সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

জয়ী আমাকে বলেছিল, ‘’আমরা একটা অসম্ভবের দিকে এগোচ্ছি। যেটা খুব ভুল। আমি দু- নৌকায় পা দিয়ে চলতে পারি না।‘’



                                      বিদায়- আদিত্য

হাইওয়ে ধরে গাড়ি ছুটে চলেছে। পিছন সিটে আমি আর জয়ী। সামনে বসে আছে জয়ীর বর। সন্ধ্যে নেমে এসেছে। চারিদিকে পোড়া টায়ারের গন্ধ। গাড়ি বেশ গতিতেই ছুটে চলেছে। জানলার পাশে বসলেই জয়ীর ঘুম পায়, এ ঘটনা আমার জানা। তবে আজ জয়ী বেশ উদাসী মুখে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে। কয়েকবার ঈশারা করেও সাড়া দিল না। কেন ? ঠিক বুঝতে পারলাম না। হয়ত বর আর প্রেমিক এক গাড়িতে আছে তাই অথবা কাকে গুরুত্ব দেবে সেটা ভেবে উঠতে পারছে না।

জয়ী গাড়ির কাঁচটা একবার তুলে নিয়ে বলল, ‘’ এসিটা চালিয়ে দাও তো। বাইরে বড্ড পোড়া টায়ারের গন্ধ।‘’ এসিটা কিছুক্ষণ চালিয়েও জয়ীর মন ভরল না, ‘’ এসিটা বন্ধ করে দাও তো, ঠাণ্ডা লাগছে।‘’ জয়ীর বর অনেকক্ষণ ধরেই শুধু মাত্র সামনের গাড়িটাকে ফলো করে যাচ্ছে। কারণ ওই গাড়িটায় আমাদের রাস্তা দেখাচ্ছে। আমরা সবাই প্রায় চুপ। কেউ তেমন কোনও কথা বলছে না। জয়ী হঠাৎ হাতটা ধরল। সারা শরীরে কেমন একটা শিহরণ খেলে গেল। সেই হাতের ছোঁয়া যেটার জন্য প্রায় এক বছর অপেক্ষা করেছি, যেটার জন্য প্রতিদিন রাতেই ঘুম ভেঙে উঠে গেছি.........

গাড়ি ছুটে চলেছে নিজের তালে। চারিদিক আরও অন্ধকার হয়ে আসছে, আরও অন্ধকার হয়ে আসছে আমাদের প্রেমের ভবিষ্যৎ। আমরা এখনও চুপ, শুধু একে অন্যের হাত ধরে আছি।  রাস্তাটা আজ অন্য দিনের তুলনায় একটু বেশি গাড়িবহুল। চালকের কাছ থেকে জানা গেল, ব্যাকারপুরের পর থেকে আজ রাস্তা বন্ধ। তাই সব গাড়ি ব্যারাকপুর থেকে বিটি রোড ধরে যাচ্ছে। যাই হোক, এই জন্য অন্তত একটু বেশি সময় তো জয়ীকে কাছে পাব। এর চেয়ে আর ভাল কী হতে পারে।

এইবারে জয়ী এসে থেকে একবারের জন্য একান্তে দেখা করেনি। যেটুকু সময় দেখা হয়েছে, সেটা ব্যস্ততার মধ্যে কেটেছে। আবার পুজোর সময় না আসতে পেরে এই সময়ে এসেছে বলে জয়ী কিন্তু বেশ মনমরা। আমাকে অনেকবার অভিযোগ করে বলেছে , ‘’ কেন যে এই সময়ে বিয়েটা হল, যদি মাস দুয়েক পরেও হত তবুও কোনও চাপ ছিল না।‘’ ননদের বিয়েতে জয়ীর অনেক দায়িত্ব। যদিও সেইভাবে জয়ীকে ব্যস্ত থাকতে দেখিনি, তবে মাঝে মাঝে ওকে পড়তে বসতে দেখিছি। অনেকটা লোক দেখান পড়তে বসা। এইবারে এসে থেকে জয়ী হয়ত ঠিকই করে রেখেছিল যে আমাকে এড়িয়ে যাওয়াটাই ওর আসল উদ্দেশ্য। কিন্তু একবারের জন্যও ও বুঝল না, জয়ী এড়িয়ে গেলে আমি কতটা কষ্ট পায়।
জয়ী আগের চেয়ে অনেকটা বদলে গেছে। সেই মাতাল করা যৌবন এখন আর নেই। বুকের খাঁজ এখন আর আকর্ষণ নেই। ঠোঁটের ভাঁজে যে উষ্ণতা ছিল, সেটা আর মিছিল করে না উদাসী দুপুরে। ওর চোখের চাহনিতে আর সেই স্নিগ্ধতা নেই। টোল পড়া গালে মিলিয়ে গেছে সেই সুখের হাসি।

