সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

সন্ধ্যে হলেই এখানে ঘনিয়ে আসে বিশ্রী অমাবস্যার ছায়া। তবে এই নির্জনতা আমার ভাল লাগে।



                         মিছিল – আদিত্য
                                   (প্রথম পর্ব)

 বারো ফুটের একটা ঘর। চারিদিকে শুধু ছাই আর সিগারেটের টুকরো। এদিকে-ওদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ছেঁড়া ডায়রির পাতা। আসবাবপত্র বলতে একটা চেয়ার আর ভাঙা টেবিল। ঘরটা পরিষ্কার করলে হয়ত নবদম্পতির জন্য এটা একটা আদর্শ জায়গা হবে। জানলা খুললেই দেখা যায় সাজানো বাগান। সারি সারি গাছ মাথা তুলে রয়েছে হয়ত তোমার জন্য। ছাদের অর্ধেক অংশ জুড়ে রয়েছে এই ঘরটা, তাই একটা দরজা খুললেই ছাদের বাকি অংশটা হঠাৎই হাতছানি দেয় আনমনে। বিকেল হলে এই ছাদে দাঁড়িয়ে ফিরে যাওয়া যায় ছোটবেলায়। ঐ দূরে দেখা যায় কদম গাছটা, যেখানে রাত হলেই ভিড় করে জোনাকির দল। চারিপাশে আরও বাড়ি রয়েছে, তবে এই বাড়িটার তুলনায় সবাই ছোট। এ দিকে ত্রিফলার দাপট নেই। যানবাহনও কম চলে। সন্ধ্যে হলেই এখানে ঘনিয়ে আসে বিশ্রী অমাবস্যার ছায়া। তবে এই নির্জনতা আমার ভাল লাগে।

এই ঘরটাকে চিলেকোঠার ঘর বললেও ভুল বলা হবে না।  তবে এই ঘরটা আমার বড্ড প্রিয়। টাকা থাকলে এই ঘরটা ভাড়া নিয়ে সারাদিন বসে কবিতা লিখতাম। কিন্তু সেটা এখন সম্ভব নয়। যেদিন বড়ো লেখক হয়ে যাব, সেদিন হয়ত এই বাড়িটায় কিনে নেব। কৌশিকের এই ঘরে বসেই এক সময় কত গান গেয়েছি। কত সুর ভুলিয়েছে আমাদের ভাঙা প্রেমের গন্ধ। কত নেশা আমাদের আরও মাতাল করে দিয়েছে কে জানে।

কৌশিক তামাক বানাতে বানাতে বলল, ‘’ ভাই, ভাবছি নেশা করা ছেড়ে দেব।’’ আমি একটু অবাক হয়ে অথচ ব্যাঙ্গাত্মক ভাবে বললাম, ‘’ কেন? বউ পরামর্শ দিয়েছে?’’ কৌশিক একটু রেগেই বলল, ‘’ আরে সব ব্যাপারে বউকে টানিস কেন বল তো? এটাই বাঙালীর সবচেয়ে বড় দুর্বলতা! কিছু হলেই সব বউয়ের ঘাড়ে চাপাবে।‘’ একটু থেমে আবার বলল, ‘’ আরে নিজেই ভাবছিলাম, এসব ছাই-পাশ খেয়ে কী হবে? তাই বললাম।‘’ একটু ধমক দিয়ে বললাম, ‘’ বানা বানা, জলদি বানা!’’ কৌশিক আবার একমনে তামাক বানাতে লাগত আর গুন গুন করে গাইতে থাকল, ‘’ চলে এসো আজ এ রাতে, চলে এসো আমার সাথে, প্রিয়তমা...’’ এখনও গায়ক হওয়ার ইচ্ছেটা ওর যায়নি। সেই ছোট থেকে দেখছি তো। বেচারা ইঞ্জিনিয়ারিং-এর চাপে একেবারে পরোটা হয়ে গেছে। তবে অফিস থেকে ফিরেই ওর সেই গায়ক সত্ত্বাটা জেগে ওঠে। সময় পেলে একটা-দুটো গান ফোনেই রেকর্ড করে ফেলে।

একটা সময় আমরা একসঙ্গে গান লিখতাম। সুরও দিতাম, তবে এখন সেসব উধাও হয়ে গেছে। স্কুলে পড়াকালীন আমরা অনেকটা সময় একসঙ্গে কাটতাম শুধু তাই নয় টিউশানও একসঙ্গে নিতাম। স্কুল জীবনের একবারে শেষের দিকে প্রথম টিউশানের টাকা দিয়ে মদও খেয়েছি। দিনের পর দিন টিউশানে না গিয়ে গঙ্গার ঘাটে বসে গান নিয়ে আলোচনা করেছি। আমাদের একটা ব্যান্ড ছিল, নাম ছিল ওয়েসিস। ইচ্ছে ছিল বাংলা ব্যান্ডের সংজ্ঞা বদলে দেব। ইচ্ছে ছিল, আমাদের গান সেরার শিরোপা পাবে। কিন্তু পরবর্তী কালে সেই ব্যান্ডটাই ব্যান্ড হয়ে গিয়েছিল।
হঠাৎ কৌশিক বলল, ‘’ এই নে তুই ধরা!’’

তামাক ধরাতে ধরাতে বললাম, ‘’ তোর সোহাগের কথা মনে পড়ে?’’
‘’ হ্যাঁ! মানে ঐ ফেসবুকে আপডেট দেখলে তখন মনে পড়ে। ‘’
‘’ কেমন আছে রে ?’’
‘’ জানি না। এই তো কিছুদিন আগে বিয়ে হল।‘’
‘’ তাই নাকি! পাত্র কী করে ?’’
‘’ শুনেছি তো উকিল।‘’
‘’ আর আমাদের পাগল প্রেমিক জানে যে তার প্রেমিকা এখন বিবাহিতা ?’’
একটা লম্বা টান দিয়ে কৌশিক বলল, ‘’ কে জানে ভাই! আমি আর ওর খবর রাখি না।‘’
‘’ ভালই করেছিস। একদিন ওদের প্রেমের জন্য আমরা মার খেতে খেতে বেঁচেছিলাম।‘’
‘’ হ্যাঁ ভাই। সেদিন গলি দিয়ে দিব্যি সোহাগের হাত ধরে কেটে পড়েছিল, আর আমারা ফেঁসে গেছিলাম।‘’

‘’ প্রেমের জন্য লোকে কত কাছের বন্ধুদের যে ভুলে যায়, এটাই তার আদর্শ উদাহরণ।
‘’ তুই হঠাৎ সোহাগের কথা বললি, কী ব্যাপার ?’’ কৌশিক একটু মিচকি হেসে বলল।
‘’ আরে এমনি।  এই ঘরটাই এলেই কেমন নসটালজিক হয়ে যায়।‘’
‘’এসব ছাড়, একটা গান শোন!’’ এই বলে কৌশিক গিটারটা তুলে নিয়ে গাইতে থাকল, ‘’ তুই আমায় পাগল করলি রে...’’

আমি হঠাৎ বললাম , ‘’ তোর কুসুমের কথা খেয়াল আছে?’’
কৌশিক গানটা থামিয়ে দিল। আর একটা তামাক ধরিয়ে বলল, ‘’ ভাটপাড়া জায়গাটা আমার জীবনের স্মৃতির চৌহদ্দি!’’
‘’ কেমন আছে ও ?’’
‘’ জানি না। হয়ত লাল ঝাণ্ডার তলায় এখনও শিক্ষা আর চেতনার লড়াই করছে। শুনেছি ও নাকি আর চোখে দেখতে পাই না।’’
আমি চমকে উঠে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘’ কেন ? কী হয়েছে ?’’
কৌশিক ধীরে ধীরে বলল, ‘’ সবই তো বিপ্লব!’’     (পরবর্তী পর্বে)

মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ভূতে ভয় পেলেও, ‘ সেক্সি ভূত’-এর চরিত্রে অভিনয় করতে ভয় পাননি সায়ন্তনী

টলিউড ডিভা সায়ন্তনী গুহঠাকুরতা ডেবিউ করে ফেললেন দক্ষিণী সিনেমায়। যদিও কিছুদিন আগেই তিনি আটপৌরেকে সে ব্যাপারে জানিয়েছিলেন। কিন্তু সম্প্রতি এই হোলিতে সিনেমাটি রিলিজ করার পর থেকেই তিনি খবরের শিরোনামে। যদিও তার কারণ, তিনি এই প্রথম একটি ভূতের চরিত্রে অভিনয় করেছেন। শুধু তাই নয়, একটি ‘ সেক্সি’ ভূতের চরিত্রে এবং তাঁকে নিয়েই গল্পটা গড়ে উঠেছে।  সিনেমার নাম, ‘ চিকাটি গাডিলু চিঠাকোটুন্ডু’। তেলেগু সিনেমায় কাজ করে বেশ উচ্ছ্বসিত সায়ন্তনী। এখানেই শেষ নয়, তেলেগু ইন্ড্রাস্টির ভূয়সী প্রশংসা করেছেন তিনি। তাঁদের কাজের ধরন তাঁর বেশ পছন্দ হয়েছে । ইতিমধ্যে আরও একটি দক্ষিণী সিনেমার প্রস্তাবও পেয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। গল্পটিতে দেখা যায় দুই যুগল জুটি ছুটি কাটাতে গিয়ে আটকে যায় একটি ভৌতিক বাড়িতে।  সেখানে তারা একটি সেক্সি ভূতের পাল্লায় পরে। তারপর গল্প আস্তে আস্তে অন্যদিকে মোড় নেই।  সায়ন্তনী আটপৌরেকে জানালেন , ‘’ আমাকে অনেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় মেসেজ করে এই সিনেমার ব্যাপারে জানিয়েছেন! তাঁদের আমার চরিত্রটাও ভাল লেগেছে।‘’ ‘’ আপনাকে কেউ যদি রিয়েল লাইকে সেক্সি বলেন, সেটা আপনি কীভাব...

পুজো মিটলে কী করে থাকবেন ফিট, উপায় বাতলে দিলেন বিশিষ্ট পুষ্টিবিদ এবং যাপন সহায়ক ডাক্তার অনন্যা ভৌমিক

  আশ্বিনের শারদপ্রাতে বাঙালির পাতে ভরে উঠেছে হরেক রকমের খাবার। ঠাকুর দেখার সঙ্গে হরেক রকমের খাবার খেতেই হবে। রোল, চাউমিন, মোগলাই, চাইনিজ, বিরিয়ানি, ফুচকা এবং আরও কত কী! সারাবছর যারা শরীরচর্চায় মেতে থাকেন, খুব নিয়ম করে খাবার খান তারাও এই সময়টা একটু বেনিয়ম হয়ে পড়েন। তবে কুচ পরোয়া নেহি, পুজো মিটলেই আবার কী করে নিজের শরীরকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনবেন সেই কথায় আটপৌরেকে জানালেন বিশিষ্ট পুষ্টিবিদ এবং যাপন সহায়ক ডাক্তার অনন্যা ভৌমিক।  ১) পুজো মিটলেই আমাদের ফিরতে হবে আবার স্বাভাবিক জীবনে।  তাই পুজোর হ্যাংওভার কাটিয়ে নিতে ভীষণভাবে দরকার পড়বে প্রচুর পরিমাণ জলের। জল শরীরের বিষক্রিয়া দূর করতে সাহায্য করে। শরীরের প্রয়োজন মতো দিনে অন্তত তিন থেকে চার লিটার জল খেলে শরীর সুস্থ থাকবে। তবে যাদের বেশী জল খাওয়া বারণ আছে তারা অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন। এছাড়া বাকিরা দিনে চার লিটার পর্যন্ত জল পান করলে শরীরের স্বাভাবিক কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রিত থাকবে।  ২) মরশুমি ফল খাওয়ার অভ্যাস করুন। এছাড়াও নিয়মিত শাকসবজি খেতে হবে। ফল এবং শাকসবজিতে প্রচুর পরিমানে ফাইবার এবং আন্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা শরীরকে আবার স...

পনেরো মিনিটেই ফিট থাকার রহস্য, উপায় বাতলে দিলেন যোগগুরু

  আটপৌরের নিজস্ব প্রতিবেদন, নৈহাটিঃ  শরীরকে মন্দিরের আখ্যা দেওয়া হয়। আর সেই শরীরকে সর্বদা ঠিক রাখতে আমরা কত পন্থায় না অবলম্বন করে থাকি। আজকাল ইঁদুর দৌড়ের যুগ, আর এই যুগে সময় পাওয়া একটা বিরাট চ্যালেঞ্জিং বিষয়। সময় বের করে শরীর চর্চা করার মতো সময় আমাদের কতজনের হাতেই বা আছে? মনের সুখে ছুটির দিন হাঁটলেই কি আমাদের শরীর ঠিক থাকবে নাকি সপ্তাহে প্রতিদিন জিমমুখী হতেই হবে ? যেমন আইটি সেক্টরে কর্মরত পার্থ সারথী চক্রবর্তী সোম থেকে শুক্র অবধি দম ফেলার সময় পায় না, অথচ কিছুদিন হল সে ঘাড়ের ব্যথায় কাবু। আবার সদ্য বিয়ে করা কৌশিক ভট্টাচার্য ইদানীং অফিস ফেরত সস্ত্রীক হাঁটতে বেরিয়ে নিজেকে ফিট ভাবছেন অথচ গত তিনমাসে তার দশ কেজি ওজন বৃদ্ধি পেয়েছে। তবুও সে নিরুপায়, অফিস ফেরত ছাড়া তার সময় নেই। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে গেলে শরীর চর্চা আর হবে না। এই সময়ের অভাব অনেকেরই তা বলে কী শরীর সে কথা শুনবে। শরীরে বাসা বাঁধছে জটিল রোগ। দিনের পর দিন ওষুধ খেয়েও সেই রোগ সারছে না। তবে ইচ্ছে থাকলে উপায় আছে, বলছেন বিশিষ্ট যোগ গুরু রাহুল তিওয়ারী। আটপৌরের মুখোমুখি হয়ে তিনি জানালেন যে খুব স্বল্প সময়ে ফিট থাকার জন্য কিছু প...