(সাক্ষাৎকার-আদিত্য ঘোষ)
(ছবি-ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)
নৈহাটি শহরে খুব একটা ক্যাফে কালচার নেই বলে যারা অভিযোগ করে এসেছিল এতকাল, তাদের জন্য এইবার রইল সুখবর। কয়েক মাস আগেই নৈহাটির বুকে উদ্বোধন হয়েছে 'উই টি' নামক একটি ক্যাফে। বড়জোর দশ-পনেরোজন লোক বসার জায়গা নিয়ে তৈরি এই ক্যাফের পরিবেশটা বেশ মনোরোম এবং ঘরোয়া। ছিমছাম এই ক্যাফেটি নৈহাটির মিত্রপাড়ায় বনলতা এপার্টমেন্টের ঠিক পাশেই। একটি বাড়ির মধ্যে তৈরি এই ক্যাফেটির মূল আকর্ষণ হলো ঘরোয়া পরিবেশ এবং নির্বিঘ্নে গল্প করার সুবিধা। যদিও আজকাল আধুনিক ক্যাফের মতো অত জাঁকজমক নেই বলে অনেকেই নাক সিটকোতে পারেন, তবে আপনি এখানে পেয়ে যাবেন সুলভে সুস্বাদু খাদ্য এবং মোলায়েম আদুরে আপ্যায়ন। একটি ক্যাফে আপনাকে যা যা দিতে পারে, যা যা ভাল করতে পারে আপনার একটি সন্ধে! সেইসব নিয়ে আপনার জন্য অপেক্ষায় উই টি।এই ক্যাফের কর্ণধার মীনাক্ষী সরকারের কথায়, " আমি চিরকাল রান্না করতে ভালবাসি। সেই রান্না সবাইকে খাওয়াতেও ভালবাসি। তাই এই পরিকল্পনা অনেকদিনের। আমি ভেবেছিলাম এমন একটা জায়গা তৈরি করব, যেখানে লোকে বসে চা-কফি খেতে খেতে গল্প করবে। একটা ছিমছাম পরিবেশ হবে। গান বাজবে। সন্ধেগুলো সুন্দর কাটবে।"
উত্তর চব্বিশ পরগণার অন্তর্গত নৈহাটি শহর চিরকালই সাহিত্য-সংস্কৃতির জন্য বিখ্যাত। বিখ্যাত তার অতিথি আপ্যায়নের জন্য। শিয়ালদহ মেন লাইনের নৈহাটি স্টেশন জংশন হিসেবে যেমন সর্বদা ব্যস্ত তেমনি নাটক-গান-আবৃত্তির পোস্টারে এই শহর ছয়লাপ। নৈহাটি শহরের এক লিটিল ম্যাগাজিনের সম্পাদক এই নৈহাটিকে স্মৃতির শহর বলে পরিচয় দিয়েছিলেন। আসলে এই শহরটা ভালবাসতে জানে। আর সেই ভালবাসার শহরে, ক্যাফের এত ক্রাইসিস? এটাও সম্ভব?
নৈহাটিতে হাতে গুনে দুই-তিনটে ক্যাফে। কিন্তু সেই অর্থে সর্বদা সচল ক্যাফে বলতে একটা। তাই এই ভালবাসার শহরে এমন ঝরা বসন্তে প্রেমের জন্য আদর্শ হয়ে উঠতে পারে এই মনোরম ক্যাফে! উই টি তো হতেই পারে কোনও প্রেমের ফাইনাল ডেস্টিনেশন। কাগজে কলমে এই ক্যাফের বয়স মাস দুয়েক, তবুও এই কয়েকদিনের মধ্যে ভালই সাড়া ফেলেছে এই ছোট্ট ক্যাফেটি।
মীনাক্ষীর কথায়, " অনেক আশা নিয়ে আমি এই ক্যাফেটি শুরু করেছি। নৈহাটিতে ভাল ভাল রেস্টুরেন্ট থাকলেও ক্যাফে নেই। তাই বিভিন্ন দিক থেকে ক্যাফেও ব্যবসাটা লাভবান হতেও পারে এই ভেবে উই টি-এর জন্ম। আমার বেশ কয়েকজন বন্ধু এই স্বপ্নটাকে বাস্তবে আনতে সাহায্য করেছে। তার মধ্যে বর্ণালী আর দেবার ভূমিকা অনবদ্য।"
এই বাড়ির গ্যারেজ ঘরকে ব্যবহার করে যে ক্যাফে বানানো যেতে পারে তার উদাহরণ খুব একটা নেই বললেই চলে। তবে বাঙালিরা কী না পারে! সব পারে...। আর কে বলে যে বাঙালি ব্যবসা করতে পারে না? বাঙালি চাইলে সব পারে। মীনাক্ষী সরকারই তার বড় প্রমাণ।
বেসরকারী হাসপাতালের কর্মী সোহম জোয়ারদারের কথায়," এই ক্যাফেটা খুব ভাল। বেশ সাদামাটা। এই ক্যাফের চা'টা আমার বেশ প্রিয়। চা-এর সঙ্গে ফ্রেঞ্চ ফ্রাইটা আমি বরাবরই অর্ডার করি।" মীক্ষানীর কথায়, " ফ্রেঞ্চ ফ্রাইটা আমি নিজে হাতে করি। কোনও ফ্রোজেন খাবার আমি ব্যবহার করি না।" শুধু তাই নয় ছোট গল্পকার পার্থ ঘোষের কথায়, " নৈহাটিতে একটাও ভাল চায়ের দোকান ছিল না। এটা আমার আক্ষেপ ছিল। তবে উই টি এর দৌলতে সেটা মিটল।" ব্যাঙ্গালোর নিবাসী আইটি প্রতিষ্ঠানের কর্মী পার্থ সারথী চট্টোপাধ্যায়-এর কথায়, " আমি খুব একটা চা ভালবাসি না। এখানে একবার লিকার চা খেয়েছি, তবে সেটা খুব একটা ভাল লাগেনি তবে এখানকার চিকেন স্যান্ডউইচ আর চিকেন স্টু আমার প্রিয়।" সরকার দিদিমণি আরও জানলেন যে, " আমি এখানে এমন ব্যবস্থা করতে চাইছি যে লোকে এখানে বসে কাজ করতে পারবে। এখন ওয়ার্ক ফর্ম হোমের কনসেপ্টটা খুব কমন। তাই এমন একটা ক্যাফে নৈহাটিতে থাকবে যেখানে লোকে বসে কাজ করতে পারবে। " স্কুল শিক্ষক শীর্ষাসিন ঘোষের কথায়, " এটি একটি আদর্শ ফ্যামিলি ক্যাফে। সুন্দর পরিবেশ। প্রতিটা খাবারের মান খুব ভাল। বেশ নিরিবিলি। আমার তো বেশ ভাল লেগেছে ক্যাফেটা।"
আপাতত নৈহাটির মিত্রপাড়ার ব্রাঞ্চ রোডের এই ক্যাফেটা এখন অনেকেরই সান্ধ্য গন্তব্য। পথ চলতি লোক থেকে কবি। ম্যাগাজিনের সম্পাদক থেকে রাজনীতিবিদ। ডাক্তার থেকে ইঞ্জিনিয়ার। প্রবাসী থেকে স্বদেশী। সবারই এখন মন ভাল করার জায়গা উই টি। বিভিন্ন রকমের চা থেকে চিজ অমলেট, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, চিকেন পকোরা, চিকেন স্টু, স্যান্ডউইচ এবং আরও অনেক। মাত্র দশ থেকে শুরু, নব্বইয়ে শেষ। হ্যাঁ এই রেঞ্জের মধ্যে উই টি আপনাকে দিতে পারে হরেক রকমের খাবার। আপাতত সন্ধে ৬টা থেকে রাত ১০টা অবধি প্রতিদিন খোলা থাকছে এই ক্যাফে। আর এই ক্যাফের সবকিছু কিন্তু মীনাক্ষী নিজেই করে। মানে রান্না থেকে বাসন মাজা সবই সরকার দিদিমণির কান্ড! যদিও মাঝেমধ্যে তাঁর বন্ধুস্থানীয় কেউ কেউ তাঁকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় তবুও চুল বাঁধা থেকে বাসন মাজা মীনাক্ষীর একা হাতের কাজ।
তাহলে দেরী কেন, আজই চলে আসুন। নিজেই দেখে নিন সেই মায়াবী নিঝুম সন্ধে। চুপচাপ গান শুনুন। কিংবা বই পড়ুন। হরেক রকমের চা খেয়ে দেখুন। কিংবা নির্বিঘ্নে প্রেম করুন। রাজনীতি নিয়ে আলোচনা করুন গলা ছেড়ে। বাঙালিও একদিন ব্যবসা করবে এই শীর্ষক আলোচনা করতে করতে একটু চিকেন পপকর্ন খেয়ে নিন। এই সাক্ষাৎকারটা দিতে দিতে মীনাক্ষী সরকার বলে উঠলেন," শেষ হয়েছে? ক্যাফেতে এখনও লোক রয়েছে।" ঘড়ির কাঁটায় তখন এগারোটা। ক্যাফেতে গান বাজছে, "সাজো, সাজাও এমন করে...."
আমরা গর্বিত। একদিন গানের খেয়া র সবাই কে নিয়ে খুব আনন্দ করেএসেছি। আমি তো খুব খুশি হয়েছি। সবসময়ই পাশে আছি বোন।
উত্তরমুছুন