সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

"অক্টোবর" ----- Review: একটি সিনেমা দেখে যা মনে হল।



----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------চন্দন চক্রবর্তী

সিনেমা শেষ হওয়ার পর থেকে বাইক চড়ে বাড়ি পৌঁছানো পর্যন্ত আমরা দুজনে কোন কথা বলিনি। কথা বলতে ইচ্ছে করছিল না কিছুই। ছবিটা দু'জনকেই কেমন অদ্ভুতভাবে চুপ করিয়ে দিয়েছিল। কানের কাছে গুনগুন করে উঠছিল একগাদা চুপচাপ মুহূর্ত। 
পাখির পালকের মত নরম করে ছুঁয়ে যাওয়ার নাম যদি ভালোবাসা হয়, যদি পাতা ঝরার দিনে একটি ঝরে পড়া পাতারশব্দের মতন শান্ত হয় প্রেম, অথবা কাপাস তুলোর মত নরম, কিম্বা শিউলি ফুলের ডগাতে জমে থাকা ভোরের শিশির বিন্দুর মত, আলতো করে ছুঁয়ে যায় ভেতরটা, আর ঠিক তখনই ঝড়ে ভেঙে যাওয়া পাখির বাসায় কিচমিচ করে ওঠে হাড়জিরজিরে পুঁচকে পাখির বাচ্চাগুলো!হলুদ ঠোঁটের ডগায় খাবার খাইয়ে দিচ্ছে মা, ঝড় এসে থেমে গেছে মায়ের ওমে। এইরকম অনেকটা,মায়ের মত নরম। সুজিত সরকারের "অক্টোবর "কম কথা বলার ছবি, অনুভবের ছবি।আপনি অতৃপ্ত থাকবেন কিন্তু, প্রেমের নরম শীতল ঠান্ডা বাতাস আলতো করে ছুঁয়ে যাবে আপনার আত্মা। পরিচালক নিপুণ দক্ষতায় মানুষের আবেগ অনুভূতি গুলি কে একসুতোয় গেঁথেছেন খুব ধিরে ধিরে।কোথাও কোনো তাড়া নেই যেন। প্রেম এখানে অনেকটা শিউলির গন্ধের মতো পবিত্র,হল থেকে বেরোনোর পর আপনার চারপাশে সে গন্ধ অথবা ফুল ছড়িয়ে থাকবেই এক শৈল্পিক উষ্ণতায়। এ এক শব্দহীন শান্ত মুখর-নীরবতা।
একটার পর একটা ছবির মত দৃশ্য আপনাকে ভুলিয়ে দেবে অস্থির সময়ের ক্লান্তি। সুজিত সরকারের পরিচালনা আর জুহি চতুর্বেদীর কলম সত্যিই একটা মাস্টারপিস হয়ে থাকবে ভারতীয় সিনেমায়।সিনেমা নয় এটা যেন একটা কবিতা, রঙ তুলি দিয়ে আঁকা নিটোল প্রেমের কবিতা। প্রেম কোনো শব্দ নয়, আড়ম্বর নয়,প্রেম নিশ্চুপ একটা অনুভূতি, প্রেম অনন্ত অপেক্ষার নাম।যত্নের নাম প্রেম।
ছবির গল্পটা শুরু হয় সকালের মেট্রো একটা ব্রিজের উপর দিয়ে চলে যাচ্ছে হালকা কুয়াশা ছড়ানো লাইন ধরে।দিল্লীর এক পাঁচতারা হোটেলে, হোটেল ম্যানেজমেন্ট ইন্টার্নসিপ করছে একদল তরুণ-তরুণী। ড্যান(বরুণ ধাওয়ান) তাদের মধ্যে একজন।
বন্ধুরা তাকে ভালবাসে। কাজের ব্যাপারে সে একদম সিরিয়াস নয়। তার স্বপ্ন,ছমাসের পর ইন্টার্নসিপ শেষ হলে তিন বন্ধু মিলে একটা রেস্টুরেন্ট খুলবে। ওই একই হোটেলে ইন্টার্নসিপ করছে শিউলি আইয়ার (বনিতা সিন্ধু)। আর পাঁচজন বন্ধুর মত খুব স্বাভাবিক সম্পর্ক ড্যানের সাথে শিউলির।বেশ কিছু মজার দৃশ্যের পর এক ডিসেম্বরের রাতে বন্ধুদের নাইট পার্টিতে হঠাৎ নাটকীয় মোড় নেয় ঘটনাটা। যা দেখতে গেলে আপনাকে অবশ্যই সিনেমা ঘরে যেতে হবে।
পিকু, মাদ্রাস ক্যাফে এই সব ছবিকে মাথায় রেখেও আমার মনে হয়েছে অক্টোবর সুজিত সরকারের এখনো পর্যন্ত করা সেরা ছবি। শুনতে খারাপ লাগলেও এটাই ভারতীয় সিনেমার আজকের সত্যি,এই ছবিটি বরুন ধাওনের সব চেয়ে কম টাকার ওপেনিং ছবি কিন্তু বরুন ধাওনের অসাধারণ অভিনয় মনে থাকবে অনেকদিন,বরুন নিজেও খুশি বলে জানিয়েছেন।বদ্রীনাথ কি দুলহনিয়া বা জুড়ুয়া টুয়ের সেই টি শার্ট খোলা বরুন ধাবান কে একদম মেলাতে পারবেন না আপনি এই ছবির ড্যানের সাথে।মারাত্মক ভালো অভিনয় করেছে ছেলেটা। শিউলির চরিত্রে ডেবিউ করা বানিতা সিন্ধু যথেষ্ট পরিণত। চুপচাপ মেয়েটি পলকহীন সুন্দর চোখ দুটি দিয়ে অসাধারণ দক্ষতায় এঁকেছে অস্পষ্ট প্রেম-নীরবতার ছবি।শিউলির চোখ দুটি মাঝেমাঝে আপনাকে কনফিউজড করে দেবে কিন্তু আপনাকে নিরাশ করবেনা কখনো। শিউলির মায়ের চরিত্রে অভিনয় করা গীতাঞ্জলি রাও ভারতের প্রতিটি হাসপাতালে প্রিয়জনের সেরে ওঠার অপেক্ষায় আইসিউর বাইরে বসে থাকা প্রতিটি সাধারণ চরিত্রের মতো অত্যন্ত বাস্তব হয়ে উঠেছে। পার্শ্বচরিত্র গুলি নিজের নিজের জায়গাতে বেশ মানানসই। ছবির মিউজিক!আহা! কি অসাধারণ কাজ করেছেন শান্তনু মৈত্র। ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর নিজেই একটা চরিত্র হয়ে উঠেছে এ ছবিতে,যা আপনাকে বেঁধে রাখবে প্রেমের সুরে,শেষ অবধি ।আর আরেকদিকে! রাতের দিল্লীর রাস্তা দিয়ে বাইক চড়ে ড্যানের ওষূধ আনতে যাওয়ার দৃশ্যটা, প্রতিটি ঋতু পরিবর্তনের সাথে সাথে প্রকৃতির চেঞ্জগুলি , মাটিতে ঝরে পড়া শিউলির ফুলগুলি পরম যত্নে একটা একটা করে তুলে নেওয়ার দৃশ্যটা, শিউলির চোখের-কালোর মুভমেন্ট আর বিস্তীর্ণ কুলুর আঁকাবাকা পথে হেমন্তের আগমন কী নিপুণ দক্ষতাই ক্যামেরাবন্দি করেছেন অভীক মুখোপাধ্যায় না দেখলে বিশ্বাস করতে পারবেন না। ছবির এইসব ডিটেলিং অজান্তে, খুব সন্তর্পণে ছুঁয়ে যাবে একদম মনের গভীরে, আপনার অনুমতি না নিয়েই,আর এখানেই এই সিনেমাটির স্বার্থকতা। ঋতু আসে ঋতু যায়। আবার আসে অক্টোবর। রূপক ধর্মী এই ছবিতে শিউলি ফুল একটি মুখ্য চরিত্র। অক্টোবর মাসে ফুলেফুলে ভরে যায় শিউলির ডাল, কিন্তু বেশিদিন থাকে না সে গাছে। ঝরে পড়ে মাটিতে মাটিতে। তাই শিউলি কে কেও কেও "দুঃখের গাছ" বলে ডাকে। সিনেমাতে দুঃখ এসে পড়ে স্বাভাবিকভাবেই,কিন্তু এ দুঃখ আর পাঁচটা দুঃখের মত নয়। সিনেমা শেষে হয়ত একটা কষ্ট হবে মনের গভীরে, কিন্তু এই কষ্ট আনন্দ দেয় নাকি দুঃখ দেয় আপনি ঠিক করে উঠতে পারবেন না। এ দুঃখ পবিত্র করবে অন্তরাত্মা,ভালোলাগায় ভরে যাবে মনের মানুষ।
ভ্যানের পিছনে চড়ে চলে যাচ্ছে শিউলির গাছটা।পাতাগুলো নড়ছে একটু ডাইনে-বাঁয়ে। ড্যান আঁকড়ে ধরে নিয়ে যাচ্ছে শিউলিকে পরম যত্নে।আর আপনি?একএক করে কুড়িয়ে নিচ্ছেন একএকটা ফুল,একটু একটু যত্নে জমাথাকা ভিতরের প্রেমগুলো জীবন্ত হয়ে মুছে দিচ্ছে দিনরাতেএ যান্ত্রিকতা ।জামা, প্যান্ট, শাড়ি, জিন্সে শিউলির গন্ধ মাখামাখি হয়ে হল ছেড়ে বেরিয়ে হয়ত আর কথা বলতে ইচ্ছে করবে না আপনারও।নৈঃশব্দ্য যদি নিয়ে আসে প্রেম -আসুক তবে।আপনার কানের কাছে গুনগুন করুক খাঁমোসিয়াঁ।চলতে থাকুক সুজিত সরকারের ক্যামেরা। ভরে উঠুক হেমন্তের সবকটা গাছ,প্রতিবেশির সবকটা রাস্তা শান্তনুর সুরে। জুহি চতুর্বেদী কলম থেকে বেরিয়ে আসুক হাজার প্রেমের গান। এই অস্থির সময়ে, এই ভয় পাওয়ার সময়ে এই কুঁকড়ে থাকার সময়ে প্রেম আরও প্রেম আসুক যুবকটির প্রাণে।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ভূতে ভয় পেলেও, ‘ সেক্সি ভূত’-এর চরিত্রে অভিনয় করতে ভয় পাননি সায়ন্তনী

টলিউড ডিভা সায়ন্তনী গুহঠাকুরতা ডেবিউ করে ফেললেন দক্ষিণী সিনেমায়। যদিও কিছুদিন আগেই তিনি আটপৌরেকে সে ব্যাপারে জানিয়েছিলেন। কিন্তু সম্প্রতি এই হোলিতে সিনেমাটি রিলিজ করার পর থেকেই তিনি খবরের শিরোনামে। যদিও তার কারণ, তিনি এই প্রথম একটি ভূতের চরিত্রে অভিনয় করেছেন। শুধু তাই নয়, একটি ‘ সেক্সি’ ভূতের চরিত্রে এবং তাঁকে নিয়েই গল্পটা গড়ে উঠেছে।  সিনেমার নাম, ‘ চিকাটি গাডিলু চিঠাকোটুন্ডু’। তেলেগু সিনেমায় কাজ করে বেশ উচ্ছ্বসিত সায়ন্তনী। এখানেই শেষ নয়, তেলেগু ইন্ড্রাস্টির ভূয়সী প্রশংসা করেছেন তিনি। তাঁদের কাজের ধরন তাঁর বেশ পছন্দ হয়েছে । ইতিমধ্যে আরও একটি দক্ষিণী সিনেমার প্রস্তাবও পেয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। গল্পটিতে দেখা যায় দুই যুগল জুটি ছুটি কাটাতে গিয়ে আটকে যায় একটি ভৌতিক বাড়িতে।  সেখানে তারা একটি সেক্সি ভূতের পাল্লায় পরে। তারপর গল্প আস্তে আস্তে অন্যদিকে মোড় নেই।  সায়ন্তনী আটপৌরেকে জানালেন , ‘’ আমাকে অনেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় মেসেজ করে এই সিনেমার ব্যাপারে জানিয়েছেন! তাঁদের আমার চরিত্রটাও ভাল লেগেছে।‘’ ‘’ আপনাকে কেউ যদি রিয়েল লাইকে সেক্সি বলেন, সেটা আপনি কীভাব...

হেমন্তের উষ্ণ পরশ মিশিয়ে তালমায় ফিরল রোমিও জুলিয়েট, ঠোঁটে ঠোঁটে ' ফুল বডি রিলাক্স'

  আদিত্য ঘোষ, কলকাতাঃ বাংলার রোমিও জুলিয়েটরা দর্শককে রাত জাগিয়ে ওয়েব সিরিজের প্রতিটা পর্ব দেখতে বাধ্য করেছে। শুধু তাই নয়, দুই নবাগত অভিনেতা অভিনেত্রী  বাংলা সিরিজের মুখ্য চরিত্র হয়ে উঠেছে। বাংলা বাজারে ভাল সিনেমা বা ওয়েবের কদর আরও একবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখানোর চেষ্টা করেছে পরিচালক অর্পণ গড়াই। ক্যামেরার পিছনে এবং সামনে আরও একবার উজ্জ্বল ভূমিকার অবতীর্ণ হয়েছেন বাংলা সিনেমার  'ডন' অনির্বাণ ভট্টাচার্য। তবুও তালমার রোমিও এবং জুলিয়েট যথাক্রমে দেবদত্ত এবং হিয়া বাঙালি দর্শক মননে মিষ্টি প্রেমের উপাখ্যান হয়ে থেকে যাবে চিরকাল। যেখানে একটা সহজ সরল প্রেমকে স্রেফ টুকে দেওয়া হয়েছে সিনেমার পর্দায়। কোনও বাড়তি অলঙ্করণ নেই। কোনও উপমা-উপঢৌকন নেই। স্রেফ জীবনকে পর্দায় দেখালে যেমন মনে হয় ঠিক সেইরকম।  অভিনেতা দেবদত্ত রাহার হাতেখড়ি থিয়েটারের অভিনয় দিয়ে। তবে এই মুহূর্তে তিনি মঞ্চ থেকে বহুদূরে। তিনি আটপৌরেকে ফোনে জানালেন যে, ' থিয়েটার ছেড়েছি প্রায় তিন বছর, এখন বড় পর্দায় কাজ করার জন্য মুখিয়ে আছি। বেশ কিছু সিরিয়ালের প্রস্তাব পেলেও এই মুহূর্তে সিনেমা বা ওয়েব সিরিজের অভিনয়ের জন্যই ফোকাস করছি।' মফঃস...

রোগ চিনে নেওয়ার বিভিন্ন উপায় বাতলে দিচ্ছেন ডাক্তার সোমনাথ বিশ্বাস

হৃদয়ঘটিত বিভিন্ন রোগের অশনিসংকেত বুঝবেন কী করে-( পর্ব ১) খাই খাই বাঙালির বুকে ব্যথা হবে না, এও কি সম্ভব? যুগে যুগে বাঙালি জাতি নিজেরাই ডাক্তারি করে মোটামুটি বুঝে নিয়েছে বুকে একটু-আধটু ব্যথা মানেই ওটা গ্যাসের সমস্যা। আসলে বাঙালি জাতি এটা মানতেই অস্বীকার করে যে বুকে ব্যথা হৃদয় ঘটিত বিভিন্ন কারণে হতে পারে। সেটা অনেক সময় হার্ট এট্যাক এর লক্ষণও হতে পারে। উঁহু, অযথা ভয় পাওয়ার জন্য নয় এই লেখা নয়। উপরন্তু এই লেখা শুধুমাত্র একটা প্রাণ বাঁচানোর জন্য। তবে ডাক্তার বাবু বিশ্বাস মহাশয় কফি খেতে খেতে কহিলেন, " আধুনিক জীবনে আমি একটা স্মার্ট ওয়াচ ব্যবহার করতে পারলে, বুকে হঠাৎ ব্যথা হলে একটা ইসিজি করিয়েও দেখতে পারি। আমরা যদি বুকে ব্যথা ব্যাপারটা চেপে যায় তাহলে আর কি আধুনিক হলাম, তাহলে চিকিৎসা বিজ্ঞানের এত উন্নতি হয়ে লাভ কোথায়?" কফির কাপে চুমুক দিয়ে ডাক্তার বিশ্বাস আরও জানালেন যে, " আমাদের বুঝতে হবে চিকিৎসা বিজ্ঞান অনেকটা এগিয়েছে, তার সঙ্গে আমাদেরও এগোতে হবে। বুকে ব্যথা মানেই গ্যাস এবং সঙ্গে সঙ্গে একটা গ্যাসের ওষুধ খাওয়া মানেই সমস্যার শেষ এটা ভাবা একদমই বুদ্ধিমানের কাজ হবে না।" একটু...