সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

" আমার ক্লিনিক্যাল চর্চায় আমি খুব কমই ক্লায়েন্ট পেয়েছি যারা বলেছে আমি সুস্থ থাকতে চাই" : ডাক্তার অনন্যা ভৌমিক



 বাঙালি মানেই বারোমাসে তেরোপার্বণ। বাঙালি মানেই পেটপুজো থেকে বাহারাদি। তবে সচেতন বাঙালির টনক নড়ে ঠিক উৎসবের আগে! একটু রোগা হতে হবে। আমাকে দেখতে কেমন একটা হয়ে গিয়েছে, এবার একটু ঠিক হতে হবে। অমুক জামাটা গায়ে হচ্ছে না! এই ধরনের কথা আমাদের জাগ্রত বিবেক প্রায়ই বলে থাকে। কিন্তু মাঝেমধ্যেই একটু এগরোল, বিরিয়ানি, মোমো, চাউমিন না খেলে আর কোথায় বাঙালির বাঙালিয়ানা। তবে ওই জাগ্রত বিবেকের খোঁচায় মাঝেমধ্যেই একটু ডায়েট করে থাকি। মানে ওই একটু লেবু জল, শশা, ভাত-রুটি না খাওয়া এবং আরও আরও সোশ্যাল মিডিয়া প্রচলিত ডায়েট। বিশিষ্ট পুষ্টিবিদ এবং ওয়েলনেস কনস্যালট্যান্ট ডাক্তার অনন্যা ভৌমিক আটপৌরের মুখোমুখি হয়ে বললেন, " আমরা বছরে তিনচারটে ভাল শাড়ি কিনতে পারি অথচ বছরে একটা স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে পারি না।"

প্রথমেই জিজ্ঞাসা করলাম, " ইদানীং অনেক কমবয়সী ছেলেমেয়ে জিম করতে গিয়ে মারা গিয়েছে, আপনার কী মনে হয় এর কারণ কী?" তিনি জানালেন, " এই উত্তরটা ওইভাবে দেওয়া সম্ভব নয়। কার কী সমস্যা ছিল কিংবা আছে এটা বলা মুশকিল। তবে আমাদের গোড়ায় কিছু গলদ আছে। আমরা অনেক সময় নিজের ইচ্ছে মতো চলি। আমাদের সবসময় উচিত একজন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া। কোন ব্যায়াম করব আর কোন ব্যায়াম করব না কিংবা কী খাবো আর কী খাবো না সেটা অথবা কোন রক্ত পরীক্ষা করব আর কোনটা করব না সেই সবটা যদি নিজেরাই ঠিক করে নিই তাহলে তো আমাদের আর প্রয়োজনই নেই।"

আবার জিজ্ঞাসা করলাম, " আজকাল তো আমরা শুধুমাত্র মোটা থেকে রোগা হওয়ার জন্য কিংবা রোগা থেকে মোটা হওয়ার জন্য চেষ্টা করছি। আদেও কি আমরা সুস্থ থাকতে ভুলে গিয়েছি?" ডাক্তার অনন্যা জানালেন, " আমার ক্লিনিক্যাল চর্চায় আমি খুব কমই ক্লায়েন্ট পেয়েছি যারা বলেছে আমি সুস্থ থাকতে চাই, কী করব।" একটু থেমে আরও জানালেন, " আমাদের তিন ধরনের স্বাস্থ্যের প্রতি খেয়াল রাখার প্রয়োজন আছে। শারীরিক স্বাস্থ্য, মানসিক স্বাস্থ্য এবং সামাজিক স্বাস্থ্য। এই তিনটে মিলেই কিন্তু ভাল থাকার চাবিকাঠি। তবে আমরা শুধু শারীরিক স্বাস্থ্যের প্রতি খেয়াল রাখি।"

জিজ্ঞাসা করলাম, " স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে গেলে শুধু কি খাদ্যের ওপর নির্ভরশীল থাকলেই হবে নাকি সঙ্গে সাপ্লিমেন্ট প্রয়োজন?" তিনি বললেন, " সেটাও বিবেচ্য বিষয়। কার শরীরের গঠন কীরকম বা কার কোন ভিটামিনের ঘাটতি আছে সেটাও লক্ষণীয় বিষয়।প্রয়োজন ছাড়া কিছুই খাওয়া ভাল না। এই জন্যই সবসময় পরীক্ষার প্রয়োজন।" একটু থেমে তিনি আরও জানালেন যে, " আমি যেমন জিমে যায় না। তবে প্রতিদিন হাঁটি। এতেই আমি ভাল থাকি।"


