে দিয়েছেন বাঙালীরা লড়াই করতে জানে, শুধু তাই নয় লড়াই করে শ্রেষ্ঠ হতেও জানে। ‘মিসেস ইন্ডিয়া উইনিভারস আর্থ ২০১৮’-এর খেতাব জেতার পর থেকেই
অপ্সরার জীবনটা কিন্তু কিছুটা হলেও বদলে গিয়েছে। এখন তাঁর ভাবনাগুলো আরও পরিণত
হয়েছে। তিনি আরও অনেক দূর অবধি যেতে চান। নিজে লড়াই করতে চান। বাংলাকে বিশ্বের
দরবারে নিয়ে যেতে চান।
অপ্সরার সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, তিনি কিন্তু একটা সময় শিক্ষাকতার সঙ্গে যুক্ত
ছিলেন। প্রায় বছর দশেক কলকাতার বিভিন্ন বেসরকারী স্কুলে শিক্ষাকতা করেছেন।
পাশাপাশি তাঁর একটি নাচের গ্রুপও আছে। বর্তমানে সময়ের অভাবে তিনি নিজেই সেই নাচের
গ্রুপকে কিছুটা ছোট করে দিয়েছেন, কিন্তু নাচ তাঁর জীবনের একটা বড় অংশ।
ছোট থেকেই বিভিন্ন সাংস্কৃতিক বিষয়ে অপ্সরার আগ্রহ ছিল অসীম। স্কুল থেকে কলেজ
জীবনের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে তিনি অংশগ্রহণ করে এসেছেন। শুধু তাই নয়
ফ্যাশান সম্বন্ধেও তিনি বরাবরই সচেতন ছিলেন। নজর রাখতেন কোথায় কী হচ্ছে কিংবা কোন
ধরণের স্টাইল স্টেটমেন্ট এখন চলছে, সবই তাঁর নখদর্পণে থাকত। সেই থেকেই তাঁর পথ চলা
শুরু।
বাঙালী মধ্যবিত্ত ঘরে বড় হয়ে ওঠা আর পাঁচজন সাধারণ মেয়ের মতোই তাঁর জীবনটা
ছিল। কিন্তু তিনি এইসব কিছুর বাইরে বেরিয়ে এসেছেন, নিজেকে আরও পরিণত করে র্যাম্পে
হেঁটেছেন। জিতেছেন শ্রেষ্ঠত্বের শিরোপা।
পুণেতে অনুষ্ঠিত হওয়া এই প্রতিযোগিতায় দেশ-বিদেশের সমস্ত প্রতিযোগীকে হারিয়ে তিনি
হয়ে উঠলেন মিসেস ইন্ডিয়া ইউনিভার্স আর্থ ২০১৮। শুধু এই খেতাবই নয় এছাড়াও তাঁর
মুকুটে যুক্ত হয়েছে আরও পালক, মিসেস ইন্ডিয়া ইউনিভারস ওয়েস্ট বেঙ্গল, মিসেস
ইন্ডিয়া ইউনিভারস ফ্যাশান আইকন, মিসেস ইন্ডিয়া ইউনিভারস আইকনিক আইজ।
নাচের প্রশিক্ষকের পাশাপাশি তাঁর একটি নেল স্টুডিও আছে। সেক্টর ফাইভে অবস্থিত
এই নেল স্টুডিটিও তাঁর স্টাইল স্টেটমেন্টের একটি অংশ।
অপ্সরার যতই ‘মিসেস ইন্ডিয়া ইউনিভার্স আর্থ’ হোক না কেন, তিনি কিন্তু তাঁর
শিকড়কে ভুলে যাননি। ভুলে যাননি তাঁর রুচিবোধকে। পরিবারের একটা বড় সাপোর্ট পেয়েছেন
তিনি। তাঁর এই পথচলাকে আরও মসৃণ করে দিয়েছে তাঁর পরিবারের লোকেরা।
একসময় বিভিন্ন নামী ব্রান্ডের সঙ্গে কাজ করেছেন তিনি। মিউজিক ভিডিওতেও কাজ
করেছেন। আটপৌরেকে তিনি জানিয়েছেন যে, ‘’ ভবিষ্যতে ভাল স্ক্রিপ্ট পেলে, সিনেমাও
করতে রাজি আছি।‘’
অবসর সময়ে সিনেমা দেখেন তিনি। মাধুরী দীক্ষিত তাঁর প্রিয় অভিনেত্রী। যদিও
বর্তমানে দীপিকা পাড়ুকোন তাঁর প্রিয় আর তাঁর সারাজীনের রোল মডেল হলেন সুস্মিতা
সেন।
অপ্সরার পছন্দ সমুদ্র। তাঁর কথায়, ‘’ সমুদ্রের ঢেউয়ের গর্জন আমার ভাল লাগে।‘’
তবে কলকাতার গরমে মনে হয় একটু পাহাড়ে ঘুরে আসি। সবশেষে একটা গানের লাইন ধার করে বলতেই হয়, ‘’ তুমি ধরণী, সজনী, প্রেমিকা, তুমি
তো মা, প্রিয়তাম... তুমি প্রথমা।‘’
( সাক্ষাৎকার- আদিত্য ঘোষ
ছবি- অপ্সার গুহঠাকুরতা-এর থেকে সংগৃহীত)
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন