সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

শিশুদের মশাবাহিত রোগ থেকে প্রতিকার এবং সুস্থ থাকার উপায় বললেন ডাক্তার ব্রতেশ দাস

 


বর্ষার শুরুতেই চোখ রাঙাচ্ছে মশা বাহিত রোগ। ইতিমধ্যেই গোটা রাজ্যে প্রায় সাড়ে চার হাজার মানুষ ডেঙ্গিতে আক্রান্ত। মারা গিয়েছেন আটজন, যার মধ্যে রয়েছে দুই শিশু। বিশিষ্ট শিশু চিকিৎসক ব্রতেশ দাস জানালেন এই মরসুমে কী করে শিশুদের মশাবাহিত বিভিন্ন রোগ থেকে বাঁচবেন এবং কী করে মশাবাহিত রোগ থেকে সুস্থ হয়ে উঠবেন।

 

১) ডেঙ্গুর মশা মূলত ভোরবেলা কামড়ায়। তবে দিনের যে কোনও সময়েই সেই মশা মারণ থাবা বসাতেই পারে, তাই এই সময়ে একটু সতর্ক থাকুন। শিশুদের গা ঢাকা জামাকাপড় পরিয়ে রাখুন। রাতে অবশ্যই মশারি ব্যবহার করুন। মনে রাখবেন ডেঙ্গির সঙ্গে সঙ্গে ম্যালেরিয়া, চিকুনগুনিয়া এই রোগগুলোও কিন্তু মশাবাহিত, তাই সেগুলোর কথা ভুলে গেলে চলবে না।

 

২) এই মরসুমে যদি দুই থেকে তিন দিনের বেশি জ্বর থাকে তাহলে অবশ্যই ডেঙ্গু এবং ম্যালেরিয়ার পরীক্ষা করান। কোনও মতেই ভাইরাল ফিভার বলে ভুল করবেন না। সময় নষ্ট করলেই বিপদ। 

 

৩) মূলত জ্বরের সাথে, সারা শরীরে ব্যথা, চোখের পিছনে ব্যথা, গায়ে র‍্যাশ, বমি হওয়া, অরুচি, শরীরের কোনও জায়গা থেকে হঠাৎ করে রক্ত বেরোনো এইগুলো ডেঙ্গির লক্ষণ। তবে একদম ছোট শিশুরা যেহেতু তাদের সমস্যার কথা, বড়দের মতো নিজ মুখে বলতে পারবে না, তাই তাদের প্রতি অতিরিক্ত নজর দেওয়া প্রয়োজন। বিশেষ করে এক বছরের কম বয়সী বাচ্চাদের ডেঙ্গু মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে অচিরেই। অবহেলা না করে জ্বর এলেই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। 

 

৪) জ্বর এলে জ্বরের ওষুধ ছাড়া অন্য কোনও ওষুধ দেবেন না। প্রয়োজনে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যান। চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। কারণ ডেঙ্গির কোনও ওষুধ হয় না। পুরো চিকিৎসাটাই উপসর্গ ভিত্তিক। বেশি করে জল খাওয়া প্রয়োজন। নুন চিনির জল কিংবা ওআরএস-ও খাওয়া যেতে পারে। 


৫) ডেঙ্গুর সাথে যদি দিনে যদি তিনবারের বেশি বমি, প্রচণ্ড পেটে ব্যথা, খিঁচুনি, প্রবল ক্লান্তি, মাথা ঘোরা, শ্বাসকষ্ট কিংবা শরীরের কোন অংশ থেকে রক্তপাত শুরু হয়, তবে অবশ্যই হাসপাতালে ভর্তি করানো উচিত। কারণ সময় নষ্ট করলেই বিপদ। শিশুদের ক্ষেত্রে যত সময় নষ্ট হবে তত বিষয়টা জটিল হয়ে যাবে। 

 

৬) ডেঙ্গি প্রতিরোধ করতে হলে শুরুতেই আপনাকে সজাগ হতে হবে। জল জমতে দেওয়া যাবে না। সাধারণত ডেঙ্গির মশা জমা জলেই জন্মায়। এই বৃষ্টি হচ্ছে, রোদ উঠছে। এই পরিবেশ আদর্শ ডেঙ্গির মশার বংশবিস্তারের জন্য। আর ডেঙ্গির মশা বেশিদূর উড়তে পারে না। তাই বাড়ির আশেপাশে জল জমতে দেবেন না। ডেঙ্গির মশার গায়ে সাদা কালো ডোরাকাটা দাগ থাকে। দেখেই বুঝতে পারবেন। তবে ডেঙ্গির মশা কামড়ালেই যে ডেঙ্গি হবে এমনটা নয়। সেই মশাটি যদি ডেঙ্গি রোগের ভাইরাস বহন না করে তাহলে কিছুই হবে না।

 

৭) আজকাল নেট চলতি বহু টোটকার প্রচলন হয়েছে। যেমন পেঁপে পাতার রস, ড্রাগন ফল। এগুলোর কিন্তু কোনও বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। তাই অযথা ডাক্তারি পরামর্শ ছাড়া কিছু করবেন না। শিশুদের খাদ্যাভ্যাসে বিশেষ কিছু পরিবর্তনের দরকার নেই। তবে চেষ্টা করবেন তেলমশলা যুক্ত খাবার এইসময়ে এড়িয়ে চলতে। সহজপাচ্য খাবার খাবেন। 

 

এই রোগ নিয়ে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। এই রোগে খুব সহজেই চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে বাড়িতে থেকেই সুস্থ হয়ে যাওয়া যায় এবং খুব অল্প সংখ্যক ক্ষেত্রেই বাড়াবাড়ি দেখা যায়। তবে সর্বদা সতর্ক থাকুন, এবং ন্যূনতম সমস্যা মনে হলে, অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন। 

 

(বক্তা-ডা. ব্রতেশ দাস 

এমডি পেডিয়াট্রিক 

কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ

সাক্ষাৎকার- আদিত্য ঘোষ)

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ভূতে ভয় পেলেও, ‘ সেক্সি ভূত’-এর চরিত্রে অভিনয় করতে ভয় পাননি সায়ন্তনী

টলিউড ডিভা সায়ন্তনী গুহঠাকুরতা ডেবিউ করে ফেললেন দক্ষিণী সিনেমায়। যদিও কিছুদিন আগেই তিনি আটপৌরেকে সে ব্যাপারে জানিয়েছিলেন। কিন্তু সম্প্রতি এই হোলিতে সিনেমাটি রিলিজ করার পর থেকেই তিনি খবরের শিরোনামে। যদিও তার কারণ, তিনি এই প্রথম একটি ভূতের চরিত্রে অভিনয় করেছেন। শুধু তাই নয়, একটি ‘ সেক্সি’ ভূতের চরিত্রে এবং তাঁকে নিয়েই গল্পটা গড়ে উঠেছে।  সিনেমার নাম, ‘ চিকাটি গাডিলু চিঠাকোটুন্ডু’। তেলেগু সিনেমায় কাজ করে বেশ উচ্ছ্বসিত সায়ন্তনী। এখানেই শেষ নয়, তেলেগু ইন্ড্রাস্টির ভূয়সী প্রশংসা করেছেন তিনি। তাঁদের কাজের ধরন তাঁর বেশ পছন্দ হয়েছে । ইতিমধ্যে আরও একটি দক্ষিণী সিনেমার প্রস্তাবও পেয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। গল্পটিতে দেখা যায় দুই যুগল জুটি ছুটি কাটাতে গিয়ে আটকে যায় একটি ভৌতিক বাড়িতে।  সেখানে তারা একটি সেক্সি ভূতের পাল্লায় পরে। তারপর গল্প আস্তে আস্তে অন্যদিকে মোড় নেই।  সায়ন্তনী আটপৌরেকে জানালেন , ‘’ আমাকে অনেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় মেসেজ করে এই সিনেমার ব্যাপারে জানিয়েছেন! তাঁদের আমার চরিত্রটাও ভাল লেগেছে।‘’ ‘’ আপনাকে কেউ যদি রিয়েল লাইকে সেক্সি বলেন, সেটা আপনি কীভাব...

