বাঙালি তো নিজেই ডাক্তার। সব বিষয়ে বাঙালি ডাক্তারি করতে অভ্যস্ত। বহুযুগ ধরেই সবজান্তা বাঙালি ডাক্তারিটা নিজের মতো করে নিয়েছে। আর এই ইন্টারনেটের যুগে তো আরও বাড়বাড়ন্ত শুরু করেছে। গুগুল ঘেঁটে ডাক্তারি করতে এখন সবাই পটু। বিশিষ্ট চিকিৎসক শাশ্বত সাহা আটপৌরের মুখোমুখি হয়ে জানালেন যে, " বিষয়টা এখন সবার কাছেই খুব সহজ। ইন্টারনেটের সাহায্যে সবাই সবকিছু জেনে যাচ্ছে, তবুও খুব স্বাভাবিক ভাবেই গোড়ায় গলদ থেকে যাচ্ছে। কোনটা কীসের রোগ অথবা কোনটা কীসের ওষুধ সেটা না বুঝে মুঠো মুঠো খেয়ে ফেলছি। যেটা পরবর্তী কালে বিপদের কারণ ডেকে আনছে।"
জিজ্ঞাসা করলাম, " আমাদের স্বাস্থ্য কাঠামো তো অনেক উন্নতি করেছে, তবুও গলদ থাকছে ?" ডাক্তারবাবু জানালেন, " স্বাস্থ্য কাঠামো উন্নতি করেছে ঠিকই তবে একদম প্রাথমিক স্তরে স্বাস্থ্য কাঠামো বেশ নড়বড়ে। টায়ার ১, টায়ার ২, টায়ার ৩, টায়ার ৪ এইরকম স্তরে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে ভাগ করা হয়। টায়ার ১ হলো একদম ব্লক স্তরের হেল্থ সেন্টার। যেখানে একদম খুব প্রাথমিক স্তরের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে চর্চা হয়। টায়ার ২ তার উপরে, টায়ার ৩ বলতে যে কোনও জায়গার স্টেটে জেনারেল হাসপাতাল এবং তার উপরে টায়ার ৪ মানে কলকাতা মেডিকেল কলেজ! সমস্যাটা হলো এই টায়ার ১ থেকে টায়ার ৩ অবধি একটা বিরাট ফাঁক থাকে যার জন্য সব ভিড়টা টায়ার ৪-এসে পড়ে।" ডাক্তারবাবুকে আবার জিজ্ঞাসা করলাম," মানুষ কী রোগ সম্বন্ধে আরও সচেতন হয়েছে?" ডা. শাশ্বত সাহা জানালেন," ব্যাপারটা বলা মুশকিল। তবে চিকিৎসা বিজ্ঞান এখন খুব উন্নত এবং প্রমাণ ভিত্তিক। সেই খাতিরে বলতে গেলে সাধারণ মানুষ এখন চিকিৎসা বিজ্ঞান নিয়ে সচেতন। তবে আরও সচেতনার প্রয়োজন আছে।" একটু থেমে তিনি আরও জানালেন, " এককালে কম বয়সে প্রচুর হার্ট এট্যাক হয়েছে, কিন্তু তখন চিকিৎসা ব্যবস্থা এত উন্নত ছিল না বলে জানতে পারা যেত না। ওই যে এখন লোকে বলে কম বয়সে এত হার্ট এট্যাক কেন হয়, আসলে ব্যাপারটা চিরকালই হয়ে আসছে। তখন কোনও প্রমাণ ছিল না।"
জিজ্ঞাসা করলাম , " হার্ট এট্যাক তো এখন মারণ রোগগুলোর মধ্যে এখন সবচেয়ে ভয়ানক।" ডাক্তারবাবু বললেন, " মোটেও নয়। এমন অনেক রোগই আছে যা এখন মারণ রোগের মধ্যে পড়ে। আমরা শুধু হার্ট এট্যাক জানি। ওটাই আমাদের গন্ডি হয়ে গিয়েছে। আমাদের জানার পরিধি ছোট হয়ে গিয়েছে।"
ডাক্তারবাবু আরও জানালেন, " আমাদের লাইফ স্টাইল এমন হয়ে গিয়েছে যেটা আমাদের শরীর খারাপের পিছনে অন্যতম কারণ। যতটা সম্ভব আমাদের প্রতিদিন নিয়ম করে ব্যায়াম করা। সঠিক খাদ্য গ্রহণ করা কিংবা ডায়েটিশানের সঙ্গে যোগাযোগ করা। কারণ আমরা ঠিক কতটা খাবার খাবো সেটা আমরা বুঝতে পারি না। আর একজন ডাক্তারের জন্য রোগ নির্ণয়ের পাশাপাশি খাদ্যতালিকা ঠিক করে দেওয়াটা একটু সমস্যার। ইদানীং যেমন অনেকেই জিম করতে গিয়ে মারা গিয়েছেন, তাই সঠিক ট্রেনার ছাড়া জিম না করা উচিত।"
সবশেষে ডাক্তারনাবু জানালেন, " সুস্থ থাকা ব্যাপারটা পুরোটাই নিজের ওপর। তাই শরীর বুঝে ব্যবস্থা নিন। প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।"
(সাক্ষাৎকার- আদিত্য ঘোষ)
শাশ্বত দাস
(এম.বি.বি.এস)
(জুনিয়র রেসিডেন্সি,পোস্ট গ্রাজুয়েট ট্রেনি) জেনারেল সার্জারি
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন