সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

"হাঁটু প্রতিস্থাপন এখন সাধ্যের মধ্যে" : ডা. অর্ণব সামন্ত


বাঙালি জাতির সঙ্গে উসেন বোল্টের একটা মিল আছে। কখন বলুন তো? এই ধরুন আপনি মফঃস্বল থেকে প্রতিদিন শহরতলিতে চাকরি করতে যান। কিন্তু প্রতিদিন হাতে ঠিক এমন একটা সময় নিয়ে বাড়ি থেকে বের হবেন যেখানে আপনাকে দৌড়তেই হবে। এটাই নিয়ম। এটাই বাঙালি করে আসছে। আর এই দৌড়ে সব বাঙালিই উসেন বোল্টকেও হার মানাবে। ট্রেনে বা বাসে উঠে একটা লম্বা হাঁপ ছেড়ে, একটু পা'টা ঝেড়ে নিয়েই বাঙালি আবার ল্যাদ খাবে। এটাই স্বমহিমায় চলে আসছে। আবার দিন শেষে হাঁটুতে ব্যাথাটাও আবহমান! শুধু হাঁটু কেন, গাঁটে গাঁটে ব্যথা, ঘাড়ে-পিঠে ব্যথা, কোমড়ে ব্যথা। ব্যথায় জর্জরিত বাঙালি। তবুও বাঙালির কুছ পরোয়া নেহি। তবে বিশিষ্ট অস্থিশল্য চিকিৎসক ডা অর্ণব সামন্তের কথায়, '' আজকের দিনে দাঁড়িয়ে হাঁটু প্রতিস্থাপন বা নী রিপ্লেসমেন্ট অত্যন্ত সাকসেসফুল একটি সার্জারি। মানুষকে সচেতন হবে। মানুষকে বুঝতে হবে যে তাঁর হাঁটু ক্ষয়ের ফলে একটা সময় সেটা বদলানোর প্রয়োজন আসতেই পারে এবং এটা করলে আপনি আরও সুন্দর জীবন উপভোগ করতে পারবেন।"  ডাক্তারবাবুকে জিজ্ঞাসা করলাম, " একটা সময় বাদে কি সবাইকে হাঁটু বদলানোর প্রয়োজন হতে পারে?" ডাক্তার সামন্ত জানালেন, " একদমই নয়। এটা ভুল ধারণা। তবে যাদের প্রয়োজন হবে তাদের নিশ্চয় হাঁটু বদলানোর কথা ভাবা উচিত।"  একটু থেমে ডাক্তারবাবুকে জিজ্ঞাসা করলাম, " কোন বয়সে এই নী রিপপ্লেসমেন্ট প্রয়োজন হয়?" তিনি জানালেন, " মূলত এটা বয়সকালীন সমস্যা। একটি নিদির্ষ্ট বয়সের পরই এই সমস্যা দেখা যায়। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে কম বয়সেও এই রোগ হতে পারে। আমারই এক পেশেন্ট আছে যার বয়স ৩৫ বছর। একটা কথা বলে রাখা ভাল, হাঁটু প্রতিস্থাপনের কিন্তু একটা নির্দিষ্ট সময় আছে। মানে আপনার হাঁটুর ক্ষয় হচ্ছে, সেটা যদিও বা বোঝা যায় তার মানেই এই নয় যে এক্ষুণি আপনাকে সেটা বদলানোর প্রয়োজন আছে। " তাঁকে থামিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম," হাঁটু প্রতিস্থাপন বা কি খুব ব্যথাদায়ক এবং কঠিন অস্ত্রোপচার।" ডাক্তারবাবু হাসতে হাসতে উত্তর দিলেন," ব্যাপারটা সেইরকম নয়। যে কোনও অস্ত্রোপচারই কঠিন। তবে ব্যথার কথা ওইভাবে বলা যায় না। তবে আজকাল সঠিক উপায়ে সার্জারি হলে এবং তারপরে নির্দিষ্ট নিয়মাবলী মানলে কোনও সমস্যা ছাড়াই একদম সুস্থ হয়ে ওঠা যায়।"


জিজ্ঞাসা করলাম, " সার্জারির কতদিন পর পর্যন্ত নিয়মাবলী মানতে হয়?" ডাক্তার সামন্ত জানালেন, " মোটামুটি মাস তিনেক সময় লাগে। তবে এটা এইভাবে বলাটা সম্ভব নয়। সম্পূর্ন ব্যাপারটাই পেশেন্ট-এর ওপর নির্ভর করে। আমি সবসময় বলি হাঁটু প্রতিস্থাপন করার চেয়েও বড় কাজ তার পরবর্তী সময়ে শুরু হয়। মূলত ফিজিও থেরাপি, ওষুধ, ডায়েট এবং ডাক্তারের পরামর্শ।"



একটু থেমে তিনি আরও জানালেন, " এছাড়াও একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, এই অস্ত্রোপচারটা কিন্তু খুব জটিল নয় তবে আমি অনেক ক্ষেত্রে দেখেছি অনেক পেশেন্টের ছেলে মেয়েরা বাইরে থাকেন, তারা শুধুমাত্র ছুটি নিয়ে অস্ত্রোপোচারের সময়ে আসে আবার তারা কর্মক্ষেত্রে ফিরে যায়। কিন্তু ব্যাপারটা সেইরকম নয়। পেশেন্ট পুরোপুরি সুস্থ হয়ে না ওঠা পর্যন্ত পেশেন্টকে একা ফেলে যাওয়া বা কারুর ভরসায় রেখে যাওয়া উচিত নয়।" ওনাকে জিজ্ঞাসা করলাম, " আপনি কী বলতে চাইছেন এই অস্ত্রোপচারের সঙ্গে সাইকোলজির সম্পর্ক আছে?" তিনি জানালেন, " নিশ্চয় আছে। এই জন্যই আমরা একটা কথা বলে থাকি, হ্যাপি পেশেন্ট-আনহ্যাপি পেশেন্ট। ধরুন কেউ হাঁটু প্রতিস্থাপন করে ভাল নেই কিংবা ব্যথা হচ্ছে কিংবা অন্য কোনও সমস্যা হচ্ছে, এটা আপনার কানে আসার পর থেকেই আপনি এই অস্ত্রোপচারের ব্যাপারে একটা বিরূপ ধারণা করে নিলেন সেটা ঠিক নয়।"



কল্যাণী বিদ্যাসাগর মঞ্চের পাশে ডা.অর্নব সামন্ত নিজের পলিক্লিনিক খুলেছেন। নাম দিয়েছেন কাইনেসিস নী ক্লিনিক। নৈহাটি বিজয়নগর স্কুলের সামনেও অপর একটি পলিক্লিনিকেও তিনি রোগী দেখেন। মফঃস্বল চত্ত্বরে কান পাতলে শোনা যায়, তিনি এখন এক এবং অদ্বিতীয়ম। অনেকে আবার নাকি তাঁকে গরীবের ডাক্তার বলেও আখ্যা দিয়ে থাকেন। এই কম বয়সে তাঁর খ্যাতি ছুঁয়েছে আকাশ অবধি। শুধুমাত্র হাঁটুর অস্ত্রোপচারই নয়, অস্থি সংক্রান্ত যে কোনও অস্ত্রোপচারই তিনি সফল ভাবে করে থাকেন। তবে তাঁর কথায়, " আমি চেয়েছিলাম এই মফঃস্বলের দিকে কলকাতার মতো উন্নত মানের হাড়ের অস্ত্রোপচার শুরু করতে। সেটাই বিগত কয়েকটা বছর ধরে করছি।"


জিজ্ঞাসা করলাম, " কী কী লক্ষণ দেখে বোঝা যাবে যে হাঁটুর ক্ষয় হয়েছে?" ডাক্তার সামন্ত জানালেন, " প্রথমত দৈনন্দিন কাজ করতে আপনি অসুবিধার সম্মুখীন হবেন। হাঁটুতে ব্যথা থাকবে। হাঁটতে চলতে সমস্যা হবে। কিংবা একটানা দাঁড়িয়ে থাকলে পায়ে ব্যথা করবে। অনেক পেশেন্ট হাঁটুর যন্ত্রনায় রাতে ভাল করে ঘুমোতে পারেন না।"  একটু থেমে তিনি আরও যোগ করলেন, " আমরা সাধারণত এক্সরে অথবা কোনও কোনও সময় সিটি স্ক্যান করে হাঁটুর বর্তমান পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করি এবং প্রয়োজনে সেটির অস্ত্রোপচার করি।"




ডাক্তারবাবুকে প্রশ্ন করলাম, " হাঁটু প্রতিস্থাপন কি আদেও আপনার জীবন বদলে দিতে পারে?" সামন্ত বাবু জানালেন, " নিশ্চয় পারে। এই ধরুন আপনি হাঁটু ব্যথার ভয়ে বাইরে বেরোতে ভয় পান। ওভারব্রিজ ক্রস করতে ভয় পান। পাবলিক ট্রান্সপোর্টে চড়তে ভয় পান। ব্যথা, যন্ত্রনার মধ্যে জীবন কাটায় অনেকে। সেখান থেকে নির্দ্বিধায় মুক্তি পাওয়া যাবে। এই তো আমার একজন পেশেন্ট ক্রাচ নিয়ে আসত।  তারপরে হাঁটু প্রতিস্থানের পরে তিনি যখন আমার চেম্বারে এলেন তখন তাঁকে সম্পূর্ন অন্যরকম লাগল। এই পরিবর্তনটাই জীবন বদলে দেয়।" "হাঁটুর ক্ষয় রোধের জন্য কী করণীয়?" তিনি জানালেন, " প্রথমত কাজের মধ্যে থাকা। মাটিতে বসে একটানা কাজ না করা। পা মুড়িয়ে বেশীক্ষণ না বসা। তবে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া একদম মুঠো মুঠো ভিটামিন ডি কিংবা ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট না খাওয়া। বিজ্ঞাপন দেখে অথবা গুগুল ঘেঁটে এইসব ওষুধ খাওয়ার কোনও মানে হয় না।" সবশেষে জিজ্ঞাসা করলাম, " হাঁটু প্রতিস্থাপন তো বেশ খরচ সাপেক্ষ বিষয়?" তিনি জানালেন, " হ্যাঁ তা বটে তবে ইদানীং বিভিন্ন সরকারী প্রকল্পে এই খরচটা অনেকেরই সাধ্যের মধ্যে চলে এসেছে।"


 ( সাক্ষাৎকার- আদিত্য ঘোষ

ছবি- সংগৃহীত)




মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ভূতে ভয় পেলেও, ‘ সেক্সি ভূত’-এর চরিত্রে অভিনয় করতে ভয় পাননি সায়ন্তনী

টলিউড ডিভা সায়ন্তনী গুহঠাকুরতা ডেবিউ করে ফেললেন দক্ষিণী সিনেমায়। যদিও কিছুদিন আগেই তিনি আটপৌরেকে সে ব্যাপারে জানিয়েছিলেন। কিন্তু সম্প্রতি এই হোলিতে সিনেমাটি রিলিজ করার পর থেকেই তিনি খবরের শিরোনামে। যদিও তার কারণ, তিনি এই প্রথম একটি ভূতের চরিত্রে অভিনয় করেছেন। শুধু তাই নয়, একটি ‘ সেক্সি’ ভূতের চরিত্রে এবং তাঁকে নিয়েই গল্পটা গড়ে উঠেছে।  সিনেমার নাম, ‘ চিকাটি গাডিলু চিঠাকোটুন্ডু’। তেলেগু সিনেমায় কাজ করে বেশ উচ্ছ্বসিত সায়ন্তনী। এখানেই শেষ নয়, তেলেগু ইন্ড্রাস্টির ভূয়সী প্রশংসা করেছেন তিনি। তাঁদের কাজের ধরন তাঁর বেশ পছন্দ হয়েছে । ইতিমধ্যে আরও একটি দক্ষিণী সিনেমার প্রস্তাবও পেয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। গল্পটিতে দেখা যায় দুই যুগল জুটি ছুটি কাটাতে গিয়ে আটকে যায় একটি ভৌতিক বাড়িতে।  সেখানে তারা একটি সেক্সি ভূতের পাল্লায় পরে। তারপর গল্প আস্তে আস্তে অন্যদিকে মোড় নেই।  সায়ন্তনী আটপৌরেকে জানালেন , ‘’ আমাকে অনেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় মেসেজ করে এই সিনেমার ব্যাপারে জানিয়েছেন! তাঁদের আমার চরিত্রটাও ভাল লেগেছে।‘’ ‘’ আপনাকে কেউ যদি রিয়েল লাইকে সেক্সি বলেন, সেটা আপনি কীভাব...

হেমন্তের উষ্ণ পরশ মিশিয়ে তালমায় ফিরল রোমিও জুলিয়েট, ঠোঁটে ঠোঁটে ' ফুল বডি রিলাক্স'

  আদিত্য ঘোষ, কলকাতাঃ বাংলার রোমিও জুলিয়েটরা দর্শককে রাত জাগিয়ে ওয়েব সিরিজের প্রতিটা পর্ব দেখতে বাধ্য করেছে। শুধু তাই নয়, দুই নবাগত অভিনেতা অভিনেত্রী  বাংলা সিরিজের মুখ্য চরিত্র হয়ে উঠেছে। বাংলা বাজারে ভাল সিনেমা বা ওয়েবের কদর আরও একবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখানোর চেষ্টা করেছে পরিচালক অর্পণ গড়াই। ক্যামেরার পিছনে এবং সামনে আরও একবার উজ্জ্বল ভূমিকার অবতীর্ণ হয়েছেন বাংলা সিনেমার  'ডন' অনির্বাণ ভট্টাচার্য। তবুও তালমার রোমিও এবং জুলিয়েট যথাক্রমে দেবদত্ত এবং হিয়া বাঙালি দর্শক মননে মিষ্টি প্রেমের উপাখ্যান হয়ে থেকে যাবে চিরকাল। যেখানে একটা সহজ সরল প্রেমকে স্রেফ টুকে দেওয়া হয়েছে সিনেমার পর্দায়। কোনও বাড়তি অলঙ্করণ নেই। কোনও উপমা-উপঢৌকন নেই। স্রেফ জীবনকে পর্দায় দেখালে যেমন মনে হয় ঠিক সেইরকম।  অভিনেতা দেবদত্ত রাহার হাতেখড়ি থিয়েটারের অভিনয় দিয়ে। তবে এই মুহূর্তে তিনি মঞ্চ থেকে বহুদূরে। তিনি আটপৌরেকে ফোনে জানালেন যে, ' থিয়েটার ছেড়েছি প্রায় তিন বছর, এখন বড় পর্দায় কাজ করার জন্য মুখিয়ে আছি। বেশ কিছু সিরিয়ালের প্রস্তাব পেলেও এই মুহূর্তে সিনেমা বা ওয়েব সিরিজের অভিনয়ের জন্যই ফোকাস করছি।' মফঃস...

রোগ চিনে নেওয়ার বিভিন্ন উপায় বাতলে দিচ্ছেন ডাক্তার সোমনাথ বিশ্বাস

হৃদয়ঘটিত বিভিন্ন রোগের অশনিসংকেত বুঝবেন কী করে-( পর্ব ১) খাই খাই বাঙালির বুকে ব্যথা হবে না, এও কি সম্ভব? যুগে যুগে বাঙালি জাতি নিজেরাই ডাক্তারি করে মোটামুটি বুঝে নিয়েছে বুকে একটু-আধটু ব্যথা মানেই ওটা গ্যাসের সমস্যা। আসলে বাঙালি জাতি এটা মানতেই অস্বীকার করে যে বুকে ব্যথা হৃদয় ঘটিত বিভিন্ন কারণে হতে পারে। সেটা অনেক সময় হার্ট এট্যাক এর লক্ষণও হতে পারে। উঁহু, অযথা ভয় পাওয়ার জন্য নয় এই লেখা নয়। উপরন্তু এই লেখা শুধুমাত্র একটা প্রাণ বাঁচানোর জন্য। তবে ডাক্তার বাবু বিশ্বাস মহাশয় কফি খেতে খেতে কহিলেন, " আধুনিক জীবনে আমি একটা স্মার্ট ওয়াচ ব্যবহার করতে পারলে, বুকে হঠাৎ ব্যথা হলে একটা ইসিজি করিয়েও দেখতে পারি। আমরা যদি বুকে ব্যথা ব্যাপারটা চেপে যায় তাহলে আর কি আধুনিক হলাম, তাহলে চিকিৎসা বিজ্ঞানের এত উন্নতি হয়ে লাভ কোথায়?" কফির কাপে চুমুক দিয়ে ডাক্তার বিশ্বাস আরও জানালেন যে, " আমাদের বুঝতে হবে চিকিৎসা বিজ্ঞান অনেকটা এগিয়েছে, তার সঙ্গে আমাদেরও এগোতে হবে। বুকে ব্যথা মানেই গ্যাস এবং সঙ্গে সঙ্গে একটা গ্যাসের ওষুধ খাওয়া মানেই সমস্যার শেষ এটা ভাবা একদমই বুদ্ধিমানের কাজ হবে না।" একটু...