সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

আটপৌরের মুখোমুখি ডা.সোমনাথ বিশ্বাস


 ঝরা বসন্তের এই প্রাক মরশুমে বাঙালির প্রেম জাগে, পুরোনো প্রেম নতুন করে কিংবা নতুন প্রেম আরও নতুন করে পাওয়ার তাগিদ এই সময়ে বেড়ে যায়। একটা হালকা হাওয়া বয়ে আসে, আর এই হালকা হাওয়াতেই বাসা বাঁধে বিভিন্ন রোগ! গলা খুশখুশ থেকে শ্বাসনালীর  বিভিন্ন সমস্যা এই সময়টাই লেগে থাকে। তাই ঝরা বসন্তে শুধু বাঙালির প্রেম নয়, শরীর খারাপেরও ভূত চাপে! 


বিশিষ্ট চিকিৎসক ডা. সোমনাথ বিশ্বাস আটপৌরের মুখোমুখি হয়ে জানালেন যে, " এই সময়টা একটু সাবধানে থাকলে ভাল হয়। ঠান্ডা-গরমের এই খামখেয়ালিপনা অনেকেরই সহ্য হয় না।" জিজ্ঞাসা করলাম, " এই সময়ে সুস্থ থাকতে আপনি কী পরামর্শ দেবেন?" ডাক্তারবাবু একটু ভেবে বললেন, " আসলে ব্যাপারটা খুব জটিল।" একটু থেমে ডাক্তারবাবু আবার বললেন, " কার কী সমস্যা আছে সেটা আগে থেকে জানা দরকার। তবে খুব সাধারন কিছু ব্যাপার যেমন  ঠান্ডা না লাগানো, ঘাম না বসে যাওয়া এইগুলো একটু নজর দিতে হবে। এই মুহূর্তে বাইরে বেরোলে মাস্ক পরলে ভাল হয়। অনেকেরই এই ধুলো-ধোঁয়ায় সমস্যা হয়। প্রতিদিন উষ্ণ জলে গার্গেল করা, ভেপার নেওয়া এগুলো করলে ভাল হবে। তবে বুকে যদি কফ বসে যায় কিংবা কাশি যদি ক্রমাগত হতে থাকে এবং সেটা অনেকদিন পর্যন্ত না কমে তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া ভাল। কারণ সেটা সাধারণ কাশি নাও হতে পারে। টিবি কিংবা নিউমোনিয়া কিংবা অন্যকিছুও হতে পারে। " 

জিজ্ঞাসা করলাম, " অনেকেই তো অল্প কাশি কিংবা বুকে কফ জমলে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়াই ওষুধ খেয়ে ঠিকও হয়ে যায়। কী বলবেন?" ডাক্তারবাবু জানালেন, " সেটা ভাল। কিন্তু আমরা বারবারই বলি নিজে ডাক্তারি করতে না। কারণ ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া আমরা অনেকেই আমরা এমন কিছু ওষুধ খেয়ে নিই যেগুলো শরীরে এমন প্রতিরোধ গড়ে তোলে যা পরবর্তীকালে সেই ওষুধ খেলে আর কাজই করবে না। তখন সমস্যা হয়। যেমন প্রচুর অ্যান্টিবায়োটিক আমরা মুঠোমুঠো খেয়ে ফেলি স্রেফ অমুক-তমুকের কথায়, যার ফলে একটা সময়ে সেগুলো শরীরে কাজ করে না। বডি ওগুলো রেসিস্টেন্স করে নেয়। শুধু তাই নয় কাশি হলেই দোকানে গিয়ে কাফ সিরাপ চাই বললেই কাফ সিরাপ দিয়ে দেওয়া হয়। দেখা হয় না কাশিটা কেমন, ড্রাই কাফ না প্রোডাক্টিভ কাফ। শুধু তাই নয় অ্যান্টিএলার্জির ওষুধের সঙ্গে অনেক রকমের অ্যান্টিবায়োটিক খেতে নেই। খেলে অনেক রকমের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই ডাক্তারের পরামর্শ জরুরী।" 


জিজ্ঞাসা করলাম, "  শ্বাসনালীর সমস্যার ভোগেন এমন মানুষের সংখ্যা প্রচুর, দিনে দিনে এই সংখ্যা বাড়ছে। কেন?" সোমনাথ জানালেন, " বাতাসে দূষণের মাত্রা ক্রমশ বাড়ছে। শুধু তাই ধূমপান-এর জন্য কিছুটা দায়ী। এইসবের হাত থেকে বাঁচার উপায় একমাত্র ধূমপান থেকে বিরত থাকার এবং বাইরে গেলে মাস্ক ব্যবহার করা।" 


আবারও জিজ্ঞাসা করলাম, " এই মরশুমে ঠিক থাকার কিছু উপায় আছে?" তিনি বললেন, " ওষুধ তো অনেক আছে তবে সেগুলো পেশেন্ট না দেখে দেওয়া যাবে না। তবে সাধারণ ঘরোয়া পদ্ধতিতে সুস্থ থাকতে তুলসী পাতা, মধু, কারা এইসব খাওয়া যেতেই পারে। এককালে রবীন্দ্রনাথ কিন্তু ঘরোয়া পদ্ধতিতে অনেক চিকিৎসা করেছেন। তাঁর লেখা অনেক চিঠি পত্রের মধ্যে আমরা এইসবের উল্লেখ পেয়েছি। যেমন তিনি একবার বলেছিলেন যে এমন সময়ে ইনফ্লুয়েঞ্জার হাত থেকে বাঁচতে তিনি তাঁর ছেলেদের পঞ্চতিক্ত খায়িয়ে ছিলেন। পঞ্চতিক্ত আসলে নিমপাতা,গুলঞ্চ, তেউড়ি,নিসিন্দা এবং থানকুনি পাতার মিশ্রণ।" 


একটু থেমে তিনি আবার বললেন, " তবে সব ক্ষেত্রে নিজে ডাক্তারিটা না করাই ভাল। সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে এখন সবাই অমুক-তমুক খবরের ওপর ভিত্তি করে ওষুধ খেয়ে নেয় কিংবা অমুক তমুক টোটকার ওপর নির্ভর করে। এগুলো ভ্রান্ত ধারণা। তাই সচেতন থাকতে হবে।সঠিক পরামর্শ নিতে হবে" 


সবশেষে তিনি আরও জানালেন, " অযথা চিন্তা করার কোনও দরকার নেই। এই মরশুমে সবারই একটু আধটু ঠান্ডা গরম লেগেই থাকে। তাই সচেতন থাকুন। প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।"

(ডা. সোমনাথ বিশ্বাস

এম.বি.বি.এস(ডাবলু.বি.ইউ.এইচ. এস)

স্পেশাল ইন্টারেস্ট ইন চেষ্ট মেডিসিন , ক্রিটিক্যাল কেয়ার।)

(সাক্ষাৎকার- আদিত্য ঘোষ

ছবি- সংগৃহীত)

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

"যোগাসনের বিকল্প কিছু নেই" :শিবগঙ্গা টিঙ্কু গঙ্গোপাধ্যায়

  আজকাল সুস্থ থাকার জন্য আমরা বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করে থাকি। ইদানীং কালে খুব কম বয়সে হৃদরোগের কিংবা ডায়াবেটিসের সমস্যা থেকে আরও জটিল প্রাণঘাতী রোগ আমাদের শরীরে বাসা বাঁধছে। প্রতিদিন সময়ের তালে ছুটে চলার তাগিদে আমাদের জীবন ক্রমশ কঠিন হয়ে উঠেছে। আর এই কঠিন সময়ে শরীরচর্চার যে সময়টুকু পাওয়া যায়, আমরা অনেকেই জিমে গিয়ে ভারী ভারী লোহালক্কর তুলে থাকি আবার অনেকেই ভোরবেলা হেঁটে থাকেন। প্রাচীন কাল থেকে যোগঅভ্যাস আর প্রাণায়ামের সুখ্যাতি আছে। অনেকেই অভ্যাস করে থাকেন। অনেকের জীবনে   বদলে দিয়েছে যোগঅভ্যাস। তবে জিম না যোগঅভ্যাস এই নিয়ে তুমুল তর্কবিতর্ক আছে। নাকি শুধুমাত্র হাঁটলেই মিলবে অনেক রোগ থেকে মুক্তি? তর্ক চলবেই। অনেক বিশেষজ্ঞরা অনেক পরামর্শ দিয়েই থাকেন তবে কোভিড পরবর্তী সময়ে যোগঅভ্যাসের একটা বিরাট প্রচলন শুরু হয়েছে। বিশেষত একটা সময় বয়স্করা প্রতিনিয়ত যোগঅভ্যাস করে থাকলেও ইদানীং সববয়সীদের মধ্যে এই প্রচলন দেখা যাচ্ছে। যোগব্যায়াম বিশেষজ্ঞ শিবগঙ্গা টিঙ্কু গঙ্গোপাধ্যায় আটপৌরের মুখোমুখি হয়ে জানালেন যে," যোগব্যায়ামের বিকল্প কিছু নেই। প্রাণায়াম এবং যোগব্যায়াম একজন মানুষকে সম্পূর্নরূপে বদলে দিত...

হেমন্তের উষ্ণ পরশ মিশিয়ে তালমায় ফিরল রোমিও জুলিয়েট, ঠোঁটে ঠোঁটে ' ফুল বডি রিলাক্স'

  আদিত্য ঘোষ, কলকাতাঃ বাংলার রোমিও জুলিয়েটরা দর্শককে রাত জাগিয়ে ওয়েব সিরিজের প্রতিটা পর্ব দেখতে বাধ্য করেছে। শুধু তাই নয়, দুই নবাগত অভিনেতা অভিনেত্রী  বাংলা সিরিজের মুখ্য চরিত্র হয়ে উঠেছে। বাংলা বাজারে ভাল সিনেমা বা ওয়েবের কদর আরও একবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখানোর চেষ্টা করেছে পরিচালক অর্পণ গড়াই। ক্যামেরার পিছনে এবং সামনে আরও একবার উজ্জ্বল ভূমিকার অবতীর্ণ হয়েছেন বাংলা সিনেমার  'ডন' অনির্বাণ ভট্টাচার্য। তবুও তালমার রোমিও এবং জুলিয়েট যথাক্রমে দেবদত্ত এবং হিয়া বাঙালি দর্শক মননে মিষ্টি প্রেমের উপাখ্যান হয়ে থেকে যাবে চিরকাল। যেখানে একটা সহজ সরল প্রেমকে স্রেফ টুকে দেওয়া হয়েছে সিনেমার পর্দায়। কোনও বাড়তি অলঙ্করণ নেই। কোনও উপমা-উপঢৌকন নেই। স্রেফ জীবনকে পর্দায় দেখালে যেমন মনে হয় ঠিক সেইরকম।  অভিনেতা দেবদত্ত রাহার হাতেখড়ি থিয়েটারের অভিনয় দিয়ে। তবে এই মুহূর্তে তিনি মঞ্চ থেকে বহুদূরে। তিনি আটপৌরেকে ফোনে জানালেন যে, ' থিয়েটার ছেড়েছি প্রায় তিন বছর, এখন বড় পর্দায় কাজ করার জন্য মুখিয়ে আছি। বেশ কিছু সিরিয়ালের প্রস্তাব পেলেও এই মুহূর্তে সিনেমা বা ওয়েব সিরিজের অভিনয়ের জন্যই ফোকাস করছি।' মফঃস...

শীতের শহরে পারদ বাড়িয়ে দিলেন সায়ন্তনী, কালো পোশাকে ছড়িয়ে দিলেন মায়া

  শীতের ছুটিতে ছুটি কাটিয়ে ফিরলেন অভিনেত্রী সায়ন্তনী গুহঠাকুরতা। দক্ষিণ গোয়াতে জলকেলি করলেন উষ্ণতার সঙ্গে।  তাঁর কালো পোশাক পরিহিত ছবি মায়া ছড়িয়েছে সমাজমাধ্যম জুড়ে। এই শীতে তাঁর উষ্ণ ছবি শহর কলকাতার পারদ বাড়িয়ে দিয়েছে।  তাঁর এই গোটা ভ্রমণ স্পন্সর করেছিল ফার্ন হোটেল এবং ক্লিয়ারট্রিপ।  তাঁর ঝুলিতে একের পর এক হিট ছবির সারি। 'সমান্তরাল', 'উমা', 'এক যে ছিল রাজা'  কিংবা 'লালবাজার' মতো ওয়েব সিরিজে তাঁর সাহসী অভিনয় দর্শকদের কাছে তাঁর চাওয়া-পাওয়াটা বাড়িয়ে দিয়েছে। শুধু বড় পর্দায় নয়, ছোট পর্দায় 'কিরণমালা', 'জয়ী', 'সাত ভাই চম্পা'-এর মতো কাজ দর্শক আজও মনে রেখেছে। তিনি আগের চেয়ে অনেক পরিণত, অনেক বেশি কাজ নিয়ে বদ্ধপরিকর। অভিনেত্রী সায়ন্তনী গুহঠাকুরতা এখন শুধুমাত্র ভাল কাজের জন্য মুখিয়ে আছেন। মুখিয়ে আছেন বাংলা ইন্ডাস্ট্রিকে সুপারহিট কাজ দিতে। শুধু বাংলা কেন, বাংলা ছাড়াও বাকি ইন্ডাস্ট্রি যেমন হিন্দি কিংবা সাউথ ইন্ডাস্ট্রিতেও ভাল চরিত্রে কাজ করতে  তিনি প্রস্তুত। এছাড়াও তাঁর ঝুলিতে রয়েছে মায়া - এর মতো হিট বাংলা ছবি।  ত্রিভুজ রিলিজ করতে চলেছে আর কিছু...