মজার ভিডিও দেখতে ভালোবাসেন ইউটিউবে, অথচ "দ্য বং গাই" ওরফে কিরণ দত্তকে চেনেন না, এমন বাঙালি আছেন কি? কিন্তু এই যাত্রা ঠিক কেমন ছিল, গড়পড়তা ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্র থেকে বাংলা 'রোস্টিং' ভিডিওর ট্রেন্ড-সেটার হয়ে গল্প , অভিজ্ঞতা জানতেই ফোন করেছিলাম আটপৌরের পক্ষ থেকে। শুরুতেই কিরণ জানালেন সাবস্ক্রাইবার পেতে হবে বা ভিউস বাড়াতে হবে, এই ভেবে কোনোদিনই ভিডিও বানানো শুরু করেননি তিনি। স্কুলে পড়তে পড়তেই, যখন ইউটিউব কী জানতেনই না, তখন থেকেই ছোট ছোট ভিডিও বানাতেন। কলেজে ভর্তি হওয়ার পর হঠাৎই তাঁদের চোখে পড়েছিল বাংলাদেশের একটি চ্যানেল, আর মনে হয়েছিল বাংলা ভিডিও বানালেও মানুষ দেখবে। এ দেশে তখনও ততটা জনপ্রিয় হয়নি ইউটিউব বিষয়টি। তবুও বন্ধুরা মিলে একটা চ্যানেল বানিয়ে ফেললেন বং-টিউবার্স নামে। ফেসবুকে পেজও তৈরি হয় সাথে। তবে, সাফল্য মেলেনি খুব একটা। কলেজের চাপে বন্ধ ও হয়ে যায়।
ফ্রী বা আনলিমিটেড ডেটার জমানা শুরু হওয়ার পর যখন ইউটিউব অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে উঠলো চারদিকে, তখনও তিনি পড়াশুনোর কাজেই ব্যস্ত। ( যদিও মনে করেন তখন বানানো উচিত ছিল।)
তাহলে এই সাফল্য এলো কবে? কিরণের কথায়, কলেজের অন্তিম বর্ষে এসে বুঝতে পারেন, পাশ করলেই চেপে ধরবে চাকরির একঘেয়ে জীবন, তাই তার আগে আরেকটা চেষ্টা করে দেখা যাক।
এরপরই ফেসবুকে পেজ বানিয়ে ফেললেন 'বং নোটিফিকেশন' নামে, যা অল্প সময়েই পেলো বিপুল জনপ্রিয়তা। আর তাকেই নিজের চ্যানেলের প্রচারের প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ব্যবহার করলেন তিনি। বানিয়ে ফেললেন বেশ কয়েকটি বাংলা সিনেমা ও বাংলা গানের রোস্টিং ভিডিও। ফেসবুকের পেজ টি সাহায্য করলো প্রচারে, এবং এই জেনারেশন ও পেলো অবসর যাপনের নতুন উপাদান। আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি কিরণ কে।
তবে, বাড়ি থেকে বরাবরই পেয়েছেন প্রচুর সাপোর্ট, তাঁর মা ও একসময় শুট করে দিয়েছেন ভিডিও। কখনোই চাপ ছিলোনা, ইঞ্জিনিয়ারিং টাই পেশা হিসেবে নিতে হবে। এদিক থেকে নিজেকে লাকি মনে করেন কিরণ। এখন স্পন্সর পান ভিডিওর, কিন্তু যাত্রার শুরুর দিকে, যখন জনপ্রিয়তা ছিলোনা, বাবাই সাহায্য করেছেন।
জনপ্রিয়তার সাথে সাথে কিরণের আছে অনেক মহিলা ফ্যান। তাঁদের প্রশ্ন, কিরণ কি প্রেম করেন? তাঁর উত্তর, স্টেডি গার্লফ্রেন্ড নেই। তাহলে কি বং গাই সিঙ্গল? হাসতে হাসতে বললেন, সেটা লিখলেই লাভ হবে!
যাঁরা কিরণের ভিডিও দেখেন তাঁরা জানেন, কিরণের রোস্ট করার এক অন্যতম উপাদান অভিনেতা দেব। আর তাঁর সঙ্গেই জোট বেঁধে সাম্প্রতিককালে কিরণ বানিয়েছেন এক বিপরীতধর্মী ভিডিও, অর্থাৎ তিনি করছেন দেব এর আসন্ন ছবির প্রচার! তাহলে দর্শকদের কাছে বিশ্বাসযোগ্যতা থাকলো কি? কিরণের উত্তর, ট্রোল করা মানেই ঘেন্না ছড়ানো নয়। আর যে বিষয় গুলো নিয়ে এতদিন মজা করে এসেছেন, এই ভিডিওতে সরাসরি নায়ক কে করেছেন সেই নিয়ে অস্বস্তিকর প্রশ্ন। কাজেই, বিশ্বাসযোগ্যতা হারানোর প্রশ্নই উঠছেনা। তবে, অভিনয় যেমন দেব এর পেশা, তাঁর ও পেশা "রোস্টিং", আর এই একসঙ্গে ভিডিও বানানো তাঁদের কাজের অংশ, এটাও দর্শক কে বুঝতে হবে। তার সঙ্গে কিরণ এও বললেন, তিনিও দেব কে ট্রোল করেন, অথচ দেব তাঁর ভিডিওতে এসে প্রশংসা করেছেন তাঁর। তাহলে দেব ও তো তাঁকে প্রশ্রয়ই দিচ্ছেন! তাহলে সেই জায়গাটাও দর্শকই বিচার করুন।
তবে কি এবার থেকে দেবের হয়ে প্রচার করতেই দেখা যাবে তাঁকে? একেবারেই না, জানালেন কিরণ। বললেন, " আসন্ন সিনেমার প্রচারে যেমন অংশ নিয়েছি, সেই সিনেমা নিয়েই "এ কেমন সিনেমা"ও আমিই বানাবো!"
শুধু দেব নয়, যে সকল তারকাদের নিয়ে ট্রোল করেন তিনি, তাঁদের সাথেই কাজ করার ইচ্ছে আছে তাঁর। কারণ তিনি এটাই প্রমাণ করতে চান, ট্রোল করার অর্থ ব্যক্তিগত ঘৃণা ছড়ানো নয়!
কে কে আছেন এই বাকেট লিস্টে? রাজ চক্রবর্তী? "এবং রঞ্জিত মল্লিক" হেসে যোগ করলেন কিরণ।
পুজো দোরগোড়ায়। তবে পুজোয় কাজ কর্ম দূরে রেখে নিছক আনন্দ করতে চান তিনি, তাই পুজো স্পেশাল ভিডিও ইতিমধ্যেই এসে গেছে তাঁর চ্যানেলে। পুজোর পর আসতে পারে একটি মিউজিক ভিডিও।
প্রচুর ভালোবাসা যেমন পাচ্ছেন, তেমন পাচ্ছেন "হেটার" দেরও। কিরণ মনে করেন, "হেটার" থাকাও প্রয়োজন, কারণ দিনের শেষে তাঁকে নিয়েই আলোচনা করছে তারা! তবে অভিমানের সুরে যোগ করলেন "বাঙালি জাতি কিন্তু বেশ হিংসুটে! আর আগে যখন কেউ সেভাবে এই অফবিট পেশায় আসতেন না, আমাকেই গোটা বিষয়টা বাঙালিকে বোঝাতে হচ্ছে। এটা যে কেবল বিনোদনের জন্য, কোনো ব্যক্তিগত আক্রোশ নয়, সেটা বোঝানোর বড় চাপ রয়েছে কাঁধে।"
সবশেষে জানালেন, এখনো পর্যন্ত এই রাস্তায় যা যা পেয়েছেন, সবই প্রাপ্তির খাতায়, তাই আফশোস বলতে কিছুই নেই।
(সাক্ষাৎকার- উষসী কর
ছবি- সংগৃহীত)
Kiran dar songe dekha korte chai
উত্তরমুছুন