বাঙালির প্রাণের পুজো এসে গিয়েছে। নীল আকাশে পেঁজা তুলোর মেঘ জানান দিয়েছে উমা আগমনের। চারিদিকে আলোয় আলোকিত আর এই আলোর মধ্যে যাদেরকে আমরা সারা বছর সমীহ করে চলি, অনেক রাতে গলি দিয়ে হেঁটে গেলে যারা আমাদের সঙ্গ দেয় সেই সারমেয়দের এই পুজোর কয়েকটা দিন কিন্তু অতিরিক্ত যত্নের প্রয়োজন আছে। পশুদের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপনকারক শুক্লা হাজরা আটপৌরের মুখোমুখি হয়ে জানলেন কিছু সুবিধা অসুবিধার কথা-
১) উৎসবের সময় একটা সুবিধা হয় যে সারমেয় বা পথ কুকুররা পর্যাপ্ত খাবার পেয়ে থাকে। নিজস্ব অভিজ্ঞতা থেকে তিনি আরও জানালেন যে, এই সময়টা রাস্তার পাশের স্থায়ী অথবা অস্থায়ী দোকান থেকে তারা অনেক সারাদিনই অনেক উচ্ছিষ্ট খাবার পেয়ে থাকে। কারণ এই সময়টা অনেক জায়গায় অস্থায়ী খাবারের স্টলের দোকান দেওয়া হয়। ফলে পথ কুকুরদের খাওয়ার জোগান হয়েই যায়।
২) পুজোর সময় মন্ডপের জন্য অনেকটা জায়গা জুড়ে বাঁশ পোতার জন্য কিংবা বড় পুজোগুলোর ব্যারিকেড করে দেওয়ার জন্য পথপশুদের গন্ডি ছোট হয়ে যায় অথবা তারা তাদের চেনা গন্ডির মধ্যে ঢুকতে পারে না। এটা একটা বড় অসুবিধা। ২০১৬ সালে এমনই কোনও এক পুজো মন্ডপ পথপশুদের এক স্থান থেকে অন্য স্থানে নিয়ে যাচ্ছিল যা নিয়ে অনেক বড় সমস্যার সৃষ্টি হয়। অনেকেই প্রতিবাদ করেন। তারপর থেকে এই রকমের ঘটনা ঘটেনি যদিও।
৩) এই সময় অনেক সরকারী অফিস ছুটি থাকে। যেমন ডালহৌসি চত্ত্বর, বড়বাজার, আলিপুর ইত্যাদি জায়গায় সারমেয়দের খাবার সমস্যা হয়। সমস্ত কোর্ট চত্ত্বর বন্ধ থাকে। এছাড়াও কলকাতার বিভিন্ন অংশ আংশিক ভাবে বন্ধ থাকে। তাই সেই অঞ্চলের সারমেয় কিংবা পথপশুরা ঠিক করে খাবার পায় না। তবুও আজকাল কিছু কিছু এনজিও কিংবা পশুপ্রেমীরা তাদের মতো করে খাবারের ব্যবস্থা করে।
৪)পুজোর সময় যে অঞ্চলে সরকারী অফিস বন্ধ থাকে সেই অঞ্চলের পথপশুরা তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে খাদ্যের জন্য যায়। সেখানে তাদের অন্য কুকুদের সঙ্গে মারপিট করতে হয়। অনেক সময় তারা মারাও যায়। কেউ কেউ পিটিয়ে মেরে ফেলেছে, এমন ঘটনা প্রায়ই ঘটে।
৫) কলকাতার বুকে পশু হাসপাতালের চিত্রট খুবই খারাপ। উৎসবের এই কয়েকটা দিন বেশীভাগ পশু হাসপাতাল বন্ধ থাকে এবং যেগুলো খোলা থাকে সেখানে পর্যাপ্ত পরিমাণে চিকিৎসা পাওয়া যায় না। শুধু তাই নয় কলকাতায় কুকুদের যে সমস্ত শেল্টার আছে সেগুলোও পুজোর সময় অধিকাংশ বন্ধ থাকে। উপরন্তু বেসরকারী হাসপাতালে পশুদের চিকিৎসার খরচ আকাশছোঁয়া। এছাড়াও কোনও কুকুর কিংবা পোষ্য বিড়ালের হঠাৎ করে কিছু হলে কলকাতার বুকে এমার্জেন্সির ব্যবস্থা নেই।
৬)উৎসবের সময় পশুদের বিশেষত কুকুর, বিড়াল পাখিদের উচ্চমাত্রার শব্দ, আলো কিংবা বাজির আওয়াজে সমস্যা তৈরি হতে পারে। সেইদিকে প্রায়শই আমাদের নজর থাকে না। বেশী শব্দে পোষ্যদের সমস্যা নয় কারণ তাদের শ্রবণ শক্তি আমাদের চেয়ে অনেক বেশী এবং তীক্ষ্ণ।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন