সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

মাত্র আড়াই মাসের চেষ্টায় ডাবলুবিসিএস


আদিত্য ঘোষ, কলকাতা:

সব রূপকথা গল্পে হয় না। কিছু রূপকথা বাস্তবে থেকে যায়। থেকে যায় বেঁচে থাকার গল্পেরা। বিজ্ঞানী হওয়ার স্বপ্ন থেকে প্রশাসনিক আমলা, হয়ত মনে হবে ছিটকে পড়ার গল্প কিন্তু বাস্তবে তা রসদ জোগায় এগিয়ে যাওয়ার জন্য। সৌম্যা শীল তেমনই এক ছিটকে পড়া গল্পের একজন।

দিল্লিতে বেড়ে ওঠা সৌমার জীবনে স্বপ্ন ছিল বিজ্ঞানী হতে। উদ্ভিদ বিজ্ঞানের ছাত্রী সৌম্যা জীবনের মোড় ঘোরে তাঁর জীবনের প্রেম ভাঙার পর থেকে। ধীরে ধীরে একাকীত্ব গ্রাস করে তাকে। নিমিষে কিছু স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে যায়। বিদেশে যাওয়ার স্বপ্নও থমকে যায়। বাসা বাঁধে জটিল রোগ। কানের শোনার সমস্যা ধীরে ধীরে তাকে ব্যাকফুটে নিয়ে যেতে শুরু করে। দিশেহারা সৌমা একটি চাকরি খুঁজতে থাকেন। পড়াশুনা করেন ইউপিএসসির জন্য। তবে সেখানেও বাসা বাঁধে শরীর। শারিরীক অসুস্থতার জন্য আবারও তাঁকে অপেক্ষা করতে হয় বাউন্ডারির সাইড লাইনে। তবে সেই অপেক্ষা বেশীদিন করতে হয়নি। মাত্র আড়াই মাসের পড়াশুনার জোরে তিনি পশ্চিমবঙ্গ সিলিভ সার্ভিস পরীক্ষা পাশ করেন। হয়ে উঠেন গ্রেড ওয়ান অফিসার।



চাকরি জীবনে শুরুর পর থেকেই মডেলিং শুরু করেন। হয়ে উঠেন সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সর।সোশ্যাল মিডিয়া খুললে তার ফলোয়ারস সংখ্যা দেখলেই বোঝা যাবে তিনি কতটা জনপ্রিয়। তবে ওইসব ব্যাপারে তাঁর কুচ পরোয়া নেহি। তিনি আদতে বোল্ড। এই বোল্ড মানে শরীর প্রদর্শন নয়, এই বোল্ড মানে একদম চাঁচাছোলা। আটপৌরের মুখোমুখি হয়ে সৌম্যা জানালেন, " আমি এমন কোনও কাজ করি না যেখানে বাকিদের অসম্মান কিংবা ছোট করা হয়।"

গলার স্বরের একটা স্পট বার্তা, "কুছ পরোয়া নেহি...!"
সৌম্যার ভাষায় তিনি অপরাজেয়। সত্যিই তাই, নয়ত এত বাঁধা পেরিয়েও তিনি আজ সফল। আজকাল তো সোশ্যাল মিডিয়া খুললেই কত সাজানো সফলতার গল্প কিন্তু এর মাঝে আসল কিছু গল্পগুলো হারিয়ে যায়। যেমন সৌম্যা, অনেক ঝড়ের সাক্ষী। কথায় কথায় তিনি বললেন, " এখন দিনে তিন ঘন্টা ঘুমানোর সময় পাই।" শুনে অবাক হওয়ার মতোই। কোনও বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের কর্মীর মতো মনে হতে পারে। মনে হতে পারে অনেক কাজের চাপ তবে সৌম্যা থেমে থাকার মেয়ে নয়। তিনি জানালেন, " আমি এখনও নতুন চাকরির খোঁজ করি। কোথায় কোথায় কী কী সুযোগ বেরোচ্ছে সেগুলো ঘেঁটে দেখি।"


শুধু তাই নয় সৌম্যার ইচ্ছে অদেখাকে দেখার। পৃথিবীর এমন দেশ যেখানে খুব কম লোকে যায়। এমন অজানাকে খোঁজার জন্যই হয়ত সৌম্যার এই জীবন। এমন অনেকেই আছেন যাঁরা একটি ভাল সরকারী চাকরি পাওয়ার পরই থেমে যায়। কিন্তু সৌম্যা তা নয়।

নতুত্বের খোঁজ তাকে আটকে রাখতে পারেনি। তাঁর ভাষায়, " জীবনে যদি কোনওদিন এর চেয়েও ভাল কোনও সুযোগ আসে তাহলে নির্দ্ধিধায় এই চাকরি ছেড়ে দেব।" শিক্ষিকা হওয়ার শখ আছে এখনও। এখনও বেশ ছাত্রছাত্রী আছে তার যাদেরকে তিনি ডাবলুবিসিএসের জন্য পড়ান। তিনি জানালেন, " আসলে আমি ছাত্রছাত্রী দেখেই বুঝতে পারি কার মধ্যে পরীক্ষায় সফল হওয়ার তাগিদ আছে আর কার মধ্যে নেই।" জিজ্ঞাসা করলাম, " বহু ছাত্রছাত্রী তো প্রতিবছর পরীক্ষা দিচ্ছে। অনেকেই অফসল হচ্ছে। তাদের জন্য কী বার্তা দেবেন? " তিনি জানালেন, " ইচ্ছে থাকলে ঠিকই পরীক্ষায় পাশ করা যায়। সেইভাবে রুটিন তৈরি করতে হবে। পড়তে হবে নিয়ম করে।"

একটু থেমে জিজ্ঞাসা করলাম, " আপনি তো সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ খোলামেলা ছবি দিয়ে থাকেন। সরকারী আমলা হওয়ার সুবাদে আপনাকে কথা শুনতে হয় না?" তিনি বললেন, " আমি যেটা করছি সেটা ঠিক মনে করে করছি, তাই কাউকে জবাব দেওয়ার প্রয়োজন মনে করি না।"



এখানেই থামছেন না তিনি। তার কথায়, " কর্মস্থলে ভাল কাজের সুবাদে অনেকবারই উঁচুমহলের চক্ষুশূল হতে হয়েছে।" মনে হতে পারে সিনেমার গল্প, তবুও এটাই সত্যি। সৌম্যা অদম্য, সাহসী। চাইলেই কোটায় চাকরি পেতেই পারতেন। চাইলেই তিনি আরও কোনও বড় আমলা হতেই পারতেন। কিন্তু তিনি তা করেননি।  আসলে তিনি কোটা সিস্টেমের বিরুদ্ধে। তাঁর কথায়, " আমি রিজারবেশনের বিরুদ্ধে। আমি চাই এটা বন্ধ হোক। "নিজের হকের চাকরি নিয়েই খুশি আছেন। একবারও তাঁর শারীরিক অসুস্থতা তাকে থামিয়ে দিতে পারেনি। বিজ্ঞানের ছাত্রী হয়েও ইতিহাস তাকে আকৃষ্ট করে।  

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ভূতে ভয় পেলেও, ‘ সেক্সি ভূত’-এর চরিত্রে অভিনয় করতে ভয় পাননি সায়ন্তনী

টলিউড ডিভা সায়ন্তনী গুহঠাকুরতা ডেবিউ করে ফেললেন দক্ষিণী সিনেমায়। যদিও কিছুদিন আগেই তিনি আটপৌরেকে সে ব্যাপারে জানিয়েছিলেন। কিন্তু সম্প্রতি এই হোলিতে সিনেমাটি রিলিজ করার পর থেকেই তিনি খবরের শিরোনামে। যদিও তার কারণ, তিনি এই প্রথম একটি ভূতের চরিত্রে অভিনয় করেছেন। শুধু তাই নয়, একটি ‘ সেক্সি’ ভূতের চরিত্রে এবং তাঁকে নিয়েই গল্পটা গড়ে উঠেছে।  সিনেমার নাম, ‘ চিকাটি গাডিলু চিঠাকোটুন্ডু’। তেলেগু সিনেমায় কাজ করে বেশ উচ্ছ্বসিত সায়ন্তনী। এখানেই শেষ নয়, তেলেগু ইন্ড্রাস্টির ভূয়সী প্রশংসা করেছেন তিনি। তাঁদের কাজের ধরন তাঁর বেশ পছন্দ হয়েছে । ইতিমধ্যে আরও একটি দক্ষিণী সিনেমার প্রস্তাবও পেয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। গল্পটিতে দেখা যায় দুই যুগল জুটি ছুটি কাটাতে গিয়ে আটকে যায় একটি ভৌতিক বাড়িতে।  সেখানে তারা একটি সেক্সি ভূতের পাল্লায় পরে। তারপর গল্প আস্তে আস্তে অন্যদিকে মোড় নেই।  সায়ন্তনী আটপৌরেকে জানালেন , ‘’ আমাকে অনেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় মেসেজ করে এই সিনেমার ব্যাপারে জানিয়েছেন! তাঁদের আমার চরিত্রটাও ভাল লেগেছে।‘’ ‘’ আপনাকে কেউ যদি রিয়েল লাইকে সেক্সি বলেন, সেটা আপনি কীভাব...

