সময়ের অভাবের জন্য ব্যায়াম করার সময় পাচ্ছেন না, আর চুপিসারে আপনার শরীরে বাসা বাঁধছে জটিল রোগ। সকাল থেকে রাত অবধি অফিসেই কেটে যাচ্ছে আর চাপ বাড়ছে আপনার মস্তিকের । সময় খুঁজেও সময় পাচ্ছেন না! যেমন আইটি সেক্টরের কর্মী পার্থ সারথীর ঘাড়ে ব্যথা কিছুতেই সারছে না। একটানা ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে কাজ করতে করতে তাঁর ঘাড় শক্ত হয়ে যাচ্ছে অথচ ব্যায়াম করার সময় নেই। আবার নন-আইটি সেক্টরে কর্মরত কৌশিক ভট্টাচার্য ভুগছেন হাঁটুর ব্যথায়। ন’ঘণ্টা চেয়ারে বসে বসে অল্প বয়সেই তিনি হাঁটু ব্যথার শিকার। আবার সরকারী ব্যাঙ্কের কর্মচারী তুলিকা সিংহ যেমন বেশ কিছু বছর ধরে কোমরে ব্যথার ভুগছেন, ব্যথা হলেই একটা প্যারাসিটামল খেয়ে নিচ্ছেন। ডাক্তারও পরামর্শ দিচ্ছেন যে একটু ব্যায়াম করুন, কিন্তু তিনি সময় পাচ্ছেন না। তাহলে উপায় ? বিশিষ্ট যোগগুরু মধুসত্তা চৌধুরীর কথায়, ‘’ অফিস টাইমেও আপনি ফিট থাকলে চাইলে অফিসেই কিছু ব্যায়াম সেরে নিতে পারেন।‘’
নেক মুভমেন্ট বা ঘাড় বেঁকানো – নিঃশ্বাস নিতে নিতে একবার সিলিং-এর দিকে তাকান আবার নিঃশ্বাস নিতে নিতে মেঝের দিকে তাকান। ঠিক একইভাবে ডানদিন এবং বাঁদিকে একইভাবে ঘাড় ঘোরান। এই অভ্যাস করার ফলে ঘাড়ে ব্যথা হওয়ার সমস্যা আর থাকবে না।
গোমুখ আসন( অফিসের জন্য পরিমার্জিত)- গোমুখ আসন অভ্যাস করার জন্য একটি ছোট তোয়ালে বা রুমাল কাছে রাখতে পারেন।চেয়ারে পা ঝুলিয়ে সোজা হয়ে বসুন। দুই হাত থাকুক কোলের ওপর। চোখ বন্ধ করে ঘাড়, পিঠ ও মাথা সোজা করে বসুন। এটিই হল আসন শুরুর অবস্থান। চেয়ারের সামনের দিকে কিছুটা এগিয়ে আসুন। এবারে বাম হাত কোমরের নিচের দিক থেকে পিঠের দিকে তুলুন। ডান হাত ঘাড়ের পেছন থেকে নিচের দিকে নামান। ডান হাত দিয়ে বাম হাতের আঙুল ধরার চেষ্টা করুন। আসন শুরুর দিকে দুই হাতের আঙুল ধরা মুশকিল হতে পারে। এক্ষেত্রে তোয়ালে বা রুমালের দুটি কোণ দুই হাত দিয়ে ধরে হাত কাছাকাছি আনতে হবে। এই অবস্থানে ঘাড়, পিঠ ও মাথা সোজা থাকবে। মনে মনে ৫ – ৭ পর্যন্ত গুনতে হবে। শ্বাস প্রশ্বাস স্বাভাবিক থাকবে। কয়েকদিন অভ্যাসের পর হাতের আঙুল ধরতে অসুবিধে হবে না। এ বারে একই পদ্ধতিতে ডান হাত নিচে ও বাম হাত ঘাড়ের পেছন দিয়ে একই ভাবে দুই হাতের আঙুল একসঙ্গে ধরে ৫ – ৭ বার ধীরে ধীরে শ্বাস নিয়ে শুরুর অবস্থানে ফিরে আসুন। এক রাউন্ড হল। ৩ – ৫ রাউন্ড অভ্যাস করতে হবে।অভ্যাস শেষ হলে শুরুর অবস্থানে ফিরে কিছুক্ষণ স্বাভাবিক শ্বাস নিয়ে রিল্যাক্স করুন।
গোড়ালির মুভমেন্ট- পায়ের পাতা শুদ্ধু গোড়ালি একবার করে ঘড়ির কাঁটার দিকে এবং ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে ঘোরান। আবার পায়ের পাতা সমানে এবং পিছনে মোড়াতে পারেন।
লেগ স্ট্রেচিং – চেয়ারে বসে বসে পা টানটান করুন। সঙ্গে নিঃশ্বাস নেওয়া এবং ছাড়া চালিয়ে যাবেন।
আঙুল ঘোরানো- হাতের আঙ্গুলগুলো একসঙ্গে জড়ো করে ঘড়ির কাঁটার দিকে এবং ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে ঘোরান।
ট্যাডাসন( চেয়ারে বসে) - নিঃশ্বাস নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হাত দুটো মাথার ওপরে তোলা এবং হাতের আঙ্গুলগুলো একে অন্যের সঙ্গে জড়ো করো কিছুক্ষণ ধরে রাখা। তারপর নিঃশ্বাস ছাড়তে ছাড়তে হাত নামিয়ে ফেলা।
ক্রিসেন্ট মুন পোজ( চেয়ারে বসে) - হাত দুটো মাথার উপরে তুলে দু'হাত জড়ো করুন। তারপর প্রথমে ডান দিকে শরীরকে হেলিয়ে দিন এবং ঠিক একইভাবে বাঁদিকে শরীরকে হেলান। মনে রাখবেন নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস যেন স্বাভাবিক থাকে।
শুধু তাই নয় অফিসে কাজের প্রেশারে একান্তই যদি দমবন্ধ লাগে কিংবা বসের সঙ্গে ঝামেলার ফলে যদি রেগে যান তাহলে ততক্ষনাৎ সেই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে সেকশানাল ব্রিদিং করা যেতে পারে। সেকশানাল ব্রিদিংকে ডিপ ব্রিদিংও বলা যেতে পারে। এই পদ্ধতিতে প্রথমে পেটের সাহায্যে, তারপরে বুকের সাহায্যে এবং শেষে কাঁধের সাহায্যে নিঃশ্বাস নেওয়া এবং ছাড়া। এই পদ্ধতি সঠিক ভাবে ব্যবহার করলে অনায়াসে দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
( লেখাটি বিশিষ্ট যোগ প্রশিক্ষক মধুসত্তা চৌধুরী বক্তব্যের ভিত্তিতে লেখা হয়েছে)
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন