সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

" একা চলতে গিয়ে অনেক কিছু শিখেছি।" : পৌলমী দাস


 আদিত্য ঘোষ, কলকাতা:

অভিনেত্রী পৌলমী দাস তো আবহমান। জীবন থেকে শিখেছেন এবং শিখছেন। বাংলা ইন্ডাস্ট্রির আনাচে কানাচে দাপিয়ে বেড়িয়েও তিনি অক্লান্ত। টিভি সিরিয়াল থেকে সিনেমা, সিনেমা থেকে ওয়েব সিরিজ, ওয়েব সিরিজ থেকে বিজ্ঞাপনের ছবি, সবকিছুতেই তিনি সাবলীল। অভিনয়ের অনবদ্য দক্ষতা দিয়ে আপাতত টেস্ট, ওয়ানডে, টোয়েন্টি সব ফরম্যাটের তিনি দ্য ওয়াল হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। তবে এই যুগে যে লড়াইটা কঠিন সেটা তিনিও জানেন। তাই তো তিনি এখনও লড়ে যাচ্ছেন। প্রসেস, প্রক্রিয়ার মধ্যে তিনি নিজেকে নিমজ্জিত রেখেছেন। জীবনের প্রতিটি পর্ব থেকে তিনি শিখছেন। জীবন থেকে অভিনয়ের রসদ খুঁজে নিচ্ছেন। 


গত বছর শেষের দিকে তিনি একা একা বিদেশ সফরে গিয়েছিলেন। তাঁর লন্ডন ডায়েরীর কথা বলতে গিয়ে তিনি জানালেন, " জীবনে ঘোরা আর খাওয়া ছাড়া আমি বাঁচব না।" কথাটা শেষ করার সঙ্গে সঙ্গে তিনি হাসতে হাসতে আরও জানালেন যে, "জীবনে অনেক জায়গায় একা একা ঘুরতে গিয়েছি। কিন্তু লন্ডনে ঘুরতে যাওয়াটা আমাকে অনেক কিছু শিখিয়েছে।" তিনি যে উড়োজাহাজে দুবাই যাচ্ছিলেন, সেই উড়োজাহাজেই তাঁর পাশের সিটে বসে থাকা সহযাত্রী তাঁর অভিনীত ধারাবাহিক দেখছিলেন! কী আশ্চর্য। শুধু তাই নয়, তাঁকে চিনতে পেরে তাঁর ধারাবাহিকের নাম ধরে সম্বোধন করলেন। এই পাওয়া তো আশীর্বাদ সমান। পরিচিতি বাড়ল একটু হলেও। তারপরে যে উড়োজাহাজে তিনি দুবাই থেকে হিতরো উড়ে গেলেন, সেইখানে তিনি খুঁজে পেলেন তাঁরই অভিনীত দুটি সিনেমা। এ যেন হাতে চাঁদ পাওয়া। তবে আসল পরীক্ষা এখনও আসেনি। হয়ত যে পরীক্ষায় তিনি পাশ না করলে অপরিণত থেকে যেতেন। তাঁর কথায়, " একা একা ঘুরতে গেলে অনেক কিছু শেখা যায়।" যদিও এই কথা অনেক জ্ঞানীগুণী ব্যক্তিরা বলে গিয়েছেন। আসলে এই কথার সারমর্ম এটাই যে একা ঘুরতে গিয়ে যতক্ষণ না বিপদে পড়ছেন ততক্ষণ টের পাওয়া যায় না। 


পৌলমী যে বাসে করে স্কটল্যান্ড এসে পৌঁছালেন, সেই বাস তাঁর লাগেজ না নামিয়ে দিয়েই চলে গেল গন্তব্যে। যে লাগেজে তাঁর জামাকাপড়, ওষুধ, টাকা ছাড়াও ছিল পাসপোর্ট। এই অবস্থায় পৌলমী প্রথমে কী করবে বুঝতে না পেরে ইতিউতি ফোন করেন। স্থানীয় প্রশাসনের সাহায্য নেওয়ার চেষ্টা করলেও তা বিফলে যায়। কারণ তখন সেখানে স্থানীয় কিছু কারণে সরকারী ছুটি চলছিল। ফলত পৌলমী তৎক্ষণাৎ প্রচন্ড ভয়ে অজ্ঞান হয়ে যান। কিন্তু স্থানীয় এক মহিলার সহায়তায় তিনি সুস্থ বোধ করেন। তবে তখনো আকাশের মেঘ কাটেনি। ঘোর কাটলেও পৌলমী প্রথমে ভাবছিল কোনও দুঃস্বপ্ন কিংবা কোনও সিনেমার প্লটে আছেন। তবে তাঁর অনুধাবন করতে সময় লাগলেও বুঝতে পারেন যে এটা কোনও সাজানো ঘটনা নয়। সত্যি সত্যি তিনি বিদেশ বিভুঁইয়ে বিপদে পড়েছেন। তারপরে কোনওরকমে মাথা গোঁজার ঠাঁয়ের বন্দোবস্ত করে একই পোশাকে তিনদিন কাটিয়েছেন। দৌড়ে বেড়িয়েছেন স্থানীয় প্রশাসনের দোড়গোড়ায়। অবশেষে তিন বাদে উদ্ধার করেছেন তাঁর লাগেজ, পাসপোর্ট। তাঁর কথায়," বিগত তিনদিন আমার মধ্যে দিয়ে কী গিয়েছে একমাত্র আমি জানি। কাউকে ফোন করে কিচ্ছু জানায়নি। কাউকে বুঝতেও দিইনি যে কী ঘটেছে। ওই তিনদিনে বহুবার মাথা ঘুরেছে, গা গুলিয়ে উঠেছে, বুক ধড়পড় করেছে তবুও কাউকে কিচ্ছু জানায়নি। দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই করেছি।" একটু থেমে তিনি আরও জানালেন যে, " তিন বাদে যখন লাগেজ ফিরে পেলাম তখন শুধু হাউহাউ করে কেঁদেছি। সেই সময়টা আমি খুব ডাউন ছিলাম। লন্ডন যাওয়ার আগে থেকেই বিভিন্ন সমস্যার মধ্যে দিয়ে গিয়েছি। তখন একটুতেই ভয় পেয়ে যেতাম। একটুতেই ঘাবড়ে যেতাম। সেই আমিই এত বড় ঘটনা একা সামলেছি। এখনও বিশ্বাস হয় না। আসলে অভিনেতা-অভিনেত্রীরা তো জীবন থেকেই অভিনয় শেখে। আসলট ব্যথা, ভয় এগুলো উপলব্ধি না করলে তো নকলটাও আসবে না। তাই হয়ত জীবন আমাকে একা পেয়ে শিখিয়ে গেল।" 




আপাতত পৌলমী এখন ধারাবাহিকের পর্দায়, অনেকদিন হলো ধারাবাহিকের পরিচিত মুখ হয়ে উঠেছে সে। 'কার কাছে কই মনের কথা' ধারাবাহিকের তিনি এখন পরিচিত মুখ। এর আগে 'মেঘে ঢাকা তারা' ধারাবাহিকে চুটিয়ে কাজ করেছেন তিনি। তবে বাংলা ছবির জগতেও তিনি উজ্জ্বল। 'ব্যোমকেশ হত্যামঞ্চ', 'তীরন্দাজ শবর',  'মহিষাসুরমর্দিনী', 'অসমাপ্ত', 'কার্জনের কলম, 'ঘুণ'-এর মতো সিনেমা রয়েছে তাঁর ঝুলিতে। শুধু তাই নয়, ' ফেলুদা ফেরত', ' বউ কেন সাইকো'- এর ওয়েব সিরিজ রয়েছে তার বুক পকেটে। পরিচালক অভিজিৎ গুহ এবং সুদেষ্ণা রায়-এর ছবি 'শেষ রক্ষা'তেও তিনি কাজ করেছেন। জিজ্ঞাসা করলাম, " এত কাজ করতে করতে হাঁপিয়ে উঠছো না?" সাবলীল ভাবে উত্তর দিল " একদমই না। এখন এত কাজ করতে বেশ এনজয় করছি। ভালবেসে করছি তো তাই ক্লান্তি আসছে না। প্রতিদিন শুটিং ফ্লোরের ওই কলটাই আমাকে একদম সতেজ রেখেছে।" একটু থেমে পৌলমী বলল, " অরিন্দম শীলের ছবি ইস্কাবনের বিবির বেশ কিছুটা শুটিং শেষ হয়ে এসেছে।" ওকে থামিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, " সিনেমা না সিরিয়াল কোনটা বেশী এনজয় করছো?" হাসতে হাসতে উত্তর দিল, " অভিনয়টা এনজয় করছি।" 


আবার কথায় কথায় তিনি ফিরে গেলেন তাঁর লন্ডন ডায়েরীর পাতায়। তিনি জানালেন,''আমার এই আঠেরো দিনের ট্যুরে আমি সারাদিন শুধু ঘুরে বেড়িয়েছি। নতুন মানুষদের সঙ্গে কথা বলেছি। তাঁদের কালচারকে ফলো করেছি। ছবি তুলেছি। মেট্রো চেপে শহরের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে গিয়েছি।"  কথাগুলো বলতে বলতে পৌলমী নিজের মধ্যে একটা আত্মতুষ্টি উপলব্ধি করছিল। যে উপলব্ধিটা এলমাত্র একাই সম্ভব। নিজেকে চেনার হয়ত এই একটি উপায়। জাস্ট ব্যাক প্যাক করে বেরিয়ে পড়ো। জীবনকে চেনো। একটা লম্বা নিঃশ্বাস টেনে বলে উঠো, বেঁচে থাকাটাই তো একটা অযাক্সিডেন্ট। পৌলমীর কথায়," লন্ডনে নেমেই একটা তীব্র ঠান্ডা হাওয়া ভেসে আসে, যেটা শিরায় শিরায় ছড়িয়ে ছড়িয়ে পড়ে। সব দুঃখ, কষ্ট ভুলিয়ে দেয়। শিহরণ জাগায় নতুন উদ্যমে বাঁচতে।"

(ছবি- অভিনেত্রীর থেকে সংগৃহীত)

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ভূতে ভয় পেলেও, ‘ সেক্সি ভূত’-এর চরিত্রে অভিনয় করতে ভয় পাননি সায়ন্তনী

টলিউড ডিভা সায়ন্তনী গুহঠাকুরতা ডেবিউ করে ফেললেন দক্ষিণী সিনেমায়। যদিও কিছুদিন আগেই তিনি আটপৌরেকে সে ব্যাপারে জানিয়েছিলেন। কিন্তু সম্প্রতি এই হোলিতে সিনেমাটি রিলিজ করার পর থেকেই তিনি খবরের শিরোনামে। যদিও তার কারণ, তিনি এই প্রথম একটি ভূতের চরিত্রে অভিনয় করেছেন। শুধু তাই নয়, একটি ‘ সেক্সি’ ভূতের চরিত্রে এবং তাঁকে নিয়েই গল্পটা গড়ে উঠেছে।  সিনেমার নাম, ‘ চিকাটি গাডিলু চিঠাকোটুন্ডু’। তেলেগু সিনেমায় কাজ করে বেশ উচ্ছ্বসিত সায়ন্তনী। এখানেই শেষ নয়, তেলেগু ইন্ড্রাস্টির ভূয়সী প্রশংসা করেছেন তিনি। তাঁদের কাজের ধরন তাঁর বেশ পছন্দ হয়েছে । ইতিমধ্যে আরও একটি দক্ষিণী সিনেমার প্রস্তাবও পেয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। গল্পটিতে দেখা যায় দুই যুগল জুটি ছুটি কাটাতে গিয়ে আটকে যায় একটি ভৌতিক বাড়িতে।  সেখানে তারা একটি সেক্সি ভূতের পাল্লায় পরে। তারপর গল্প আস্তে আস্তে অন্যদিকে মোড় নেই।  সায়ন্তনী আটপৌরেকে জানালেন , ‘’ আমাকে অনেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় মেসেজ করে এই সিনেমার ব্যাপারে জানিয়েছেন! তাঁদের আমার চরিত্রটাও ভাল লেগেছে।‘’ ‘’ আপনাকে কেউ যদি রিয়েল লাইকে সেক্সি বলেন, সেটা আপনি কীভাব...

পুজো মিটলে কী করে থাকবেন ফিট, উপায় বাতলে দিলেন বিশিষ্ট পুষ্টিবিদ এবং যাপন সহায়ক ডাক্তার অনন্যা ভৌমিক

  আশ্বিনের শারদপ্রাতে বাঙালির পাতে ভরে উঠেছে হরেক রকমের খাবার। ঠাকুর দেখার সঙ্গে হরেক রকমের খাবার খেতেই হবে। রোল, চাউমিন, মোগলাই, চাইনিজ, বিরিয়ানি, ফুচকা এবং আরও কত কী! সারাবছর যারা শরীরচর্চায় মেতে থাকেন, খুব নিয়ম করে খাবার খান তারাও এই সময়টা একটু বেনিয়ম হয়ে পড়েন। তবে কুচ পরোয়া নেহি, পুজো মিটলেই আবার কী করে নিজের শরীরকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনবেন সেই কথায় আটপৌরেকে জানালেন বিশিষ্ট পুষ্টিবিদ এবং যাপন সহায়ক ডাক্তার অনন্যা ভৌমিক।  ১) পুজো মিটলেই আমাদের ফিরতে হবে আবার স্বাভাবিক জীবনে।  তাই পুজোর হ্যাংওভার কাটিয়ে নিতে ভীষণভাবে দরকার পড়বে প্রচুর পরিমাণ জলের। জল শরীরের বিষক্রিয়া দূর করতে সাহায্য করে। শরীরের প্রয়োজন মতো দিনে অন্তত তিন থেকে চার লিটার জল খেলে শরীর সুস্থ থাকবে। তবে যাদের বেশী জল খাওয়া বারণ আছে তারা অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন। এছাড়া বাকিরা দিনে চার লিটার পর্যন্ত জল পান করলে শরীরের স্বাভাবিক কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রিত থাকবে।  ২) মরশুমি ফল খাওয়ার অভ্যাস করুন। এছাড়াও নিয়মিত শাকসবজি খেতে হবে। ফল এবং শাকসবজিতে প্রচুর পরিমানে ফাইবার এবং আন্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা শরীরকে আবার স...

পনেরো মিনিটেই ফিট থাকার রহস্য, উপায় বাতলে দিলেন যোগগুরু

  আটপৌরের নিজস্ব প্রতিবেদন, নৈহাটিঃ  শরীরকে মন্দিরের আখ্যা দেওয়া হয়। আর সেই শরীরকে সর্বদা ঠিক রাখতে আমরা কত পন্থায় না অবলম্বন করে থাকি। আজকাল ইঁদুর দৌড়ের যুগ, আর এই যুগে সময় পাওয়া একটা বিরাট চ্যালেঞ্জিং বিষয়। সময় বের করে শরীর চর্চা করার মতো সময় আমাদের কতজনের হাতেই বা আছে? মনের সুখে ছুটির দিন হাঁটলেই কি আমাদের শরীর ঠিক থাকবে নাকি সপ্তাহে প্রতিদিন জিমমুখী হতেই হবে ? যেমন আইটি সেক্টরে কর্মরত পার্থ সারথী চক্রবর্তী সোম থেকে শুক্র অবধি দম ফেলার সময় পায় না, অথচ কিছুদিন হল সে ঘাড়ের ব্যথায় কাবু। আবার সদ্য বিয়ে করা কৌশিক ভট্টাচার্য ইদানীং অফিস ফেরত সস্ত্রীক হাঁটতে বেরিয়ে নিজেকে ফিট ভাবছেন অথচ গত তিনমাসে তার দশ কেজি ওজন বৃদ্ধি পেয়েছে। তবুও সে নিরুপায়, অফিস ফেরত ছাড়া তার সময় নেই। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে গেলে শরীর চর্চা আর হবে না। এই সময়ের অভাব অনেকেরই তা বলে কী শরীর সে কথা শুনবে। শরীরে বাসা বাঁধছে জটিল রোগ। দিনের পর দিন ওষুধ খেয়েও সেই রোগ সারছে না। তবে ইচ্ছে থাকলে উপায় আছে, বলছেন বিশিষ্ট যোগ গুরু রাহুল তিওয়ারী। আটপৌরের মুখোমুখি হয়ে তিনি জানালেন যে খুব স্বল্প সময়ে ফিট থাকার জন্য কিছু প...