বিগত কয়েক মাস ধরে এই শহরে বাসা বেঁধেছে ভয়, একের পর এক রোগ থাবা বসছে তিলোত্তমার বুকে। আমাদের খুব চেনা অসুখ অচেনা হয়ে গিয়েছে, মৃত্যুও হয়েছে কিছু। জলবসন্ত কিংবা চিকেন পক্স-এর ইতিহাস কে না জানে। তবুও শহরবাসী কিছুটা হলেই ভীত এবং সন্ত্রস্ত! বিগত কয়েকটা মাসে চিকেন পক্সে মৃত্যু দেখেছে শহরবাসী। সংখ্যা দুই অঙ্কের ঘর ছাড়িয়েছে। আর আক্রান্ত তো অনেকেই। হয়ত তার হিসেব নেই। কিন্তু এ তো কিছু নতুন নয়, প্রতিবছরই তো অনেকই আক্রান্ত হচ্ছেন। তবুও একটা ভয় বাসা বেঁধে আছে মনে। আটপৌরের মুখোমুখি হয়ে বিশিষ্ট চিকিৎসক প্রীতম বোস জানালেন, " এতে ভয়ের কিছু নেই। এটা খুব সাধারন একটা অসুখ যা সামান্য কিছু নিয়ম মানলেই সেরে যায়।"
ডাক্তারবাবুকে একটু থামিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, " চিকেন পক্সের কী বিশেষ কোনও লক্ষণ থাকে?" ডাক্তার বোস জানালেন, " অবশ্যই থাকে। গায়ে লাল লাল ফুসকুড়ি বেরোয়। চুলকায় এবং ফুসকুড়ি জায়গায় ব্যথা থাকতে পারে। অনেকের ক্ষেত্রে হালকা থেকে মাঝারি মাপের জ্বর থাকে। অনেক সময় অনেকের পেট খারাপও হতে পারে। অনেক সময় খিদে কমে যায়। এই সমস্ত সমস্যা দেখা দিতে পারে।"
একটু থেমে ডা. প্রীতম বোস বললেন, " এই অসুখটা সম্পূর্নভাবেই ছোঁয়াচে। বাতাসের মাধ্যমে কিংবা সেই রোগীর সংস্পর্শে আসলে এই রোগ হতে পারে। তাই এই রোগ হলে তেমন চিন্তা করার কিছু নেই। অনেকেরই ক্ষেত্রে দশ দিনের মাথায় রোগী সুস্থ হয়ে যেতে পারে আবার অনেক ক্ষেত্রে প্রায় তিন সপ্তাহ সময় লেগে যেতে পারে।"
ভ্যারিসেলা জোস্টার চিকেন পক্স রোগের ভাইরাস। তবে প্ৰচলিত কিছু ধ্যানধারণা ভেঙে ডাক্তার বোস বললেন," এই সময়টা অনেকেই রোগীকে আলাদা রাখেন। অনেকে আবার মশারীর মধ্যে রুগীকে রাখেন। যেটা খুব ভাল। কারণ এটা ছোঁয়াচে রোগ। তবে অনেকেই এই সময়টা বাড়িতে রুগীকে নিরামিষ কিংবা সেদ্ধ খাওয়ান। এটা একদম করবেন না। এই সময়টা আমাদের ইমিউনিটি একটু দুর্বল থাকে তাই বেশি করে প্রোটিন জাতীয় খাবার খাওয়ানো উচিত। মাছ-মাংস-ডিম পাতে থাকা জরুরী।"
জিজ্ঞাসা করলাম," কাদের এই চিকেন পক্সে সাবধান হওয়া জরুরী?" ডাক্তারবাবু জানালেন," যাদের ইমিউনিটি একটু দুর্বল কিংবা যাদের কোমর্বিডিটি আছে তাদের। তবে এছাড়া ভয়ের তেমন কিছু নেই। প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসা শুরু করলে কোনও চিন্তার নেই। এখন অনেক এন্টি-ভাইরাল মেডিসিন আছে যা সহজেই এই চিকেন পক্সের মোকাবিলা করতে সক্ষম।"
ডাক্তারবাবু আরও জানালেন যে, " রোগীর ব্যবহৃত জিনিসপত্র কেউ যেন না ব্যবহার করে। রোগীকে ডাক্তারের পরামর্শ মেনে স্নান করা উচিৎ। তরল ভরা ফোস্কা বেশী না চুলকোনো ভাল। প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শে বিভিন্ন লোশন ব্যবহার করা যেতে পারে।"
ছোট বয়সে যাদের ভ্যাকসিন নেওয়া আছে তাদের চিন্তার বিষয় তেমন নেই বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞ মহল তবে অন্তঃস্বত্ত্বা মহিলা কিংবা যাদের এলার্জি আছে তাদের এই ভ্যাকসিন দেওয়া হয় না। মৃত্যু প্রসঙ্গে ডাক্তারবাবু জানালেন, " আসলে যাদের এই চিকেন পক্সে মৃত্যু ঘটেছে তাদের মধ্যে অধিকাংশ রোগীই কোনও না কোনও সমস্যা ছিলই। আর কিছু ক্ষেত্রে অনেক দেরিতে চিকিৎসা শুরু হওয়াতে এমনটা ঘটেছে। তবে অনেক ছোট শিশুদের ক্ষেত্রে ডাক্তার না দেখিয়ে ওষুধ খাওয়া একদমই উচিত নয়।"
(ডাক্তার প্রীতম বোস
এমবিবিএস, অনার্স এসিআইডিএম (ইউকে)
আহমেদপুর হাসপাতালের মেডিক্যাল অফিসার
সাক্ষাৎকার-আদিত্য ঘোষ)
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন