বিসর্জন- সৌভিক মন্ডল
বেশ,এবার না হয়
একটু অন্যরকম গল্পই হোক।আমার কাছে পুজো
মানে নিজের অজান্তে বেশকটা
দিন তোমায় নতুন করে
আঁকড়ে ধরে থাকা আর
বিসর্জনের রাতেই একটা গোটা
বছরের জন্যে তোমায় আবারও
অজান্তে হারিয়ে ফেলা।
আগামী ৩৬৫টা দিন
আমি অফিসের ল্যাব, সিনেমা,
থিয়েটার, মাল্টিমিডিয়া, মঞ্চ-আলো-দর্শক,
সোস্যাল নেটওয়র্ক, এস.এস.সি,
স্ক্রিপ্টের ওঠানামা, হাসপাতাল,কবিতার ডায়েরী, জন্মদিন,
অনির্বানদার অভিনয়, পথের পাঁচালী
থেকে শ্রীজাত-র 'সে আর
আমি', ব্যোমকেশের কয়েকটা কেস সলভের
ওয়েব সিরিজ, সৃজিতের হাউসফুল
ছবি, বার্সেলোনার হয়ে চিৎকার, বিরাট
কোহলির সেঞ্চুরী, মেঘলা দিনে বৃষ্টির
গন্ধ, রিক্রুটমেন্ট, ইনক্রিমেন্ট পাওয়ার লড়াই, জিম
ফেরত ঘেমো শরীর, রাতের
একলা বিছানায় ঠিকরে পরা স্ট্রিট
লাইট, বিয়ার থেকে কাউন্টার,
সিগারেটের ধোঁয়া, নতুন প্রেমের
গল্প, পোড়া মন, স্টেশন
চত্বর, ভ্যালেন্টাইনস ডে,কোনো বন্ধুর
চাকরীর খবর, কোনো বন্ধুর
অন্যরাজ্যে সেটেল হওয়ার খবর
অথবা হঠাৎ কোনো প্রিয়জনের
মৃত্যু.....এই সব কিছু
একএক করে একাই পার
করবো কখনো চোখ খুলে
কখনো বা বুঁজে।
আমি লড়েছি গতবছরেও।চৌকাঠে
দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করি তোমার ফিরে
আসার।এই
পুজোর মরসুমে আমি প্রতিবার
দেখি তুমি একটু একটু
করে বদলে গিয়ে ঘরে
ফেরো।পুজোর
চারটে দিন আমি ছাদে
দাঁড়িয়ে রাতের দিকে ভেসে
আসা অল্প শিরশিরে হাওয়ায়
তোমার শরীরে নতুন পোশাকের
গন্ধ পাই।
আমি
বেশ বুঝতে পারি সে
আমার শহরেই আছে,কয়েকটা
আঁকাবাকা গলি পেরিয়ে ঢাকের
আওয়াজ যেখানে খুব স্পষ্ট
সেখানে তুমি আছো,একা।তোমার
জন্য পুজো উপলক্ষে কিছু
উপহার কিনে লুকিয়ে রাখি,পাছে সেই প্রেমের
আভাস অামার ঘরের দেয়ালও
না টের পেয়ে যায়।কিন্তু
হাতে তুলে দেওয়ার সাহস
পাই না,পাছে তুমি
আমার ভালোবাসা টের পেয়ে যাও।
পুজোর
সন্ধ্যায় বন্ধুদের ভিড়ে, ভিরে যাওয়া
আমার অনেক বেশী শ্রেয়
মনে হয়,কারণ সেই
রাস্তায় আমি তো তোমাকে
পাই,একটার পর একটা
স্ট্রিটলাইটের আলো আমার চোখ
যখন ধাঁধিয়ে দেয় তখন সামনে
তাকিয়ে দেখি তুমি হেঁটে
চলেছ হাসতে হাসতে,কোনো
দ্বিধা নেই,কোনো অভিমান
নেই,কোনো টানাপোড়ন নেই,পিছুটান নেই...আমিও সেই
স্নিগ্ধ সম্পর্কে গা ভাসাই।
ক্রসিং পেরোবার সময়
বিনাকারনে হাত ধরে ফেলা
অনেকটা অভ্যেসবশতই।কানের
পাশে মখমলে চুল সরিয়ে
কখনো বা অজান্তেই ঘুরে
তাকালে আমি মনে মনে
বলতে পারি,"অপূর্ব"।এসব
কথা কবিতার জন্যে নয়,গল্পেরও নয়।আমি
শুধু মুষরে পরি দশমীর
রাতে।একটা
বিদায়ের বাদ্যি কংক্রিটের দেয়াল
পেরিয়ে অামার কানে এসে
সজোরে ধাক্কা দেয়।মা চলে যাচ্ছো।তুমি
চলে গেলে যে আমি
আবার তাকে হারিয়ে ফেলবো।ভাসানের
সময় তোমার জলে ভেসে
যাওয়া কাঠামোর সাথে আমি সব
ক্লান্তি বিসর্জন দিয়ে দি।
যে আয়নায় তোমার
মুখের প্রতিবিম্ব ভেসে ওঠে বিদায়
বেলায় সেই দর্পণে আমি
তাকে দেখতে পাই শেষবারের
মতো। ওরা
ছুঁটে গিয়ে তোমার সব
আভরণ তুলে নিয়ে আসে
জল থেকে।কেউ
তো খালি হাতে ঘরে
ফেরেনি মা।শুধু
আমি ফিরেছি তাকে কোনো
অজুহাতে আরেকবার ছুঁয়ে দেখা অপেক্ষার
অনেকগুলো রাত নিয়ে আর
দেখেছি এক ভাঙ্গা দ্বারঘট
সিঁদুরমেখে গেঁথে আছে গঙ্গাপারের
নরমমাটিতে।তোমার
চোখে জল কেন মা?আমার শহর বছর
ঘুরতে আবার বরণ করবে
তোমাকেই।
জানি,বিসর্জনের কান্না হবে স্থির। আবার এসো মা,ঠিক এমনি ভাবে তাকে সঙ্গে নিয়ে,আমার কাছাকাছি।মা তোর জন্ম যদি হয় আবার কোনো এক শিল্পীর তুলির টানে ফিরিয়ে আনিস তাকে বছর পরে,কথা দেওয়া থাক... এমনই এক বিসর্জনের দিনে॥
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন