জিজ্ঞাসা করলাম, " সার্জারির কতদিন পর পর্যন্ত নিয়মাবলী মানতে হয়?" ডাক্তার সামন্ত জানালেন, " মোটামুটি মাস তিনেক সময় লাগে। তবে এটা এইভাবে বলাটা সম্ভব নয়। সম্পূর্ন ব্যাপারটাই পেশেন্ট-এর ওপর নির্ভর করে। আমি সবসময় বলি হাঁটু প্রতিস্থাপন করার চেয়েও বড় কাজ তার পরবর্তী সময়ে শুরু হয়। মূলত ফিজিও থেরাপি, ওষুধ, ডায়েট এবং ডাক্তারের পরামর্শ।"
একটু থেমে তিনি আরও জানালেন, " এছাড়াও একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, এই অস্ত্রোপচারটা কিন্তু খুব জটিল নয় তবে আমি অনেক ক্ষেত্রে দেখেছি অনেক পেশেন্টের ছেলে মেয়েরা বাইরে থাকেন, তারা শুধুমাত্র ছুটি নিয়ে অস্ত্রোপোচারের সময়ে আসে আবার তারা কর্মক্ষেত্রে ফিরে যায়। কিন্তু ব্যাপারটা সেইরকম নয়। পেশেন্ট পুরোপুরি সুস্থ হয়ে না ওঠা পর্যন্ত পেশেন্টকে একা ফেলে যাওয়া বা কারুর ভরসায় রেখে যাওয়া উচিত নয়।" ওনাকে জিজ্ঞাসা করলাম, " আপনি কী বলতে চাইছেন এই অস্ত্রোপচারের সঙ্গে সাইকোলজির সম্পর্ক আছে?" তিনি জানালেন, " নিশ্চয় আছে। এই জন্যই আমরা একটা কথা বলে থাকি, হ্যাপি পেশেন্ট-আনহ্যাপি পেশেন্ট। ধরুন কেউ হাঁটু প্রতিস্থাপন করে ভাল নেই কিংবা ব্যথা হচ্ছে কিংবা অন্য কোনও সমস্যা হচ্ছে, এটা আপনার কানে আসার পর থেকেই আপনি এই অস্ত্রোপচারের ব্যাপারে একটা বিরূপ ধারণা করে নিলেন সেটা ঠিক নয়।"
কল্যাণী বিদ্যাসাগর মঞ্চের পাশে ডা.অর্নব সামন্ত নিজের পলিক্লিনিক খুলেছেন। নাম দিয়েছেন কাইনেসিস নী ক্লিনিক। নৈহাটি বিজয়নগর স্কুলের সামনেও অপর একটি পলিক্লিনিকেও তিনি রোগী দেখেন। মফঃস্বল চত্ত্বরে কান পাতলে শোনা যায়, তিনি এখন এক এবং অদ্বিতীয়ম। অনেকে আবার নাকি তাঁকে গরীবের ডাক্তার বলেও আখ্যা দিয়ে থাকেন। এই কম বয়সে তাঁর খ্যাতি ছুঁয়েছে আকাশ অবধি। শুধুমাত্র হাঁটুর অস্ত্রোপচারই নয়, অস্থি সংক্রান্ত যে কোনও অস্ত্রোপচারই তিনি সফল ভাবে করে থাকেন। তবে তাঁর কথায়, " আমি চেয়েছিলাম এই মফঃস্বলের দিকে কলকাতার মতো উন্নত মানের হাড়ের অস্ত্রোপচার শুরু করতে। সেটাই বিগত কয়েকটা বছর ধরে করছি।"
জিজ্ঞাসা করলাম, " কী কী লক্ষণ দেখে বোঝা যাবে যে হাঁটুর ক্ষয় হয়েছে?" ডাক্তার সামন্ত জানালেন, " প্রথমত দৈনন্দিন কাজ করতে আপনি অসুবিধার সম্মুখীন হবেন। হাঁটুতে ব্যথা থাকবে। হাঁটতে চলতে সমস্যা হবে। কিংবা একটানা দাঁড়িয়ে থাকলে পায়ে ব্যথা করবে। অনেক পেশেন্ট হাঁটুর যন্ত্রনায় রাতে ভাল করে ঘুমোতে পারেন না।" একটু থেমে তিনি আরও যোগ করলেন, " আমরা সাধারণত এক্সরে অথবা কোনও কোনও সময় সিটি স্ক্যান করে হাঁটুর বর্তমান পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করি এবং প্রয়োজনে সেটির অস্ত্রোপচার করি।"
ডাক্তারবাবুকে প্রশ্ন করলাম, " হাঁটু প্রতিস্থাপন কি আদেও আপনার জীবন বদলে দিতে পারে?" সামন্ত বাবু জানালেন, " নিশ্চয় পারে। এই ধরুন আপনি হাঁটু ব্যথার ভয়ে বাইরে বেরোতে ভয় পান। ওভারব্রিজ ক্রস করতে ভয় পান। পাবলিক ট্রান্সপোর্টে চড়তে ভয় পান। ব্যথা, যন্ত্রনার মধ্যে জীবন কাটায় অনেকে। সেখান থেকে নির্দ্বিধায় মুক্তি পাওয়া যাবে। এই তো আমার একজন পেশেন্ট ক্রাচ নিয়ে আসত। তারপরে হাঁটু প্রতিস্থানের পরে তিনি যখন আমার চেম্বারে এলেন তখন তাঁকে সম্পূর্ন অন্যরকম লাগল। এই পরিবর্তনটাই জীবন বদলে দেয়।" "হাঁটুর ক্ষয় রোধের জন্য কী করণীয়?" তিনি জানালেন, " প্রথমত কাজের মধ্যে থাকা। মাটিতে বসে একটানা কাজ না করা। পা মুড়িয়ে বেশীক্ষণ না বসা। তবে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া একদম মুঠো মুঠো ভিটামিন ডি কিংবা ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট না খাওয়া। বিজ্ঞাপন দেখে অথবা গুগুল ঘেঁটে এইসব ওষুধ খাওয়ার কোনও মানে হয় না।" সবশেষে জিজ্ঞাসা করলাম, " হাঁটু প্রতিস্থাপন তো বেশ খরচ সাপেক্ষ বিষয়?" তিনি জানালেন, " হ্যাঁ তা বটে তবে ইদানীং বিভিন্ন সরকারী প্রকল্পে এই খরচটা অনেকেরই সাধ্যের মধ্যে চলে এসেছে।"
( সাক্ষাৎকার- আদিত্য ঘোষ
ছবি- সংগৃহীত)
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন