পরিচালক দেবালয় ভট্টাচার্য। না, স্যার দেবালয় ভট্টাচার্য। এটাই হয়ত ওনার সঠিক পরিচয়।
ওনাকে ইন্ড্রাস্টির অনেকেই ‘স্যার’ নামে ডেকে থাকেন। অনেকদিন ধরেই ইচ্ছে ছিল জানার,
ওনাকে অনেকেই কেন ‘স্যার’ নামে ডাকেন? প্রথমে ভেবেছিলাম উনি হয়ত একজন রাশভারী মানুষ,
বেশ কাট্টাখোট্টা কিংবা কাজের জায়গায় হয়ত ভীষণ রাগী। তবে আজ দুপুরে সে ভুলটা ভেঙে গেল।
ওনার সঙ্গে কথা বলে মনে হল যে ‘স্যার’ উপাধিটা হয়ত সত্যিই তাঁর প্রাপ্য। কিন্তু কেন
? তাঁর অমায়িক ব্যবহারের জন্য। শুধু তাই নয় কাজের প্রতি তাঁর অমোঘ আকর্ষণ এবং মধ্যবিত্ত
বাঙালীর সেন্টিমেন্টে সুড়সুড়ি দেওয়ার জন্য।
কি এখনও চিনতে পারেননি, কার কথা বলছি? তাহলে একটু পিছিয়ে আসুন। আপনি কি রোগা হতে
চান ? তাহলে দেবালয় ভট্টাচার্যের প্রথম ছবি, ‘ রোগা হওয়ার সহজ উপায়’ দেখে ফেলুন। তাহলেই ধরতে পারবেন কার কথা বলছি।
তাও যদি না পারেন, তাহলে জিজ্ঞাসা করব আপনি কি ‘বিদায় ব্যোমকেশ’ দেখেছেন ? যিনি এত
বড় একটা চরিত্রকে একদম ভেঙে বাউন্ডারির বাইরে পাঠিয়ে দিয়েছেন। পাল্টে দিয়েছেন
বাঙালীর দেখার দৃষ্টি। তবুও তাঁর আক্ষেপ, ‘’ সিনেমাটা হিট করলেও, এটা নিয়ে এত প্রচার হয়নি। অনেকে জানেই না যে এটা একটা হিট ছবি।‘’
এখানেই শেষ নয়, আপনাদের ‘অভিশপ্ত নাইটি’ সিনেমাটি মনে আছে ? যে সিনেমার প্রতিটা
ডায়লগ আপনাকে ভাবাবে যে আপনি বাঙালী তো? সেই আদ্যিকালের সেন্টিমেন্ট ধরে এখনও বসে নেই
তো? কিংবা আপনার মধ্যবিত্ত মানসিকতাকে এখনও বশীকরণ করতে সক্ষম হয়েছেন তো? নাকি এখন
যৌন সুড়সুড়ি দিলে ঘোমটার তলায় মুখ লোকাতে হয় না তো? সেই সিনেমার স্ক্রিপ্ট রাইটার কিন্তু
এই স্যার দেবালয়।
ওনাকে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘’ এই সিনেমাটা কিন্তু বক্স অফিসে খুব
ভাল ব্যবসা করেনি, কী বলবেন ?’’ তিনি সোজাসাপটা ভাষায় বললেন, ‘’ বক্স অফিসে ভাল
ব্যবসা করলেই যে সিনেমাটা ভাল, সেটা আমি বিশ্বাস করি না। আর এটাও ঠিক এই ছবিটা বেশি লোকে সিনেমা হলে গিয়ে দেখেনি। কারণ এটা একটু অন্য ধারার ছবি।‘’
এককালে মুম্বই থেকে তিনি
কলকাতায় ছুটে এসেছিলেন শুধুমাত্র বাংলার টানে। বাংলায় ছবি বানানোর টানে। পেন্টিং
নিয়ে পড়াশুনা করে তিনি পাড়ি দিয়েছিলেন মুম্বই, তারপর বিজ্ঞাপনের ছবি, এডিটিং এবং
সবশেষে মাটির টানে কলকাতায়। তবে কিছুটা হলেও তিনি এখন আক্ষেপ করেন। তাঁর কথায়, ‘’
সেদিন যদি মুম্বই না ছাড়তাম, তাহলে আজকে হয়ত গল্পটা অন্য হত। হয়ত নেগেটিভও কিছু
হতে পারত, তবুও চেষ্টাটা তো করতাম। কিন্তু এই শহরটা আমার কাছে ভালবাসার শহর,
ভাললাগার শহর।‘’
ওয়েব প্ল্যাটফর্মে তাঁর
পরিচালনায় ‘ দুপুর ঠাকুরপো ১’, ‘ হোলি ফাক’, ‘ ‘চরিত্রহীন’, ইতিমধ্যেই দর্শকদের
প্রশংসা কুড়িয়েছে। এই মাসেই আসতে চলেছে ‘চরিত্রহীন ২’। সেই নিয়েও পরিচালক বেশ
আশাবাদী। এছাড়াও আরও বেশকিছু কাজ নিয়ে দেবালয় বড্ড ব্যস্ত। সবশেষে তাঁকে জিজ্ঞাসা
করলাম, ‘’ ড্রিম প্রজেক্ট কী ?’’ হাসতে হাসতে দেবালয় জানালেন, ‘’ সব এখনই বলে দিলে
পরে আর কী বলব ?’’ ফোনের ওপারে একটা হাসির শব্দ পেলাম শুধু।
( সাক্ষাৎকার- আদিত্য ঘোষ
ছবি - সংগৃহীত)
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন