সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

বাঙালি কন্যার আবিষ্কারে চিকিৎসাবিজ্ঞানে নতুন দিশা


 

আদিত্য ঘোষ, কলকাতা:


হৃদযন্ত্র বিকলের সঙ্গে কিডনি বিকল হয়ে মৃত্যুর ঘটনা নতুন কিছু নয়। সারা বিশ্বজুড়ে এহেন মৃত্যুর ঘটনা প্রায় প্রতিদিনই ঘটছে। হৃদযন্ত্রের অসুখ থেকে সেরে ওঠার পরে কিডনি বিকল হওয়া কিংবা কিডনির অসুখ হওয়া খুবই সাধারণ ঘটনা। শুধু তাই নয় কিডনির অসুখ মারাত্বকরকম হলে সেই থেকে মৃত্যুও ঘটতে পারে। তাই হৃদযন্ত্রের সমস্যা থেকে সেরে উঠলেও অনেকেই কিডনির সমস্যার মধ্যে দিয়ে যায়। তাদের খুব কঠোর এবং নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন পালন করতে হয়। আবার অনেক সময়ই চিকিৎসকরা হৃদযন্ত্রের সমস্যা থেকে সেরে উঠলেও বারেবার কিডনির প্রতি বিশেষ নজর দিতে বলেন, যাতে ভবিষ্যতে কোনওরকম সমস্যা না হয়। এই ব্যাপারে আগাম জানার বা বোঝার উপায় এতদিন পর্যন্ত খুব একটা ছিল না। বাঙালি কন্যা এমেলি চট্টোপাধ্যায়ের দৌলতে সেই অন্ধকার রাস্তা এখন কিছুটা হলেও আলোকিত। গবেষক এমেলি আটপৌরের মুখোমুখি হয়ে জানালেন, " কিডনি থেকে হার্টের সমস্যা কিংবা হার্টের থেকে কিডনি বিকল হয়ে যাওয়ার সমস্যার কথা নতুন নয়। আমরা একটি মানবদেহে একটি বায়োমার্কারের খোঁজ পেয়েছি যা আগাম জানান দেবে যে আপনার কার্ডিও রেনাল সিন্ড্রোম হবে কিনা।''

কার্ডিও রেনাল সিন্ড্রোম (সিআরএস) আসলে একটি ডাক্তারি পরিভাষা। যার অর্থ যখন কোনও রোগীর হার্ট ফেলিওরের সূত্রে কিডনি ফেলিওয় হয় কিংবা কিডনির কোনও সমস্যা দেখা যায় তাহলে তাকে সিআরএস কিংবা কার্ডিও রেনাল সিন্ড্রোম বলে। মুশকিল হলো এই সিআরএস কার কখন ঘটবে সেটা বলা মুশকিল। চিকিৎসা বিজ্ঞানে এখনও মাধ্যম নেই যার সাহায্যে বোঝা সম্ভব যে কোন রুগীর ক্ষেত্রে কোন সমস্যা দেখা যাবে। আমেরিকার হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের  ম্যাসাচুসেটস জেনারেল হাসপাতালের কার্ডিওভাস্কুলার রিসার্চ সেন্টারের গবেষক এমেলি চট্টোপাধ্যায় আরও জানালেন যে, " আমরা চেষ্টা করেছি মানব দেহ থেকে রক্ত নিয়ে এমন একটি প্রযুক্তির সাহায্যে পরীক্ষা করা যা আগাম জানান দেবে যে শরীরে সিআরএসের প্রকোপ আছে কী নেই। এই পুরো প্রক্রিয়াটি হয়েছে অর্গান-অন- চিপ পদ্ধতিতে। আমি আমার ব্যবহারের জন্য কিডনি-অন-চিপ ব্যবহার করেছি।" এই অর্গান-অন-চিপ পদ্ধতিতে কোনও প্রাণীর ব্যবহার করা হয় না। এই অর্গান-অন-চিপ আসলে বিভিন্ন চ্যানেলযুক্ত থ্রীডি মাইক্রোফ্লুইড সেল কালচার, যা একটি মানব শরীরের অর্গান সিস্টেমের মতো হুবহু কাজ করতে পারে।




একটু থেমে তিনি আরও জানালেন যে, " আমরা গবেষনায় দিখেছি যে সমস্ত রোগীর হার্টের সমস্যা থাকে তাদের শরীরের বিভিন্ন কোষ থেকে এক্সট্রা সেলুলর ভেসিকেল নামের  একটি  ন্যানো পার্টিকেল নির্গত হয় যা রক্তের মাধ্যমে প্রবাহিত হয়ে কিডনিতে পৌঁছালে কিডনির সমস্যা তৈরি করতে পারে। এখানেই আমরা আগাম জানান দিতে পারব যে ভবিষ্যতে কার সিআরএসের সমস্যা হতে পারে কিংবা হতে পারে না।"

কলকাতায় বড় হয়ে ওঠা এমেলির গলায় যদিও আপেক্ষের সুর, তিনি বললেন, " এই গবেষণা এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে আছে। আদেও এটি কবে মানব বিজ্ঞানে কাজে লাগবে সেটা বলা মুশকিল। এই সমস্ত প্রক্রিয়া দীর্ঘদিন ধরে চলে, বিভিন্ন পর্যায়ে বিভিন্ন পরীক্ষা চলে। সেই সমস্ত পথ পেরিয়ে গেলেই পুরোপুরি সাফল্য আসবে।"





জীববিজ্ঞানের ছাত্রী এমেলির গলায় আক্ষেপের সুর থাকলেও তিনি যা করেছেন আপাতত সেটাই অনেক। চিকিৎসা বিজ্ঞানে নতুন দিশা খুলে দিয়েছেন। হৃদরোগের সঙ্গে কিডনির সমস্যার মতো জটিল রোগে একটু হলেও আলোকপাত করেছেন। এই গবেষণাটি 'জার্নাল অফ ক্লিনিক্যাল ইনভেস্টিগেশন ইনসাইট' বিজ্ঞান পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। 

(ছবি- সংগৃহীত)

মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ভূতে ভয় পেলেও, ‘ সেক্সি ভূত’-এর চরিত্রে অভিনয় করতে ভয় পাননি সায়ন্তনী

টলিউড ডিভা সায়ন্তনী গুহঠাকুরতা ডেবিউ করে ফেললেন দক্ষিণী সিনেমায়। যদিও কিছুদিন আগেই তিনি আটপৌরেকে সে ব্যাপারে জানিয়েছিলেন। কিন্তু সম্প্রতি এই হোলিতে সিনেমাটি রিলিজ করার পর থেকেই তিনি খবরের শিরোনামে। যদিও তার কারণ, তিনি এই প্রথম একটি ভূতের চরিত্রে অভিনয় করেছেন। শুধু তাই নয়, একটি ‘ সেক্সি’ ভূতের চরিত্রে এবং তাঁকে নিয়েই গল্পটা গড়ে উঠেছে।  সিনেমার নাম, ‘ চিকাটি গাডিলু চিঠাকোটুন্ডু’। তেলেগু সিনেমায় কাজ করে বেশ উচ্ছ্বসিত সায়ন্তনী। এখানেই শেষ নয়, তেলেগু ইন্ড্রাস্টির ভূয়সী প্রশংসা করেছেন তিনি। তাঁদের কাজের ধরন তাঁর বেশ পছন্দ হয়েছে । ইতিমধ্যে আরও একটি দক্ষিণী সিনেমার প্রস্তাবও পেয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। গল্পটিতে দেখা যায় দুই যুগল জুটি ছুটি কাটাতে গিয়ে আটকে যায় একটি ভৌতিক বাড়িতে।  সেখানে তারা একটি সেক্সি ভূতের পাল্লায় পরে। তারপর গল্প আস্তে আস্তে অন্যদিকে মোড় নেই।  সায়ন্তনী আটপৌরেকে জানালেন , ‘’ আমাকে অনেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় মেসেজ করে এই সিনেমার ব্যাপারে জানিয়েছেন! তাঁদের আমার চরিত্রটাও ভাল লেগেছে।‘’ ‘’ আপনাকে কেউ যদি রিয়েল লাইকে সেক্সি বলেন, সেটা আপনি কীভাব...

হেমন্তের উষ্ণ পরশ মিশিয়ে তালমায় ফিরল রোমিও জুলিয়েট, ঠোঁটে ঠোঁটে ' ফুল বডি রিলাক্স'

  আদিত্য ঘোষ, কলকাতাঃ বাংলার রোমিও জুলিয়েটরা দর্শককে রাত জাগিয়ে ওয়েব সিরিজের প্রতিটা পর্ব দেখতে বাধ্য করেছে। শুধু তাই নয়, দুই নবাগত অভিনেতা অভিনেত্রী  বাংলা সিরিজের মুখ্য চরিত্র হয়ে উঠেছে। বাংলা বাজারে ভাল সিনেমা বা ওয়েবের কদর আরও একবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখানোর চেষ্টা করেছে পরিচালক অর্পণ গড়াই। ক্যামেরার পিছনে এবং সামনে আরও একবার উজ্জ্বল ভূমিকার অবতীর্ণ হয়েছেন বাংলা সিনেমার  'ডন' অনির্বাণ ভট্টাচার্য। তবুও তালমার রোমিও এবং জুলিয়েট যথাক্রমে দেবদত্ত এবং হিয়া বাঙালি দর্শক মননে মিষ্টি প্রেমের উপাখ্যান হয়ে থেকে যাবে চিরকাল। যেখানে একটা সহজ সরল প্রেমকে স্রেফ টুকে দেওয়া হয়েছে সিনেমার পর্দায়। কোনও বাড়তি অলঙ্করণ নেই। কোনও উপমা-উপঢৌকন নেই। স্রেফ জীবনকে পর্দায় দেখালে যেমন মনে হয় ঠিক সেইরকম।  অভিনেতা দেবদত্ত রাহার হাতেখড়ি থিয়েটারের অভিনয় দিয়ে। তবে এই মুহূর্তে তিনি মঞ্চ থেকে বহুদূরে। তিনি আটপৌরেকে ফোনে জানালেন যে, ' থিয়েটার ছেড়েছি প্রায় তিন বছর, এখন বড় পর্দায় কাজ করার জন্য মুখিয়ে আছি। বেশ কিছু সিরিয়ালের প্রস্তাব পেলেও এই মুহূর্তে সিনেমা বা ওয়েব সিরিজের অভিনয়ের জন্যই ফোকাস করছি।' মফঃস...

রোগ চিনে নেওয়ার বিভিন্ন উপায় বাতলে দিচ্ছেন ডাক্তার সোমনাথ বিশ্বাস

হৃদয়ঘটিত বিভিন্ন রোগের অশনিসংকেত বুঝবেন কী করে-( পর্ব ১) খাই খাই বাঙালির বুকে ব্যথা হবে না, এও কি সম্ভব? যুগে যুগে বাঙালি জাতি নিজেরাই ডাক্তারি করে মোটামুটি বুঝে নিয়েছে বুকে একটু-আধটু ব্যথা মানেই ওটা গ্যাসের সমস্যা। আসলে বাঙালি জাতি এটা মানতেই অস্বীকার করে যে বুকে ব্যথা হৃদয় ঘটিত বিভিন্ন কারণে হতে পারে। সেটা অনেক সময় হার্ট এট্যাক এর লক্ষণও হতে পারে। উঁহু, অযথা ভয় পাওয়ার জন্য নয় এই লেখা নয়। উপরন্তু এই লেখা শুধুমাত্র একটা প্রাণ বাঁচানোর জন্য। তবে ডাক্তার বাবু বিশ্বাস মহাশয় কফি খেতে খেতে কহিলেন, " আধুনিক জীবনে আমি একটা স্মার্ট ওয়াচ ব্যবহার করতে পারলে, বুকে হঠাৎ ব্যথা হলে একটা ইসিজি করিয়েও দেখতে পারি। আমরা যদি বুকে ব্যথা ব্যাপারটা চেপে যায় তাহলে আর কি আধুনিক হলাম, তাহলে চিকিৎসা বিজ্ঞানের এত উন্নতি হয়ে লাভ কোথায়?" কফির কাপে চুমুক দিয়ে ডাক্তার বিশ্বাস আরও জানালেন যে, " আমাদের বুঝতে হবে চিকিৎসা বিজ্ঞান অনেকটা এগিয়েছে, তার সঙ্গে আমাদেরও এগোতে হবে। বুকে ব্যথা মানেই গ্যাস এবং সঙ্গে সঙ্গে একটা গ্যাসের ওষুধ খাওয়া মানেই সমস্যার শেষ এটা ভাবা একদমই বুদ্ধিমানের কাজ হবে না।" একটু...