সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

একদিন আমাদের সবাইকে এইরকম একটা খোলা ছাদে এসে দাঁড়াতে হবে। যেখানে আমরা সবাই সব সম্পর্কের জটিলতা ভুলে এক সুরে গান গাইব।



ইতি, নভেম্বর......  - আদিত্য 

একটু একটু ঠাণ্ডা পড়েছে। রাতের বেলায় যদিও এই দিকটা একটু বেশীই ঠাণ্ডা লাগে। এখানে সন্ধ্যের পর যানবাহনও কম চলে। রাস্তার মোড়ে মোড়ে ল্যাম্পপোস্টও নেই। পঞ্চায়েতের আওয়াতায় মধ্যে পরে এই বালিভাড়া জায়গাটা। উন্নয়নের ছোঁয়া এখনও লাগেনি। প্রতিদিনের মতো কৌশিক তামাক বানাতে ব্যস্ত। ওর খোলা ছাদটায় এখন আমাদের প্রতিভা প্রকাশের বিরাট মঞ্চ। ওর বাড়ির ছাদ থেকে একটা বটগাছ দেখা যায়। সেখানে রাত হলেই জোনাকিরা ভিড় করে। আজও তার ব্যতিক্রম হয়নি। একটা অন্ধকার ছাদই এখন আমাদের মস্ত এক আনন্দের জায়গা। কৌশিক তামাক ছেড়ে হঠাৎ গিটারটা নিয়ে টুং টুং করতে লাগল!

‘’ আজ কি তামাক ছাড়াই নেশা হয়ে গেছে ?’’
 কৌশিক বলল, ‘’না রে! একটা গান গাইতে ইচ্ছে করছে?’’
‘’ কোন গান ?’’  
‘’ চাকরিটা আমি পেয়ে গেছি, বেলা সত্যি......’’

আমিও গলা মেলাতে মেলাতে ভাবলাম, বেকার প্রেমিক তার প্রেমিকার কাছে শুধু মাত্রই খেলনার পাত্র। কৌশিক গানটা শেষ করার পর দেখালাম ওর মধ্যে একটা আনবিল আনন্দ খেলা করে বেড়াচ্ছে। আর হয়ত এটা স্বাভাবিক। নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছে। ভাল কোম্পানিতে চাকরি করছে। একজন আদর্শ প্রেমিকের মতো তার দায়িত্ব পালন করছে। ব্যস, আর কী চাই। মাঝে মাঝে ওর পাশে নিজেকে বড্ড ফ্যাকাশে লাগে।

তবে আমার একটা অন্য গান আজ গাইতে বড্ড ইচ্ছে করছে। কৌশিক আবার গিটার রেখে তামাক বানানোয় মন দিল। খোলা ছাদে আমাদের সঙ্গী বলতে একটা কাঁচি, কয়েকটা পেপার, জল, ডায়রি ,গিটার আর ওই দূরের জোনাকিগুলো। আমি হঠাৎ গুন গুন করে গাইতে লাগলাম, ‘’ আজ হোক না রঙ ফ্যাকাসে, তোমার আমার আকাশে, চাঁদের হাসি যতই হোক না ক্লান্ত...’’  

একদিন আমাদের সবাইকে এইরকম একটা খোলা ছাদে এসে দাঁড়াতে হবে। যেখানে আমরা সবাই সব সম্পর্কের জটিলতা ভুলে এক সুরে গান গাইব। ভুলে যাব বৈধ আর অবৈধ সম্পর্কের কূটনীতি। জয়ী, এই সেই নভেম্বর। যখন আমাদের প্রেম ঠিক এই রকম একটা খোলা ছাদে এক অন্যের গভীরতা মাপতে ব্যস্ত, একে অন্যকে আরও ভালবাসতে ব্যস্ত। এই সেই কবিতার মাস। এই সেই কথা দেওয়ার মরসুম। জয়ী একটা বছর পেরিয়ে গেল, কিন্তু আমাদের বয়সের ফারাকটা আজও কিন্তু দশ। মনে পরে জয়ী, সেই নভেম্বরটা?

‘’ কার সঙ্গে কথা বলছিলে?’’
‘’ বরের সঙ্গে!’’
‘’ প্রায় আধ-ঘণ্টা ধরে ফোনটা ব্যস্ত বলছিল।‘’
‘’ হ্যাঁ, কিছু ব্যক্তিগত কথা বলছিলাম।‘’
‘’ বরকে ছেড়ে এতদিন এই বাড়িতে ভাল লাগছে?’’
‘’ একদমই না! কবে চলে যেতে পারব ভাবছি।‘’
‘’ আমাকে ছেড়ে চলে যাবে ?’’
‘’ যেতেই হবে, কাউকে কথা দিয়ে এসেছি।‘’
‘’ আমাকেও তো কথা দিয়েছিলে, আমার পাশে থাকবে সারাজীবন।‘’
‘’ থাকব তো, তবে এইভাবে নয়।‘’

দুপুরটা আজ শান্ত। প্রতিদনের মতো কুকুরগুলো ঘেউ ঘেউ করছে না। পাশের বাড়িতে ঝগড়াটা আজ অনেক আগেই থেমে গেছে। জানলা দিয়ে পুকুরটা দেখা যায়। পুকুর পাড়ে কয়েকটা অবাঙালী ছেলেদের আড্ডা বসেছে। প্রতিদিনের মতো পুকুরের ওপাশের বাড়িতে স্বামী-স্ত্রীয়ের মারপিট চলছে। বাবা-মা তুলে গালাগাল দিচ্ছে একে অন্যকে। জয়ীর এগুলো একদম পছন্দ নয়। অন্যদিনের মতো জয়ী মেয়েকে ঘুম পাড়িয়ে গল্পের বইতে মুখ গুঁজেছে। তবে জয়ী আজ বড্ড হাল্কা। শাশুড়ি আজ বাড়িতে নেই, শ্বশুরও দোতলায় ভাত ঘুম দিচ্ছে। জানলা দিয়ে একটা হাল্কা আলো এসে পড়ছে জয়ীর মুখের একপাশে। ডান গালের তিলটা আমাকে পাগল করে দিচ্ছে। বাধ্য হয়েই আমিই কথা ঘুরিয়ে বললাম, ‘’ কর্নেল সমগ্রটা শেষ হয়নি এখনও?’’

‘’ না! দেখিস তো সময়ই পায় না। মেয়েকে সামলে হেঁসেলে সামলায়। এই করেই তো দিনগুলো কেটে যাচ্ছে।‘’
‘’ আর আমি ? তোমার প্রতিদিনের তালিকায় আমি নেই ?’’
‘’ আছিস তো!’’
‘’ বল, শুধুমাত্র প্রয়োজনে আছি।‘’
‘’ বাজে বকিস না!’’
‘’ আবারও এড়িয়ে যাচ্ছ।‘’
‘’ বেশ করছি।‘’ জয়ীর ঠোঁটের কোনায় একটা মিচকে হাসির ঝলক দেখতে পেলাম। জয়ীর হাতটা ধরে একটা চুমু খেলাম। জয়ী হাসল। জয়ী বুঝতে পারল, এবার আমি কী বলব!
‘’ কিছু বলবি?’’
‘’ আমাকে ছেড়ে যেও না!’’
‘’ বাচ্চাদের মতো করিস না। আমাকে ফিরতেই হবে।‘’
‘’ তাহলে আমার কোনও মূল্য নেই ?’’
‘’ আবার পাগলামি করছিস!’’

জয়ীকে আজ বেশ স্নিগ্ধ লাগছে। সাদা আর নীল ছোপের সালোয়ারটায় আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে জয়ী। বক্ষদ্বয় মোহময়ী। চোখের একপাশে বারবার উড়ে আসা চুল ওকে বিরক্ত করছে। আমি সেই উড়ুক্কু চুল সরিয়ে জয়ীর গালে একটা চুমু খেলাম। জয়ী সঙ্গে সঙ্গে আমাকে সরিয়ে দিয়ে বলল, ‘’ কেউ এসে যাবে!’’ আমি জয়ীর আরও কাছে এসে বললাম, ‘’ কেউ আসবে না।!’’ জয়ী বলল, ‘’ এগুলো কিন্তু ঠিক হচ্ছে না।‘’ আমি জয়ীর আরও কাছে গিয়ে বললাম, ‘’ প্রেমে সবকিছুই অবৈধ! সবকিছুই ক্ষণস্থায়ী।‘’ জয়ী আমার চোখের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকল।

 একটা অব্যক্ত রাগ দেখতে পেলাম জয়ীর চোখে। জয়ীর কপাল জুড়ে খেলা করে বেড়াচ্ছে বিভিন্ন চিন্তার ভাঁজ। আমি সেই চিন্তার ভাঁজে ছুঁয়ে দিলাম আমার সিক্ত ঠোঁট। জয়ী আমার আরও কাছে চলে এলো। ওর চোখ দুটোই দিলাম আশ্বাসের স্বাদ, জয়ী আমার বুকে মাথা দিল। তারপর গালে, ঠোঁটে ছুঁয়ে দিলাম আমাদের অবৈধ ভালবাসা। আরও জাপটে ধরলাম ওকে। গলা বেয়ে বুকের খাঁজে দাঁড়ালাম, হঠাৎ মেয়ে কেঁদে উঠল। জয়ী আমাকে এক ঝটকায় সরিয়ে দিল। তারপর অনেক্ষন নিস্তব্ধ এই প্রাচীন ঘরটা। মেয়ে আবার ঘুমিয়ে পড়েছে। দুপুর প্রায় শেষের পথে। জয়ী বলল, ‘ রাতুল, আমাকে ভুলে যা!’’ আমার পৃথিবীটা কেমন হেলে গেল। বললাম, ‘’ কেন? তুমি ছাড়া তো আমি অন্ধকার!’’ 

জয়ী একটু ধমকের সঙ্গে উত্তর দিল, ‘’ কাব্য ছাড়! আমি তোকে ভালবাসতে পারলেও সেটা কোনওদিন স্বীকার করতে পারব না। কারণ আমি অন্য কারুর। তাঁর জন্যই বাঁচতে হবে, তাঁর জন্যই ভালবাসতে হবে।‘’ আমি বললাম, ‘’ তুমি কেমন বুড়িদের মতো কথা বলছ!’’ জয়ী আবার বলল, ‘ যা বলছি, একদম ঠিক বলছি। আমি তোর ভাল চাইব সারাজীবন, যেখানেই থাকি আমরা খুব কাছাকাছি থাকব।‘’

এই সামনের সপ্তাহে জয়ী হয়ত আবারও আসবে। কিন্তু সেটাও একটা নিমন্ত্রণ রক্ষা ছাড়া আর কিছুই নয়। ওর ননদের বিয়ে। সেই ননদ যে আমাদের প্রেম বহুবার ঘেঁটে দেওয়ার চেষ্টা করেছে। জয়ী এই বাড়িতে আমাদের অনেক অজানা কথা লুকিয়ে আছে। এই বাড়িটা কোনওদিন ভাগ হতে পারবে না। কোনও কেউ আমাদের সেই অজানা প্রেম ঘেঁটে দিতে পারবে না। শুধু আমরাই একে অন্যের কাছে অচেনা হয়ে যাচ্ছি। আরও দূরে সরে যাচ্ছি। আরও আরও দূরে, যেখানে আমরা একে অন্যের অপরিচিত।


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ভূতে ভয় পেলেও, ‘ সেক্সি ভূত’-এর চরিত্রে অভিনয় করতে ভয় পাননি সায়ন্তনী

টলিউড ডিভা সায়ন্তনী গুহঠাকুরতা ডেবিউ করে ফেললেন দক্ষিণী সিনেমায়। যদিও কিছুদিন আগেই তিনি আটপৌরেকে সে ব্যাপারে জানিয়েছিলেন। কিন্তু সম্প্রতি এই হোলিতে সিনেমাটি রিলিজ করার পর থেকেই তিনি খবরের শিরোনামে। যদিও তার কারণ, তিনি এই প্রথম একটি ভূতের চরিত্রে অভিনয় করেছেন। শুধু তাই নয়, একটি ‘ সেক্সি’ ভূতের চরিত্রে এবং তাঁকে নিয়েই গল্পটা গড়ে উঠেছে।  সিনেমার নাম, ‘ চিকাটি গাডিলু চিঠাকোটুন্ডু’। তেলেগু সিনেমায় কাজ করে বেশ উচ্ছ্বসিত সায়ন্তনী। এখানেই শেষ নয়, তেলেগু ইন্ড্রাস্টির ভূয়সী প্রশংসা করেছেন তিনি। তাঁদের কাজের ধরন তাঁর বেশ পছন্দ হয়েছে । ইতিমধ্যে আরও একটি দক্ষিণী সিনেমার প্রস্তাবও পেয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। গল্পটিতে দেখা যায় দুই যুগল জুটি ছুটি কাটাতে গিয়ে আটকে যায় একটি ভৌতিক বাড়িতে।  সেখানে তারা একটি সেক্সি ভূতের পাল্লায় পরে। তারপর গল্প আস্তে আস্তে অন্যদিকে মোড় নেই।  সায়ন্তনী আটপৌরেকে জানালেন , ‘’ আমাকে অনেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় মেসেজ করে এই সিনেমার ব্যাপারে জানিয়েছেন! তাঁদের আমার চরিত্রটাও ভাল লেগেছে।‘’ ‘’ আপনাকে কেউ যদি রিয়েল লাইকে সেক্সি বলেন, সেটা আপনি কীভাব...

হেমন্তের উষ্ণ পরশ মিশিয়ে তালমায় ফিরল রোমিও জুলিয়েট, ঠোঁটে ঠোঁটে ' ফুল বডি রিলাক্স'

  আদিত্য ঘোষ, কলকাতাঃ বাংলার রোমিও জুলিয়েটরা দর্শককে রাত জাগিয়ে ওয়েব সিরিজের প্রতিটা পর্ব দেখতে বাধ্য করেছে। শুধু তাই নয়, দুই নবাগত অভিনেতা অভিনেত্রী  বাংলা সিরিজের মুখ্য চরিত্র হয়ে উঠেছে। বাংলা বাজারে ভাল সিনেমা বা ওয়েবের কদর আরও একবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখানোর চেষ্টা করেছে পরিচালক অর্পণ গড়াই। ক্যামেরার পিছনে এবং সামনে আরও একবার উজ্জ্বল ভূমিকার অবতীর্ণ হয়েছেন বাংলা সিনেমার  'ডন' অনির্বাণ ভট্টাচার্য। তবুও তালমার রোমিও এবং জুলিয়েট যথাক্রমে দেবদত্ত এবং হিয়া বাঙালি দর্শক মননে মিষ্টি প্রেমের উপাখ্যান হয়ে থেকে যাবে চিরকাল। যেখানে একটা সহজ সরল প্রেমকে স্রেফ টুকে দেওয়া হয়েছে সিনেমার পর্দায়। কোনও বাড়তি অলঙ্করণ নেই। কোনও উপমা-উপঢৌকন নেই। স্রেফ জীবনকে পর্দায় দেখালে যেমন মনে হয় ঠিক সেইরকম।  অভিনেতা দেবদত্ত রাহার হাতেখড়ি থিয়েটারের অভিনয় দিয়ে। তবে এই মুহূর্তে তিনি মঞ্চ থেকে বহুদূরে। তিনি আটপৌরেকে ফোনে জানালেন যে, ' থিয়েটার ছেড়েছি প্রায় তিন বছর, এখন বড় পর্দায় কাজ করার জন্য মুখিয়ে আছি। বেশ কিছু সিরিয়ালের প্রস্তাব পেলেও এই মুহূর্তে সিনেমা বা ওয়েব সিরিজের অভিনয়ের জন্যই ফোকাস করছি।' মফঃস...

রোগ চিনে নেওয়ার বিভিন্ন উপায় বাতলে দিচ্ছেন ডাক্তার সোমনাথ বিশ্বাস

হৃদয়ঘটিত বিভিন্ন রোগের অশনিসংকেত বুঝবেন কী করে-( পর্ব ১) খাই খাই বাঙালির বুকে ব্যথা হবে না, এও কি সম্ভব? যুগে যুগে বাঙালি জাতি নিজেরাই ডাক্তারি করে মোটামুটি বুঝে নিয়েছে বুকে একটু-আধটু ব্যথা মানেই ওটা গ্যাসের সমস্যা। আসলে বাঙালি জাতি এটা মানতেই অস্বীকার করে যে বুকে ব্যথা হৃদয় ঘটিত বিভিন্ন কারণে হতে পারে। সেটা অনেক সময় হার্ট এট্যাক এর লক্ষণও হতে পারে। উঁহু, অযথা ভয় পাওয়ার জন্য নয় এই লেখা নয়। উপরন্তু এই লেখা শুধুমাত্র একটা প্রাণ বাঁচানোর জন্য। তবে ডাক্তার বাবু বিশ্বাস মহাশয় কফি খেতে খেতে কহিলেন, " আধুনিক জীবনে আমি একটা স্মার্ট ওয়াচ ব্যবহার করতে পারলে, বুকে হঠাৎ ব্যথা হলে একটা ইসিজি করিয়েও দেখতে পারি। আমরা যদি বুকে ব্যথা ব্যাপারটা চেপে যায় তাহলে আর কি আধুনিক হলাম, তাহলে চিকিৎসা বিজ্ঞানের এত উন্নতি হয়ে লাভ কোথায়?" কফির কাপে চুমুক দিয়ে ডাক্তার বিশ্বাস আরও জানালেন যে, " আমাদের বুঝতে হবে চিকিৎসা বিজ্ঞান অনেকটা এগিয়েছে, তার সঙ্গে আমাদেরও এগোতে হবে। বুকে ব্যথা মানেই গ্যাস এবং সঙ্গে সঙ্গে একটা গ্যাসের ওষুধ খাওয়া মানেই সমস্যার শেষ এটা ভাবা একদমই বুদ্ধিমানের কাজ হবে না।" একটু...