তাঁর কথায়," আমরা আজকাল বাহ্যিক গঠনে বেশী বিশ্বাসী। তাই শরীরের অভ্যন্তরীন গঠনের কী অবস্থা যেখানে জোর দিই না।" জিজ্ঞাসা করলাম," আজকাল তো খাদ্যতালিকা নিয়ে অনেক ভ্রান্ত ধারণা আছে, কী বলবেন?" তিনি জানালেন," অনেকে মনে করে ডায়াবেটিক হলে নাকি ভাত খাওয়া যাবে না। এটা একদম ভুল ধারণা। আবার কোলেস্টেরল মানেই ডিমের।কুসুম বাদ দিতে হবে। এগুলো প্রতিটা মানুষের ক্ষেত্রে আলাদা আলাদা।"

জিজ্ঞাসা করলাম," আজকাল রোগা হওয়ার কি বেশি হিড়িক পড়েছে?" তিনি হাসতে হাসতে বললেন," ওই যে বললাম বাহ্যিক গঠনের ওপর সবাই ফোকাস করছি। অনেকেই কিন্তু নিয়মিত ডায়েট মেন্টেন্ট করে না। প্রতিটা মিলের মাঝে একটা তিন থেকে চার ঘন্টার গ্যাপ লাগে সেটাও আমরা খেয়াল করি না। শুধুমাত্র কিছু সাধারণ জ্ঞানের ভিত্তিতে আমরা 'গুগুল' ডায়েট শুরু করি। সেখানেই মাঝেমধ্যে বাসা বাঁধে বিপদ। আমরা অভিজ্ঞ পরামর্শ নিই না।"

তিনি আরও বললেন যে," আমি সবসময় চেষ্টা করি একজন ক্লায়েন্ট কী করে সুস্থ থাকবেন, তাই তার শরীরে কোনও রোগ বাসা বাঁধার আগে আমি চেষ্টা করি সেই রোগ যেন বাসাই না বাঁধে।( জীবনশৈলী পরিবর্তন করলে যে রোগগুলো হবে না এমন রোগের কথা বলা হয়েছে) আমি ডাক্তার না। রোগের চিকিৎসা আমি করতে পারব না। তবে রোগ হওয়া আটকাতে পারি।"

আমরা চাইলে প্রতিদিনের সহজপাচ্য খাবার খেয়ে ভাল থাকতেই পারি। শুধুমাত্র দরকার একজন বিশেষজ্ঞর পরামর্শ। সবশেশেষে জিজ্ঞাসা করলাম, " আর তো কিছুদিন বাদেই পুজো, কী টিপস দেবেন?" তিনি হাসতে হাসতে বললেন, " সব প্রশ্নের উত্তর কি এই সাক্ষাৎকারেই দিয়ে দেব নাকি পরবর্তীকালের জন্য কিছু জমিয়ে রাখব?" 


(সাক্ষাৎকার- আদিত্য ঘোষ
ছবি- সংগৃহীত)

মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ভূতে ভয় পেলেও, ‘ সেক্সি ভূত’-এর চরিত্রে অভিনয় করতে ভয় পাননি সায়ন্তনী

টলিউড ডিভা সায়ন্তনী গুহঠাকুরতা ডেবিউ করে ফেললেন দক্ষিণী সিনেমায়। যদিও কিছুদিন আগেই তিনি আটপৌরেকে সে ব্যাপারে জানিয়েছিলেন। কিন্তু সম্প্রতি এই হোলিতে সিনেমাটি রিলিজ করার পর থেকেই তিনি খবরের শিরোনামে। যদিও তার কারণ, তিনি এই প্রথম একটি ভূতের চরিত্রে অভিনয় করেছেন। শুধু তাই নয়, একটি ‘ সেক্সি’ ভূতের চরিত্রে এবং তাঁকে নিয়েই গল্পটা গড়ে উঠেছে।  সিনেমার নাম, ‘ চিকাটি গাডিলু চিঠাকোটুন্ডু’। তেলেগু সিনেমায় কাজ করে বেশ উচ্ছ্বসিত সায়ন্তনী। এখানেই শেষ নয়, তেলেগু ইন্ড্রাস্টির ভূয়সী প্রশংসা করেছেন তিনি। তাঁদের কাজের ধরন তাঁর বেশ পছন্দ হয়েছে । ইতিমধ্যে আরও একটি দক্ষিণী সিনেমার প্রস্তাবও পেয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। গল্পটিতে দেখা যায় দুই যুগল জুটি ছুটি কাটাতে গিয়ে আটকে যায় একটি ভৌতিক বাড়িতে।  সেখানে তারা একটি সেক্সি ভূতের পাল্লায় পরে। তারপর গল্প আস্তে আস্তে অন্যদিকে মোড় নেই।  সায়ন্তনী আটপৌরেকে জানালেন , ‘’ আমাকে অনেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় মেসেজ করে এই সিনেমার ব্যাপারে জানিয়েছেন! তাঁদের আমার চরিত্রটাও ভাল লেগেছে।‘’ ‘’ আপনাকে কেউ যদি রিয়েল লাইকে সেক্সি বলেন, সেটা আপনি কীভাব...

পুজো মিটলে কী করে থাকবেন ফিট, উপায় বাতলে দিলেন বিশিষ্ট পুষ্টিবিদ এবং যাপন সহায়ক ডাক্তার অনন্যা ভৌমিক

  আশ্বিনের শারদপ্রাতে বাঙালির পাতে ভরে উঠেছে হরেক রকমের খাবার। ঠাকুর দেখার সঙ্গে হরেক রকমের খাবার খেতেই হবে। রোল, চাউমিন, মোগলাই, চাইনিজ, বিরিয়ানি, ফুচকা এবং আরও কত কী! সারাবছর যারা শরীরচর্চায় মেতে থাকেন, খুব নিয়ম করে খাবার খান তারাও এই সময়টা একটু বেনিয়ম হয়ে পড়েন। তবে কুচ পরোয়া নেহি, পুজো মিটলেই আবার কী করে নিজের শরীরকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনবেন সেই কথায় আটপৌরেকে জানালেন বিশিষ্ট পুষ্টিবিদ এবং যাপন সহায়ক ডাক্তার অনন্যা ভৌমিক।  ১) পুজো মিটলেই আমাদের ফিরতে হবে আবার স্বাভাবিক জীবনে।  তাই পুজোর হ্যাংওভার কাটিয়ে নিতে ভীষণভাবে দরকার পড়বে প্রচুর পরিমাণ জলের। জল শরীরের বিষক্রিয়া দূর করতে সাহায্য করে। শরীরের প্রয়োজন মতো দিনে অন্তত তিন থেকে চার লিটার জল খেলে শরীর সুস্থ থাকবে। তবে যাদের বেশী জল খাওয়া বারণ আছে তারা অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন। এছাড়া বাকিরা দিনে চার লিটার পর্যন্ত জল পান করলে শরীরের স্বাভাবিক কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রিত থাকবে।  ২) মরশুমি ফল খাওয়ার অভ্যাস করুন। এছাড়াও নিয়মিত শাকসবজি খেতে হবে। ফল এবং শাকসবজিতে প্রচুর পরিমানে ফাইবার এবং আন্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা শরীরকে আবার স...

পনেরো মিনিটেই ফিট থাকার রহস্য, উপায় বাতলে দিলেন যোগগুরু

  আটপৌরের নিজস্ব প্রতিবেদন, নৈহাটিঃ  শরীরকে মন্দিরের আখ্যা দেওয়া হয়। আর সেই শরীরকে সর্বদা ঠিক রাখতে আমরা কত পন্থায় না অবলম্বন করে থাকি। আজকাল ইঁদুর দৌড়ের যুগ, আর এই যুগে সময় পাওয়া একটা বিরাট চ্যালেঞ্জিং বিষয়। সময় বের করে শরীর চর্চা করার মতো সময় আমাদের কতজনের হাতেই বা আছে? মনের সুখে ছুটির দিন হাঁটলেই কি আমাদের শরীর ঠিক থাকবে নাকি সপ্তাহে প্রতিদিন জিমমুখী হতেই হবে ? যেমন আইটি সেক্টরে কর্মরত পার্থ সারথী চক্রবর্তী সোম থেকে শুক্র অবধি দম ফেলার সময় পায় না, অথচ কিছুদিন হল সে ঘাড়ের ব্যথায় কাবু। আবার সদ্য বিয়ে করা কৌশিক ভট্টাচার্য ইদানীং অফিস ফেরত সস্ত্রীক হাঁটতে বেরিয়ে নিজেকে ফিট ভাবছেন অথচ গত তিনমাসে তার দশ কেজি ওজন বৃদ্ধি পেয়েছে। তবুও সে নিরুপায়, অফিস ফেরত ছাড়া তার সময় নেই। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে গেলে শরীর চর্চা আর হবে না। এই সময়ের অভাব অনেকেরই তা বলে কী শরীর সে কথা শুনবে। শরীরে বাসা বাঁধছে জটিল রোগ। দিনের পর দিন ওষুধ খেয়েও সেই রোগ সারছে না। তবে ইচ্ছে থাকলে উপায় আছে, বলছেন বিশিষ্ট যোগ গুরু রাহুল তিওয়ারী। আটপৌরের মুখোমুখি হয়ে তিনি জানালেন যে খুব স্বল্প সময়ে ফিট থাকার জন্য কিছু প...