হেমন্তের উষ্ণ পরশ মিশিয়ে তালমায় ফিরল রোমিও জুলিয়েট, ঠোঁটে ঠোঁটে ' ফুল বডি রিলাক্স'

  আদিত্য ঘোষ, কলকাতাঃ বাংলার রোমিও জুলিয়েটরা দর্শককে রাত জাগিয়ে ওয়েব সিরিজের প্রতিটা পর্ব দেখতে বাধ্য করেছে। শুধু তাই নয়, দুই নবাগত অভিনেতা অভিনেত্রী  বাংলা সিরিজের মুখ্য চরিত্র হয়ে উঠেছে। বাংলা বাজারে ভাল সিনেমা বা ওয়েবের কদর আরও একবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখানোর চেষ্টা করেছে পরিচালক অর্পণ গড়াই। ক্যামেরার পিছনে এবং সামনে আরও একবার উজ্জ্বল ভূমিকার অবতীর্ণ হয়েছেন বাংলা সিনেমার  'ডন' অনির্বাণ ভট্টাচার্য। তবুও তালমার রোমিও এবং জুলিয়েট যথাক্রমে দেবদত্ত এবং হিয়া বাঙালি দর্শক মননে মিষ্টি প্রেমের উপাখ্যান হয়ে থেকে যাবে চিরকাল। যেখানে একটা সহজ সরল প্রেমকে স্রেফ টুকে দেওয়া হয়েছে সিনেমার পর্দায়। কোনও বাড়তি অলঙ্করণ নেই। কোনও উপমা-উপঢৌকন নেই। স্রেফ জীবনকে পর্দায় দেখালে যেমন মনে হয় ঠিক সেইরকম।  অভিনেতা দেবদত্ত রাহার হাতেখড়ি থিয়েটারের অভিনয় দিয়ে। তবে এই মুহূর্তে তিনি মঞ্চ থেকে বহুদূরে। তিনি আটপৌরেকে ফোনে জানালেন যে, ' থিয়েটার ছেড়েছি প্রায় তিন বছর, এখন বড় পর্দায় কাজ করার জন্য মুখিয়ে আছি। বেশ কিছু সিরিয়ালের প্রস্তাব পেলেও এই মুহূর্তে সিনেমা বা ওয়েব সিরিজের অভিনয়ের জন্যই ফোকাস করছি।' মফঃস...

রোগ চিনে নেওয়ার বিভিন্ন উপায় বাতলে দিচ্ছেন ডাক্তার সোমনাথ বিশ্বাস

হৃদয়ঘটিত বিভিন্ন রোগের অশনিসংকেত বুঝবেন কী করে-( পর্ব ১) খাই খাই বাঙালির বুকে ব্যথা হবে না, এও কি সম্ভব? যুগে যুগে বাঙালি জাতি নিজেরাই ডাক্তারি করে মোটামুটি বুঝে নিয়েছে বুকে একটু-আধটু ব্যথা মানেই ওটা গ্যাসের সমস্যা। আসলে বাঙালি জাতি এটা মানতেই অস্বীকার করে যে বুকে ব্যথা হৃদয় ঘটিত বিভিন্ন কারণে হতে পারে। সেটা অনেক সময় হার্ট এট্যাক এর লক্ষণও হতে পারে। উঁহু, অযথা ভয় পাওয়ার জন্য নয় এই লেখা নয়। উপরন্তু এই লেখা শুধুমাত্র একটা প্রাণ বাঁচানোর জন্য। তবে ডাক্তার বাবু বিশ্বাস মহাশয় কফি খেতে খেতে কহিলেন, " আধুনিক জীবনে আমি একটা স্মার্ট ওয়াচ ব্যবহার করতে পারলে, বুকে হঠাৎ ব্যথা হলে একটা ইসিজি করিয়েও দেখতে পারি। আমরা যদি বুকে ব্যথা ব্যাপারটা চেপে যায় তাহলে আর কি আধুনিক হলাম, তাহলে চিকিৎসা বিজ্ঞানের এত উন্নতি হয়ে লাভ কোথায়?" কফির কাপে চুমুক দিয়ে ডাক্তার বিশ্বাস আরও জানালেন যে, " আমাদের বুঝতে হবে চিকিৎসা বিজ্ঞান অনেকটা এগিয়েছে, তার সঙ্গে আমাদেরও এগোতে হবে। বুকে ব্যথা মানেই গ্যাস এবং সঙ্গে সঙ্গে একটা গ্যাসের ওষুধ খাওয়া মানেই সমস্যার শেষ এটা ভাবা একদমই বুদ্ধিমানের কাজ হবে না।" একটু...