 সাজগোজেও বেশ খামখেয়ালী। আমি বহুবার জয়ীকে জিজ্ঞাসা করেছি, ‘’ কী হয়েছে? ‘’ জয়ী বারবার বলেছে, ‘’ কিছু না।‘’ কিন্তু আমি জানতাম, কিছু হলেও জয়ী আমাকে কিছু বলবে না। কারণ আমি এখন বাতিলের কথায়। তবে জয়ী আমাকে বন্ধু হওয়ার প্রস্তাব দিলেও, আমি তাতে কান দিইনি। আমি জানতাম আমাদের সম্পর্কে কোনও দিন বন্ধুত্ব হবে না। হয়ত প্রেম হবে নয়ত ঝগড়া হবে, এই বাইরে কিছু সম্ভব নয়।

 জয়ী আমাকে বলেছিল, ‘’ আমরা একটা অসম্ভবের দিকে এগোচ্ছি। যেটা খুব ভুল । আমি দু- নৌকায় পা দিয়ে চলতে পারি না। ‘’ আমি জয়ীকে উত্তর দিয়েছিলাম, ‘’ আমি তোমাকে পাব না জেনেও ভালবেসেছি। শুধু আমাকে এড়িয়ে যেও না। আমার কষ্ট হয় । এইভাবেই সারাজীবন আমরা গোপনেই থেকে যাব। সব পরীক্ষার যেমন ফলাফল নেই, ঠিক তেমন সব প্রেমের ভবিষ্যৎ নেই।‘’

জয়ীকে কথা দিয়েছিলাম, ও যখন চলে যাবে তখন ওর মুখ দেখব না । সেই কথা মতো জয়ীর চলে যাওয়ার সময় আমি ওর মুখ দেখিনি, কিন্তু মনে মনে বলেছি ও যেন ভাল থাকে। সুখে থাকে। জানি না আবার কবে জয়ীর সঙ্গে দেখা হবে, আদেও হবে কিনা! কারণ আমরা বড্ড আপেক্ষিক। জয়ী যদি অধ্যাপক হয়ে যায় তাহলে সবচেয়ে বেশি আমি খুশি হব। আসলে জয়ী এখন জানে না, আমি ওকে কতটা ভালবাসি। হয়ত ও বলবে আমি পাগল, কিন্তু...

হাইওয়ে ধরে গাড়িটা ছুটে চলেছে। বাইরে পোড়া টায়ারের গন্ধ। পাশে কেউ নেই, রাস্তাটা আজ ফাঁকা।      


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ভূতে ভয় পেলেও, ‘ সেক্সি ভূত’-এর চরিত্রে অভিনয় করতে ভয় পাননি সায়ন্তনী

টলিউড ডিভা সায়ন্তনী গুহঠাকুরতা ডেবিউ করে ফেললেন দক্ষিণী সিনেমায়। যদিও কিছুদিন আগেই তিনি আটপৌরেকে সে ব্যাপারে জানিয়েছিলেন। কিন্তু সম্প্রতি এই হোলিতে সিনেমাটি রিলিজ করার পর থেকেই তিনি খবরের শিরোনামে। যদিও তার কারণ, তিনি এই প্রথম একটি ভূতের চরিত্রে অভিনয় করেছেন। শুধু তাই নয়, একটি ‘ সেক্সি’ ভূতের চরিত্রে এবং তাঁকে নিয়েই গল্পটা গড়ে উঠেছে।  সিনেমার নাম, ‘ চিকাটি গাডিলু চিঠাকোটুন্ডু’। তেলেগু সিনেমায় কাজ করে বেশ উচ্ছ্বসিত সায়ন্তনী। এখানেই শেষ নয়, তেলেগু ইন্ড্রাস্টির ভূয়সী প্রশংসা করেছেন তিনি। তাঁদের কাজের ধরন তাঁর বেশ পছন্দ হয়েছে । ইতিমধ্যে আরও একটি দক্ষিণী সিনেমার প্রস্তাবও পেয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। গল্পটিতে দেখা যায় দুই যুগল জুটি ছুটি কাটাতে গিয়ে আটকে যায় একটি ভৌতিক বাড়িতে।  সেখানে তারা একটি সেক্সি ভূতের পাল্লায় পরে। তারপর গল্প আস্তে আস্তে অন্যদিকে মোড় নেই।  সায়ন্তনী আটপৌরেকে জানালেন , ‘’ আমাকে অনেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় মেসেজ করে এই সিনেমার ব্যাপারে জানিয়েছেন! তাঁদের আমার চরিত্রটাও ভাল লেগেছে।‘’ ‘’ আপনাকে কেউ যদি রিয়েল লাইকে সেক্সি বলেন, সেটা আপনি কীভাব...

হেমন্তের উষ্ণ পরশ মিশিয়ে তালমায় ফিরল রোমিও জুলিয়েট, ঠোঁটে ঠোঁটে ' ফুল বডি রিলাক্স'

  আদিত্য ঘোষ, কলকাতাঃ বাংলার রোমিও জুলিয়েটরা দর্শককে রাত জাগিয়ে ওয়েব সিরিজের প্রতিটা পর্ব দেখতে বাধ্য করেছে। শুধু তাই নয়, দুই নবাগত অভিনেতা অভিনেত্রী  বাংলা সিরিজের মুখ্য চরিত্র হয়ে উঠেছে। বাংলা বাজারে ভাল সিনেমা বা ওয়েবের কদর আরও একবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখানোর চেষ্টা করেছে পরিচালক অর্পণ গড়াই। ক্যামেরার পিছনে এবং সামনে আরও একবার উজ্জ্বল ভূমিকার অবতীর্ণ হয়েছেন বাংলা সিনেমার  'ডন' অনির্বাণ ভট্টাচার্য। তবুও তালমার রোমিও এবং জুলিয়েট যথাক্রমে দেবদত্ত এবং হিয়া বাঙালি দর্শক মননে মিষ্টি প্রেমের উপাখ্যান হয়ে থেকে যাবে চিরকাল। যেখানে একটা সহজ সরল প্রেমকে স্রেফ টুকে দেওয়া হয়েছে সিনেমার পর্দায়। কোনও বাড়তি অলঙ্করণ নেই। কোনও উপমা-উপঢৌকন নেই। স্রেফ জীবনকে পর্দায় দেখালে যেমন মনে হয় ঠিক সেইরকম।  অভিনেতা দেবদত্ত রাহার হাতেখড়ি থিয়েটারের অভিনয় দিয়ে। তবে এই মুহূর্তে তিনি মঞ্চ থেকে বহুদূরে। তিনি আটপৌরেকে ফোনে জানালেন যে, ' থিয়েটার ছেড়েছি প্রায় তিন বছর, এখন বড় পর্দায় কাজ করার জন্য মুখিয়ে আছি। বেশ কিছু সিরিয়ালের প্রস্তাব পেলেও এই মুহূর্তে সিনেমা বা ওয়েব সিরিজের অভিনয়ের জন্যই ফোকাস করছি।' মফঃস...

রোগ চিনে নেওয়ার বিভিন্ন উপায় বাতলে দিচ্ছেন ডাক্তার সোমনাথ বিশ্বাস

হৃদয়ঘটিত বিভিন্ন রোগের অশনিসংকেত বুঝবেন কী করে-( পর্ব ১) খাই খাই বাঙালির বুকে ব্যথা হবে না, এও কি সম্ভব? যুগে যুগে বাঙালি জাতি নিজেরাই ডাক্তারি করে মোটামুটি বুঝে নিয়েছে বুকে একটু-আধটু ব্যথা মানেই ওটা গ্যাসের সমস্যা। আসলে বাঙালি জাতি এটা মানতেই অস্বীকার করে যে বুকে ব্যথা হৃদয় ঘটিত বিভিন্ন কারণে হতে পারে। সেটা অনেক সময় হার্ট এট্যাক এর লক্ষণও হতে পারে। উঁহু, অযথা ভয় পাওয়ার জন্য নয় এই লেখা নয়। উপরন্তু এই লেখা শুধুমাত্র একটা প্রাণ বাঁচানোর জন্য। তবে ডাক্তার বাবু বিশ্বাস মহাশয় কফি খেতে খেতে কহিলেন, " আধুনিক জীবনে আমি একটা স্মার্ট ওয়াচ ব্যবহার করতে পারলে, বুকে হঠাৎ ব্যথা হলে একটা ইসিজি করিয়েও দেখতে পারি। আমরা যদি বুকে ব্যথা ব্যাপারটা চেপে যায় তাহলে আর কি আধুনিক হলাম, তাহলে চিকিৎসা বিজ্ঞানের এত উন্নতি হয়ে লাভ কোথায়?" কফির কাপে চুমুক দিয়ে ডাক্তার বিশ্বাস আরও জানালেন যে, " আমাদের বুঝতে হবে চিকিৎসা বিজ্ঞান অনেকটা এগিয়েছে, তার সঙ্গে আমাদেরও এগোতে হবে। বুকে ব্যথা মানেই গ্যাস এবং সঙ্গে সঙ্গে একটা গ্যাসের ওষুধ খাওয়া মানেই সমস্যার শেষ এটা ভাবা একদমই বুদ্ধিমানের কাজ হবে না।" একটু...