পুজো মিটলে কী করে থাকবেন ফিট, উপায় বাতলে দিলেন বিশিষ্ট পুষ্টিবিদ এবং যাপন সহায়ক ডাক্তার অনন্যা ভৌমিক

  আশ্বিনের শারদপ্রাতে বাঙালির পাতে ভরে উঠেছে হরেক রকমের খাবার। ঠাকুর দেখার সঙ্গে হরেক রকমের খাবার খেতেই হবে। রোল, চাউমিন, মোগলাই, চাইনিজ, বিরিয়ানি, ফুচকা এবং আরও কত কী! সারাবছর যারা শরীরচর্চায় মেতে থাকেন, খুব নিয়ম করে খাবার খান তারাও এই সময়টা একটু বেনিয়ম হয়ে পড়েন। তবে কুচ পরোয়া নেহি, পুজো মিটলেই আবার কী করে নিজের শরীরকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনবেন সেই কথায় আটপৌরেকে জানালেন বিশিষ্ট পুষ্টিবিদ এবং যাপন সহায়ক ডাক্তার অনন্যা ভৌমিক।  ১) পুজো মিটলেই আমাদের ফিরতে হবে আবার স্বাভাবিক জীবনে।  তাই পুজোর হ্যাংওভার কাটিয়ে নিতে ভীষণভাবে দরকার পড়বে প্রচুর পরিমাণ জলের। জল শরীরের বিষক্রিয়া দূর করতে সাহায্য করে। শরীরের প্রয়োজন মতো দিনে অন্তত তিন থেকে চার লিটার জল খেলে শরীর সুস্থ থাকবে। তবে যাদের বেশী জল খাওয়া বারণ আছে তারা অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন। এছাড়া বাকিরা দিনে চার লিটার পর্যন্ত জল পান করলে শরীরের স্বাভাবিক কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রিত থাকবে।  ২) মরশুমি ফল খাওয়ার অভ্যাস করুন। এছাড়াও নিয়মিত শাকসবজি খেতে হবে। ফল এবং শাকসবজিতে প্রচুর পরিমানে ফাইবার এবং আন্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা শরীরকে আবার স...

পনেরো মিনিটেই ফিট থাকার রহস্য, উপায় বাতলে দিলেন যোগগুরু

  আটপৌরের নিজস্ব প্রতিবেদন, নৈহাটিঃ  শরীরকে মন্দিরের আখ্যা দেওয়া হয়। আর সেই শরীরকে সর্বদা ঠিক রাখতে আমরা কত পন্থায় না অবলম্বন করে থাকি। আজকাল ইঁদুর দৌড়ের যুগ, আর এই যুগে সময় পাওয়া একটা বিরাট চ্যালেঞ্জিং বিষয়। সময় বের করে শরীর চর্চা করার মতো সময় আমাদের কতজনের হাতেই বা আছে? মনের সুখে ছুটির দিন হাঁটলেই কি আমাদের শরীর ঠিক থাকবে নাকি সপ্তাহে প্রতিদিন জিমমুখী হতেই হবে ? যেমন আইটি সেক্টরে কর্মরত পার্থ সারথী চক্রবর্তী সোম থেকে শুক্র অবধি দম ফেলার সময় পায় না, অথচ কিছুদিন হল সে ঘাড়ের ব্যথায় কাবু। আবার সদ্য বিয়ে করা কৌশিক ভট্টাচার্য ইদানীং অফিস ফেরত সস্ত্রীক হাঁটতে বেরিয়ে নিজেকে ফিট ভাবছেন অথচ গত তিনমাসে তার দশ কেজি ওজন বৃদ্ধি পেয়েছে। তবুও সে নিরুপায়, অফিস ফেরত ছাড়া তার সময় নেই। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে গেলে শরীর চর্চা আর হবে না। এই সময়ের অভাব অনেকেরই তা বলে কী শরীর সে কথা শুনবে। শরীরে বাসা বাঁধছে জটিল রোগ। দিনের পর দিন ওষুধ খেয়েও সেই রোগ সারছে না। তবে ইচ্ছে থাকলে উপায় আছে, বলছেন বিশিষ্ট যোগ গুরু রাহুল তিওয়ারী। আটপৌরের মুখোমুখি হয়ে তিনি জানালেন যে খুব স্বল্প সময়ে ফিট থাকার জন্য কিছু প...